জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন চায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও গণ অধিকার পরিষদ। আজ বুধবার বিকেল সোয়া চারটায় গণ অধিকার পরিষদের সঙ্গে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের বৈঠক শেষে পৃথক বক্তব্যে এ বিষয়ে মতৈক্যের কথা জানান দল দুটির শীর্ষ নেতারা।

বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে ইসলামী আন্দোলনের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনেই প্রয়োজনীয় সংস্কার করে দ্রুত সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার বিষয়ে গণ অধিকার পরিষদ তাদের সঙ্গে একমত হয়েছে।

আরও কয়েকটি বিষয়ে দুই দল একমত হয়েছে বলে জানান মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম। এসব বিষয়ের মধ্যে রয়েছে নারীর অধিকারবিষয়ক সংস্কার কমিশনের ‘ইসলাম ধর্মবিরোধী’ প্রস্তাব বাতিল, গণহত্যা, খুনসহ টাকা পাচারকারীদের দ্রুত সময়ের মধ্যে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা, ফ্যাসিবাদের পুনঃপ্রতিষ্ঠা ঠেকাতে আধিপত্য ও সাম্রাজ্যবাদমুক্ত একটি ইসলামী কল্যাণরাষ্ট্র গঠন এবং সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচনের আয়োজন ইত্যাদি।

মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, ‘গত ৫৩ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল, তাদের মাধ্যমে দেশে কোনো সুন্দর রাজনৈতিক ধারা প্রতিষ্ঠা পায়নি। পেশিশক্তি প্রয়োগ করে নির্বাচনের মাধ্যমে অযোগ্য লোকজন ক্ষমতায় বসে দেশকে বিভিন্ন কায়দায় অশান্ত করেছিল। সে জন্য আমরা পিআর (সংখ্যানুপাতিক) পদ্ধতিতে নির্বাচনের বিষয়ে একমত হয়েছি।’

এ সময় গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক বলেন, কিছু মৌলিক সংস্কার না হলে দেশে আবার স্বৈরাচার, ফ্যাসিস্ট সৃষ্টিসহ নানা ধরনের সংকট তৈরি হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে নির্মম গণহত্যা পরিচালনাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাচ্ছি। তাদের রাজনীতিও এ দেশে হওয়া উচিত নয়। তাদের বিচারের বিষয়ে গতি আনার ক্ষেত্রে (ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে) একমত হয়েছি।’

সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচনের বিষয়ে ইসলামী আন্দোলন ও গণ অধিকার পরিষদ অনেক আগে থেকেই একমত বলে জানান নুরুল হক। তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট আমলে অনুষ্ঠিত স্থানীয় নির্বাচনে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে যাঁরা জনপ্রতিনিধি হয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ও নির্বাচন বাতিল করা দরকার।

নুরুল হক বলেন, ‘গত আট মাসে স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি না থাকায় সেবা পেতে মানুষ ব্যাপক ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কিছু মানুষ জোর করে আধিপত্য বিস্তার করছে। সে জন্য স্থানীয় নির্বাচন মানুষের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি দিতে পারে। জাতীয় নির্বাচনের আগে সংস্কারে কিছু সময়ের প্রয়োজন। আবার জাতীয় ঐকমত্যেরও প্রয়োজন। অন্তত তার আগে স্থানীয় নির্বাচন হতে পারে।’

গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি বলেন, ভৌগোলিক কারণে বিদেশি আগ্রাসন যাতে এ দেশের রাজনীতির কলকাঠি নাড়াতে না পারে, সে জন্য আধিপত্যবাদমুক্ত কল্যাণরাষ্ট্র তৈরির বিষয়ে বৈঠকে মতৈক্য হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এটি এমন রাষ্ট্র হবে, যেখানে ইসলামী আদর্শবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করা হবে না।’

এর আগে বেলা তিনটায় রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বৈঠকে বসেন দুই দলের নেতারা। বৈঠকে গণ অধিকার পরিষদের পক্ষে আরও উপস্থিত ছিলেন দলের মুখপাত্র ফারুক হাসান, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুন, উচ্চতর পরিষদের সভাপতি হাসিবুর রহমান, আইনজীবী নুরে এরশাদ ও সাকিব হোসেন।

অন্যদিকে ইসলামী আন্দোলনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন দলটির মহাসচিব মাওলানা ইউনুস আহমাদ, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আহমাদ আব্দুল কাইউম প্রমুখ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসল ম সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

পোপ ফ্রান্সিসের শেষ আহ্বান কেউ কি শুনবেন

দীর্ঘ অসুস্থতার পর পোপ ফ্রান্সিস গতকাল ৮৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। মৃত্যুর ঠিক আগের দিন ভ্যাটিকান সিটির সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে ইস্টার সানডের ভাষণে রোমান ক্যাথলিকদের এই শীর্ষ ধর্মগুরু বলেছিলেন, তিনি ‘ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের খ্রিষ্টানদের কষ্ট এবং ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি সব মানুষের দুঃখের’ সঙ্গে একাত্মতা অনুভব করছেন।

এই বক্তব্য ছিল গাজায় ইসরায়েলের চলমান নিধনযজ্ঞ নিয়ে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামলা শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ৫১ হাজার ২০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন সেখানে। এই ভয়াবহ সংঘাত নিয়ে পোপের শেষ বার্তা ছিল, ‘আমি যুদ্ধরত পক্ষগুলোকে আহ্বান জানাই, যুদ্ধবিরতি করুন, জিম্মিদের মুক্ত করুন এবং শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যৎ কামনা করছে যে ক্ষুধার্ত জনগণ, তাদের পাশে দাঁড়ান।’

গাজায় চলমান বিভীষিকার চিত্র তুলতে পোপ ফ্রান্সিস যে ভাষা ব্যবহার করেছেন, তাকে যথাযথ বলা যায় না। কারণ, গণহত্যাকে ‘সংঘাত’ বলা যায় না। যেমনভাবে ইসরায়েলি ঘাতক বাহিনী ও ফিলিস্তিনি গণহত্যার শিকার জনগণকে এককথায় ‘যুদ্ধরত পক্ষ’ বলা যায় না। তা সত্ত্বেও পোপের প্রশংসা প্রাপ্য। কারণ, তিনি জীবনের শেষ মুহূর্তে গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন। এমন একসময়ে এই আহ্বান তিনি জানিয়েছেন, যখন বিশ্বের ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলো যেন ফিলিস্তিনিদের নির্বিচার হত্যাকে চিরস্থায়ীভাবে মেনে নিতে প্রস্তুত।

পোপ সরাসরি দায়ী পক্ষের নাম উল্লেখ না করলেও ‘ক্ষুধার্ত মানুষদের’ জন্য সাহায্যের প্রয়োজনের যে কথা তিনি বলেছেন, তা স্পষ্টতই ইঙ্গিত করে ইসরায়েলের দিকে। কারণ, মার্চের শুরুতে ইসরায়েল গাজায় সব মানবিক সহায়তা প্রবেশ পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে। এটা পরিকল্পিত দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি এবং যুদ্ধাপরাধের শামিল।

১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভেঙে আবার হামলা শুরু করে ইসরায়েল। জাতিসংঘের এক তদন্তে উঠে আসে যে এরপর ৯ এপ্রিল পর্যন্ত গাজায় অন্তত ৩৬টি ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে সবাই ছিলেন নারী ও শিশু। এমন বাস্তবতায় পোপের ভাষ্যমতে ‘একটি শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখা’ যেন কল্পনাতেই সীমাবদ্ধ।

১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভেঙে আবার হামলা শুরু করে ইসরায়েল। জাতিসংঘের এক তদন্তে উঠে আসে যে এরপর ৯ এপ্রিল পর্যন্ত গাজায় অন্তত ৩৬টি ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে সবাই ছিলেন নারী ও শিশু। এমন বাস্তবতায় পোপের ভাষ্যমতে ‘একটি শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখা’ যেন কল্পনাতেই সীমাবদ্ধ। কারণ, যখন কোনো সেনাবাহিনী পরিকল্পিতভাবে একটি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে উঠেপড়ে লাগে, আর সেই সেনাবাহিনীর পেছনে থাকে বিশ্বের প্রধান পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ণ দ্বিদলীয় সমর্থন, তখন ভবিষ্যতের কোনো স্বপ্নই টিকে থাকা কঠিন।

পোপ ফ্রান্সিসের জীবনের শেষ দিনটিতেই তাঁর সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎ হয় যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কর্মকর্তা, ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের সঙ্গে। এই একই মার্কিন সরকারের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনকে পোপ অতীতেও একাধিকবার প্রকাশ্যে সমালোচনা করেছিলেন। বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতিকে তিনি ‘একটি বড় সংকট’ বলে আখ্যা দেন। কারণ, এই অভিবাসন নীতি ‘নারী-পুরুষের মর্যাদাকে পদদলিত করে’। এ মন্তব্য তিনি ফেব্রুয়ারির এক ভাষণে দিয়েছিলেন।

ইস্টার ভাষণে পোপ ফ্রান্সিস চলমান বিপর্যয়ের মুখে মানুষের দুর্দশার কথাও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘দুর্বল, প্রান্তিক মানুষ আর অভিবাসীদের প্রতি কী অবহেলা আর কী পরিমাণ ঘৃণা ছড়ানো হয়!’ এরপর পোপ ফ্রান্সিস আবারও শান্তির প্রতি নিজের আশাবাদের কথা বলেন, ‘শান্তি এখনো সম্ভব। চলুন, এই আশা আমরা নতুন করে গড়ে তুলি।’

কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, ঘৃণা ও মানবতাবিরোধী আচরণই আজকের বৈশ্বিক ব্যবস্থার মূল ভিত্তি। আর এই পৈশাচিক ব্যবস্থার নেতৃত্বে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ ব্যবস্থা মুনাফা ও শাসকশ্রেণির কর্তৃত্ব ছাড়া আর কোনো কিছু গুরুত্ব দেয় না। মানবিকতা সেখানে তুচ্ছ। গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যার পেছনে অস্ত্র ব্যবসা লাভবান হচ্ছে। তেমনি যুক্তরাষ্ট্র অভিবাসীদের মধ্যে সেসব ‘অবৈধ’ শ্রমিককে দমন করছে, যাঁদের শ্রমেই চলে তাদের অর্থনীতি। এই অবহেলা ও বৈষম্য ব্যবসার জন্য লাভজনক। তাই একে টিকিয়ে রাখা হয়।

আরও পড়ুনশান্তি অসম্ভব, যত দিন অস্ত্রের ঝনঝনানি পুরোপুরি বন্ধ হচ্ছে৫ ঘণ্টা আগে

এবারের ইস্টার সপ্তাহে ‘শান্তি সম্ভব’ এমন আশাবাদ ফিলিস্তিনের খ্রিষ্টানদের জন্যও যেন অর্থহীন এক কথা। গাজার ধ্বংসস্তূপে, ইসরায়েল-অধিকৃত পশ্চিম তীরে কিংবা জেরুজালেমে, যেখানে বাইবেলের মতে যিশুকে ক্রুশে চড়ানো হয়েছিল—কোথাও কেউ নিরাপদ নয়।

গাজা শহরের সেন্ট পোরফিরিয়াস গির্জায় এবারের ইস্টার সানডেতে ভয়ে ভয়ে প্রার্থনায় অংশ নেন খ্রিষ্টানরা। কারণ, এ গির্জাই ২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলি বাহিনীর বোমা হামলার শিকার হয়। সেই হামলায় অন্তত ১৮ জন গৃহহীন ফিলিস্তিনি নিহত হন, যাঁদের মধ্যে কয়েকজন খ্রিষ্টানও ছিলেন। তাঁরা সেখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন।

অন্যদিকে পশ্চিম তীর ও জেরুজালেমে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ বহু খ্রিষ্টানকে পবিত্র স্থানগুলোতে প্রবেশে বাধা দিয়েছে। খ্রিষ্টানরা ক্রমাগত ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের হামলা ও রাষ্ট্র-সমর্থিত নিপীড়নের শিকার হচ্ছে।

চলতি বছর ইস্টার উপলক্ষে পূর্ব জেরুজালেমের অধিকৃত এলাকায় অবস্থিত ‘চার্চ অব দ্য হোলি সেপালখার’-এ অংশ নিতে ইসরায়েল পশ্চিম তীরের মাত্র ছয় হাজার ফিলিস্তিনিকে অনুমতি দিয়েছে। সেখানে ইস্টারকে ঘিরে পুরো পরিবেশ ছিল নিরাপত্তা বাহিনীর চাদরে মুড়ে দেওয়া এক সামরিক চেহারায়। এমনকি ফিলিস্তিনে ভ্যাটিকানের প্রতিনিধি পর্যন্ত ওই গির্জায় ঢোকার অনুমতি পাননি।

এর ঠিক এক দিন পর পৃথিবীর বুকে রোমান ক্যাথলিক চার্চের প্রতিনিধি পোপ ফ্রান্সিস নিজেই বিদায় নিলেন। মৃত্যুর আগে রেখে গেলেন এক আবেগঘন আবেদন—গাজায় যুদ্ধবিরতি হোক। 

প্রশ্ন এখন একটাই, এই আহ্বানে কেউ কি সাড়া দেবে?

বেলেন ফার্নান্দেজ লেখক

আল–জাজিরা থেকে নেওয়া ইংরেজির অনুবাদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আগে স্থানীয় নির্বাচন চান চরমোনাই পীর ও নুর
  • আগে স্থানীয় নির্বাচন চান চরমোনাই পীর ও নূর
  • আগে স্থানীয় নির্বাচন চান চরমোনাই পীর ও ভিপি নূর
  • তিন সপ্তাহের মধ্যে আজহারের মুক্তি ও সব মামলা প্রত্যাহার না হলে মাঠে নামবে শিবির
  • পোপ ফ্রান্সিসের শেষ আহ্বান কেউ কি শুনবেন
  • চানখাঁরপুলে গণহত্যার মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের জন্য ২৫ মে তারিখ ধার্য
  • আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবি
  • আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে আইন উপদেষ্টার সঙ্গে আলাপে সন্তুষ্ট নন শিক্ষার্থীরা
  • গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত আরও ৩৩