সিলেট, জিম্বাবুয়ে ‘ভূত’ ও ‘বিটিভি যুগের’ বাংলাদেশ
Published: 23rd, April 2025 GMT
রোমাঞ্চ, উত্তেজনা ছড়াল। নখ কামড়ানো মুহূর্তও এলো। প্রতিটি বল, প্রতিটি রান হয়ে উঠল মহামূল্যবান। প্রতিটি মুহূর্তে রঙ পাল্টাল। এই ম্যাচে জয়-পরাজয়ের পেন্ডুলাম দুই দলের দিকেই দুলেছে। সমীকরণ কখনো বাংলাদেশকে হাসায়, কখনো জিম্বাবুয়েকে। আবার কখনো চোখ রাঙানি দেয় দুই দলকে।
শেষমেশ টানা দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ উইকেট পেয়ে বাংলাদেশের তৃতীয় বোলার হিসেবে দুইশ উইকেটের মাইলফলক ছোঁয়া মেহেদী হাসান মিরাজের বলে রিভার্স সুইপে ওয়েসলি মাধভেরে ৪ রানের সমীকরণ মিলিয়ে দেওয়ায় স্বাগতিক শিবিরে নেমে এলো পিনপতন নিরাবতা। ধ্রুপদী পারফরম্যান্সে বাংলাদেশকে ৩ উইকেটে হারিয়েছে জিম্বাবুয়ে।
১৭৪ রানের লক্ষ্য তাড়া নেমে ৯৫ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়লেও জিততে ঘাম ঝরিয়েছে তারা। তাদের ঘাম ছুটেছে মিরাজের ঘূর্ণিতে। প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়া মিরাজ এবারও পেলেন সমান উইকেট। সঙ্গে তাইজুলের শিকার ২। তাতে বোলিংয়ে কিছুটা লড়াই করলেও দুই ইনিংসে ব্যাটসম্যানদের হতশ্রী পারফরম্যান্সেই ডুবেছে বাংলাদেশ।
আরো পড়ুন:
শান্ত কেন ‘অশান্ত?’
বাংলাদেশের বিপক্ষে কঠিন দিন, তবে এখনো ম্যাচে আছি: মুজারাবানি
১৯৪ রানে ৬ উইকেট হাতে রেখে দিন শুরু করা বাংলাদেশ মাত্র ৫৫ রান যোগ করতেই অলআউট। বাংলাদেশের ভরডুবির শুরুটা দিনের দ্বিতীয় বল থেকে। এতোটা সহজে জিম্বাবুয়ে সাফল্য পাবে হয়তো কল্পনাও করেনি। পেসার মুজারাবানির শর্ট লেন্থের বল পুল করতে চেয়েছিলেন শান্ত। কিন্তু শটটা পুরোপুরি খেললেন না। জাস্ট চেক করলেন। বলে ছিল গতি। টপ এজ হয়ে চলে যায় ফাইন লেগে। সেখানে সহজ ক্যাচ নিয়ে শান্তকে হতাশায় ডোবান নয়ুচি। সাত ইনিংস পর ফিফটি পাওয়া শান্ত থেমে যান ৬০ রানে।
ক্রিজে এসে মিরাজ স্থির থাকতে পারলেন না। ক্যালকুলেটিভ ক্রিকেট খেলার ওপর জোর দিয়েছিলেন মুমিনুল। কিন্তু মিরাজ যেভাবে অফস্টাম্পে বেরিয়ে যাওয়া বল ড্রাইভ করতে গেলেন তাতে নিবেদন নিয়ে উঠল প্রশ্ন। তাকে শর্ট বলে পরীক্ষা নিলেন মুজারাবানি। আগের দিন মিরাজ জানিয়েছিলেন, শর্ট বল তার স্কোরিং জোনও। সেটাই হলো। পুল শটে মুজারাবানিকে ছক্কা উড়ান। আরেক পেসার নয়ুচিকে মারেন চার। পরিকল্পনা পাল্টে তাকে ব্যাক অব লেন্থে বল করেন মুজারাবানি। জোড়া পায়ে ব্যাকফুটে বল খেলতে গিয়ে মিরাজ ক্যাচ দেন গালিতে, ১১ রানে।
তাইজুল এরপর উইকেটে টেকেন ৩ বল। তাতে বাংলাদেশের বড় স্কোরবোর্ডের সম্ভাবনাও কমে যায়। কিন্তু অষ্টম উইকেটে জাকের ও হাসান দেয়াল হয়ে দাঁড়ান। ৯১ বল দুজন লড়াই করেন। যেখানে হাসান ৫৮ বল একাই খেলেন। জাকের আক্রমণ করার পরিবর্তে ওভারের শুরুতে সিঙ্গেল নেওয়ায় তার ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। থিতু হওয়া ব্যাটসম্যান কেন রান বাড়ানোর চেষ্টা করলেন না তো বোঝা গেল না একটুও। হাসান পথ ভুলেন ওয়েলিংটনের বলে বড় শট খেলতে গিয়ে। বাঁহাতি স্পিনার খালেদকে পরের বলেই স্লিপে তালুবন্দি করান। লেজের ব্যাটসম্যান নাহিদকে নিয়ে জাকের ৭ রানের বেশি করতে পারেননি। টানা চার টেস্টে অন্তত এক ইনিংসে ফিফটি তোলার অনন্য রেকর্ড গড়া জাকেরের ব্যাট থেকে আসে ৫৮ রান।
বাংলাদশ জিম্বাবুয়েকে অন্তত ৩০০ রানের টার্গেট দিতে চেয়েছিল। কিন্তু ২৫৫ রানে অলআউট হয়ে লক্ষ্য দেয় ১৭৪ রানের। শুরুতে বেনেট ও বেন কুরান ৯৫ রান তুললে কাজটা সহজ হয়ে যায় জিম্বাবুয়ের জন্য। প্রতি আক্রমণে গিয়ে তারা রান তোলেন অনায়েসে।
কিন্তু উদ্বোধনী জুটি ভাঙার পর সব এলোমেলো হয়ে যায় মুহূর্তেই। রান আসছিল। সঙ্গে পড়ছিল উইকেট। তাতে জমে উঠে ম্যাচ। কিন্তু শেষ হাসিটা আর হাসতে পারেনি বাংলাদেশ। মিরাজের দুইশ উইকেটের মাইলফলক ছোঁয়া ম্যাচটাতেও আর জিততে পারেনি।
সিলেটের এই মাঠকে জিম্বাবুয়ের জন্য পয়মন্ত বলতে হবে। দুই টেস্ট খেলে দুটিতেই জয় পেলে। ২০১৮ সালে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের অভিষেক ম্যাচে ১৫১ রানে বাংলাদেশকে হারিয়েছিল তারা। মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ, লিটন, শান্তরাও খেলেছিলেন ওই ম্যাচ। জিম্বাবুয়ে দলে হ্যামিল্টন মাসাকাদজা, সিকান্দার রাজা, ব্রেন্ডন টেলরের মতো তারকারা ছিলেন। একপেশে ম্যাচে বাংলাদেশ সহজেই করে আত্মসমর্পণ।
সাত বছর পর আবার সেই একই ক্রিকেট। পার্থক্য এবার একটু শেষ দিকে লড়াই করেছে। নয়তো সিলেট ও জিম্বাবুয়ে ‘ভূত’ বাংলাদেশের ওপর বেশ ভালোভাবেই চেপে বসেছে বোঝা যাচ্ছে। সেই ‘ভূত’ সামনে কবে তাড়াতে পারবে বাংলাদেশ সেটাই দেখার।
বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে সিরিজের ম্যাচ সরাসরি সম্প্রচারিত হয়েছে বিটিভিতে। এই খবর ছড়িয়ে পড়ার পর নস্টালজিয়ার ছোঁয়া লেগেছে অনেকের মনে। পুরোনো দিনের ক্রিকেটের কথাই মনে হয়েছে সবার। ক্রিকেটাররা মাঠের পারফরম্যান্সে সেই ‘বিটিভি যুগের’ ক্রিকেটকেই ফিরিয়েছেন। দুই ইনিংসে ব্যাটিংয়ে ব্যর্থতা। বোলারদের লড়াই। তাতে কিছুটা মুখরক্ষা হয়েছে। কিন্তু ২২ গজে তাদের যে নিবেদন, শরীরী ভাষার যে হতশ্রী নিদের্শন তাতে পুরো দলকে কাঠগড়ায় তোলা যাবে।
ঢাকা/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
চেরির দুটি গাড়ি ও ইএলএফ লুব্রিকেন্টস বাংলাদেশে
চেরির নতুন এসইউভি গাড়ি ‘টিগো ৮ প্রো’ এবং ‘টিগো ক্রস’ বাংলাদেশের বাজারে ছাড়া হয়েছে। একই সঙ্গে ফরাসি ব্র্যান্ড ইএলএফের লুব্রিকেন্টস বাজারে ছাড়া হয়। বাংলাদেশে ইএলএফ লুব্রিকেন্টসে অফিশিয়াল ডিস্ট্রিবিউটর এশিয়ান পেট্রোলিয়াম লিমিটেড এবং চেরি বাংলাদেশের অফিশিয়াল ডিস্ট্রিবিউটর এশিয়ান মোটরস্পেক্স লিমিটেড, আজ র্যাডিসন ব্লু ঢাকা ওয়াটার গার্ডেনে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ ঘোষণা দিয়েছে।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড় ও চেরি বাংলাদেশের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর ও ইএলএফ লুব্রিকেন্টসের মুখ্য অপিনিয়ন লিডার তামিম ইকবাল খান উপস্থিত ছিলেন। তামিম ইকবাল বলেন, ‘টিগো ৮ প্রো প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে বেশ উন্নত এবং অত্যন্ত আরামদায়ক, যা আমাকে সত্যিই মুগ্ধ করেছে। পাশাপাশি ইএলএফ লুব্রিকেন্টস বাংলাদেশে আসায় আমি আনন্দিত। কারণ, গাড়ি ও মোটরবাইকের স্বাস্থ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
বিশ্বব্যাপী চতুর্থ স্থানে অবস্থানকারী ইএলএফ হাই পারফরম্যান্স প্রযুক্তি, উদ্ভাবন এবং মোটরস্পোর্ট হেরিটেজের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। ফর্মুলা ওয়ান-এ ১৩৬ বারেরও বেশি জয়লাভ এবং সিএফ মোটরস, অ্যালপাইন রেনল্ট ও রয়্যাল এনফিল্ডের মতো বৈশ্বিক ব্র্যান্ডের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্বের পর ইএলএফ এখন বাংলাদেশের মোটরসাইকেল ও প্যাসেঞ্জার গাড়ির জন্য লুব্রিকেন্ট পারফরম্যান্সের এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপনে প্রস্তুত।
ইএলএফ বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেওয়ান সাজেদুর রহমান বলেন, ইএলএফ শুধু একটি পণ্য নয়, বরং একটি ঐতিহ্যের নাম। বাংলাদেশের উষ্ণ আবহাওয়া এবং যানজটে ভরা রাস্তাগুলোর কথা মাথায় রেখে ইএলএফ যানবাহনের দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য ও নির্ভরযোগ্যতা নিশ্চিত করবে। এটি গাড়ি, মোটরবাইক, বাস, ট্রাক কিংবা সিএনজি—সব ধরনের যানবাহনের সুরক্ষায় নতুন মাত্রা যোগ করবে।
অনুষ্ঠানে এশিয়ান হোল্ডিংসের পরিচালক কোসুকে ইয়োশিদা বলেন, ‘এ আয়োজনের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশে চেরির কেবল দুটি নতুন মডেল নয়, জীবনধারার এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে যাচ্ছি।’
টিগো ৮ প্রো
চেরির ‘টিগো ৮ প্রো ১.৬টি’ ফ্ল্যাগশিপ মডেলে আছে শক্তিশালী ১৯৫ বিএইচপি টার্বোচার্জড পেট্রল ইঞ্জিন ও প্রিমিয়াম ইন্টেরিওর, যা সবার নজর কেড়েছে। এতে আছে ভেগান চামড়ার আসন, প্যানোরামিক সানরুফ, ৯টি এয়ারব্যাগ, ৩৬০ ডিগ্রি সেফটি সিস্টেম ও জেসচার কন্ট্রোলড টেলগেট, ডুয়েল ১২.৩ ইঞ্চি কার্ভড ডিসপ্লে, ওয়্যারলেস অ্যাপল কারপ্লে ও অ্যান্ড্রয়েড অটো, প্রিমিয়াম সনি সাউন্ড সিস্টেমের মতো উন্নত বিভিন্ন সুবিধা। পার্ল হোয়াইট ও অরোরা গ্রিন রঙে এসইউভি মডেলটি পাওয়া যাবে। এ গাড়িটির দাম ৫৩ লাখ টাকা।
টিগো ক্রস
টিগো ক্রস একটি সুবিধাসমৃদ্ধ এসইউভি। এতে আছে ১৪৫ বিএইচপি ক্ষমতাসম্পন্ন ১.৫ লিটার টার্বোচার্জড ইঞ্জিন, স্টাইলিশ ব্ল্যাক ড্যাশবোর্ড, ডুয়েল-জোন ক্লাইমেট কন্ট্রোল, ১০.২৫ ইঞ্চি টাচস্ক্রিন-এর পাশাপাশি অ্যাডাপটিভ ক্রুজ কন্ট্রোল, ব্লাইন্ড স্পট ডিটেকশন ও ৩৬০ ক্যামেরার মতো উন্নত সেফটি ফিচারস। এ গাড়ির দাম ৩৬ লাখ টাকা।