বাংলাদেশকে হারিয়ে জিম্বাবুয়ের ইতিহাস
Published: 23rd, April 2025 GMT
বৃষ্টি আসি আসি করেও আসেনি! সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে আলোকস্বল্পতায় চতুর্থ দিনের খেলা বন্ধ হতেও হতেও হয়নি! আর তাতে সিলেট টেস্টে জিম্বাবুয়ের কাছে চার দিনের মধ্যেই হেরে গেল বাংলাদেশ। টেস্টের চতুর্থ দিনের শেষ বিকেলে আঁধারে ঢেকে যাওয়া মাঠে ফ্লাডলাইটের কৃত্রিম আলোর নিচে জিম্বাবুয়ের কাছে ৩ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ।
দ্বিতীয় ইনিংসেও ৫ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। সেই মিরাজকে রিভার্স সুইপে বাউন্ডারি মেরে জিম্বাবুয়েকে জিতিয়ে দেন ওয়েসলি মাধেভেরে। ২০২১ সালের পর এটিই জিম্বাবুয়ের প্রথম টেস্ট জয়।
বাংলাদেশের দেওয়া ১৭৪ রানের লক্ষ্যে জিম্বাবুয়ে ছুঁয়েছে ৭ উইকেট হারিয়ে। যা জিম্বাবুয়ের টেস্ট ইতিহাসে রেকর্ড রান তাড়া করে জয়। আগের রেকর্ডটা ১৬২। ১৯৯৮ সালে পেশোয়ার পাকিস্তানের দেওয়া ১৬২ রানের লক্ষ্য তাড়া করে ৭ উইকেটে জিতেছিল দলটি।
চতুর্থ ইনিংস হলেও সিলেটের উইকেটে ১৭৪ রান ছোঁয়া খুব কঠিন কিছু ছিল না। সেটা টেস্টের চতুর্থ দিন হলেও। তবে জিম্বাবুয়ের এত রান করে জেতার অতীত রেকর্ড না থাকায় বাংলাদেশের অনেক সমর্থকই আশা খুঁজে পেয়েছিলেন।
কিন্তু ওপেনিং জুটিতে জিম্বাবুয়ে ৯৫ রান তুলে ফেলায় শেষদিকে বাংলাদেশ ভালো করলেও ম্যাচ জেতা সম্ভব হয়নি। এই ইনিংসেও ফিফটি পেয়েছেন জিম্বাবুয়ের ওপেনার ব্রায়ান বেনেট। আরেক ওপেনার বেন কারেন করেছেন ৪৪ রান। দুজনকেই ফিরিয়েছেন মিরাজ। ওপেনিং জুটিতে ভাঙার পর মিরাজ-তাইজুল নিয়মিত বিরতিতে উইকেট নিয়েছেন। তবে দলকে জয় এনে দিতে পারলেন না তাঁরা। টেস্ট ক্যারিয়ারে তৃতীয়বার ১০ উইকেট নেওয়াটাই হয়ে রইল মিরাজের সান্তনা।
সিলেটে আজকের দিনের শুরুটা হয়েছে অধিনায়ক নাজমুলের ভুলে। ব্লেসিং মুজারাবানির পাতা ফাঁদে পা দিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। চতুর্থ দিনের প্রথম বলটা ইয়র্কার দিয়ে নাজমুলকে অপ্রস্তুত করে ফেলেন মুজারাবানি। অপ্রস্তুত নাজমুলকে পরের বলটিতে মুজারাবানি দেন বাউন্সার। ব্যাস! উইকেটে এসেই পুল খেলতে গিয়ে ক্যাচ দেন নাজমুল। গতকাল ধৈর্যের পরীক্ষায় পাস করে ৬০ রানে অপরাজিত থাকা নাজমুলের ইনিংস শেষ তাতে।
বাংলাদেশের ব্যাটিং ইনিংসের বাকি সময়েও ছিল ভুলের প্রাধান্য। মেহেদী হাসান মিরাজ এদিনও ছিলেন ব্যর্থ। এক চার ও এক ছক্কায় ইনিংস শুরু করা মিরাজ ফেরেন মুজারাবানির বলে গালিতে ক্যাচ দিয়ে।
ভুল খুঁজলে ফিফটি করা জাকের আলীর ব্যাটিংয়েও পাওয়া যাবে। ২১৩ রানে ৭ উইকেট হারানোর পর যেভাবে বোলার হাসান মাহমুদকে ওভারের পর ওভার স্ট্রাইক দিয়েছেন, সেটাও দৃষ্টিকটুই লেগেছে। হ্যাঁ, হাসান ৫৮ বল খেলেছেন। জাকেরের সঙ্গে ৩৫ রানের জুটিতে তাঁর অবদান ছিল ১২ রানের। তবুও, হাসানের মতো টেলএন্ডারের ব্যাটসম্যানদের ভুল করার সম্ভাবনা বেশিই থাকে। সেটাই হয়েছে শেষ পর্যন্ত। ওয়েলিংটন মাসাকাদজার বলে ছক্কা মারতে গিয়েই ফিরেছেন তিনি। আরেক পেসার খালেদ আহমেদ ফিরেছেন প্রথম বলেই।
২৪৮ রানে ৯ উইকেট হারানোর বাংলাদেশ শেষ উইকেট জুটিতে তুলতে পেরেছেন ৭ রান। এরপরও জাকেরের ইনিংসটির গুরুত্ব কম নয়। লেজের ব্যাটসম্যানদের সঙ্গে নিয়েই ৫৮ রানের ইনিংস খেলেছেন জাকের, এ নিয়ে ক্যারিয়ারের প্রথম ৪ টেস্টেই ফিফটি পেয়েছেন জাকের। বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে যা প্রথম। তবে এই কীর্তির দিনেই জিম্বাবুয়ের কাছে দলের হার দেখতে হচ্ছে তাঁকে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পঞ্চগড়ে মামলার রায় শুনে আদালত চত্বরে বিক্ষোভের ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ
পঞ্চগড়ে হত্যা মামলার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আদালত চত্বরে বাদীপক্ষের লোকজনের বিক্ষোভ, আদালতের বিষয়ে সম্মানহানি ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য এবং গণমাধ্যমকর্মীদের মিথ্যা তথ্য দেওয়ার বিষয়ে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে জেলা আইনজীবী সমিতি। বুধবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে পঞ্চগড় জেলা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মো. আদম সুফি তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ প্রতিবাদ জানান।
এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার সকালে আইনজীবী সমিতির জরুরি সভা আহ্বান করা হয়েছিল। মো. আদম সুফির সভাপতিত্বে ওই সভায় জেলা জজ আদালতের আইনজীবী আইবুল আলম আঙ্গুরকে প্রধান করে চারজন আইনজীবীর সমন্বয়ে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জেলা জজ আদালতের গভর্নমেন্ট প্লিডার (জিপি) আব্দুল বারী, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) খলিলুর রহমান, পঞ্চগড় জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি মির্জা নাজমুল ইসলাম কাজলসহ অন্য আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন। লিখিত বক্তব্যে মো. আদম সুফি বলেন, গত ২০ মার্চ পঞ্চগড় জেলা ও দায়রা জজ আদালতে একটি মামলার রায় প্রকাশের পর উচ্ছৃঙ্খল কিছু ব্যক্তি আদালতের বিষয়ে সম্মানহানিকর ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দেন। ওই বক্তব্যে পঞ্চগড় জেলা আইনজীবী সমিতি দুঃখ প্রকাশসহ তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটি বস্তুনিষ্ঠ নয়। কিছু উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তি আদালত ও আইনজীবীদের সম্মান ক্ষুণ্ন করার হীন উদ্দেশ্যে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন।
গত রোববার দুপুরে পঞ্চগড় জেলা জজ আদালত চত্বরে জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে মারামারির ঘটনায় পক্ষে-বিপক্ষে করা দুটি মামলার আসামিদের বেকসুর খালাসের রায় শুনে আদালত চত্বরে বিক্ষোভ করেন হত্যা মামলার বাদীপক্ষের লোকজন। বিক্ষোভে হত্যা মামলার বাদীপক্ষের লোকজন ন্যায়বিচার পাননি দাবি করে আদালতের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় আদালতে আসা উৎসুক লোকজন সেখানে ভিড় করেন। বেশ কিছুক্ষণ চেষ্টার পর পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সংবাদ সম্মেলনে মো. আদম সুফি আরও বলেন, রায় ঘোষণার পর আদালতের উদ্দেশে বিক্ষোভকারী যে ধরনের স্লোগান দিয়েছেন, তা আদালতকে অসম্মান করার শামিল। এ ছাড়া বিভিন্ন সাংবাদিকদের কাছে যেভাবে টাকাপয়সা লেনদেনের কথা বলছিলেন, তা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। পঞ্চগড়ে বিচারকেরা সুশৃঙ্খল পরিবেশে তাঁদের বিচারকার্য পরিচালনা করবেন এবং জেলার মানুষ ন্যায়বিচার পাবেন এমনটাই তাঁদের কামনা। কিন্তু কেউ যদি এই সম্মান আর আস্থার জায়গাটিতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করে, তা খুবই দুঃখজনক। এ ব্যাপারে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদেরও সহায়তা চান।
আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালের ৩০ মার্চ জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার দেবনগর ইউনিয়নের ঝালিঙ্গিগছ এলাকায় কসির উদ্দিনের পরিবারের সঙ্গে প্রতিবেশী সামসুল হকের পরিবারের লোকজনের জমি নিয়ে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অনেকে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। পরদিন সকালে কসির উদ্দিনের ছেলে মো. এরশাদ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ওই দিনই রাতে এরশাদের বাবা কসির উদ্দিন বাদী হয়ে তেঁতুলিয়া থানায় ওই ঘটনায় সামসুল হক পক্ষের ২১ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন।
ঘটনার প্রায় আড়াই মাস পর ২০১১ সালের ১৪ জুন অপর পক্ষ সামসুল হকের স্ত্রী রনজিনা বেগম পঞ্চগড় আদালতে কসির উদ্দিন পক্ষের ১৯ জনকে আসামি করে একই ঘটনায় একটি পাল্টা মামলা করেন। দুটি মামলার কার্যক্রম একই আদালতে চলছিল। দীর্ঘদিন আইনি প্রক্রিয়া শেষে কোনো পক্ষই অভিযোগ প্রমাণ করতে না পারায় গত রোববার দুপুরে পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এস এম রেজাউল বারী দুটি মামলার সব আসামিকেই বেকসুর খালাসের রায় দেন।