আমার ব্যক্তিগত তথ্য প্রচার করছে, আর নিতে পারছি না: আদালতকে পরীমনি
Published: 23rd, April 2025 GMT
মানহানিকর বক্তব্য ও খবর প্রচারের অভিযোগে গৃহকর্মী পিংকি আক্তারসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছেন আলোচিত চিত্রনায়িকা পরীমনি। ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে আজ বুধবার এ মামলা করেন তিনি।
আদালত মামলাটি তদন্ত করে ভাটারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সাইবার ট্রাইব্যুনালের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) মিরাজ উদ্দিন শিকদার।
এর আগে পরীমনি আজ বুধবার বিকেলে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে হাজির হন। পরে তিনি আদালতে জবানবন্দি দেন।
পরীমনি আদালতকে বলেন, ‘মাননীয় আদালত, আমার বাসায় আরও কয়েকজন গৃহকর্মী কাজ করেন। কেউ কিন্তু আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেননি। পিংকি আক্তার ইচ্ছাকৃতভাবেই আমার বিরুদ্ধে অবিরাম মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য প্রচার করে চলেছেন।’
পরীমনি বলেন, ‘পিংকি আক্তারকে আমি নির্যাতন কিংবা কোনো ধরনের বকাঝকা করিনি। একটি গ্যাং তাঁকে দিয়ে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে। আমার ব্যক্তিগত অনেক স্পর্শকাতর তথ্য প্রচার করছে। এতে আমি মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।’
একপর্যায়ে পরীমনি আদালতকে বলেন, ‘মাননীয় আদালত, এমনভাবে আমার বিরুদ্ধে প্রচার করে যাচ্ছে, আমি আর এটি নিতে পারছি না। আমি বিচার চাই।’
মামলায় গৃহকর্মী পিংকি আক্তার ছাড়া ‘সকল খবর’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক মোর্শেদ সুমন এবং ‘প্রতিদিনের বাংলাদেশ এন্টারটেইনমেন্ট’, ‘অনলাইন পোর্টাল পিপলস নিউজ’ ও ‘ডিজিটাল খবর’কে আসামির তালিকায় রাখা হয়েছে।
মামলায় পরীমনি দাবি করেছেন, একটি সংস্থার মাধ্যমে গত ৫ মার্চ পিংকি আক্তার নামের এক গৃহকর্মীকে নিয়োগ দেন। গত ২৭ মার্চ তাঁকে ২০ হাজার টাকা বেতন দেন। পিংকি আক্তার গত ২ এপ্রিল তাঁর বাসা থেকে চলে যান। এরপর তাঁর বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা, বানোয়াট ও অশ্লীল তথ্য প্রচার করে আসছেন। পিংকি আক্তারের এমন বক্তব্যের কারণে অন্যরাও সেটি ফলাও করে প্রচার করছে।
মামলায় পরীমনি দাবি করেছেন, পিংকি আক্তারসহ অন্যরা পরস্পর যোগসাজশে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভুয়া ভিডিও প্রচার করেছেন।
পরীমনি তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত সংবাদগুলোর একটি তালিকা মামলায় উল্লেখ করেছেন। এ ছাড়া ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারিত ভিডিওর লিংকও মামলায় উল্লেখ করেছেন তিনি।
উল্লেখ্য, গত ১৭ এপ্রিল চিত্রনায়িকা পরীমনির বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার মামলা করেন গৃহকর্মী পিংকি আক্তার। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে তিনি এ মামলা করেন। আদালত মামলাটি পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে ৮ মের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন।
এর আগে ২০২২ সালের ১৮ জুলাই পরীমনির বিরুদ্ধে মারধর ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে ঢাকার আদালতে নালিশি মামলা করেন ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ। মামলাটি ঢাকার আদালতে বিচারাধীন। পরীমনির বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা আরও একটি মামলার বিচার চলছে। অন্যদিকে পরীমনির দায়ের করা আরেকটি ধর্ষণচেষ্টার মামলা বিচারাধীন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আম র ব র দ ধ গ হকর ম কর ছ ন তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
পঞ্চগড়ে মামলার রায় শুনে আদালত চত্বরে বিক্ষোভের ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ
পঞ্চগড়ে হত্যা মামলার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আদালত চত্বরে বাদীপক্ষের লোকজনের বিক্ষোভ, আদালতের বিষয়ে সম্মানহানি ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য এবং গণমাধ্যমকর্মীদের মিথ্যা তথ্য দেওয়ার বিষয়ে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে জেলা আইনজীবী সমিতি। বুধবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে পঞ্চগড় জেলা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মো. আদম সুফি তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ প্রতিবাদ জানান।
এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার সকালে আইনজীবী সমিতির জরুরি সভা আহ্বান করা হয়েছিল। মো. আদম সুফির সভাপতিত্বে ওই সভায় জেলা জজ আদালতের আইনজীবী আইবুল আলম আঙ্গুরকে প্রধান করে চারজন আইনজীবীর সমন্বয়ে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জেলা জজ আদালতের গভর্নমেন্ট প্লিডার (জিপি) আব্দুল বারী, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) খলিলুর রহমান, পঞ্চগড় জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি মির্জা নাজমুল ইসলাম কাজলসহ অন্য আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন। লিখিত বক্তব্যে মো. আদম সুফি বলেন, গত ২০ মার্চ পঞ্চগড় জেলা ও দায়রা জজ আদালতে একটি মামলার রায় প্রকাশের পর উচ্ছৃঙ্খল কিছু ব্যক্তি আদালতের বিষয়ে সম্মানহানিকর ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দেন। ওই বক্তব্যে পঞ্চগড় জেলা আইনজীবী সমিতি দুঃখ প্রকাশসহ তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটি বস্তুনিষ্ঠ নয়। কিছু উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তি আদালত ও আইনজীবীদের সম্মান ক্ষুণ্ন করার হীন উদ্দেশ্যে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন।
গত রোববার দুপুরে পঞ্চগড় জেলা জজ আদালত চত্বরে জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে মারামারির ঘটনায় পক্ষে-বিপক্ষে করা দুটি মামলার আসামিদের বেকসুর খালাসের রায় শুনে আদালত চত্বরে বিক্ষোভ করেন হত্যা মামলার বাদীপক্ষের লোকজন। বিক্ষোভে হত্যা মামলার বাদীপক্ষের লোকজন ন্যায়বিচার পাননি দাবি করে আদালতের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় আদালতে আসা উৎসুক লোকজন সেখানে ভিড় করেন। বেশ কিছুক্ষণ চেষ্টার পর পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সংবাদ সম্মেলনে মো. আদম সুফি আরও বলেন, রায় ঘোষণার পর আদালতের উদ্দেশে বিক্ষোভকারী যে ধরনের স্লোগান দিয়েছেন, তা আদালতকে অসম্মান করার শামিল। এ ছাড়া বিভিন্ন সাংবাদিকদের কাছে যেভাবে টাকাপয়সা লেনদেনের কথা বলছিলেন, তা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। পঞ্চগড়ে বিচারকেরা সুশৃঙ্খল পরিবেশে তাঁদের বিচারকার্য পরিচালনা করবেন এবং জেলার মানুষ ন্যায়বিচার পাবেন এমনটাই তাঁদের কামনা। কিন্তু কেউ যদি এই সম্মান আর আস্থার জায়গাটিতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করে, তা খুবই দুঃখজনক। এ ব্যাপারে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদেরও সহায়তা চান।
আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালের ৩০ মার্চ জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার দেবনগর ইউনিয়নের ঝালিঙ্গিগছ এলাকায় কসির উদ্দিনের পরিবারের সঙ্গে প্রতিবেশী সামসুল হকের পরিবারের লোকজনের জমি নিয়ে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অনেকে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। পরদিন সকালে কসির উদ্দিনের ছেলে মো. এরশাদ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ওই দিনই রাতে এরশাদের বাবা কসির উদ্দিন বাদী হয়ে তেঁতুলিয়া থানায় ওই ঘটনায় সামসুল হক পক্ষের ২১ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন।
ঘটনার প্রায় আড়াই মাস পর ২০১১ সালের ১৪ জুন অপর পক্ষ সামসুল হকের স্ত্রী রনজিনা বেগম পঞ্চগড় আদালতে কসির উদ্দিন পক্ষের ১৯ জনকে আসামি করে একই ঘটনায় একটি পাল্টা মামলা করেন। দুটি মামলার কার্যক্রম একই আদালতে চলছিল। দীর্ঘদিন আইনি প্রক্রিয়া শেষে কোনো পক্ষই অভিযোগ প্রমাণ করতে না পারায় গত রোববার দুপুরে পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এস এম রেজাউল বারী দুটি মামলার সব আসামিকেই বেকসুর খালাসের রায় দেন।