কাঠামোগত শোষণের শিকার হয়ে প্রান্তিক কৃষকেরা ফসলের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ শোষণ থেকে কৃষককে বাঁচাতে ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার পাশাপাশি কৃষিমূল্য কমিশন গঠন, ন্যায্য বাজার ব্যবস্থাপনা তৈরি, ঋণ ব্যবস্থাপনা সহজীকরণ ও আমদানি নীতির সংস্কার প্রয়োজন।

আজ বুধবার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘ক্ষুদ্র কৃষকের উৎপাদিত ফসলের মূল্য বঞ্চনা’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন। খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক (খানি) আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে মেহেরপুরের প্রান্তিক কৃষক সাইফুল শেখের আত্মহত্যার ঘটনা সরেজমিন অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্য উপস্থাপন করা হয়।

খাদ্যনিরাপত্তা নেটওয়ার্কের সভাপতি এম জয়নুল আবেদীন বলেন, কৃষক যখন তার ফসল বাজারে তোলে, তখনই দেখা যায় সে কৃষিপণ্যটি আমদানি করা হচ্ছে। ফলে, কৃষক তার ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয়। কৃষককে মেরে ফেলে সস্তায় কৃষিপণ্য কেনার অধিকার কারও নেই। উৎপাদক ও ভোক্তা দুজনের কেউ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেটা সরকারকে নিশ্চিত করার আহ্বান জানান জয়নুল আবেদীন।

কীভাবে কৃষক ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, সেটার উদাহরণ তুলে ধরে খানির সহসভাপতি রেজাউল করিম সিদ্দিক বলেন, মেহেরপুরের সাইফুল শেখ যখন পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে আত্মহত্যা করছেন, তখন পেঁয়াজের মনপ্রতি দাম ছিল ৬০০ টাকা। ঠিক তার দুই সপ্তাহ পর মনপ্রতি পেঁয়াজের দাম উঠেছে ১৫০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকা।

ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, কৃষকেরা মহাজনের কাছ থেকে, বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) থেকে চড়া সুদে ঋণ নেন। প্রতি সপ্তাহে তাঁকে তা পরিশোধ করতে হয়। যখন ফসল ঘরে আসে তখন মহাজন, এনজিও প্রতিনিধিরা এসে হাজির হয় ঋণের টাকার জন্য। তখন বাধ্য হয়ে তাকে পেঁয়াজ বিক্রি করে দিতে হয়।

এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে তিনি সরকারের পক্ষ থেকে কৃষককে ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়ার পথ সহজ করা ও মৌসুমি ঋণ দেওয়ার পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব অ্যাকাউন্টিং ও ইনফরমেশন সিস্টেমের সহযোগী অধ্যাপক মোশাহিদা সুলতানা বলেন, কৃষকের আত্মহত্যার ঘটনা চরম অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে। সরকার কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। সম্প্রতি সরকার যে ধানের দাম নির্ধারণ করেছে, সেটা কৃষকের জন্য লাভজনক হবে না।

কৃষক দাদন নেয় মহাজনের কাছ থেকে, কিন্তু ব্যাংকে যায় না উল্লেখ করে এই শিক্ষক বলেন, ব্যাংকে এত কাগজপত্র দিতে হয় যে কৃষক ঋণ নিতে অনীহা প্রকাশ করে। ব্যাংক ঋণ নেওয়ার প্রক্রিয়াটা কৃষকের জন্য সহজতর করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে কৃষক সাইফুল শেখের মেয়ে রফিজা বেগম বক্তব্য দেন। রফিজা বলেন, ‘দুই বিঘা পেঁয়াজ চাষ কইরা বাবা লস খাইছিল। বাবা পেঁয়াজ বিক্রি করছিল ৬০০ টাকা মনে। এহন বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি অয় ২০০০ টাকাতে। এভাবে বাবা ঠকছে। একজন কৃষক যদি এভাবে ঠইকা আত্মহত্যা করে, তাহলে মানুষের মুখে খাবার তুইলা দিব কে।’

সংবাদ সম্মেলনে খানির পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠক উম্মে সালমা। সেখানে বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে লোকসান ঠেকাতে সরকারের সরাসরি কৃষকের কাছ ধান ও চাল কেনার উদ্যোগ গ্রহণ করা, কৃষকের ফসল বিক্রির সুবিধার্থে ইউনিয়ন পর্যায়ে সরকারি ক্রয়কেন্দ্র স্থাপন করা, ফসল সংরক্ষণের জন্য কৃষি জোনভিত্তিক কমিউনিটি সংরক্ষণাগার নির্মাণ, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের জন্য শস্য বিমা চালু, ফসলহানি হলে ঋণ মওকুফের ব্যবস্থা।

নুরুল আলম মাসুদের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন ইনসিডইন বাংলাদেশের অপারেশন অফিসার মো.

মুশফিকুর রহমান ও একশনএইডের উপব্যবস্থাপক অমিত রঞ্জন দে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক র জন য ব যবস থ সরক র ক ষকক

এছাড়াও পড়ুন:

জন্মনিবন্ধনের তথ্য বলছে, বরিশালে র‍্যাবের অভিযানে নিহত ও আহত দুজনের বয়স ১৭

বরিশালের আগৈলঝাড়ায় সাদা পোশাকে র‍্যাবের মাদকবিরোধী অভিযানে গুলিতে হতাহত দুজনই জন্মনিবন্ধনের তথ্য অনুযায়ী শিশু-কিশোর।

যদিও নিহত কলেজছাত্র সিয়াম মোল্লার বয়স ২২ ও আহত এসএসসি পরীক্ষার্থী রাকিব মোল্লার বয়স ২১ বছর বলে উল্লেখ করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নিহতের সুরতহাল প্রতিবেদন ও র‍্যাবের পক্ষ থেকে করা মামলায় তাদের ওই বয়স উল্লেখ করা হয়।

দুই শিক্ষার্থীর বয়স বাড়িয়ে ‘মাদক ব্যবসায়ী’ হিসেবে উল্লেখ করায় নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তারা মাদক ব্যবসায়ী কিংবা মাদকাসক্ত ছিল না বলে দাবি করেছেন স্বজন ও এলাকাবাসী। এ ঘটনায় আজ বুধবার দুপুরে উজিরপুরের সাহেবের হাট মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে মানববন্ধন করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন এলাকাবাসী ও বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

নিহত সিয়াম এই বিদ্যালয় থেকে গতবার এসএসসি পাস করে একই এলাকার আইডিয়াল কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। আর বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রাকিব মোল্লা এই বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে।

জন্মনিবন্ধন সনদের তথ্য অনুযায়ী, নিহত সিয়ামের জন্ম ২০০৮ সালের ২৪ জানুয়ারি। মৃত্যুর দিন ২১ এপ্রিল তার বয়স হয়েছিল ১৭ বছর ১ মাস ২৮ দিন। আর রাকিবের জন্ম ২০০৭ সালের ১ আগস্ট। সেই হিসাবে তার বয়স ১৭ বছর ৮ মাস ২০ দিন। দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী দুজনই শিশু-কিশোর।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে র‍্যাব-৮-এর এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, বয়সের বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। তাই এ ধরনের বিভ্রম হতে পারে। কারণ, অভিযানে যাওয়া র‍্যাবের সদস্যরা ওই দুজনকে চিনতেন না। তিনি বলেন, মাদক ব্যবসায়ীদের ধরার জন্য অভিযানে গেলে সেখানে মাদক ব্যবসায়ী ১০-১১ জন মিলে র‍্যাব সদস্যদের ওপর হামলা করেছিলেন। এ জন্য আত্মরক্ষার্থে তাঁরা গুলি করতে বাধ্য হন। হামলায় র‍্যাবের দুজন সদস্যও আহত হয়েছেন।

র‍্যাবের অভিযানে গুলিতে এক শিক্ষার্থী নিহত ও এক শিক্ষার্থী আহতের ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধন করেন এলাকাবাসী ও বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বুধবার দুপুরে উজিরপুর উপজেলার সাহেবেরহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে

সম্পর্কিত নিবন্ধ