নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার টালবাহানা করছে: রুহুল কবির রিজভী
Published: 23rd, April 2025 GMT
নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার টালবাহানা করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। আজ বুধবার দুপুরে মানিকগঞ্জে দুর্বৃত্তের আগুনে পুড়ে যাওয়া চারুশিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়ি পরিদর্শনের পর সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘এই সরকার নির্বাচন নিয়ে কী টালবাহানা করছে, তা আমরা দেখছি। এই সরকার তো গণতন্ত্র সংগ্রামের ফসল। তার তো প্রতিটা ক্ষেত্রে জবাবদিহি থাকতে হবে। জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়িতে আগুন লাগল কী করে?’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘যে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে চিত্রকর্ম দিয়ে, শৈল্পিক চেতনা দিয়ে মানবেন্দ্র প্রতিবাদ করেছেন। মানবেন্দ্রর মতো আরও কত লোক যে সামনে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন! যাঁরা গণতন্ত্রের কথা বলেছেন, বহুদলীয় গণতন্ত্রের কথা বলেছেন, যাঁরা লড়াই করেছেন, গুলির সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছেন, এখনো যাঁরা ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই আওয়ামী ফ্যাসিস্ট দোসরদের টার্গেটে পরিণত হয়ে আছেন। তারা এক এক করে তাঁদের ওপর আক্রমণ করবে।’
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে রিজভী বলেন, ‘সব গণতন্ত্রকামী মানুষ আপনাদের সমর্থন দিয়েছে। কিন্তু কনস্টিটিউশনালি বা আইনগতভাবে অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো ভিত্তি নেই। যাঁরা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই আপনাদের সমর্থন করেছেন; সেই অনুযায়ী আপনারা দেশ চালাচ্ছেন। এখন আওয়ামী লীগ কীভাবে রাজনীতি করবে, সেই দায়িত্ব অন্তর্বর্তী সরকারের। কারণ, প্রশাসন আপনাদের হাতে, অন্য সব স্টেট মেশিনারি আপনাদের হাতে। আওয়ামী লীগকে নিয়ে আপনারা কী করবেন, সেটা আপনাদেরই ঠিক করতে হবে।’
বিএনপির এই কেন্দ্রীয় নেতা আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগের দোসরদের অনুসারীরা ঘাপটি মেরে আছে বিভিন্ন তৃণমূলে, সমাজের নানা জায়গায়। ওদের কাছে পেট্রল কিনে বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার যে অর্থ, মানুষকে হত্যা করার জন্য যে অস্ত্র লাগে তার অর্থ তাদের কাছে আছে। সেটাকে দমন করতে আপনাদের (অন্তর্বর্তী সরকার) কী আইন প্রণয়ন করতে হবে, সেটা আপনারা জনগণের কাছে খোলাসা করুন। যেহেতু প্রশাসন আপনাদের হাতে। দোসরদের অনেকেই পালিয়ে গেছে পাশের দেশসহ অনেক দেশে। কিন্তু যারা নৈরাজ্য ছড়াচ্ছে, তারা প্রশ্রয় পাচ্ছে কার দ্বারা? প্রশাসনের ব্যক্তিবর্গের তো এটা জানার কথা। যারা ১৫ বছর ধরে শেখ হাসিনাকে পাহারা দিয়েছে, ব্যাংক লুট করেছে, অন্যের সম্পদ লুট করেছে, টাকা পাচার করেছে, তারা আজ এই জনসমুদ্রের ভেতর কোথায় লুকিয়ে আছে, অন্তর্বর্তী সরকার যদি খুঁজে বের করতে না পারে, তাহলে তো এই সরকারকে মানুষ ব্যর্থ সরকার বলবে।’
আরও পড়ুন‘আমার পরিবার আতঙ্কে আছে, শিল্পীসত্তাও আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে’১৮ এপ্রিল ২০২৫এর আগে চারুশিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষের পুড়ে যাওয়া বাড়ি পরিদর্শন করেন রুহুল কবির রিজভী এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে মানবেন্দ্রর পরিবারের কাছে অর্থসহায়তা তুলে দেন।
এ সময় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আফরোজা খানম, বিএনপির কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী, জেলা বিএনপির সদস্য আজাদ হোসেন খান, নুরতাজ আলম বাহার, সত্যেনকান্ত পণ্ডিত, গোলাম আবেদীন, জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকউদ্দিন ভূঁইয়া, জেলা যুবদলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক জিয়া উদ্দিন আহমেদ, সদস্যসচিব তুহিনুর রহমান, যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুদ পারভেজ, স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মো.
১৫ এপ্রিল দিবাগত রাতে সদর উপজেলার গড়পাড়া ইউনিয়নের চান্দইর গ্রামে মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়িতে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। আগুনে ঘরে থাকা বিভিন্ন ভাস্কর্য, মোটরসাইকেল, জেনারেটর, রেফ্রিজারেটরসহ সব জিনিসপত্র পুড়ে যায়। পয়লা বৈশাখের আনন্দ শোভাযাত্রায় শেখ হাসিনার মুখাবয়বসহ বিভিন্ন ভাস্কর্য তৈরির অভিযোগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁকে হুমকি দিয়ে আসছিল দুর্বৃত্তরা। তবে তিনি শেখ হাসিনার মুখাবয়ব নয়, বাঘের মোটিফ তৈরি করেছেন বলে জানিয়েছেন।
আরও পড়ুনমানবেন্দ্র ঘোষের বাড়িতে আগুন ও কবি রফিক আজাদের স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি ভাঙায় এমএসএফের নিন্দা১৭ এপ্রিল ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গণতন ত র আপন দ র ব এনপ র কর ছ ন সরক র আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
চা-মুড়ি ঐক্য পরিষদ
বাংলার এক নামকরা কলেজ। সেখানে আছেন আমাদের ‘মাস্টারমশাই’। নাম মফিজ স্যার। পড়ান রাষ্ট্রবিজ্ঞান। ক্লাসে ঢুকে ছাত্রদের রাজনীতি শেখান। ক্লাসের শুরুতেই বলেন, এই যে তোরা, বই না, আগে বুঝতে হবে ভোটের খেলা। এই দেশে ভোট মানে মাছ-ভাত, চায়ের কাপ আর বগল বাজানো স্লোগান।
ছাত্র– স্যার, বইটা খুলব নাকি?
স্যার– বই খুললে হবে না রে! আগে মানুষের মন খুলতে হয়।
এরপর শুরু হয় স্যারের গল্প। দেখো, ১৯৮২ সালে আমি ইউনিয়ন নেতা ছিলাম। স্লোগান দিতাম– ‘ভাত দে, কাপড় দে, ভোট দে’। তখনকার প্রেমও ছিল রাজনৈতিক। প্রেমিকার নাম ছিল গণতন্ত্রা।
ছাত্র শামীম– স্যার, ও তো সিনেমার নাম।
স্যার– আরে পাগলা, সব সিনেমা কি বাস্তব থেকে আসে?
একদিন কলেজ ক্যাম্পাসে নির্বাচন হবে। ছাত্র সংসদ। দুইটা দল। একদিকে ‘চা-চক্র সংঘ’, আরেকদিকে ‘ঝালমুড়ি মঞ্চ’। সবাই হইচই।
রাব্বি দাঁড়ায় নির্বাচন করতে। স্লোগান দেয়– চা-মুড়ি হোক বিনামূল্যে, ভোট দাও রাব্বিকে।
স্যার ডাকে ও রাব্বি, তুই কি সত্যিই নেতাগিরি পারবি? নেতার তো ভাষণ দিতে হয়।
রাব্বি বলে– স্যার, আমি তো ভাইরাল লাইন জানি। যেমন– নেতা হতে হলে নাটক শিখো, মাইক ছাড়া মুখ খুলো না আর মানুষকে ভাবতে শেখাও যে তুমি ছাড়া এ দেশ শেষ!
স্যার খুশি। বলেন– ব্যাটা, তুই তো আমার থেকে বড় লিডার।
ভোটের দিন। চা-চক্র সংঘের ছেলেরা সবাই চায়ের কাপ হাতে। ঝালমুড়ি মঞ্চ ঝালমুড়ি বিলি করে।
মফিজ স্যার প্রিসাইডিং অফিসার। ঘোষণা দিলেন– এই ভোটে কেউ হারবে না। সবাই জিতবে। কারণ একটাই– গণতন্ত্র বাঁচাও।
শামীম চেঁচিয়ে বলল– স্যার, গণতন্ত্র কোথায়? আপনি তো চা-মুড়ি খেয়ে সিদ্ধান্ত নিলেন।
স্যার হেসে বললেন– গণতন্ত্র মানেই তো আপস। যেই আপস করে, সেই জেতে।
এরপর ঘোষণা: নতুন কমিটি ‘চা-মুড়ি ঐক্য পরিষদ’। সভাপতি রাব্বি, সম্পাদক শামীম।
সবার স্লোগান– ‘চা-মুড়ির ঐক্য হোক, গণতন্ত্রের জয় হোক।’
স্যার মাইক্রোফোনে ঘোষণা দিলেন– এই হলো বাস্তব রাজনীতি। যত মিছিল, তত চা, তত মুড়ি আর কথায় কথায় ‘আমি তো ভালা না, ভালা লইয়া থাইকো।’
শেষে ছাত্রদের চিৎকার– বাহ্ স্যার বাহ্! আপনি না থাকলে রাজনীতি শিখতাম কীভাবে।
স্যার হেসে বললেন– বুঝলে বুঝপাতা, না বুঝলে তেজপাতা!
শেষে ক্যাম্পাসজুড়ে স্লোগান: ‘মুড়ি-চা খাই, নেতা স্যার ভাই!’
শামীম চেঁচিয়ে বলল– স্যার, গণতন্ত্র কোথায়? আপনি তো চা-মুড়ি খেয়ে সিদ্ধান্ত নিলেন।
স্যার হেসে বললেন– গণতন্ত্র মানেই তো আপস।
সুহৃদ ঢাকা