আন্দোলন স্থগিত করে ক্লাসে ফিরছেন সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা
Published: 23rd, April 2025 GMT
দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিত করে ক্লাসে ফেরার ঘোষণা দিয়েছেন সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা। আজ বুধবার বেলা ১১টায় কলেজ ক্যাম্পাসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন তাঁরা।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা জানান, গতকাল মঙ্গলবার কলেজ এবং ঢাকায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনার পর শিক্ষার্থীরা ওয়ার্ড সেবা ও হাসপাতাল চালু—এই দুই দাবির বিষয়ে সুস্পষ্ট বক্তব্য এবং কিছু ক্ষেত্রে সমাধান পেয়েছেন। যেসব দাবি তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়নযোগ্য নয়, সেসবের জন্য রোডম্যাপ দেওয়া হয়েছে। এতে আশ্বস্ত হয়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
আরও পড়ুনসুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজ: আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কর্তৃপক্ষের বৈঠক, দ্রুত দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাস২২ ঘণ্টা আগেতবে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা সতর্ক করে বলেন, হাসপাতাল চালুর রোডম্যাপ বাস্তবায়নে গড়িমসি বা ওয়ার্ড সেবা নিয়মিত না হলে তাঁরা আবারও আন্দোলনে যাবেন। শিক্ষার্থীরা তাঁদের যৌক্তিক দাবির পক্ষে অবস্থান নেওয়ার জন্য সাধারণ জনগণ, মেডিকেল কমিউনিটি ও গণমাধ্যমকে ধন্যবাদ জানান।
১৫ এপ্রিল থেকে কলেজে হাসপাতালের কার্যক্রম চালু, পর্যাপ্ত ক্লিনিক্যাল ক্লাসের (হাতে–কলমে শিক্ষা) ব্যবস্থা করাসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। তাঁরা ক্লাস বর্জন করে মানববন্ধন, বিক্ষোভ, স্মারকলিপি প্রদান, এমনকি সুনামগঞ্জ-সিলেট মড়াসড়ক অবরোধের মতো কর্মসূচি পালন করেন। সর্বশেষ গত সোমবার তাঁরা প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ করেন।
আরও পড়ুনসুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজে কেন, কী কারণে আন্দোলন২২ এপ্রিল ২০২৫গতকাল মঙ্গলবার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধিদল ঢাকায় স্বাস্থ্য উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করে। একই দিনে সুনামগঞ্জ ক্যাম্পাসে স্বাস্থ্য বিভাগ ও কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পৃথক বৈঠক হয়। বৈঠকে শিক্ষার্থীদের ক্লিনিক্যাল ক্লাসের জন্য জেলা সদর হাসপাতালে সপ্তাহে ছয় দিন ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এ জন্য তিনজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে সেখানে পদায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যাঁরা এক সপ্তাহের মধ্যে যোগ দেবেন। শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য বাসের ব্যবস্থাও করা হবে। নতুন হাসপাতাল চালুর বিষয়ে দ্রুত অবকাঠামো নির্মাণ শেষ করতে গণপূর্ত বিভাগকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ ও প্রশাসনিক প্রক্রিয়া শেষে হাসপাতালের কার্যক্রম দ্রুত শুরু হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়।
কলেজের অধ্যক্ষ মুস্তাক আহমেদ ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে আলোচনা হয়েছে। তাঁদের দাবিগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে। শিক্ষার্থীরা এখন ক্লাসে ফিরবেন।
আরও পড়ুনসুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজের প্রশাসনিক ভবনে তালা দিলেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা২১ এপ্রিল ২০২৫.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সুনামগঞ্জ মেডিকেল শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্থগিত
স্বাস্থ্য উপদেষ্টাসহ সরকারের ঊর্ধ্বতনদের ইতিবাচক উদ্যোগে সাত দিনের লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তবে ক্লাসে কবে ফিরবে তা আরও পরে জানাবে বলে জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার বিকেলে শিক্ষার্থীরা জানায়, তারা স্বাস্থ্য উপদেষ্টাসহ সরকারের ঊর্ধ্বতনদের নেওয়া উদ্যোগকে ইতিবাচকভাবে দেখছে। এসব বিষয় পর্যবেক্ষণ করা হবে, আপাতত আন্দোলনের নতুন কোনো কর্মসূচি নেই। ক্লাসে ফেরার বিষয়টি পরে জানানো হবে।
গত ১৫ এপ্রিল মঙ্গলবার মানববন্ধন, বিক্ষোভ ও লাগাতার ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দিয়ে আন্দোলনে নামেন সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা। পরদিন বুধবার সুনামগঞ্জ-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ, বৃহস্পতিবার শহরের আলফাত স্কয়ারে মানববন্ধন, বিক্ষোভ সমাবেশ এবং জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা, স্বাস্থ্যসেবা সচিব বরাবর স্মারকলিপি দেন শিক্ষার্থীরা। শনিবার শান্তিগঞ্জ বাজারে মানববন্ধন ও জনসংযোগ, রোববার সুনামগঞ্জ-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ হয়। এসময় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হলে জনদুর্ভোগ দেখা দেয়। পরে ওইদিন লাঠিচার্জ করে সড়ক থেকে শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দেওয়া হয়। আন্দোলনের সপ্তম দিনে সোমবারও সুনামগঞ্জ-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কে মানববন্ধন করে শিক্ষার্থীরা। এসময় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করে মানববন্ধনে অংশ নেন- কলেজের অধ্যক্ষসহ শিক্ষক-কর্মচারীরা। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর জিয়াউর রহমানও ওইদিন তাদের আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করেন।
পরে মেডিকেল কলেজের একাডেমিক ভবনের লেকচার গ্যালারিতে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার প্রতিনিধি হয়ে আসা সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর জিয়াউর রহমান, স্বাস্থ্য বিভাগের সিলেট বিভাগীয় পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান, সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. মাহবুবুর রহমান, সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. জসিম উদ্দিনসহ সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মুস্তাক আহমদ ভুইয়া আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। সুনামগঞ্জ গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল হাসান হিরাসহ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
দীর্ঘ প্রায় তিন ঘণ্টার বৈঠক শেষে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষে মেডিকেলের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী পিয়াস চন্দ্র দাস বলেন, সরকারের ঊর্ধ্বতনদের আশ্বাসকে ইতিবাচকভাবে দেখছি আমরা। যেটি মঙ্গলবার করা হলো, সেটি আরও আগে করা যেত। আমাদের দাবিগুলোর মধ্যে যেগুলো এখন করা যায়, সেগুলো ৩-৪ দিনের মধ্যে করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, কনসালটেন্টও দ্রুত নিয়োগ হবে বলে জানিয়েছেন তারা।
তিনি বলেন, আমরা এসব আশ্বাস পর্যবেক্ষণ করব। আপাতত আন্দোলনের কোনো কর্মসূচি দেওয়া হচ্ছে না। কাল বুধবার থেকে ওয়ার্ডগুলো ঠিক করা, রুটিন তৈরি করা, ভিজিলেন্স টিম করাসহ অন্যান্য সবকিছু গুছিয়ে আনা হলে ক্লাসে ফেরার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ মুস্তাক আহমদ ভুইয়া বললেন, মঙ্গলবার মেডিকেল কলেজের ক্যাম্পাসে দুটি ভাড়া করা বাস এসেছে। এগুলো শিক্ষার্থীদের ক্লিনিক্যাল ক্লাস করার জন্য আনা নেওয়া করবে। তিনজন কনসালটেন্টকে এখানে সংযুক্ত করে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সাতদিনের মধ্যে তারা যোগদান করবেন।
তিনি জানান, গণপূর্ত বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, জনবল নিয়োগ হলে ডিসেম্বরের মধ্যে হাসপাতাল চালু হবে। এছাড়া হাসপাতালের নির্মাণ অগ্রগতি দেখভাল করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিবকে রিপোর্ট দেবার জন্য ছাত্র-শিক্ষক সমন্বয়ে ভিজিলেন্স টিম গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা যায়, ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস কোর্সে ৫০ জন ছাত্রছাত্রী ভর্তির মাধ্যমে ২০২১ সালের মে মাসে শান্তিগঞ্জের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে (অস্থায়ী ক্যাম্পাসে) বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ সুনামগঞ্জের (যা গেল পাঁচ আগস্টের পর হয়েছে সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজ, সুনামগঞ্জ) যাত্রা শুরু হয়। এটি দেশের ৪৭তম সরকারি মেডিকেল কলেজ।
মেডিকেলের চতুর্থ বর্ষের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, প্রতি সপ্তাহে ১২টি ক্লিনিক্যাল ক্লাস হবার কথা ছিল তাদের। সেখানে দুই বছরে দশটি ক্লাস হয়েছে। এভাবে তাদের শিক্ষাজীবনকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দেওয়ায় তারা বাধ্য হয়ে রাজপথে নেমেছেন।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত এক মেডিকেল অফিসার জানান, ওখানে মেডিকেল কলেজের ক্লাস শুরু হওয়ায় শান্তিগঞ্জের মানুষও স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছে। ওখানকার ওয়ার্ড চালু করা যায় নি। মেডিকেলের শ্রেণিকক্ষসহ অফিস ওখানে হওয়ায় ডাক্তারদের বসার স্থান ছিল না।