শুল্ক ইস্যুতে ট্রাম্প প্রশাসনকে সন্তুষ্ট করতে চাইছে ভারত
Published: 23rd, April 2025 GMT
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স গত সোমবার চার দিনের সফরে ভারতে পৌঁছেছেন। ওই দিন সন্ধ্যায় তিনি নয়াদিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তাঁর বাসভবন লোককল্যাণ মার্গে বৈঠক করেছেন। তিন সন্তানসহ ভারতীয় বংশোদ্ভূত স্ত্রী উষা ভ্যান্সকে সঙ্গে নিয়েই মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রী মোদির নিমন্ত্রণে অংশ নেন। ভ্যান্স দম্পতির তিন সন্তানকে তিনটি ময়ূর পালক উপহার দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।
লোককল্যাণ মার্গে মোদি-ভ্যান্স আলাদা করে বৈঠক করেছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় জানিয়েছে, বৈঠকে ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে যে অগ্রগতি হয়েছে, তাকে স্বাগত জানিয়েছেন দুই নেতা। বৈঠকে তাঁরা জ্বালানি, প্রতিরক্ষা, কৌশলগত প্রযুক্তিসহ নানা খাতে সহযোগিতার সম্পর্ক জোরদারের আশা প্রকাশ করেছেন। তাঁরা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নানা বিষয় নিয়েও আলোচনা করেছেন।
ভ্যান্সের কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দ্বিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে একটি নতুন ও আধুনিক রূপরেখা উন্মোচনের দরজা খুলে যাবে, যা দুই দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে এবং উভয় দেশের জনগণের জন্য মঙ্গলজনক হবে।
২ এপ্রিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বের যেসব দেশে উচ্চ শুল্ক আরোপ করেছেন, ভারত তাদের মধ্যে অন্যতম। দেশটির ওপর নতুন করে ২৬ শতাংশ শুল্ক বসানোর ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। এখন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভারতের পণ্য প্রবেশে সব মিলিয়ে ২৮ দশমিক ৫ শতাংশ শুল্ক বসতে পারে।
মোদি সরকারের জন্য এটি বড় এক ধাক্কা। কারণ, ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির রপ্তানি পণ্যের সবচেয়ে বেশি যায় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে। তাই ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক ঘোষণার পর থেকে মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিবিড় আলোচনা শুরু করেছেন ভারতের কর্মকর্তারা। চেষ্টা করছেন নতুন একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করতে, যাতে ট্রাম্পের ঘোষিত শুল্ক কমানো যায়।
আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্র-ভারত বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে অগ্রগতিকে স্বাগত জানালেন মোদি-ভ্যান্স২১ এপ্রিল ২০২৫ট্রাম্পের ঘোষিত উচ্চ শুল্ক ৯ এপ্রিল থেকে কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও পরে তা চীন ছাড়া অন্য দেশগুলোর ক্ষেত্রে ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়। তবে সব দেশের জন্য আরোপিত ১০ শতাংশ সর্বজনীন (ইউনিভার্সাল) শুল্ক ভারতসহ সব দেশে ২ এপ্রিল কার্যকর হয়।
ভারতের কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন দ্বিপক্ষীয় চুক্তির যে চেষ্টা করছেন, তা নিয়ে দেশটির কৃষকেরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের শঙ্কা, দর-কষাকষির অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা কৃষিপণ্যে বেশি হারে শুল্ক কমাতে পারে মোদি সরকার। এতে দেশটির বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিপণ্য বাড়বে। এমনটি হলে তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
এই আশঙ্কা থেকে গত সোমবার ভারতের বিভিন্ন গ্রামে কৃষকেরা বিক্ষোভ করেছেন। জেডি ভ্যান্সের কুশপুত্তলিকা দাহ করেছেন। স্লোগান দিয়েছেন, ‘ফিরে যাও ভ্যান্স। ভারত বিক্রির জন্য নয়।’
নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সপরিবারে জেডি ভ্যান্স। ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে মোদির বাসভবনে, ২১ এপ্রিল ২০২৫.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পোপের মৃত্যুর কারণ জানাল ভ্যাটিকান
বিশ্বের ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের প্রধান ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস (৮৮) গতকাল সোমবার স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ৩৫ মিনিটে ভ্যাটিক্যানে নিজ বাসভবন মৃত্যুবরণ করেছেন।
তার মৃত্যুর কারণ সোমবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেছে ভ্যাটিকান সিটির হলি সি প্রেস অফিস। ভ্যাটিকান সিটি স্টেটের স্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যবিধি অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. আন্দ্রেয়া আর্কাঞ্জেলি পোপের মৃত্যুর সার্টিফিকেট জারি করেছেন।
ভাটিকান নিউজ জানিয়েছে, পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুর কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে স্ট্রোক, এরপর কোমা এবং অপরিবর্তনীয় হৃদযন্ত্রের রক্তনালী ধস।
মেডিকেল রিপোর্ট অনুসারে, পোপের মাল্টিমাইক্রোবিয়াল বিলাটেরাল নিউমোনিয়া, একাধিক ব্রঙ্কাইক্টেস, উচ্চ রক্তচাপ এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিসের কারণে তীব্র শ্বাসযন্ত্রের জটিলতা ছিল।
ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাফিক থ্যানাটোগ্রাফির মাধ্যমে তার মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে। ডেথ সার্টিফিকেটে ডা. আর্কাঞ্জেলি লিখেছেন, “আমি ঘোষণা করছি, আমার জ্ঞান এবং বিচারে মৃত্যুর কারণগুলো উপরে বর্ণিত।”
সম্প্রতি টানা পাঁচ সপ্তাহ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন পোপ। এরপর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার এক মাসের মাথায় মারা গেলেন এই ধর্মগুরু। সোমবার সকালে ভ্যাটিক্যানে নিজ বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন পোপ।
২০১৩ সালের ১৩ মার্চ ভ্যাটিকানের ২৬৬তম পোপ নির্বাচিত হন ফ্রান্সিস। রোমের বিশপ হিসেবে তিনি বিশ্বব্যাপী ক্যাথলিক চার্চ এবং সার্বভৌম ভ্যাটিকান সিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
১৯৩৬ সালের ১৭ ডিসেম্বর আর্জেন্টিনার বুয়েনস আইরেসে পোপ ফ্রান্সিসের জন্ম। ক্যাথলিক পুরোহিত হিসেবে তার অভিষেক হয়েছিল ১৯৬৯ সালে।
তিনি ছিলেন ৭৪১ সালের পর প্রথম নন-ইউরোপিয়ান পোপ। ৭৪১ সালে সিরিয়ান বংশোদ্ভূত তৃতীয় গ্রেগরির মৃত্যুর পর রোমে আর কোনো নন-ইউরোপীয় পোপ আসেননি। পুরো আমেরিকা অঞ্চল এবং দক্ষিণ গোলার্ধ থেকে নির্বাচিত প্রথম পোপ ছিলেন ফ্রান্সিস। তিনি ক্যাথলিক গির্জায় সংস্কার কখনো বন্ধ করেননি। তারপরও তিনি সকলের কাছে জনপ্রিয় ছিলেন।
পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুতে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়সহ গোটা বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মানুষদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন বিশ্বনেতারাও।
ঢাকা/ফিরোজ