৫ আগস্ট সংসদের বিশেষ কক্ষে স্পিকারসহ ১২ জন অবস্থান করতে বাধ্য হই, আদালতে বললেন পলক
Published: 23rd, April 2025 GMT
সাবেক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন (সিএমএম) ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বলেছেন, গত ৫ আগস্ট কোনো হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন না। তিনি সেদিন জাতীয় সংসদ ভবনে ছিলেন। সেদিন দিবাগত রাত আড়াইটার সময় তিনি, স্পিকারসহ ১২ জনকে উদ্ধার করে নিয়ে যায় সেনাবাহিনী।
অন্যদিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ আদালতের কাছে দাবি করেছেন, তাঁকে রিমান্ডের সময় শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে।
জুনাইদ আহমেদ পলক ও তুরিন আফরোজের এই বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করে আদালতে বক্তব্য দেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পিপি ওমর ফারুক ফারুকী। তিনি বলেছেন, হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত পলক ও তুরিন আফরোজ।
‘সংসদের বিশেষ কক্ষে অবস্থান করতে বাধ্য হই’
আজ বুধবার সকাল ১০টা ৩৫ মিনিট। আদালতকক্ষে পুলিশের একজন কর্মকর্তা জুনায়েদ আহমেদ পলকের নাম ধরে ডাকেন। তখন পলক তাঁর ডান হাত উঁচু করেন। তাঁর হাতে পরানো ছিল হাতকড়া।
পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, গত বছরের ৫ আগস্ট রাজধানীর বাড্ডায় রংমিস্ত্রি আব্দুল জব্বার হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। এই হত্যা মামলায় জুনায়েদ আহমেদ পলকের নাম রয়েছে। হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য তাঁকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসা করা জরুরি।
পুলিশের বক্তব্য শেষ হওয়ার পর জুনায়েদ আহমেদ পলক হাত উঁচু করে কথা বলার জন্য আদালতের কাছে অনুমতি চান।
আদালতের অনুমতি পাওয়ার পর জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ‘বলা হচ্ছে, গত ৫ আগস্ট বাড্ডার খুনের ঘটনার সঙ্গে আমি জড়িত। একটা বিষয় আপনাকে (আদালত) জানিয়ে রাখি। গত বছরের ৫ আগস্ট সকাল ১১টার সময় আমি সংসদে অবস্থান করি। একটা পর্যায়ে আমরা সংসদে আক্রান্ত হয়। একপর্যায়ে আমি, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকারসহ ১২ জন সংসদের বিশেষ কক্ষে অবস্থান করতে বাধ্য হই। রাত আড়াইটার সময় সেনাবাহিনী আমাদের সেখান থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।’
পলক আদালতকে আরও বলেন, ‘যেখানে আমি সারা দিন সংসদে অবস্থান করেছিলাম, সেখানে ৫ আগস্ট কোনো হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আমার কোনো দায় নেই। ইতিমধ্যে আমার ৮৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে। যদি জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন হয়, তাহলে আমাকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেওয়া হোক।’
জুনায়েদ আহমেদ পলকের বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেন পিপি ফারুক ফারুকী। তিনি আদালতকে বলেন, ‘আমরা শুনেছিলাম, ৫ আগস্ট সংসদে স্পিকারসহ বেশ কয়েকজন লুকিয়ে ছিলেন। আজ জুনায়েদ আহমেদ পলক সেই ঘটনা বললেন। এখনো স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরীকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়নি।’
ফারুক ফারুকী আরও বলেন, আমরা বারবারই বলছি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতাকে যারা সরাসরি গুলি করে হত্যা করেছে, তাদের যে শাস্তি, একই শাস্তি, যারা এসব হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। জুনায়েদ আহমেদ পলক এসব হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় যে কয়েকজন ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সঙ্গে মিটিং করেছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন এ জুনায়েদ আহমেদ পলক।’
আদালত উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে জুনায়েদ আহমেদ পলকে এই মামলায় তিন দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন।
কাঠগড়ায় কাঁদলেন, নির্যাতনের অভিযোগ করলেন তুরিন
সকাল দশটা এক মিনিট। তখনো ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন (সিএমএম) ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক এজলাসে আসেননি।
কাঠগড়ায় পাশাপাশি দাঁড়িয়েছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহিদুল হক।
তুরিন আফরোজ কাঠগড়ার দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে সামনের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় তিনি হাসানুল হক ইনুর কাছে আসেন। তুরিন আফরোজ কাঁদতে কাঁদতে ইনুকে বলছিলেন, রিমান্ডের সময় তাঁকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। তখন ইনু তুরিন আফরোজকে বলতে থাকেন, ‘আপনার কথা আদালতের কাছে তুলে ধরেন। সাংবাদিকদের কাছেও তুলে ধরতে পারেন।’
বিচারক এজলাসে প্রবেশ করেন সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে। এ সময় পুলিশের একজন কর্মকর্তা তুরিন আফরোজের নাম ধরে ডাকেন।
তখন একজন আইনজীবী আদালতের কাছে বলতে থাকেন, ‘তুরিন আফরোজের বক্তব্য রয়েছে। তিনি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।’
এ সময় তুরিন আফরোজ হাত উঁচু করেন আদালতে কথা বলার জন্য। আদালত অনুমতি দেওয়ার পর তুরিন আফরোজ বলেন, ‘আমি সব সময়ই আইন ও আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমি কখনো কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না। এখনো নেই। কেবলমাত্র পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য আমি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটরের দায়িত্ব পালন করেছিলাম।’
তুরিন আফরোজ আদালতকে আরও বলেন, ‘এমনিতেই আমি অসুস্থ। আমার হাঁটতে সমস্যা হয়। আমার পায়ে আঘাত করা হয়েছিল।’
তুরিন আফরোজের বক্তব্য মিথ্যা বলে আদালতে দাবি করেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পিপি ওমর ফারুক ফারুকী। তিনি আদালতকে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সময় কোনো আসামিকেই নির্যাতন করা হয়নি। তুরিন আফরোজকে নির্যাতন করা হয়নি। নির্যাতনের মিথ্যা অভিযোগ করছেন তিনি।
পিপির বক্তব্য শেষ হওয়ার পর তুরিন আফরোজ আবার আদালতে কথা বলেন। এ সময় তিনি তাঁর পা দেখান। তিনি আদালতকে বলেন, ‘আমি মিথ্যা বলছি না। আমার পায়ে নির্যাতন করা হয়েছিল।’
আদালতে হট্টগোল
যাত্রাবাড়ী থানার আরিফ খান হত্যা মামলায় সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খানকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে পুলিশ। রিমান্ডের স্বপক্ষে আদালতে বক্তব্য তুলে ধরেন একজন পুলিশ কর্মকর্তা। আর রিমান্ডের বিরোধিতা করে আদালতে বক্তব্য তুলে ধরেন শাজাহান খানের আইনজীবীরা।
শাজাহান খানের একজন আইনজীবী আদালতকে বলেন, তাঁর মক্কেল আট বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তাঁর দাদাও ব্রিটিশ আমলে নেতা ছিলেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী যখনই আটবারের সংসদ সদস্য শাজাহান খান উচ্চারণ করেন, তখন আদালতে উপস্থিত বিএনপিপন্থী একদল আইনজীবী বলতে থাকেন, ‘ভুয়া এমপি শাহজাহান।’
এ পর্যায়ে পিপি ওমর ফারুকী আদালতকে বলেন, শাজাহান খান অন্য দলে ছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগ এসে প্রেসিডিয়াম সদস্যের পদ পেয়েছেন। তিনি ফ্যাসিস্ট হাসিনার অন্যতম সহযোগী।
পিপির বক্তব্য শেষ হওয়ার পর শাজাহান খান হাত তোলেন। কথা বলার জন্য তিনি আদালতের কাছে অনুমতি চান।
আদালতের অনুমতি পাওয়ার পর শাজাহান খান বলেন, ‘আমার হার্টে পাঁচটি ব্লক। আমি অসুস্থ। আমাকে দুইবার হাসপাতালে যেতে হয়েছে। যদি জিজ্ঞাসাবাদ করতেই হয়, তাহলে আমাকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেওয়া হোক।’
শাজাহান খান যখন বক্তব্য দিচ্ছিলেন, তখন একদল আইনজীবী আদালতকে বলতে থাকেন, ‘উনি পুলিশকেও মারার কথা বলেছেন।’
এ সময় আইনজীবীদের হট্টগোল শুরু হয়।
পিপি ওমর ফারুকী আদালতকে বলেন, ‘আদালতের পরিবেশ বজায় রাখার দায়িত্ব যেমন আইনজীবীদের, তেমনি আসামিদের। আসামিরা এমন কোনো কথা বলবেন না, যাতে আদালতের পরিবেশ নষ্ট হয়।’
পিপির কথা বলার সময়ও একদল আইনজীবী হট্টগোল করতে থাকেন। শাজাহান খানকে নানা কটূক্তি করতে থাকেন।
তখন শাজাহান খান আদালতকে বলেন, ‘আমরা কি কথা বলতে পারব না? আমাদের কি কথা বলার কোনো অধিকার নেই?’
শাজাহান খানের বক্তব্যের পরপর আদালতের অনুমতি নিয়ে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি তানভীর হাসান সৈকত কথা বলতে শুরু করেন। তানভীর আদালতকে বলেন, ‘আমি ছাত্রলীগ করি।’
ছাত্রলীগ শব্দ উচ্চারণ করার পর পরই একদল আইনজীবী বলতে থাকেন, ‘জঙ্গি ছাত্রলীগ, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ’।
এ সময় তানভীর তাঁর কথা বলতেই থাকেন। তখন আইনজীবীরা ‘জঙ্গি ছাত্রলীগ, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ’ বলে চিৎকার করতে থাকেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ ন য় দ আহম দ পলক জ জ ঞ স ব দ কর ত র ন আফর জ র ওমর ফ র ক স প ক রসহ এ সময় ত ৫ আগস ট সময় ত ন র জন য র সময়
এছাড়াও পড়ুন:
হত্যার ৩২ বছর পর রায়, ১ জনের যাবজ্জীবন
জামালপুর সদরের মেষ্টাতে মোজাম্মেল হক হত্যা মামলার ৩২ বছর পর একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও চারজনকে খালাসের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) দুপুরে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ, দ্বিতীয় আদালতের বিচারক মো. আবু বকর ছিদ্দিক এই রায় ঘোষণা করেন।
সাজাপ্রাপ্ত আসামি মো. হাফিজুর রহমান সরিষাবাড়ি উপজেলার ঢুরিয়াভিটা গ্রামের মৃত রুহুল আমীনের ছেলে। এছাড়াও তাকে ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড করা হয়। অনাদায়ে আরো দুই মাসের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত।
মামলায় খালাস পাওয়া আসামিরা হলেন- সরিষাবাড়ী থানার গোবিন্দ নগর (বয়রা) গ্রামের মো. মতিয়ার রহমানের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে আজাদ, পাখাডুবি গ্রামের আব্দুল কাদেরের ছেলে গোলাম রব্বানী ওরফে রব্বানী, জসীম উদ্দিনের ছেলে ওমর আলী ও জামালপুর সদর উপজেলার কেন্দুয়া দেওয়ানীপাড়া গ্রামের মরহুম মো. নিজাম উদ্দিনের ছেলে মো. শওকত আলী।
অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ, দ্বিতীয় আদালতের অতিরিক্ত পি.পি আইনজীবী এ.কে.এম নাজমুল হুদা জানান, প্রধান আসামি হাফিজুর রহমান ও নিহত মোজাম্মেল হক বাল্য বন্ধু ছিলেন। ১৯৯৩ সালের ২৩মে বিকালে দাওয়াত খাওয়ার কথা বলে মোজাম্মেল হককে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যান হাফিজুর রহমান। এরপর আর বাড়ি ফিরেননি মোজাম্মেল হক। পরদিন ২৪মে মেষ্টা ইউনিয়নের হাসিল পারিল গৌরিপুর গ্রামে কাঁচা রাস্তার উপর মোজাম্মেল হকের রক্তাক্ত মরদেহ দেখে পুলিশকে খবর দেয় স্থানীয়রা।
পরে পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের পর দাফন করে। খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে ২৮মে নিহত মোজাম্মেল হকের বড় ভাই শাহজাহান ছবি দেখে তার ভাইকে শনাক্ত করেন। পরে জামালপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।
মামলার দীর্ঘ তদন্তের পর ১৩ জন স্বাক্ষীর স্বাক্ষ্য গ্রহণ শেষে ৩২ বছর পর এই রায় দেন আদালত। মামলায় আসামিপক্ষের আইনজীবী ছিলেন মো. ফজলুল হক।
ঢাকা/শোভন/এস