‘শুধু বালু তোলার কারণে আমার বাড়ি ভাঙছে। আমি গরিব-অসহায়। আর কোথাও যে বাড়ি করমু, আমার জমির এক ফোঁটাও নাই। স্বামী নাই, একটা ছেলে নাই, আছে চারটা মাইয়্যা। এখন আমি কোন উপায়ে কী করমু? জানুয়ারিত বৃষ্টি-বাদলা কিছুই ছিল না, তবু ভিটা ভাঙিছে। এখনো ভাঙতাছে। বৃষ্টি আইলেই সব যাইব। এখন আমি যাই কই?’

কথাগুলো বলছিলেন লোহাগড়া উপজেলার কাশিপুর গ্রামের ৬৫ বছর বয়সী শামসুন্নাহার বেগম। তাঁর বাড়ির সামনে মধুমতী নদী থেকে ড্রেজার বসিয়ে বালু তোলা হয়। সেই বালু স্তূপ করে রাখা হয় তাঁর বাড়ির পেছনে। বালু তোলার কারণে সামনের বাঁধের বালুর বস্তা পানিতে সরে গিয়ে ভেঙে পড়ে। আর পেছনের স্তূপ করা বালুর পানির টানে নদীগর্ভে চলে যায় তাঁর ভিটেমাটি।

গত রোববার শামসুন্নাহারদের গ্রাম কাশিপুরসহ আশপাশের মাকড়াইল, রামচন্দ্রপুর ও নওখোলা গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, মধুমতী নদীতে পানি কম, ঢেউও নেই, তবু চলছে ভাঙন। বিভিন্ন স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া বালুর বস্তা সরে গিয়ে নদীতে তলিয়ে গেছে। ফলে পুরোনো বাঁধ ভেঙে নতুন জায়গায় ভাঙন শুরু হয়েছে। বসতভিটা, ফসলি জমির পাশাপাশি ঝুঁকিতে রয়েছে ১৯৪৫ সালে স্থাপিত মাকড়াইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ আশপাশের তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কয়েকটি মসজিদ, আশ্রয়ণ প্রকল্প ও গ্রামের রাস্তাঘাট।

মর্জিনা বেগম নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘আগে দুইবার নদীতে আমাগের বাড়ি ভাঙিছে, কষ্ট করে নতুন করে বাড়ি করিছি। মেলা জমি নদীতে চলে গেছে। এখনকার বাড়িও ভাঙনের ঝুঁকিতে।’

ভাঙনের মুখে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত মাকড়াইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। গত রোববার তোলা.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

পাঁচতলা বাড়ির মালিকও টিসিবির কার্ড নিয়েছে: বাণিজ্য উপদেষ্টা

পাঁচ-সাততলা বাড়ি রয়েছে এমন লোকও ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ফ্যামিলি কার্ড নিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন।

তিনি বলেন, জুলাই-আগস্ট বিপ্লব পূর্ববর্তী সময়ে দেশে এত দুর্বৃত্তায়ন তৈরি হয়েছিল যে, এর থেকে টিসিবি ও বাজার ব্যবস্থাপনা রেহাই পায়নি। এই দুর্বৃত্তায়ন সামাজিক এবং সামগ্রিকভাবে দেশকে পিছিয়ে রেখেছে। সেসব অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করে টিসিবির কাজে স্বচ্ছতা ও গতিশীল করার চেষ্টা করা হচ্ছে। 

বুধবার রাজধানীর কুর্মিটোলায় আর্মি গলফ ক্লাবে ‘টিসিবির সঙ্গে ব্যবসা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবি আয়োজিত এ সভায় বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য আমদানিকারক, বাজারজাতকারী ও পাইকারি ব্যবসায়ীসহ অংশীজনরা উপস্থিত ছিলেন। 

বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, টিসিবির এক কোটি ফ্যামিলি কার্ড বিতরণে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়ম হয়েছে। সরকারি কাজকে মাঠ পর্যায়ে তদারকি করতে গিয়ে দেখা গেছে, সাধারণ মানুষের অধিকার খর্ব করা হয়েছে। সাধারণ মানুষ কার্ড পায়নি। পাঁচ-সাততলা বাড়ি রয়েছে এমন লোকও টিসিবির ফ্যামিলি কার্ড নিয়েছেন। যাচাই করে দেখা গেছে, প্রশাসনে চাকরি করেন এমন ব্যক্তির পরিবারে তিনটি কার্ড রয়েছে। এভাবে যাচাই করে ভুয়া ৪০ লাখ কার্ডধারীকে টিসিবির তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

শেখ বশিরউদ্দিন বলেন, গত ৫ আগস্টের আগে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি ছিল টিসিবিতে। বাজার ব্যবস্থাপনায় সিন্ডিকেট ছিল। সেগুলো থেকে উত্তরণে বাজারে প্রতিযোগিতার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। টিসিবি প্রতি বছর ১২ থেকে ১৪ হাজার কোটি টাকার পণ্য কিনে। এই টাকায় কীভাবে আরও বেশি পণ্য কেনা যায় সেই চেষ্টা করা হচ্ছে। ক্রয়-বিক্রয় ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনা হচ্ছে।

তিনি বলেন, ভোজ্যতেলের দাম বাড়লেও বাজারে প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে, মানুষের মধ্যে আস্থা তৈরি হচ্ছে। রাইস ব্র্যান তেল রপ্তানি বন্ধের কারণে বাজারে তেল পাওয়া যাচ্ছে। টিসিবির জন্য স্থানীয়ভাবে পণ্য কিনতে গেলে বাজারে প্রভাব পড়ে। সেজন্য কিছু পণ্য টিসিবি নিজেরা আমদানি করবে।

এ সময় ব্যবসায়ীদের অভিযোগ-অনুযোগের বিষয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, পণ্য সরবরাহকারীদের লেনদেনে কীভাবে আরও স্বচ্ছতা ও গতিশীল করা যায় সে ব্যাপারে কাজ চলছে।

সভায় টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফয়সল আজাদ বলেন, নতুন নীতিমালা অনুযায়ী টিসিবির পণ্য বিক্রির জন্য নতুন ডিলার নিয়োগ দেওয়া হবে। যার জন্য নতুন আবেদনকারী ও পুরাতন ডিলারদের ডিসি অফিস থেকে ক্লিয়ারেন্স নিতে হবে। ১ জুলাই থেকে এসব ডিলারের মাধ্যমে কাজ শুরু করবে টিসিবি।

ভোজ্যতেলসহ প্রয়োজনীয় কিছু পণ্য টিসিবি সরাসরি আমদানি করবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে সংস্থাটি।

টিসিবির চেয়ারম্যান আরও বলেন, প্রকৃত উপকার ভোগীরাই যেন ফ্যামিলি কার্ড পায় সেজন্য কাজ চলছে। এখন পর্যন্ত ৫৭ লাখ কার্ড প্রস্তুত করা হয়েছে। এক কোটি পূরণে বাকি ৪০ শতাংশ কার্ড জুনের মধ্যে শেষ করা হবে।

এর আগে মুক্ত আলোচনায় টিসিবির সঙ্গে যারা ব্যবসা করেন এবং ব্যবসা করতে চান এমন অনেক ব্যবসায়ী তাদের অভিযোগ ও পরামর্শ তুলে ধরেন।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ