কাশ্মিরে হামলার সময় 'বেছে বেছে পুরুষদের গুলি করা হয়'
Published: 23rd, April 2025 GMT
ভারত শাসিত কাশ্মিরের পহেলগামে বন্দুকধারীরা হামলা চালানোর সময় নারী-পুরুষদের আলাদা করে বেছে বেছে পুরুষদের লক্ষ্য করে গুলি করছিল।
পর্যটক বাস থেকে নামার পর বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরা ভয়াবহ মুহূর্তগুলোর বর্ণনা দিচ্ছিলেন। কোনো গোষ্ঠী এই হামলার দায় স্বীকার করেনি।
বন্দুকধারীদের গুলিতে কমপক্ষে ২৪ জন পর্যটক নিহত হয়েছেন। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আহতদের সংখ্যা অনেক, যাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
পহেলগাম থেকে তিন মাইল দূরে পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত বৈসারণে এই হামলার ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী একজন নারীর বরাত দিয়ে স্থানীয় সংবাদপত্র ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস খবর প্রকাশ করেছে। ওই নারীর স্বামীও মাথায় গুলি লেগে মারা যায়।
তিনি জানাচ্ছিলেন, "আক্রমণকারীরা পুরুষদের লক্ষ্য করে গুলি চালাচ্ছিল। তার স্বামীও মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন।''
মঙ্গলবার জম্মু ও কাশ্মিরের পহেলগামে পর্যটকদের উপর সন্ত্রাসী হামলার পর, বিশ্বের শীর্ষ নেতারা এই হামলার নিন্দা জানিয়ে ভারতের সাথে সংহতি প্রকাশ করেছেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, এই হামলায় জড়িতদের কোনো ছাড় দেয়া হবে না।
প্রধানমন্ত্রী মোদী সৌদি আরব সফরে ছিলেন। কিন্তু এই হামলার পর তিনি সফর সংক্ষিপ্ত করে দ্রুতই দেশে ফিরেছেন।
এদিকে এই হামলার পরপরই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের সাথে সংহতি প্রকাশ করেছেন এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাথে ফোনে কথা বলেছেন।
'পুরুষদের লক্ষ্য করেই গুলি'
হামলার প্রত্যক্ষদর্শীরা স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বন্দুকধারীরা স্পষ্টতই পুরুষদের লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছিল এবং নারীদের ছেড়ে দিচ্ছিল।
"জঙ্গিরা, আমি বলতে পারছি না ঠিক কতজন, একটি খোলা ছোট তৃণভূমির কাছের জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এসে গুলি চালাতে শুরু করে" বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানাচ্ছিলেন একজন নারী।
তিনি বলেন, "স্পষ্টতই তারা মহিলাদের ছাড় দিচ্ছিলেন এবং পুরুষদের দিকে গুলি চালাতে থাকল, কখনও একটি একটি করে, আবার কখনো একাধারে গুলি চলছিল ঠিক ঝড়ের মতো," তিনি বলছিলেন।
ভারতীয় সংবাদপত্র ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পল্লবী রায় নামে আরেক নারীকে চিহ্নিত করেছে। যার স্বামী গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহতদের মধ্যে ছিলেন। তিনিও বলেছেন যে পুরুষদের লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে।
পর্যটক বাস থেকে নামার পর বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরা ভয়াবহ মুহূর্তগুলোর বর্ণনা দিচ্ছিলেন। প্রথম গুলির শব্দের পর মানুষ চিৎকার করতে এবং দৌড়াতে শুরু করে।
যদিও কাশ্মীর দীর্ঘদিন ধরে ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহের কেন্দ্রস্থল, তবুও পর্যটকদের উপর আক্রমণের ঘটনা বিরল।
এই অঞ্চলের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ বলেছেন, মঙ্গলবারের হামলা "সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বেসামরিক নাগরিকদের উপর পরিচালিত যেকোনো হামলার চেয়ে অনেক বড়।"
বিশ্বনেতাদের প্রতিক্রিয়া
এই হামলার নিন্দা জানিয়ে ভারতের সাথে সংহতি প্রকাশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ বিশ্বনেতারা।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের সাথে সংহতি প্রকাশ করেছেন এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাথে ফোনে কথা বলেছেন।
ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেছেন, "রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা করেছেন এবং এই জঘন্য হামলার অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার জন্য ভারতের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারত ও আমেরিকা একসাথে দাঁড়িয়ে আছে।"
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এটিকে বর্বরোচিত আক্রমণ বলে অভিহিত করেছেন এবং বলেছেন যে তিনি চরমপন্থার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারতের পাশে থাকবেন।
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বর্তমানে তার পরিবারের সাথে ভারত সফরে আছেন এবং তিনি নিহতদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
জেডি ভ্যান্স তার এক্স অ্যাকাউন্টে লিখেছেন "ভারতের পহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার শিকারদের আমি সমবেদনা জানাই"।
সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এটিকে 'সন্ত্রাসী হামলা' বলে অভিহিত করেছে এবং এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে সংযুক্ত আরব আমিরাত এই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানান।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় 'ভারত সরকার এবং এই জঘন্য হামলার শিকারদের পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা ও সহানুভূতি প্রকাশ করেছে।'
সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান 'ভয়াবহ হামলার' তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন এবং হতাহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।
বাড়ানো হয়েছে কড়া নিরাপত্তা
পহেলগামে পর্যটকদের উপর সন্ত্রাসী হামলার পর উপত্যকা থেকে দিল্লি পর্যন্ত কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, মঙ্গলবার জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর দিল্লিতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। হামলার পর দিল্লি পুলিশ শহরজুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করেছে।
বিশেষ করে পর্যটন স্থান এবং শহরের সীমান্তে, কঠোর তল্লাশি এবং নজরদারি চালানো হচ্ছে যাতে যেকোনো সন্দেহজনক কার্যকলাপ তাৎক্ষণিকভাবে শনাক্ত করা যায়।
অন্যদিকে, উপত্যকার নিরাপত্তা কর্মীরা বিভিন্ন স্থানে যানবাহন তল্লাশি করছেন এবং রাস্তাগুলিতে ব্যাপক ব্যারিকেড দেয়া হয়েছে।
জম্মু ও কাশ্মীরের অনেক এলাকা থেকেও হামলার বিরুদ্ধে বিক্ষোভের ছবি এবং ভিডিও প্রকাশিত হচ্ছে।
সূত্র: বিবিসি
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বল ছ ন র পর ব ত কর ছ র উপর
এছাড়াও পড়ুন:
কাশ্মিরে হামলার দায় স্বীকার করল টিআরএফ
ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের পেহেলগ্রামে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে পর্যটকদের ওপর হামলা করে বন্দুকধারীরা। এতে অন্তত ২৬ জন নিহত হয়েছেন এবং আরো বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস আজ বুধবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ভয়াবহ এই হামলার দায় স্বীকার করেছে স্থানীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ)। পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈয়বা বা এলইটি গোষ্ঠীর একটি ছায়া সংগঠন।
টিআরএফের উত্থান হয় ২০১৯ সালে। তখন সবে সংবিধান থেকে ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপ হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মিরের ‘বিশেষ মর্যাদা’-র অবলুপ্তি হয়েছে। ঠিক সেই রাজনৈতিক পরিস্থিতির মাঝেই লস্কর-ই-তৈয়বার ‘ছায়া সংগঠন’ হিসাবে উঠে আসে টিআরএফ। সেই সংগঠনেরই পাঁচ-ছ’জন আচমকাই মঙ্গলবার দুপুরে পেহেলগ্রামে হামলা চালায়।
আরো পড়ুন:
জালিয়াতির মামলা, মহেশ বাবুকে তলব
পশ্চিমবঙ্গের সহিংসতার বিষয়ে বাংলাদেশের মন্তব্য নাকচ ভারতের
২০২৩ সালের জানুয়ারিতে টিআরএফ গোষ্ঠী এবং তাদের সকল ফ্রন্ট গ্রুপকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। অভিযোগ, অনলাইনে কাশ্মিরের তরুণদের জঙ্গি কর্মকাণ্ডে নিযুক্ত করছে নতুন এই সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীটি।
জম্মু ও কাশ্মির পুলিশ বলছে, মঙ্গলবার প্রথমে আইডি বিস্ফোরণের পরিকল্পনা করেছিল সন্ত্রাসীরা। কিন্তু পরে পরিকল্পনা বদলে দু’টি দলে ভাগ হয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। তার পর একে ৪৭ নিয়ে পর্যটকদের ওপর হামলা চালায় তারা।
হামলার ঘটনার পরই পেহেলগাম উপত্যকায় নিরাপত্তা কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। জম্মু-কাশ্মিরের অন্যান্য জায়গাও নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে মঙ্গলবার রাতেই কাশ্মিরে যান ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
অন্যদিকে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার সৌদি আরব সফরসূচি কাঁটছাঁট করে বুধবার সকালে দিল্লি ফিরে এসেছেন। বিমানবন্দরেরই তিনি কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন।
এদিকে, এখন পর্যন্ত হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি নিরাপত্তাবাহিনী। তাদের সন্ধানে বিভিন্ন জায়গায় চিরুনি তল্লাশি শুরু করেছে নিরাপত্তাবাহিনী।
ঢাকা/ফিরোজ