ই-কমার্সে ডিজিটাল নিরাপত্তা ও গ্রাহক আস্থা
Published: 23rd, April 2025 GMT
পর্ব–২
ই-কমার্সের প্রাণভোমরা হলো আস্থা। যখন একজন ক্রেতা নিজের মোবাইল ফোনে বা ল্যাপটপে ক্লিক করে একটি অর্ডার দেন, তখন তিনি বিশ্বাস করেন যে তাঁর পছন্দের পণ্য ঠিকঠাক পৌঁছে যাবে। এই বিশ্বাসের ভিত্তি যদি দুর্বল হয়, তাহলে ই-কমার্সের অগ্রযাত্রা থমকে যায়। বাংলাদেশের ই-কমার্স খাতের দ্রুত প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি ডিজিটাল নিরাপত্তা ও গ্রাহক আস্থা নিয়ে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে।
বাংলাদেশে ই-কমার্স নিরাপত্তা পরিস্থিতি
ই–ক্যাব ও লাইটক্যাসল পার্টনার্সের যৌথ জরিপ অনুসারে, বাংলাদেশের ই-কমার্স ক্রেতাদের মধ্যে ৬৮ শতাংশ এখনো অনলাইন লেনদেনে শঙ্কা অনুভব করেন। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মতে, ২০২৩ সালে ই-কমার্স সংক্রান্ত অভিযোগের সংখ্যা ছিল প্রায় ৪০ হাজার। প্রধানত পণ্য না পাওয়া, ভিন্ন পণ্য সরবরাহ, টাকা ফেরতে বিলম্ব এবং গ্রাহকের তথ্য অপব্যবহার ছিল অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দু।
কেন গ্রাহক আস্থা হারাচ্ছে?
* অনলাইন লেনদেন ঝুঁকি: ফিশিং, স্ক্যাম, ক্লোনড পেমেন্ট পোর্টালের কারণে গ্রাহক আস্থা কমছে।
* ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা সংকট: অনেক প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের নাম, ফোন নম্বর ও ঠিকানার মতো তথ্য যথাযথভাবে সংরক্ষণ করে না।
* ফেক অফার ও প্রতারণা: ভুয়া পেজ, ছাড়ের নামে প্রতারণা ই-কমার্সকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
* রিফান্ড ও রিটার্ন নীতির জটিলতা: নির্ধারিত সময়ের মধ্যে টাকা ফেরত (রিফান্ড) না পাওয়া গ্রাহকদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি করে।
বিশ্ব অভিজ্ঞতা: সফল নিরাপত্তা মডেল
চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার ই-কমার্স ইকোসিস্টেমে নিরাপত্তা ও আস্থা বিষয়ক কিছু কার্যকর মডেল অনুসরণ করা হয়।
* চীন: আলিবাবার বায়ার প্রটেকশন প্রোগ্রাম।
* ভারত: অ্যামাজনের এ টু জেড গ্যারান্টি ও ইউপিআই সিস্টেমে ফ্রড রেজোলিউশন সেন্টার।
* ইন্দোনেশিয়া: টকোপিডিয়ার সেলার ভেরিফিকেশন ও ইজি রিটার্ন পলিসি।
ডিজিটাল নিরাপত্তার জন্য মূল করণীয়
* ভেরিফায়েড সেলার প্রোগ্রাম চালু করা।
* সাইবার নিরাপত্তা মান বাধ্যতামূলক করা।
* ক্রেতার যাচাই করা রিভিউ ও রেটিং সিস্টেম চালু।
* কেন্দ্রীয় অভিযোগ নিষ্পত্তি সিস্টেম তৈরি (আইসিটি বিভাগ ও ই–ক্যাব)।
* ট্রাস্ট ব্যাজ ও ডিজিটাল সার্টিফিকেশন চালু করা।
গ্রাহক আস্থা পুনরুদ্ধারের জন্য করণীয়
* রিফান্ড ও রিটার্ন প্রক্রিয়া সহজ ও দ্রুত করা।
* অনলাইন লেনদেন সুরক্ষায় ব্যাংক ও এমএফএস সহযোগিতা বাড়ানো।
* ক্রেতা সুরক্ষায় ডিজিটাল ভোক্তা অধিকার আইনের বাস্তবায়ন।
* সচেতনতামূলক প্রচারণা: ‘বাই ফ্রম ভেরিফায়েড সেলার’ প্রচারণা চালু করা।
বাংলাদেশ সরকার ও ই-ক্যাবের ভূমিকা
* সাইবার সিকিউরিটি সেল সক্রিয় করা (আইসিটি বিভাগ)।
* ই–ক্যাবের মাধ্যমে অনলাইন ব্যবসার সুশাসন নিশ্চিত করা।
* সেলার ব্ল্যাকলিস্ট ডেটাবেজ তৈরি করা।
* ব্যাংক ও লেনদেন গেটওয়ের সঙ্গে কনসোর্টিয়াম গঠন করে প্রতারণা প্রতিরোধ করা।
ফিনটেকের ভূমিকা
ফিনটেক ইকোসিস্টেমের সঙ্গে ই-কমার্সের সংযোগ আরও জোরদার করতে হবে। ডিজিটাল লেনদেন নিরাপত্তায় বিকাশ, নগদ, রকেটের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে গ্রাহক অভিযোগ নিষ্পত্তি প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ করতে হবে।
ভবিষ্যতের লক্ষ্য
* ২০২৫ সালের মধ্যেই ৯৫ শতাংশ ই-কমার্স লেনদেন সুরক্ষিত ডিজিটাল মাধ্যমে করা।
* ১০০ শতাংশ ই-কমার্স সাইটে এসএসএল সার্টিফিকেট নিশ্চিত করা।
* রিফায়েড সেলারের সংখ্যা ১ লাখে উন্নীত করা।
* ই–ক্যাব সদস্যভুক্তদের জন্য বাধ্যতামূলক সাইবার নিরাপত্তা কমপ্লায়েন্স চালু করা।
ই-কমার্স কেবল প্রযুক্তির খেলা নয়, এটি মানুষের আস্থার খেলা। যেখানে নিরাপত্তা আছে, সেখানেই বাণিজ্য টেকে। বাংলাদেশের ই-কমার্স বিপ্লব সফল করতে হলে আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার হতে হবে গ্রাহক আস্থা ও ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
(চলবে)
ড.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ল দ শ র ই কম র স ল নদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজের ৯ মাসে লোকসান কমেছে ৮.৪৩ শতাংশ
পুঁজিবাজারে প্রকৌশল খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চলতি হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিক (জানুয়ারি-মার্চ, ২০২৫) ও ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ, ২০২৫) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী কোম্পানিটির নয় মাসে শেয়ারপ্রতি লোকসান (ইপিএস) কমেছে।
সোমবার (২১ এপ্রিল) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এর আগে রবিবার (২০ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে চলতি হিসাববছরের তৃতীয় প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও অনুমোদনের পর তা প্রকাশ করা হয়।
তথ্য মতে, চলতি হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান (ইপিএস) হয়েছে (০.৬৪) টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল (০.৬৪) টাকা। সে হিসেবে আলোচ্য প্রান্তিকে কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি লোকসান অপরিবর্ত রয়েছে।
এদিকে, তিন প্রান্তিক মিলে বা ৯ মাসে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান (ইপিএস) হয়েছে (১.৬৩) টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল (১.৭৮) টাকা। সে হিসেবে আলোচ্য প্রান্তিকে কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি লোকসান কমেছে (০.১৫) টাকা বা ৮.৪৩ শতাংশ।
২০২৫ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১৮.৩৮ টাকা।
ঢাকা/এনটি/টিপু