আইপিএলে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের অভিযোগ, যা বলল রাজস্থান
Published: 23rd, April 2025 GMT
আইপিএলে ১৬ এপ্রিল দিল্লি ক্যাপিটালসের কাছে সুপার ওভারে হারে রাজস্থান রয়্যালস। এরপর ১৯ এপ্রিল লক্ষ্ণৌ সুপারজায়ান্টসের বিপক্ষে আবার ২ রানে হারে ফ্র্যাঞ্চাইজিটি। দুটি ম্যাচেরই এক পর্যায়ে জয়ের সুযোগ ছিল রাজস্থানের। সেই অবস্থা থেকে ম্যাচ হেরে যাওয়ায় রাজস্থান রয়্যালসের বিপক্ষে ম্যাচ পাতানোর অভিযোগ তোলেন রাজস্থান ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের (আরসিএ) অ্যাড–হক কমিটির আহ্বায়ক জয়দীপ বিহানি। একটি চিঠিতে এ অভিযোগের কড়া জবাব দিয়েছে রাজস্থান রয়্যালস।
ফ্র্যাঞ্চাইজি দলটি ম্যাচ পাতানো–সংক্রান্ত অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে এবং আরসিএর এমন অভিযোগের পেছনে অন্য সন্দেহও করা হচ্ছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হয়তো রাজস্থানের কাছ থেকে আইপিএলের টিকিট কম পেয়েই এমন অভিযোগ করেছে আরসিএ।
আরও পড়ুনকোহলি–আনুশকা থেকে পন্ত–ইশা: ভারতীয় ক্রিকেটারদের ‘লাভ স্টোরি’১ ঘণ্টা আগেটাইমস অব ইন্ডিয়ায় আজ প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়, আরসিএ আইপিএলে সাধারণত যে পরিমাণ টিকিট পেয়ে থাকে, এবার তার চেয়ে কম পেয়েছে। ভারতের রাজ্য ক্রিকেট সংস্থাটির অসন্তোষের পেছনে এটা মূল কারণ হতে পারে বলে জানানো হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজস্থান রয়্যালসের কাছ থেকে সাধারণত প্রতি ম্যাচের ১ হাজার ৮০০ টিকিট পায় আরসিএ। কিন্তু এ বছরের আইপিএলে টিকিট কম পাচ্ছে আরসিএ। ম্যাচপ্রতি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টিকিট পাচ্ছে তারা।
টাইমস অব ইন্ডিয়াকে রাজস্থান রয়্যালসের ভেতরের এক সূত্র বলেছেন, ‘মৌসুমের শুরুতে বিসিসিআইয়ের কাছ থেকে আমরা পরিষ্কার নির্দেশিকা পেয়েছি, আরসিএ যেহেতু ভেঙে দেওয়া হয়েছে, আমরা সবকিছু আয়োজনের বিষয়ে রাজস্থান স্টেট স্পোর্টস কাউন্সিলের (আরএসএসসি) সঙ্গে যোগাযোগ করব। আরসিএ অ্যাড–হক কমিটির অসন্তুষ্ট সদস্য এবং তার সহযোগীরা অত্যধিকসংখ্যক টিকিট দাবি করছেন এবং আমরা তাতে কর্ণপাত করছি না। এত নাটকের এটাই মূল কারণ।’
লক্ষ্ণৌর বিপক্ষে রাজস্থানের হারের ম্যাচ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন আরসিএ অ্যাড–হক কমিটির আহ্বায়ক জয়দীপ বিহানি.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আরস এ
এছাড়াও পড়ুন:
যে কারণে আসিয়ানে বাংলাদেশের জায়গা পাওয়া উচিত
গত দশকের একসময় যাকে ‘অযোগ্য রাষ্ট্র’ বলে হেয় করা হতো, সেই বাংলাদেশই সহস্রাব্দের শুরুতে এশিয়ার দ্রুততম বর্ধনশীল অর্থনীতির একটিতে পরিণত হয়। কেউ কেউ তাকে বলেছিলেন পরবর্তী ‘এশীয় টাইগার’। গত এক দশকে দেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ৬ শতাংশের বেশি হারে বেড়ে চলেছে নিয়মিতভাবে। আর এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ধীরে ধীরে বিশ্ব অর্থনীতিতে এক সম্ভাবনাময় শক্তি হিসেবে নিজের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে।
২০২৪ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশে ঘটেছে তরুণদের এক বিদ্রোহ। সেই বিদ্রোহের মধ্য দিয়ে এক ঐতিহাসিক রাজনৈতিক পালাবদল হটিয়ে দিয়েছে দীর্ঘদিনের এক স্বৈরশাসককে। দেশের অন্তর্বর্তীকালীন নেতা হয়েছেন একজন নোবেলজয়ী ব্যক্তিত্ব। এর ফলে দেশের সামনে তৈরি হয়েছে এক নতুন সম্ভাবনার জানালা। বাংলাদেশ এখন শুধু দক্ষিণ এশিয়ার গণ্ডির মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থেকে বৃহত্তর অঞ্চলে নিজেদের ভাবমূর্তি পুনর্গঠনের সুযোগ পেয়েছে।
বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও আঞ্চলিক সহযোগিতার দিকে আগ্রহ—এই দুই মিলিয়ে এখনই দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে আরও গভীর সম্পর্ক গড়ার সম্ভাবনা নিয়ে নতুন করে ভাবার সময়। বিশেষ করে, বাংলাদেশ যদি দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় আঞ্চলিক জোটে (আসিয়ান) যোগ দেয়, তবে সেটি উভয়ের জন্যই লাভজনক হতে পারে।
বাংলাদেশ যদি আসিয়ানে যোগ দেয়, তবে তা এ অঞ্চলের সাপ্লাই চেইন সমন্বয় ও অর্থনীতি বহুমুখীকরণ প্রচেষ্টায় বড় ধরনের গতি আনতে পারে। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ টেক্সটাইল ও তৈরি পোশাক উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের রয়েছে বড় মাপের উৎপাদনক্ষমতা ও তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী শ্রমশক্তি।
এই সক্ষমতার সঙ্গে আসিয়ান অঞ্চলের শিল্প ও প্রযুক্তির মিলন ঘটলে তা সীমানা পেরিয়ে বিনিয়োগ, শ্রমের চলাচল ও প্রযুক্তি বিনিময়ের নতুন নতুন পথ উন্মুক্ত হতে পারে। বিশেষ করে টেকসই ও বৈচিত্র্যময় আঞ্চলিক ভ্যালু চেইন গড়ে তোলার যে প্রয়াস চলছে, তাতে বাংলাদেশের ভূমিকা হতে পারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এর চেয়েও বড় কথা, বাংলাদেশে রয়েছে বঙ্গোপসাগরের সবচেয়ে ব্যস্ত সমুদ্রবন্দর। এই বন্দর একদিকে যেমন চীনের কাছাকাছি, অন্যদিকে তা আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর জন্য হতে পারে ভারত মহাসাগরে প্রবেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ দ্বার।
ভৌগোলিক সুবিধা এবং শিল্প খাতে পারস্পরিক সম্পূরকতা থাকার পরও বাংলাদেশ ও আসিয়ানের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক এখনো বেশ সীমিত। বর্তমানে বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক বাণিজ্যের মাত্র ১০ শতাংশ হয় আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে। এর বিপরীতে, অন্য এশীয় দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য ৪২ শতাংশ, আর ইউরোপের সঙ্গে বাণিজ্য দাঁড়ায় প্রায় ৩১ শতাংশ। এই সংখ্যাগুলোই ইঙ্গিত করে, আসিয়ানের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যে এখনো এক বিশাল সম্ভাবনার দ্বার অবারিত রয়ে গেছে।
বাংলাদেশ ও আসিয়ানের মধ্যে বাণিজ্য ও উৎপাদনের সংযোগ জোরদার করা গেলে একদিকে যেমন বিদ্যমান বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা দূর করা সম্ভব হবে, অন্যদিকে তা এশিয়ার ভেতর আরও নিবিড় অর্থনৈতিক সংহতি গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। পাশাপাশি দুই পক্ষই বৈশ্বিক অস্থিরতা বা বহিরাগত ঝুঁকির বিরুদ্ধে একটি সুরক্ষাবলয় তৈরি করতে পারবে। বর্তমান বিশ্বে যখন ভূরাজনৈতিক টানাপোড়েন বেড়েই চলেছে এবং সাপ্লাই চেইন পুনর্গঠিত হচ্ছে, তখন এ ধরনের আঞ্চলিক সহযোগিতা আরও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠছে।
বাংলাদেশকে আসিয়ানে অন্তর্ভুক্ত করা মানে শুধু এই জোটের অর্থনৈতিক প্রভাব পশ্চিম দিকে বিস্তৃত করা নয়। বরং এর মাধ্যমে আসিয়ানকে একটি বৈশ্বিক উৎপাদন ও রপ্তানিকেন্দ্র হিসেবে আরও শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যাওয়া যাবে। আর বাংলাদেশের জন্য আসিয়ানের সদস্যপদ মানে হবে একটি বৃহত্তর অভিন্ন বাজারে প্রবেশাধিকার পাওয়া।
সেই সঙ্গে বাংলাদেশ পাবে রিজিওনাল কমপ্রেহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপের (আরসিইপি) মতো আঞ্চলিক অর্থনৈতিক কাঠামোয় আরও গভীরভাবে যুক্ত হওয়ার সুযোগ। আর আসিয়ান বাংলাদেশ থেকে পাবে একটি তরুণ শ্রমশক্তি, বিকাশমান ভোক্তাশ্রেণি এবং সুপ্রতিষ্ঠিত শিল্পভিত্তি। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে আসিয়ান জোট দীর্ঘমেয়াদি প্রতিযোগিতার সক্ষমতাকে আরও মজবুত করতে পারে।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এই ভাবনার প্রতি দৃঢ় আগ্রহ প্রকাশ করেছেন এবং বাংলাদেশকে আসিয়ানে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন আসিয়ান দেশের সমর্থন চেয়ে সক্রিয়ভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে এখন পর্যন্ত সদস্যদেশগুলোর প্রতিক্রিয়া বেশ নিস্তেজ। আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ প্রকাশ্যে সমর্থন বা জোরালো আলোচনার ইঙ্গিত দেয়নি। তবু প্রস্তাবটি আসিয়ান দেশগুলোর পক্ষ থেকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনার দাবি রাখে।তা ছাড়া বাংলাদেশের যে শুধু বড় শিল্পভিত্তি আছে, তা-ই নয়, এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় কর্মরত অভিবাসী শ্রমিকদের অন্যতম বড় অংশই আসে এখান থেকে। বিশেষ করে নির্মাণ ও কৃষি খাতে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি কাজ করছেন এ অঞ্চলে। যদি বাংলাদেশকে আসিয়ানের সদস্য করা হয়, তাহলে শ্রমিক চলাচল আরও সংগঠিত ও পারস্পরিক লাভজনক উপায়ে পরিচালনা করা সম্ভব হবে। একই সঙ্গে পুরো অঞ্চলে শ্রমনীতির মান এক করার সুযোগ তৈরি হবে। এতে শ্রমিকদের অধিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা যাবে এবং যেসব দেশে তাঁরা কাজ করেন, সেসব দেশের মানবসম্পদ উন্নয়ন আরও টেকসই হবে।
আরও পড়ুনট্রাম্পের শুল্কাঘাত মোকাবিলায় আসিয়ানের যা করা উচিত১৬ এপ্রিল ২০২৫এ মুহূর্তে এমন সংযুক্তি আরও জরুরি হয়ে উঠছে। কারণ, আসিয়ানের বেশ কয়েকটি সদস্যদেশ এখন শ্রমশক্তি-সংকট ও বার্ধক্যজনিত জনসংখ্যা সমস্যায় পড়ছে। যেমন থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও ভিয়েতনামে ইতিমধ্যেই এমন জনসংখ্যাগত পরিবর্তন শুরু হয়েছে। এই বাস্তবতা তাদের ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। এর বিপরীতে বাংলাদেশের রয়েছে একটি বড়, তরুণ এবং ক্রমশ শিক্ষিত হয়ে ওঠা জনসংখ্যা। এই শ্রমশক্তি আসিয়ানের জন্য হতে পারে একটি আদর্শ পরিপূরক, যা শ্রমের ঘাটতি পূরণ করতে এবং গোটা অঞ্চলের উৎপাদনক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করবে।
বাংলাদেশে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত বিষয়ে পড়াশোনা করা বিপুলসংখ্যক তরুণ রয়েছেন। তাঁদের অনেকেরই পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগানো হচ্ছে না। যাঁরা কাজ করছেন, তাঁদের পারিশ্রমিক কম। এই উদীয়মান মেধাবী জনশক্তি আসিয়ানের প্রযুক্তি খাতে, বিশেষ করে সেমিকন্ডাক্টরশিল্প গড়ে তোলার স্বপ্ন বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম ও সিঙ্গাপুরের মতো দেশগুলো বর্তমানে উন্নত উৎপাদন খাতে বড় পরিমাণে বিনিয়োগ করছে। সেই পটভূমিতে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ আরও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠছে। বাংলাদেশ যদি আসিয়ানের সঙ্গে যুক্ত হয়, তবে তা শুধু জোটটির উৎপাদন ও উদ্ভাবনী সক্ষমতাই বাড়াবে না, বরং নতুন বিনিয়োগ, দেশান্তরিত সহযোগিতা এবং প্রযুক্তি বিনিময়ের পথও খুলে দেবে।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এই ভাবনার প্রতি দৃঢ় আগ্রহ প্রকাশ করেছেন এবং বাংলাদেশকে আসিয়ানে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন আসিয়ান দেশের সমর্থন চেয়ে সক্রিয়ভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে এখন পর্যন্ত সদস্যদেশগুলোর প্রতিক্রিয়া বেশ নিস্তেজ। আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ প্রকাশ্যে সমর্থন বা জোরালো আলোচনার ইঙ্গিত দেয়নি। তবু প্রস্তাবটি আসিয়ান দেশগুলোর পক্ষ থেকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনার দাবি রাখে।
দশকের পর দশক ধরে বাংলাদেশ নীরবে বিশ্বের সামাজিক উদ্ভাবনের ধারায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রেখেছে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোয় যার মধ্যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াও রয়েছে। আন্তর্জাতিক ভূরাজনীতির আলোচনায় বাংলাদেশ প্রায়ই উপেক্ষিত থাকলেও দারিদ্র্য, বৈষম্য ও মৌলিক সেবার প্রবেশাধিকারের মতো গভীর সমস্যার সমাধানে তৃণমূল পর্যায়ে জনগণের অংশগ্রহণে গড়ে ওঠা মডেল তৈরি ও প্রয়োগে দেশটি অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে।
এ আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন নেতা মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি যিনি গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে ক্ষুদ্রঋণব্যবস্থা চালু করে ছোট ছোট, জামানতবিহীন ঋণ দিয়ে দরিদ্রদের উদ্যোক্তা ও স্বনির্ভর হয়ে ওঠার এক নতুন পথ দেখিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বজুড়ে দারিদ্র্য বিমোচনের ধারণাকেই বদলে দিয়েছেন।
ক্ষুদ্রঋণ ছাড়াও বাংলাদেশে গড়ে উঠেছে সামাজিক উদ্যোগ, সমবায় ও শিক্ষা কার্যক্রমের এক বৈচিত্র্যময় পরিবেশ, যেখানে জনসেবা ও উদ্যোক্তা ভাবনার মধ্যের সীমারেখা অনেকটাই মুছে গেছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অন্যতম অনন্য প্রতিষ্ঠান হলো বিশ্বের সবচেয়ে বড় এনজিও ব্র্যাক। আসিয়ানসহ এক ডজনেরও বেশি দেশে ব্র্যাক তাদের কার্যক্রম বিস্তার করেছে এবং স্থানীয় বাস্তবতার সঙ্গে তাদের মডেল সফলভাবে খাপ খাইয়ে নিয়েছে।
ফিলিপাইনে ব্র্যাক দেশটির শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে অংশীদারত্বে ‘অলটারনেটিভ ডেলিভারি মডেল’ নামের একটি কর্মসূচি চালিয়েছে। এর মাধ্যমে সংঘাতপীড়িত এবং দুর্গম অঞ্চলে মানসম্মত শিক্ষার সুযোগ পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। ব্র্যাকের এই সমন্বিত পদ্ধতিতে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, জীবিকা ও আর্থিক সেবাকে একসূত্রে গাঁথা হয়েছে। আসিয়ানের গ্রামীণ ও অবহেলিত জনগোষ্ঠীর পটভূমিতে এই কার্যক্রম বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক ও প্রয়োজনীয়।
উন্নয়ন সহায়তা তহবিল ক্রমেই আজ অনিশ্চয়তার মুখে পড়ছে। যেমন ট্রাম্প প্রশাসনের এই মেয়াদে ইউএসএআইডির অর্থায়ন স্থগিত হওয়ায় এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বহু সামাজিক প্রকল্প বন্ধ হয়ে গেছে বা ঝুলে আছে। এ সময়েই বাংলাদেশের উদ্ভাবনভিত্তিক ও আত্মনির্ভর উন্নয়ন-দর্শন একটি কার্যকর বিকল্প হিসেবে সামনে আসছে। যদি আসিয়ান ও বাংলাদেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা গড়ে ওঠে, তাহলে সদস্যদেশগুলো একটি কম খরচের, সম্প্রসারণযোগ্য এবং জনগণকে ক্ষমতায়িত করার পরীক্ষিত মডেল থেকে উপকৃত হতে পারবে।
এ ছাড়া বাংলাদেশ বর্তমানে ডিজিটাল ও স্বল্প ব্যয়ের উদ্ভাবনের ক্ষেত্রেও অগ্রণী অবস্থানে রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে স্বল্প মূল্যের চিকিৎসা সরঞ্জাম, মোবাইল ব্যাংকিং সেবা এবং স্থানীয়ভাবে অভিযোজিত জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার কৌশলসহ নানা ক্ষেত্রে। এসব উদ্ভাবন থেকে আসিয়ান দেশগুলো অনেক কিছু শিখতে পারে এবং নিজেদের বাস্তবতায় এগুলো প্রয়োগ করতে পারে। এসব মডেল তাৎক্ষণিক উন্নয়নচাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি ভবিষ্যতের নানা ঝুঁকি—যেমন জলবায়ু পরিবর্তন বা জনস্বাস্থ্যসংকট—মোকাবিলার সক্ষমতাও গড়ে তোলে।
বাংলাদেশকে আসিয়ানে অন্তর্ভুক্ত করা হলে এই সম্পর্কগুলো আরও দৃঢ় ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পাবে। এর ফলে সামাজিক উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে সীমান্ত পারাপার সহযোগিতা বাড়বে। যেমন যৌথ গবেষণা, পরীক্ষামূলক কর্মসূচি, আঞ্চলিক জ্ঞানভিত্তিক কেন্দ্র এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থায়নের সুযোগ তৈরি হবে।
বিশ্ব এখন বাণিজ্যযুদ্ধের এক নতুন যুগের দিকে এগোচ্ছে। এ সময় বাংলাদেশকে সদস্য হিসেবে যুক্ত করা আসিয়ানের জন্য এক নতুন দিক উন্মোচন করবে। এর ফলে আসিয়ান এমন এক আঞ্চলিক উন্নয়ন মডেল গ্রহণ করতে পারবে, যা মানুষের প্রয়োজনকে কেন্দ্রে রেখে গড়ে ওঠে। আর একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আরও অনুকূল বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে সম্মিলিতভাবে আলোচনা করার অবস্থানও তৈরি হবে।
নিয়াজ আসাদুল্লাহ আইডিয়াজ মালয়েশিয়ায় সিনিয়র ফেলো
ডরিস লিউ আইডিয়াজ অর্থনীতিবিদ ও আইডিয়াজ মালয়েশিয়ায় অ্যাসিস্ট্যান্ট রিসার্চ ম্যানেজার
নিক্কেই এশিয়া থেকে নেওয়া, ইংরেজির অনুবাদ জাভেদ হুসেন