১৩ বছরে আগে উত্তর ও দক্ষিণ—এ দুই সিটিতে বিভক্ত হয়েছিল ঢাকা সিটি করপোরেশন। এখন এই বিভাজন তুলে দেওয়ার সুপারিশ করেছে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন। তারা সমগ্র ঢাকা মহানগর এলাকার জন্য একক ঢাকা সিটি করপোরেশন করার পরামর্শ দিয়েছে। কাজের পরিধি, কাঠামো ও নির্বাচনের ধরনেও বড় রকমের পরিবর্তন করতে বলেছে কমিশন।

এ ক্ষেত্রে বর্তমানে উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতায় যে ২০টি অঞ্চল আছে, সেগুলোর প্রতিটিকে ওই এলাকার ওয়ার্ডগুলো নিয়ে একটি করে স্বতন্ত্র ‘সিটি কাউন্সিল’ (যেমন মিরপুর একটি সিটি কাউন্সিল হতে পারে) করার সুপারিশ করেছে কমিশন। এই সিটি কাউন্সিলই এলাকাভিত্তিক মূল কাজগুলো করবে। আর সিটি করপোরেশন মূলত সমন্বয়কারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করবে। এখানে ওয়ার্ড কাউন্সিলররা নির্বাচিত হবেন সরাসরি ভোটে। আর সিটি কাউন্সিল ও সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হবেন কাউন্সিলরদের ভোটে।

ভবিষ্যতে যদি মেয়র নির্বাচনে জনগণের পরিবর্তে কাউন্সিলরদের ভোট নির্ধারক ভূমিকা রাখে, তাহলে তা জনগণের সরাসরি ভোটাধিকার খর্ব করার আশঙ্কা সৃষ্টি করবে।অধ্যাপক সৈয়দা লাসনা কবীর, লোকপ্রশাসন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে গত রোববার জমা দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এমন সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন। গত বছরের ১৮ নভেম্বর স্থানীয় সরকারবিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদকে প্রধান করে আট সদস্যের স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়।

বুড়িগঙ্গা নদীতীরে অবস্থিত প্রাচীন নগরী ঢাকাকে পৌরসভা করা হয় ১৮৬৪ সালে। এরপর নানা পথপরিক্রমায় ১৯৯০ সালে ঢাকা সিটি করপোরেশন নামকরণ করা হয়। ২০১১ সালে ঢাকা সিটি করপোরেশন বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয় এবং ২০১২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ দুটি সিটি করপোরেশন যাত্রা শুরু করে।

এখন লন্ডনের নগর সরকারকাঠামোর আদলে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরের জন্য দুই স্তরবিশিষ্ট ‘মহানগর সরকার’ গঠনের সুপারিশ করেছে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন। কমিশন বলছে, ঢাকা মহানগরের ক্ষেত্রে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পরিবর্তে একক মহানগর সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

বর্তমানে উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতায় যে ২০টি অঞ্চল আছে, সেগুলোর প্রতিটিকে ওই এলাকার ওয়ার্ডগুলো নিয়ে একটি করে স্বতন্ত্র ‘সিটি কাউন্সিল’ (যেমন মিরপুর একটি সিটি কাউন্সিল হতে পারে) করার সুপারিশ করেছে কমিশন।

সিটি কাউন্সিল

স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একেকটি সিটি কাউন্সিল তার নিজস্ব ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে কাজ করবে, যা কতগুলো ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত হবে। স্বায়ত্তশাসন থাকলেও এই সিটি কাউন্সিলগুলো কাজের দিক দিয়ে বৃহত্তর ঢাকা সিটি করপোরেশনের আওতায় একটি স্যাটেলাইট আকারে যুক্ত থাকবে এবং পরিচালিত হবে। প্রতিটি সিটি কাউন্সিলে একজন মেয়র থাকবেন।

সিটি কাউন্সিল জননিরাপত্তা (কমিউনিটি পুলিশ) এবং অগ্নিনির্বাপণ পরিষেবা, মশকনিধন, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, স্থানীয় পর্যায়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, ফুটপাত, রাস্তা, কালভার্ট নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ, ব্যবসায় বা পেশার নিবন্ধন বা অনুমোদনসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের সরাসরি প্রয়োজনীয় পরিষেবা দেওয়ার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হবে। স্থানীয় কর সিটি করপোরেশন নয়, শুধু সিটি কাউন্সিল সংগ্রহ করবে।

‘ঢাকা মহানগর সরকারে’ অঞ্চলভিত্তিক ২০টি সিটি কাউন্সিল গঠন করা যেতে পারে। এর সম্ভাব্য একটি তালিকাও করে দিয়েছে কমিশন। যেমন বনানী–বারিধারা–গুলশান নিয়ে হবে একটি কাউন্সিল, উত্তরা পূর্ব–পশ্চিম নিয়ে একটি, দক্ষিণ খান–উত্তরখান, মিরপুর, পল্লবী, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি–রায়েরবাজার, লালবাগ, কেরানীগঞ্জ, রামপুরা–বনশ্রী–খিলগাঁও–মালিবাগ–মুগদা–বাড্ডা, যাত্রাবাড়ী–সায়েদাবাদ, রমনা–মতিঝিল–দিলকুশা, আরমবাগ–বাংলাবাজার–ওয়ারী–সূত্রাপুর–কোতোয়ালি, গাবতলী–আমিনবাজার, বসুন্ধরা–ভাটারা, কাফরুল–ক্যান্টনমেন্ট, খিলক্ষেত–কুড়িল, সাতারকুল, ডেমরা ও তেজগাঁও– আগারগাঁও– সংসদ ভবন এলাকা।

বুড়িগঙ্গা নদীতীরে অবস্থিত প্রাচীন নগরী ঢাকাকে পৌরসভা করা হয় ১৮৬৪ সালে। এরপর নানা পথপরিক্রমায় ১৯৯০ সালে ঢাকা সিটি করপোরেশন নামকরণ করা হয়। ২০১১ সালে ঢাকা সিটি করপোরেশন বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয় এবং ২০১২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ দুটি সিটি করপোরেশন যাত্রা শুরু করে।

নির্বাচন কীভাবে

কাউন্সিলগুলোতে নির্ধারিত সংখ্যক ওয়ার্ড থাকবে। জনসংখ্যার ভিত্তিতে একটি সিটি কাউন্সিলে কমপক্ষে ৯টি থেকে সর্বোচ্চ ১৫টি ওয়ার্ড থাকবে। এই ওয়ার্ডগুলোয় ভোটারদের প্রত্যক্ষ ভোটে কাউন্সিলর নির্বাচিত হবেন। এক-তৃতীয়াংশ ওয়ার্ডে নারী কাউন্সিলর নির্বাচিত হবেন। প্রতিটি সিটি কাউন্সিলে নির্বাচিত কাউন্সিলররা নিজেদের ভোটে কাউন্সিলের মেয়র নির্বাচিত করবেন। আর সব সিটি কাউন্সিলের কাউন্সিলররা মহানগর সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচনে ভোটার হিসেবে বিবেচিত হবেন। সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে নির্বাচন উন্মুক্ত থাকবে। সেখানে নির্বাচিত কাউন্সিলর ও বাইরের অনির্বাচিত ব্যক্তিও নির্বাচনের শর্ত পূরণ করে মেয়র পদে প্রার্থী হতে পারবেন।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দা লাসনা কবীর প্রথম আলোকে বলেন, জনসংখ্যা বিবেচনায় ঢাকায় দুটি সিটি করপোরেশন থাকা নাগরিক সেবা ও সেবার মান নিশ্চিত করতে সহায়ক। তবে এ ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনগুলোকে মহানগরের যেকোনো বিষয়ে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের জন্য একটি কার্যকর আইনি কাঠামো নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে মেয়র জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হন, যা গণতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। কিন্তু ভবিষ্যতে যদি মেয়র নির্বাচনে জনগণের পরিবর্তে কাউন্সিলরদের ভোট নির্ধারক ভূমিকা রাখে, তাহলে তা জনগণের সরাসরি ভোটাধিকার খর্ব করার আশঙ্কা সৃষ্টি করবে, যা গণতান্ত্রিক চর্চার পরিপন্থী।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন র ব চ ত হব ন র স প র শ কর ছ নগর সরক র জনগণ র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

আমরা গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী: ধর্ম উপদেষ্টা

ধর্ম উপদেষ্টা আল্লামা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, “আমরা গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী। সকল রাজনৈতিক দলগুলো তাদের মতামত দিয়েছে। আমরাও একটি রোডম্যাপ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। জনগণের চাহিদা যেদিকে হবে সরকার সেটি বিবেচনায় নিবেন।” 

রবিবার (২০ এপ্রিল) রাতে রাঙামাটি সরকারি কলেজ মাঠে পার্বত্য চট্টগ্রাম ওলামা পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত জাতীয় সীরাত সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। 

তিনি আরো বলেন, “বাংলাদেশে কোনও সংখ্যালঘু নির্যাতন হয় না, যা হয় তা রাজনৈতিক কারণে। বিশে^র অন্যান্য দেশের তুলনায় এদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় অনেক ভালো আছেন।” 

সম্প্রতি নারী সংস্কার কমিশন বাতিল চেয়ে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের আমির আল্লামা মামুনুল হকের বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, “এই প্রতিবেদন ছাপিয়ে জনগণের কাছে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। আমরা একটি সংস্কার করলাম সেটি জনগণ গ্রহণ না করলে সেটি বাস্তবায়ন হবে না। যেগুলো গ্রহণযোগ্য সেগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। যদি সংশোধন করা লাগে সরকার সেটি সংশোধন করবে। যে সমস্ত ধারাগুলো ইচ্ছা অভিপ্রায়ের পরিপন্থি সেগুলো সরকার বিবেচনা করবে।” 
 
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বান্দরবানের থানচি উপজেলার তিন্দু ইউনিয়নের রেমাক্রি মুখ এলাকায় স্থানীয়দের সাথে জলকেলিতে আরাকান আর্মির পোশাক পরিহিত ভাইরাল ছবি ও ভিডিও বিষয়ে জানতে চাইতে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, “এটা বাংলাদেশ সরকার ও সীমান্ত  রক্ষাকারী বাহিনীর নলেজে আছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মনিটরিং করছে, যখনি যেটা প্রয়োজন সেটা করা হবে।”

ঢাকা/শংকর/টিপু 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে সাবধান করলেন মির্জা আব্বাস
  • কাতারে ড. ইউনূস: পৃথিবীর জন্য আশার বাতিঘর হতে চায় বাংলাদেশ
  • পৃথিবীর জন্য আশার বাতিঘর হতে চায় বাংলাদেশ: প্রধান উপদেষ্টা
  • ২ কিলোমিটার সড়ক, ২০ হাজার শ্রমিকের দুর্ভোগ 
  • আমরা পৃথিবীর জন্য আশার এক বাতিঘর হিসেবে দাঁড়াতে চাই: ড. ইউনূস
  • শেষ ভাষণে ফিলিস্তিনিদের নিয়ে যা বলেছিলেন পোপ ফ্রান্সিস
  • রন হক সিকদারের ১০০ একর জমি জব্দের আদেশ 
  • রন হক সিকদারের নামে থাকা ১০০ একর জমি জব্দের আদেশ
  • আমরা গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী: ধর্ম উপদেষ্টা