দেশের দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা অনশন কর্মসূচি পালন করছেন। আন্দোলনকারীরা তখনই এমন কর্মসূচি দিতে বাধ্য হন, যখন তাঁদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে যায়। তাঁদের দাবিদাওয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও অনশন কর্মসূচিকে গুরুত্বহীন করে দেখার সুযোগ নেই। ফলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান অনশন কর্মসূচি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনসহ সরকারের নীতিনির্ধারকদের প্রতি আমরা দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

গত ফেব্রুয়ারিতে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিতে সংঘর্ষের ঘটনায় দুই মাস ধরে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট)। এখন পর্যন্ত আবাসিক হলগুলো খুলে দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিন আবাসিক হলের বাইরে থাকতে বাধ্য করে এভাবে একটি বিশ্ববিদ্যালয় চলতে পারে না। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের নানা আন্দোলনের মুখে মে মাসের শুরুতে আবাসিক হল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম শুরুর ঘোষণা দেওয়া হলেও ফেব্রুয়ারির সংঘর্ষের ঘটনায় ৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত জানায় কর্তৃপক্ষ। বহিষ্কারের বিষয়টি আরও ক্ষুব্ধ করেছে শিক্ষার্থীদের।

শিক্ষার্থীদের দাবি, যে ঘটনায় তাঁরা মার খেয়ে আহত হলেন, তাঁদেরই আবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বহিষ্কার করেছে। তা ছাড়া ক্যাম্পাসের বাইরে থেকে একজন তাঁদের বিরুদ্ধে মামলাও করেছেন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকেই সে মামলার বিষয়ে সহযোগিতা করা হয়েছে, নয়তো শিক্ষার্থীদের নাম, রোল নম্বরসহ বিবিধ তথ্য মামলার বাদী কীভাবে পেলেন? তা ছাড়া ফেব্রুয়ারির সংঘর্ষের দায় স্বীকার করারও প্রয়োজনবোধ করেনি উপাচার্যসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এমন পরিস্থিতিতে উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবি নিয়ে নানা বিক্ষোভ–কর্মসূচির পর আমরণ অনশনে বসেছেন শিক্ষার্থীরা।

অন্যদিকে মূল ক্যাম্পাসে ফেরার দাবিতে চতুর্থ দফায় আন্দোলন শুরু করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। এই দাবিতে এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অনশনে বসেছেন ইনস্টিটিউটের কয়েকজন শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, চারুকলাকে মূল ক্যাম্পাসে ফেরাতে ইতিমধ্যে প্রায় সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। সিন্ডিকেট সভা করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে তারা সময় চেয়েছে। তবে পূর্ববর্তী আন্দোলনগুলোর অভিজ্ঞতা থেকে চারুকলার শিক্ষার্থীরা প্রশাসনকে বিশ্বাস করতে চাইছেন না। তাঁরা আর কোনো মৌখিক আশ্বাস নয়, লিখিত প্রতিশ্রুতি চান।

দুই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেই শিক্ষার্থীদের দাবির গুরুত্ব বুঝতে হবে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলাকে আর ক্যাম্পাসে বাইরে রাখার সুযোগ নেই। এ ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের আন্তরিকভাবে আশ্বস্ত করা হোক। আর কুয়েটের পরিস্থিতির জন্য উপাচার্যসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায় আছে, এটি মানতেই হবে। ক্যাম্পাসটির পরিস্থিতি আরও জটিল হওয়ার আগেই এ সমস্যা দ্রুত সমাধানে সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টার প্রতি আমরা আহ্বান জানাচ্ছি। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দ্রুত আলোচনায় বসে সংকটের নিরসন করা হোক।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: চ র কল

এছাড়াও পড়ুন:

মূল ক্যাম্পাসে ফেরার দাবিতে এবার অনশনে চারুকলা ইনস্টিটিউটের ৯ শিক্ষার্থী

মূল ক্যাম্পাসে ফেরার দাবিতে চতুর্থ দফায় আন্দোলন শুরু করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। এই দাবিতে এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অনশনে বসেছেন ইনস্টিটিউটের ৯ শিক্ষার্থী।

আজ সোমবার বিকেল চারটার দিকে এই অনশন শুরু হয়। রাত পৌনে নয়টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি চলছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে উপাচার্য, দুই সহ-উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারের কার্যালয় রয়েছে। শিক্ষার্থীদের দাবি, চারুকলাকে মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শেষ করে লিখিত সিদ্ধান্ত প্রশাসন না জানানো পর্যন্ত তাঁরা অনশন চালিয়ে যাবেন।

অনশনে বসা ৯ শিক্ষার্থী হলেন ইনস্টিটিউটের স্নাতকোত্তরের খন্দকার মাসরুল আল ফাহিম, চতুর্থ বর্ষের নূর ইকবাল, তৃতীয় বর্ষের মো. শাহরিয়ার হাসান, দ্বিতীয় বর্ষের ইসরাত জাহান, মালিহা চৌধুরী, ইসরাত জাহান, নুসরাত জাহান, প্রথম বর্ষের তরিকুল ইসলাম ও মাহমুদুল ইসলাম।

খন্দকার মাসরুল আল ফাহিম প্রথম আলোকে বলেন, এখন তাঁরা প্রশাসন থেকে মৌখিক আশ্বাস চান না, লিখিত সিদ্ধান্ত চান। এই সিদ্ধান্ত না পাওয়া পর্যন্ত তাঁদের অনশন কর্মসূচি চলবে।

একই কথা বলেন ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী নূর ইকবাল। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, প্রশাসনের সঙ্গে তাঁরা বৈঠক করেছেন; কিন্তু লিখিত সিদ্ধান্তের বিষয়ে প্রশাসন এখনো কিছু জানায়নি। তাঁরা চান দ্রুত সিন্ডিকেট সভা করে চারুকলা ক্যাম্পাসে ফেরার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক। আর এক সপ্তাহের মধ্যে চারুকলার শ্রেণি কার্যক্রম মূল ক্যাম্পাসে শুরু হোক। এই দাবি না মানা পর্যন্ত তাঁদের অনশন চলবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরাও চান চারুকলা ইনস্টিটিউট মূল ক্যাম্পাসে ফিরুক। ইতিমধ্যে প্রায় সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। সিন্ডিকেট সভা করে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এ জন্য তাঁরা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সময় চেয়েছেন। তাঁরা শিক্ষার্থীদের বলেছেন, সমাবর্তনের পর সিন্ডিকেট সভা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা এতে রাজি হচ্ছেন না।

চতুর্থ দফায় আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা

বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের যাত্রা শুরু হয় ১৯৭০ সালে। বিভাগের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি ছিলেন শিল্পী রশিদ চৌধুরী। ২০১০ সালের ২ আগস্ট নগরের সরকারি চারুকলা কলেজের সঙ্গে এক হয়ে গঠিত হয় চারুকলা ইনস্টিটিউট। এই ইনস্টিটিউটের অবস্থান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে নগরের মেহেদীবাগের বাদশা মিয়া সড়কে। বর্তমানে ইনস্টিটিউটে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৪০০।

শ্রেণিকক্ষের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে ১১ দফা দাবিতে ২০২২ সালের নভেম্বরে ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভ শুরু করেন ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। এর পর থেকে তাঁদের ক্লাস বর্জন অব্যাহত থাকে। পাশাপাশি তাঁরা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন। একপর্যায়ে ইনস্টিটিউট নগর থেকে মূল ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নিতে তাঁরা এক দফা দাবি দেন। প্রশাসন দাবি না মানায় ১৬ নভেম্বর ইনস্টিটিউটের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা।

পরে কর্তৃপক্ষকে সাত দিনের সময় বেঁধে দিয়ে শর্ত সাপেক্ষে ২০২৩ সালের ২৩ জানুয়ারি ক্লাসে ফিরেছিলেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু দাবি আদায় না হওয়ায় ৩১ জানুয়ারি থেকে তাঁরা আবারও অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেন। একই দিন শিক্ষার্থীদের একটি পক্ষ ক্লাসে ফেরার দাবি জানায়। এ অবস্থায় ১ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে চারুকলায় ইনস্টিটিউটের হোস্টেলে তল্লাশি চালায় পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বডি। ২ ফেব্রুয়ারি চারুকলায় সশরীর শ্রেণি কার্যক্রম এক মাসের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের চারুকলা ক্যাম্পাস ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। ভবন সংস্কারের কথা বলে কর্তৃপক্ষ এমন সিদ্ধান্ত নেয়। পরে শিক্ষার্থীরা মূল ক্যাম্পাসেই বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করতে থাকেন। তবে ৯ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচিতে হামলা চালায় নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।

এরপরও শিক্ষার্থীরা মূল ক্যাম্পাসে ফেরার দাবিতে আন্দোলন করতে থাকেন৷ তবে একপর্যায়ে সেশনজট কমাতে ওই বছরের ৩ মে ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন শিক্ষার্থীরা। সরকার পতনের পর গত বছরের ডিসেম্বরে আবারও একই দাবিতে আন্দোলনে নামেন চারুকলার শিক্ষার্থীরা। পরে সহ-উপাচার্য (একাডেমিক) মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান চলতি বছরের এপ্রিলের আগে চারুকলাকে মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের আশ্বাস দিয়েছিলেন। বেঁধে দেওয়া এ সময়ের মধ্যে চারুকলা মূল ক্যাম্পাসে না আসায় আজ আবার আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কুয়েট ভিসির পদত্যাগের দাবিতে রাবি শিক্ষার্থীদের অনশন
  • শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনার পরও অনশন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা
  • কুয়েট ভিসির পদত্যাগ দাবিতে শাহবাগে 'ব্লকেড', যান চলাচল বন্ধ
  • কুয়েট ভিসির পদত্যাগ দাবিতে শাহবাগে 'ব্লকেড', রাজুতে অনশন
  • কুয়েট ভিসির পদত্যাগ দাবিতে শাহবাগ ব্লকেড, রাজুতে অনশন
  • পঞ্চগড়ে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল স্থাপনের দাবিতে ৭ ঘণ্টা অনশন
  • মহাসড়ক অবরোধ করে অপহৃত চবি শিক্ষার্থীদের মুক্তি দাবি
  • চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলার অনশনে অসুস্থ দুই শিক্ষার্থী
  • মূল ক্যাম্পাসে ফেরার দাবিতে এবার অনশনে চারুকলা ইনস্টিটিউটের ৯ শিক্ষার্থী