নান্দাইল থানায় হাজতিদের বই পড়ে জীবন আলোকিত করার উদ্দেশ্যে ‘বই কর্নার’ চালু করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার নিজ প্রচেষ্টায় কর্নারটি চালু করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার সারমিনা সাত্তার।
ইউএনও সারমিনা সাত্তার জানান, হাজতিরা স্বল্প সময় থানা হাজতে অবস্থান করেন। সেসময় তারা নানা ধরনের দুশ্চিন্তায় ভোগেন। এ সময়টুকুতে বই পড়ে যাতে তারা সুচিন্তা করতে পারেন মূলত সে উদ্দেশ্য নিয়েই বই কর্নারটি চালুর উদ্যোগ নেন তিনি। একমাত্র বই-ই পারে মানুষের জীবনকে আলোকিত করতে। অনেক সময় বইয়ের একটি ভালো বাক্যই কারোর জীবন বদলে দিতে পারে। কর্নারে ধর্মীয় গ্রন্থসহ বিভিন্ন ধরনের শিক্ষণীয় বইও রাখা হয়েছে। তখন নান্দাইলের বই পড়া আন্দোলন নামে একটি সংগঠন কর্নারে পাঁচ হাজার টাকা মূল্যের বিভিন্ন ধরনের বই দেওয়ার অঙ্গীকার করে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফয়জুর রহমান, থানার ওসি আনোয়ার হোসেন প্রমুখ। ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন, জীবনমান উন্নয়নে বই পড়ার কোনো বিকল্প নেই। এ ধরনের উদ্যোগ থানাগুলোতে নতুন দিগন্তের সূচনা করবে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
কুয়েট ও চবি প্রশাসনের সুবুদ্ধির উদয় হোক
দেশের দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা অনশন কর্মসূচি পালন করছেন। আন্দোলনকারীরা তখনই এমন কর্মসূচি দিতে বাধ্য হন, যখন তাঁদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে যায়। তাঁদের দাবিদাওয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও অনশন কর্মসূচিকে গুরুত্বহীন করে দেখার সুযোগ নেই। ফলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান অনশন কর্মসূচি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনসহ সরকারের নীতিনির্ধারকদের প্রতি আমরা দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
গত ফেব্রুয়ারিতে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিতে সংঘর্ষের ঘটনায় দুই মাস ধরে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট)। এখন পর্যন্ত আবাসিক হলগুলো খুলে দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিন আবাসিক হলের বাইরে থাকতে বাধ্য করে এভাবে একটি বিশ্ববিদ্যালয় চলতে পারে না। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের নানা আন্দোলনের মুখে মে মাসের শুরুতে আবাসিক হল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম শুরুর ঘোষণা দেওয়া হলেও ফেব্রুয়ারির সংঘর্ষের ঘটনায় ৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত জানায় কর্তৃপক্ষ। বহিষ্কারের বিষয়টি আরও ক্ষুব্ধ করেছে শিক্ষার্থীদের।
শিক্ষার্থীদের দাবি, যে ঘটনায় তাঁরা মার খেয়ে আহত হলেন, তাঁদেরই আবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বহিষ্কার করেছে। তা ছাড়া ক্যাম্পাসের বাইরে থেকে একজন তাঁদের বিরুদ্ধে মামলাও করেছেন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকেই সে মামলার বিষয়ে সহযোগিতা করা হয়েছে, নয়তো শিক্ষার্থীদের নাম, রোল নম্বরসহ বিবিধ তথ্য মামলার বাদী কীভাবে পেলেন? তা ছাড়া ফেব্রুয়ারির সংঘর্ষের দায় স্বীকার করারও প্রয়োজনবোধ করেনি উপাচার্যসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এমন পরিস্থিতিতে উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবি নিয়ে নানা বিক্ষোভ–কর্মসূচির পর আমরণ অনশনে বসেছেন শিক্ষার্থীরা।
অন্যদিকে মূল ক্যাম্পাসে ফেরার দাবিতে চতুর্থ দফায় আন্দোলন শুরু করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। এই দাবিতে এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অনশনে বসেছেন ইনস্টিটিউটের কয়েকজন শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, চারুকলাকে মূল ক্যাম্পাসে ফেরাতে ইতিমধ্যে প্রায় সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। সিন্ডিকেট সভা করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে তারা সময় চেয়েছে। তবে পূর্ববর্তী আন্দোলনগুলোর অভিজ্ঞতা থেকে চারুকলার শিক্ষার্থীরা প্রশাসনকে বিশ্বাস করতে চাইছেন না। তাঁরা আর কোনো মৌখিক আশ্বাস নয়, লিখিত প্রতিশ্রুতি চান।
দুই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেই শিক্ষার্থীদের দাবির গুরুত্ব বুঝতে হবে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলাকে আর ক্যাম্পাসে বাইরে রাখার সুযোগ নেই। এ ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের আন্তরিকভাবে আশ্বস্ত করা হোক। আর কুয়েটের পরিস্থিতির জন্য উপাচার্যসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায় আছে, এটি মানতেই হবে। ক্যাম্পাসটির পরিস্থিতি আরও জটিল হওয়ার আগেই এ সমস্যা দ্রুত সমাধানে সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টার প্রতি আমরা আহ্বান জানাচ্ছি। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দ্রুত আলোচনায় বসে সংকটের নিরসন করা হোক।