খাগড়াছড়ি থেকে অপহরণের শিকার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) পাঁচ শিক্ষার্থীকে এক সপ্তাহেও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালালেও কাউকে উদ্ধার করতে পারেনি। অপহৃত কয়েকজন অভিভাবকেরও খোঁজ মিলছে না। সন্তানের সঙ্গে দেখা করিয়ে দেওয়ার নাম করে অপহরণকারীরা তাদের ডেকে নিয়েছিল বলে দাবি স্বজনদের। সব মিলিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন পার করছেন অপহৃতদের পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা। সন্তু লারমা নেতৃত্বাধীন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ অপহরণের ঘটনায় ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টকে (ইউপিডিএফ) দায়ী করেছে। তবে সংগঠনের খাগড়াছড়ি জেলা সংগঠক অংগ্য মারমা অপহরণের সঙ্গে তাঁর সংগঠনের জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন। 

এদিকে অপহৃত শিক্ষার্থীদের অবিলম্বে উদ্ধার এবং জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন চবি শিক্ষার্থীরা। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নম্বর গেট এলাকায় খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম সড়ক অবরোধ করেন তারা। এ সময় প্রায় আধঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ ছিল। দ্রুত সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীদের উদ্ধার না করা হলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। দুপুর দেড়টার দিকে তারা কর্মসূচি শেষ করে সড়ক ছেড়ে দেন। 
অপহৃত শিক্ষার্থীরা হলেন চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মৈত্রীময় চাকমা ও অলড্রিন ত্রিপুরা, নাট্যকলা বিভাগের দিব্যি চাকমা, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের রিশন চাকমা এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী লংতি ম্রো। 

গত ১৫ এপ্রিল পাহাড়ের বিজু উৎসব শেষে পাঁচ শিক্ষার্থী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরার উদ্দেশে রওনা দেন। পরদিন সকাল সাড়ে ৬টায় খাগড়াছড়ির গিরিফুল এলাকায় গাড়ি আটকে অস্ত্রধারীরা তাদেরসহ টমটমের চালককে তুলে নিয়ে যায়। পরে চালককে ছেড়ে দিলেও শিক্ষার্থীদের এখনও খোঁজ মেলেনি। 

জানা গেছে, সোমবার খাগড়াছড়ি সদরের দুর্গম এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে ইউপিডিএফের আস্তানা থেকে সামরিক ইউনিফর্ম, ওয়াকিটকি, মোবাইল, ল্যাপটপ, ক্যামেরাসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। তবে কাউকে আটক করা যায়নি। 

এদিকে ইউপিডিএফের বিরুদ্ধে এ অপহরণের অভিযোগ তুলে চবির পাঁচ শিক্ষার্থীর মুক্তির দাবিতে গতকাল রাঙামাটি সরকারি কলেজে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ কলেজ শাখা। বিক্ষোভ-মিছিলটি বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে ক্যাম্পাসের সামনে সমাবেশে মিলিত হয়। 

অপহৃত দিব্যি চাকমার নানী ও বরকলের আইমাছড়ি ইউপির ওয়ার্ড মেম্বার শুভমালা চাকমা জানান, তাঁর নাতি অপহরণের ঘটনার এক দিন পর তাঁর মেয়ে ভারতী দেওয়ান দেখা করতে গিয়ে আর বাড়ি ফেরেনি। তাঁর মোবাইল ফোনও বন্ধ। 

পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় তথ্য, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক অন্বেষ চাকমা জানান, অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পেরেছি, দ্বিতীয় দফায় অপহরণকারীরা অভিভাবকদের আলাদা আলাদা করে ডেকেছে। তবে কবে, কোন স্থানে ডেকেছে, তা জানা সম্ভব হয়নি। 
খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার আরেফিন জুয়েল বলেন, অপহৃত শিক্ষার্থীদের উদ্ধারে অভিযান চলছে। এখনো কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারিনি। তবে যেখানে তথ্য পাচ্ছি, সেখানে অভিযান চালানো হচ্ছে। 

এদিকে কক্সবাজারে কাজের সন্ধানে এসে অপহৃত সিলেটের জকিগঞ্জের ছয় শ্রমিককে উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল রাত সাড়ে ৮টার দিকে টেকনাফের রাজারছড়া এলাকা থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়। টেকনাফ মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, মালয়েশিয়া পাচারের উদ্দেশ্য তাদের অপহরণ করে পাহাড়ে রাখা হয়েছিল। অভিযানের সময় অপহরণকারীরা পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ ছয় শ্রমিককে উদ্ধার করে। 
উদ্ধার হওয়া শ্রমিকরা হলেন জকিগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম লোহারমহল গ্রামের ফারুক আহমদের ছেলে মারুফ আহমদ (১৮), আজির উদ্দিনের ছেলে শাহিন আহমদ (২১), মৃত লুকুছ মিয়ার ছেলে রশিদ আহমদ (২০), সফর উদ্দিনের ছেলে খালেদ হাসান (১৯), মৃত সরবদির ছেলে আব্দুল জলিল (৫৫) ও মৃত দুরাই মিয়ার ছেলে এমাদ উদ্দিন (২২)। ১৬ এপ্রিল কাজের উদ্দেশ্যে জকিগঞ্জ থেকে কক্সবাজারে এসে তারা নিখোঁজ হন। তাঁরা সবাই পেশায় রাজমিস্ত্রী।
 
[প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার অফিস ও প্রতিনিধিরা]

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: অপহরণ অপহরণ র অপহ ত

এছাড়াও পড়ুন:

বরিশালে র‌্যাবের মাদকবিরোধী অভিযানে হামলা, গুলিতে তরুণ নিহত

বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলায় র‌্যাবের অভিযানের সময় মাদক ব্যবসায়ীরা হামলা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় গুলিতে সিয়াম মোল্লা (২২) নামে এক তরুণ নিহত হয়েছেন। আগৈলঝাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অলিউল ইসলাম প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সোমবার বিকেলে উপজেলার জোড়া ব্রিজ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত সিয়াম বরিশালের উজিরপুর উপজেলার বাহেরঘাট এলাকার বাসিন্দা মো. রিপন মোল্লার ছেলে। এ ঘটনায় সিয়ামের ফুফাতো ভাই রাকিব মোল্লা (২৭) নামে আরও এক যুবক আহত হয়েছেন। তাকে বরিশালের শের-ই–বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রাকিব মোল্লা একই এলাকার খালেক মোল্লার ছেলে। পুলিশের স্থানীয় একটি সূত্র বলছে, নিহত ও আহত দুজনই এলাকার পরিচিত মাদক ব্যবসায়ী।

আগৈলঝাড়া থানার ওসি অলিউল ইসলাম রাতে প্রথম আলোকে বলেন, সোমবার বিকেলে উপজেলার জোড়া ব্রিজ এলাকায় র‌্যাব সদস্যরা মাদক ব্যবসায়ীদের ধরতে অভিযানে যান। এ সময় মাদক ব্যবসায়ীরা র‌্যাব সদস্যদের ওপর হামলা চালালে তাঁরা আত্মরক্ষার্থে গুলি চালান। এ সময় একজনের মৃত্যু হয়েছে। মারা যাওয়া ব্যক্তিকে পার্শ্ববর্তী গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে বরিশাল র‌্যাব-৮–এর উপ–অধিনায়ক মেজর মো. মাহমুদুল আহসানের মুঠোফোনে রাতে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।

স্থানীয় কয়েক বাসিন্দা বলেন, সোমবার বিকেলে সাদাপোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দক্ষিণ মোল্লাপাড়া এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ওপর দুর্বৃত্তরা হামলা চালায়। আত্মরক্ষার্থে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা গুলি চালান।

নিহত তরুণের ফুফাতো বোন নাসরিন আক্তার বলেন, ‘খবর পেয়ে ছুটে এসে দেখি মামাতো ভাই সিয়ামের লাশ পড়ে আছে। আমার আপন ভাই রাকিব গুরুতর আহত অবস্থায় পড়ে ছিল। কীভাবে ঘটনাটি ঘটেছে, কিছুই জানি না।’

গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক জাকিয়া রহমান মৌরী বলেন, সিয়ামের বুকে গুলিবিদ্ধ হওয়ার চিহ্ন রয়েছে। গুরুতর আহত রাকিবকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পাহাড়ে অপহরণের আলোচিত যত ঘটনা
  • অপহরণের ছয় দিন পর টেকনাফের পাহাড় থেকে সিলেটের ৬ বাসিন্দাকে উদ্ধার
  • মালয়েশিয়া পাচারের উদ্দেশ্যে অপহরণ, টেকনাফের পাহাড় থেকে উদ্ধার সেই ৬ শ্রমিক
  • জামিনে মুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নজরে রাখার নির্দেশ দিলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • সিলেটের নিখোঁজ ছয় শ্রমিকের লোকেশন টেকনাফ: পুলিশ
  • বরিশালে র‌্যাবের মাদকবিরোধী অভিযানে হামলা, গুলিতে তরুণ নিহত
  • টেকনাফে অপহরণকারী- যৌথবাহিনী গোলাগুলি, গুলিবিদ্ধ ১
  • টেকনাফে অপহরণকারীদের সঙ্গে যৌথবাহিনীর গোলাগুলি, গুলিবিদ্ধ ১
  • খাগড়াছড়িতে ইউপিডিএফের গোপন আস্তানার সন্ধান