চার দফা কর্মসূচি ঘোষণা করে প্রায় দুই ঘণ্টা পর রাজধানীর শাহবাগ মোড়ের ‘ব্লকেড’ (অবরোধ) তুলে নিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে মঙ্গলবার রাত ১০টা ৪০ মিনিটের দিকে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একদল শিক্ষার্থী। রাত সাড়ে ১২টার দিকে তাঁরা অবরোধ তুলে নেন। এরপর শাহবাগে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

অবরোধ তুলে নেওয়ার আগে কুয়েট শিক্ষার্থীদের গণ-অনশন কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে চার দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন শিক্ষার্থীরা। সেই চার দফা কর্মসূচি হলো: সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ক্লাস’ বর্জনের আহ্বান, সব ক্যাম্পাসে প্রতীকী অনশন ও অবস্থান পালন, সব ক্যাম্পাসে একদফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও বুধবার বিকেলে ৩টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ।

টিএসসিতে এক কর্মসূচি থেকে মঙ্গলবার রাত ১০টার মধ্যে কুয়েটের উপাচার্যকে পদত্যাগের জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। এই সময়ের মধ্যে উপাচার্যকে না সরানো হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে ‘কুয়েট বাঁচাতে শাহবাগ ব্লকেড’-এর ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল।

আরও পড়ুনরাজু ভাস্কর্যে মধ্যরাতে আমরণ অনশনে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের ১৫ জন২১ মিনিট আগে

রাত ১০টার মধ্যে কুয়েটের উপাচার্য পদত্যাগ না করায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেশ কিছু শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে জড়ো হন। সেখান থেকে মিছিল নিয়ে এসে রাত ১০টা ৪০ মিনিটে তাঁরা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন। তারা ‘দালাল ভিসির গদিতে, আগুন জ্বালো এক সাথে’, ‘কুয়েট ভিসির গদিতে, আগুন জ্বালো এক সাথে’ প্রভৃতি স্লোগান দেন। অবরোধের কারণে শাহবাগ মোড় দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপ চ র য শ হব গ ম র ত ১০ট অবর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

মূল ক্যাম্পাসে ফেরার দাবিতে এবার অনশনে চারুকলা ইনস্টিটিউটের ৯ শিক্ষার্থী

মূল ক্যাম্পাসে ফেরার দাবিতে চতুর্থ দফায় আন্দোলন শুরু করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। এই দাবিতে এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অনশনে বসেছেন ইনস্টিটিউটের ৯ শিক্ষার্থী।

আজ সোমবার বিকেল চারটার দিকে এই অনশন শুরু হয়। রাত পৌনে নয়টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি চলছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে উপাচার্য, দুই সহ-উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারের কার্যালয় রয়েছে। শিক্ষার্থীদের দাবি, চারুকলাকে মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শেষ করে লিখিত সিদ্ধান্ত প্রশাসন না জানানো পর্যন্ত তাঁরা অনশন চালিয়ে যাবেন।

অনশনে বসা ৯ শিক্ষার্থী হলেন ইনস্টিটিউটের স্নাতকোত্তরের খন্দকার মাসরুল আল ফাহিম, চতুর্থ বর্ষের নূর ইকবাল, তৃতীয় বর্ষের মো. শাহরিয়ার হাসান, দ্বিতীয় বর্ষের ইসরাত জাহান, মালিহা চৌধুরী, ইসরাত জাহান, নুসরাত জাহান, প্রথম বর্ষের তরিকুল ইসলাম ও মাহমুদুল ইসলাম।

খন্দকার মাসরুল আল ফাহিম প্রথম আলোকে বলেন, এখন তাঁরা প্রশাসন থেকে মৌখিক আশ্বাস চান না, লিখিত সিদ্ধান্ত চান। এই সিদ্ধান্ত না পাওয়া পর্যন্ত তাঁদের অনশন কর্মসূচি চলবে।

একই কথা বলেন ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী নূর ইকবাল। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, প্রশাসনের সঙ্গে তাঁরা বৈঠক করেছেন; কিন্তু লিখিত সিদ্ধান্তের বিষয়ে প্রশাসন এখনো কিছু জানায়নি। তাঁরা চান দ্রুত সিন্ডিকেট সভা করে চারুকলা ক্যাম্পাসে ফেরার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক। আর এক সপ্তাহের মধ্যে চারুকলার শ্রেণি কার্যক্রম মূল ক্যাম্পাসে শুরু হোক। এই দাবি না মানা পর্যন্ত তাঁদের অনশন চলবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরাও চান চারুকলা ইনস্টিটিউট মূল ক্যাম্পাসে ফিরুক। ইতিমধ্যে প্রায় সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। সিন্ডিকেট সভা করে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এ জন্য তাঁরা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সময় চেয়েছেন। তাঁরা শিক্ষার্থীদের বলেছেন, সমাবর্তনের পর সিন্ডিকেট সভা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা এতে রাজি হচ্ছেন না।

চতুর্থ দফায় আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা

বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের যাত্রা শুরু হয় ১৯৭০ সালে। বিভাগের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি ছিলেন শিল্পী রশিদ চৌধুরী। ২০১০ সালের ২ আগস্ট নগরের সরকারি চারুকলা কলেজের সঙ্গে এক হয়ে গঠিত হয় চারুকলা ইনস্টিটিউট। এই ইনস্টিটিউটের অবস্থান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে নগরের মেহেদীবাগের বাদশা মিয়া সড়কে। বর্তমানে ইনস্টিটিউটে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৪০০।

শ্রেণিকক্ষের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে ১১ দফা দাবিতে ২০২২ সালের নভেম্বরে ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভ শুরু করেন ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। এর পর থেকে তাঁদের ক্লাস বর্জন অব্যাহত থাকে। পাশাপাশি তাঁরা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন। একপর্যায়ে ইনস্টিটিউট নগর থেকে মূল ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নিতে তাঁরা এক দফা দাবি দেন। প্রশাসন দাবি না মানায় ১৬ নভেম্বর ইনস্টিটিউটের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা।

পরে কর্তৃপক্ষকে সাত দিনের সময় বেঁধে দিয়ে শর্ত সাপেক্ষে ২০২৩ সালের ২৩ জানুয়ারি ক্লাসে ফিরেছিলেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু দাবি আদায় না হওয়ায় ৩১ জানুয়ারি থেকে তাঁরা আবারও অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেন। একই দিন শিক্ষার্থীদের একটি পক্ষ ক্লাসে ফেরার দাবি জানায়। এ অবস্থায় ১ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে চারুকলায় ইনস্টিটিউটের হোস্টেলে তল্লাশি চালায় পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বডি। ২ ফেব্রুয়ারি চারুকলায় সশরীর শ্রেণি কার্যক্রম এক মাসের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের চারুকলা ক্যাম্পাস ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। ভবন সংস্কারের কথা বলে কর্তৃপক্ষ এমন সিদ্ধান্ত নেয়। পরে শিক্ষার্থীরা মূল ক্যাম্পাসেই বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করতে থাকেন। তবে ৯ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচিতে হামলা চালায় নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।

এরপরও শিক্ষার্থীরা মূল ক্যাম্পাসে ফেরার দাবিতে আন্দোলন করতে থাকেন৷ তবে একপর্যায়ে সেশনজট কমাতে ওই বছরের ৩ মে ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন শিক্ষার্থীরা। সরকার পতনের পর গত বছরের ডিসেম্বরে আবারও একই দাবিতে আন্দোলনে নামেন চারুকলার শিক্ষার্থীরা। পরে সহ-উপাচার্য (একাডেমিক) মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান চলতি বছরের এপ্রিলের আগে চারুকলাকে মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের আশ্বাস দিয়েছিলেন। বেঁধে দেওয়া এ সময়ের মধ্যে চারুকলা মূল ক্যাম্পাসে না আসায় আজ আবার আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দুই ঘণ্টা পর শাহবাগের ‘ব্লকেড’ তুলে নিলেন শিক্ষার্থীরা
  • কুয়েট ভিসির পদত্যাগ দাবিতে শাহবাগে 'ব্লকেড', যান চলাচল বন্ধ
  • কুয়েট ভিসির পদত্যাগ দাবিতে শাহবাগে 'ব্লকেড', রাজুতে অনশন
  • কুয়েট ভিসির পদত্যাগ দাবিতে শাহবাগ ব্লকেড, রাজুতে অনশন
  • কুয়েটের উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শাহবাগে 'ব্লকেড', যান চলাচল বন্ধ
  • পঞ্চগড়ে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল স্থাপনের দাবিতে ৭ ঘণ্টা অনশন
  • মহাসড়ক অবরোধ করে অপহৃত চবি শিক্ষার্থীদের মুক্তি দাবি
  • চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলার অনশনে অসুস্থ দুই শিক্ষার্থী
  • মূল ক্যাম্পাসে ফেরার দাবিতে এবার অনশনে চারুকলা ইনস্টিটিউটের ৯ শিক্ষার্থী