গ্যেটে ইনস্টিটিউটের নতুন যাত্রা মুহূর্ত গানে মাতাল চিরকুট
Published: 22nd, April 2025 GMT
সংস্কারের পর ‘ব্যাক হোয়ার উই বিলং’ স্লোগান নিয়ে আবার নতুন করে কার্যক্রম শুরু হলো গ্যেটে ইনস্টিটিউটের। ধানমন্ডির ৯ নম্বর সড়কের ১০ নম্বর বাড়ির জার্মান দূতাবাসের এ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের জাঁকজমকপূর্ণ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হলো আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায়। অনুষ্ঠানে অতিথিদের গানে গানে মাতালেন জনপ্রিয় ব্যান্ডদল চিরকুটের শিল্পীরা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল আবরার স্মৃতিচারণা করে বলেন, সত্তরের দশকে ছাত্রজীবনে তিনি গ্যেটে ইনস্টিটিউটে নিয়মিত আসতেন। এখানে সমৃদ্ধ পাঠাগারে বিভিন্ন বই ও সাময়িকী পড়ার পাশাপাশি অনেক চলচ্চিত্র, শিল্পকলা প্রদর্শনী ও ধ্রুপদি সংগীতের অনুষ্ঠান উপভোগের সুযোগ পেয়েছিলেন। এ ধরনের প্রতিষ্ঠান তরুণদের মেধা, সৃজনশীলতা ও মনোজগতের প্রসার ঘটতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এখন সংস্কার করা ভবনে এসব সুবিধা আরও বৃদ্ধি পাবে। গ্যেটে ইনস্টিটিউটের পাশাপাশি ব্রিটিশ কাউন্সিল, আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের মতো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তরুণদের জন্য আরও সুযোগ সৃষ্টি করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। এর মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সংস্কৃতি বিনিময় ও সম্প্রীতি নিবিড় হয়ে ওঠে।
জার্মান রাষ্ট্রদূত আখিম ট্র্যোস্টার বলেন, গ্যেটে ইনস্টিটিউট দীর্ঘদিন ধরে জার্মানি ও বাংলাদেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধ তৈরিতে কাজ করে চলেছে। নতুন করে সংস্কারের পর এ ভবনে আরও অনেক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। জনসাধারণ এখানে নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় পরিবেশে ভাষা শিক্ষা থেকে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারবেন। গ্যেটে ইনস্টিটিউট উভয় দেশের সংস্কৃতি বিনিময় ও সহযোগিতার একটি মাইলফলক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
ম্যক্স মুলার ভবনের দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক মার্লা স্টুকেনবার্গ বলেন, ‘গ্যেটে ইনস্টিটিউটের ভবনের এ পুনঃ উদ্বোধন উভয় দেশের মানুষের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সংস্কৃতি বিনিময়ের ক্ষেত্রে একটি নতুন সূচনা হিসেবে চিহ্নিত হবে। আমরা এমন একটি ভবিষ্যৎ নির্মাণের জন্য কাজ করব, যেখানে বৈচিত্র্যময় ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গড়ে উঠবে। সেখানে এ প্রতিষ্ঠান সহযোগিতা করবে।’
বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী বলেন, গ্যেটে ইনস্টিটিউট শিক্ষা ও সংস্কৃতিচর্চার ক্ষেত্রে অতীতে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ভবনটি সংস্কার করে যে নতুন যাত্রা শুরু হলো, সেখানে আরও সুযোগ সংযোজিত হয়েছে। এখানে অতীতের মতোই তাদের ভূমিকা অব্যাহত থাকবে।
সূচনা বক্তব্যে গ্যেটে ইনস্টিটিউট ঢাকার পরিচালক ফ্র্যাঙ্ক ভার্নার বলেন, ‘ঢাকায় ১৯৬১ সাল থেকে গ্যেটে ইনস্টিটিউট কার্যক্রম শুরু করেছিল। এ ভবনের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। জার্মান ভাষা শিক্ষা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, বক্তৃতা, সেমিনারের মতো বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও জার্মানির মধ্যে সাংস্কৃতিক বন্ধন দৃঢ় করতে ভূমিকা রেখে আসছে। এখন ভবনটি সংস্কার করা হয়েছে। “ব্যাক হোয়ার উই বিলং” স্লোগান নিয়ে ধানমন্ডির এ ভবনকে সর্বস্তরের মানুষের জন্য একই সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। আমরা আশা করি, সব অংশীজনকে এখন আরও উন্নত অভিজ্ঞতা, নতুন দৃষ্টিভঙ্গি উপহার দিতে পারব।’
সংস্কারের পর এ ভবনে রয়েছে আধুনিক সুবিধাসংবলিত শ্রেণিকক্ষ, গ্রন্থাগার, মিডিয়া লাউঞ্জ, মিলনায়তন ও অনুষ্ঠানের স্থান, ক্যাফেটেরিয়া ইত্যাদি।
আলোচনার পর ছিল চিরকুট ব্যান্ডের গান। দলের জনপ্রিয় ভোকালিস্ট শারমিন সুলতানা সুমি ‘আহারে জীবন’ গানটি দিয়ে তাঁদের পরিবেশনা শুরু করেছিলেন। পরে ‘জাদুর শহর’, ‘খাজনা’, ‘দেখতে দেখতে রোদ উধাও’, ‘কানামাছি সত্য’সহ তাঁদের জনপ্রিয় গান গেয়ে শ্রোতাদের মাতিয়ে রাখেন।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
এই কঠিন সময়ে ঐক্য ধরে রাখা প্রয়োজন: ঢাবি উপাচার্য
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে জাতির ঐক্য রক্ষার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান।
উপাচার্য বলেন, ‘আমরা একটি কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করছি। এক অর্থে জাতির জন্য এটি একটি ক্রান্তিকাল। এই সময়ে আমাদের ঐক্য ধরে রাখা একান্তই প্রয়োজন।’
আজ রোববার সকালে রাজধানীর মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে সাংবাদিকদের কাছে নিয়াজ আহমেদ খান এ কথা বলেন।
ঢাবি উপাচার্য বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস জাতির জন্য পরম শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতা ও মমতার দিন। এক গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, চিন্তাবিদ ও বুদ্ধিজীবীরা নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন। তাঁদের সেই চূড়ান্ত আত্মত্যাগ ইতিহাসে চিরভাস্বর হয়ে আছে।
নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, যুগে যুগে ও প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগ এ জাতিকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করতে ঐক্যবদ্ধ করেছে এবং সাহস জুগিয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় জাতি ১৯৯০ ও ২০২৪ সালের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়েছে।
উপাচার্য আরও বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগ আজও জাতির ঐক্য ধরে রাখার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোকবর্তিকা। একই সঙ্গে ১৯৫২, ১৯৬৮, ১৯৬৯, মহান মুক্তিযুদ্ধসহ প্রতিটি আন্দোলন–সংগ্রামে যাঁরা রক্ত ও জীবন দিয়ে দেশের স্বাধীনতা ও মর্যাদা রক্ষা করেছেন, তাঁদের সবার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা।
নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, ১৯৫২ থেকে ২০২৪—এর প্রতিটি দিন ও ঘটনাপ্রবাহ জাতির মৌলিক পরিচয়ের মাইলফলক। এর কোনো অংশ বাদ দেওয়ার সুযোগ নেই। এ ইতিহাসই যুগে যুগে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রেখেছে, আর বর্তমান সময়ে সেই ঐক্য ধরে রাখাই সবচেয়ে বড় প্রয়োজন।