অপহরণের ছয় দিন পর কক্সবাজারের টেকনাফের বাহারছড়ার শিলখালীর পাহাড়ের আস্তানায় অভিযান চালিয়ে সিলেটের জাকিগঞ্জ এলাকার ছয় বাসিন্দাকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। ধারণা করা হচ্ছে, মানব পাচারকারীরা তাঁদের বিদেশে পাচারের উদ্দেশ্যে অপহরণ করে গোপন আস্তানায় আটকে রেখেছিল। আজ মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে অপহৃত ব্যক্তিদের উদ্ধারের কথা জানায় পুলিশ।

অপহৃত ব্যক্তিদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৫ এপ্রিল কাজের সন্ধানে সিলেটের জকিগঞ্জ থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা দেন ছয় বাসিন্দা। ১৬ এপ্রিল কক্সবাজারে পৌঁছে সবাই পরিবারের সঙ্গে মুঠোফোনে কথাও বলেন। এরপর সবার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবারের কয়েকজন সদস্য গতকাল সোমবার বিকেলে কক্সবাজার শহরে পৌঁছে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। এ নিয়ে গতকাল প্রথম আলোয় ‘কক্সবাজারে গিয়ে ৫ দিন ধরে নিখোঁজ সিলেটের এক গ্রামের ৬ জন’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

উদ্ধার হওয়া ছয়জন হলেন জকিগঞ্জের ঈদগাঁও বাজার এলাকার বাসিন্দা রশিদ আহমদ (২০), একই গ্রামের মারুফ আহমদ (১৮), শাহিন আহমদ (২১), এমাদ উদ্দিন (২২), খালেদ হাসান (১৯) ও আবদুল জলিল (৫৫)।

আজ বিকেলে অপহৃত একজনের ভাই বাহার উদ্দিন টেকনাফ থানায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে একটি অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেন। এরপর পুলিশ অভিযানে নামে।

টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশের একটি দল বিকেল থেকে টেকনাফের পাহাড়ের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান শুরু করে। রাত পৌনে ৯টার দিকে পুলিশের একটি দল সমুদ্র উপকূলীয় বাহারছড়া ইউনিয়নের শিলখালী গ্রামের পূর্ব পাশের পাহাড়ের একটি আস্তানা থেকে অপহৃত ছয়জনকে উদ্ধার করে। অপহরণকারী দলের সদস্যদের গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।

পুলিশ ও পরিবারের সদস্যরা জানান, আজ দুপুরে অপহৃত রশিদ আহমদের মুঠোফোন নম্বর থেকে কল দিয়ে তাঁর ভাই বাহার উদ্দিনকে বলা হয়, অপহৃত ছয়জন টেকনাফের বাহারছড়ার পাহাড়ের আস্তানায় বন্দী আছেন। রাতেই তাঁদের বাহারছড়া সৈকত থেকে ট্রলারে তুলে সমুদ্রপথে ইন্দোনেশিয়া পাঠানো হবে। ওই ছয়জনের মধ্যে বাহার উদ্দিনের আরও এক ভাই এমাদ উদ্দিনও রয়েছেন। ফোন পাওয়ার পরপরই খবরটি বাহার উদ্দিন পুলিশকে জানান।

বাহার উদ্দিন বলেন, কলটি পাওয়ার পর অপহৃত ব্যক্তিদের অবস্থান সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। পুলিশকে না জানালে রাতের মধ্যে তাঁদের ইন্দোনেশিয়ায় পাচার করা হতো। রাজমিস্ত্রির কাজ করার জন্য অপহৃত ব্যক্তিরা কক্সবাজারে এসেছিলেন। মানব পাচারকারী চক্র ছয়জনকে তুলে নিয়ে কক্সবাজার থেকে টেকনাফে নিয়ে পাহাড়ের আস্তানায় জিম্মি করে। তখন ছয়জনের মুঠোফোনও বন্ধ রাখা হয়।

পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানান, টেকনাফে মুক্তিপণের জন্য লোকজনকে অপহরণ এবং ট্রলারে সমুদ্রপথে মানব পাচার বেড়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সদস্যরা সেন্ট মার্টিন দ্বীপের পশ্চিমে গভীর সাগর থেকে ২১৪ জন যাত্রীসহ একটি ট্রলার জব্দ করেছেন। তাঁদের মালয়েশিয়ায় পাচার করা হচ্ছিল। উদ্ধার যাত্রীদের অধিকাংশই ছিলেন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও কিশোরী।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ব র র ব হ রছড় সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

উদ্ধার অভিযানে ‘ইউপিডিএফের আস্তানার’ সন্ধান

খাগড়াছড়িতে অপহরণের শিকার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) পাঁচ শিক্ষার্থীর খোঁজ ছয় দিনেও মেলেনি। তাদের উদ্ধারে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আজ সোমবারের অভিযানে পাহাড়ের আঞ্চলিক দল ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) গোপন আস্তানা পাওয়ার দাবি করেছে যৌথবাহিনী।

জানা গেছে, আজ ভোর পাঁচটার দিকে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার ভাইবোনছড়া ইউনিয়নের পূর্ণচন্দ্র কারবারি পাড়ায় যৌথবাহিনী অভিযান চলায়। এ সময় যৌথবাহিনীর সদস্যরা টিনশেডের তালাবন্ধ একটি ঘর দেখতে পান। এরপর স্থানীয় লোকজনের সাহায্যে তালা ভেঙে ঘরটিতে ঢুকে তল্লাশি চালানো হয়। এ সময় তিন জোড়া পোশাক ও ১৯টি ইউনিফর্ম, পিস্তলের গুলি, ১টি ল্যাপটপ, ওয়াকিটকি সেট, দুটি মোবাইল ফোন, একটি মাইক্রোফোন, একটি ক্যামেরা, একটি প্রিন্টার, সেলাইমেশিন, তাঁবু, নেট, লোহার শেকল, খাবারের তৈজসপত্র ও খাবারের কাঁচামাল, চাঁদা আদায়ের রসিদসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। তবে ওই আস্তানায় অপহরণের শিকার শিক্ষার্থীদের রাখা হয়েছিল কি না, তা জানা যায়নি। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন সেনাবাহিনীর খাগড়াছড়ি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ মো. আমান হাসান। 

অভিযানের বিষয়ে খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার আরেফিন জুয়েল বলেন, যৌথ বাহিনীর অভিযানের অংশ হিসেবে আজ ভোরে ভাইবোনছড়া ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় পূর্ণচন্দ্র কার্বারি পাড়ার একটি ঘর থেকে ইউপিডিএফের গোপন আস্তানার সন্ধান পায় যৌথবাহিনী। সেখান থেকে ইউপিডিএফের প্রশিক্ষণ সরঞ্জামসহ ল্যাপটপ, মোবাইল, ওয়াকিটকি উদ্ধার করা হয়। তবে কাউকে আটক করা যায়নি। পাঁচ শিক্ষার্থীকে এখনও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তাদের উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত থাকবে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য বিভিন্ন সড়কেও চেকপোস্ট বসানো হয়েছে।

বিজু উৎসব উদযাপন শেষে ফেরার পথে গত ১৬ এপ্রিল সকালে খাগড়াছড়ির গিরিফুল এলাকা থেকে পাঁচ শিক্ষার্থী ও তাঁদের বহন করা অটোরিকশার চালককে তুলে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। অপহৃত শিক্ষার্থীরা হলেন– পিসিপির চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী রিশন চাকমা, চারুকলা বিভাগের মৈত্রীময় চাকমা ও অলড্রিন ত্রিপুরা, নাট্যকলা বিভাগের দিব্যি চাকমা ও প্রাণীবিদ্যা বিভাগের লংঙি ম্রো। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। অপহরণকারীরা চালককে ছেড়ে দিলেও পাঁচ শিক্ষার্থীর খোঁজ মেলেনি।

এ ঘটনায় ইউপিডিএফকে দায়ী করেছে চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস- সন্তু লারমা) সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি নিপন ত্রিপুরা। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইউপিডিএফের জেলা সংগঠক অংগ্য মারমা। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মালয়েশিয়া পাচারের উদ্দেশ্যে অপহরণ, টেকনাফের পাহাড় থেকে উদ্ধার সেই ৬ শ্রমিক
  • অপহৃত শিশুকে ভিক্ষা করাতে নির্যাতন, শরীরজুড়ে দেওয়া হয় সিগারেটের ছ্যাঁকা
  • শরীরে ছ্যাঁকা দিয়ে হাতের নখ উপড়ে প্রতিবন্ধী বানিয়ে করানো হতো ভিক্ষা
  • মার্কিন কংগ্রেসম্যানসহ ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চীনের পাল্টা নিষেধাজ্ঞা
  • উদ্ধার অভিযানে মিলল ‘ইউপিডিএফের আস্তানা’
  • কক্সবাজারে কাজে এসে ৫ দিন ধরে নিখোঁজ সিলেটের এক গ্রামের ৬ জন
  • কক্সবাজারে কাজে গিয়ে ৬ শ্রমিক নিখোঁজ
  • খাগড়াছড়িতে সন্ত্রাসীদের আস্তানায় মিলল ইউনিফর্ম-ওয়াকিটকি 
  • উদ্ধার অভিযানে ‘ইউপিডিএফের আস্তানার’ সন্ধান