এক দশক আগে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি সাহাব উদ্দিনকে তুলে নিয়ে গুলি করে হত্যার অভিযোগে মামলা করেছে পরিবার। মামলায় চৌদ্দগ্রাম থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) ১২ পুলিশ সদস্য ও একজন আনসার সদস্যকে আসামি করা হয়েছে।

মঙ্গলবার দুপুরে সাহাব উদ্দিনের বাবা জয়নাল আবদীন পাটোয়ারী বাদী হয়ে কুমিল্লার জ্যেষ্ঠ জেলা ও দায়রা জজ মো.

মাহবুবুর রহমানের আদালতে মামলা করেন। মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী মুহাম্মদ বদিউল আলম (সুজন) বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।

মুহাম্মদ বদিউল আলম বলেন, আদালত শুনানি শেষে মামলার আবেদন গ্রহণ করেছেন। কাল এ ব্যাপারে আদেশ দেবেন বলে আদালত থেকে তাঁদের জানানো হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে তৎকালীন সরকারের রাজনৈতিক ও প্রশাসনের চাপে এই হত্যার বিচার পায়নি সাহাব উদ্দিনের পরিবার। আশা করছে এবার পরিবার ন্যায়বিচার পাবে।

জয়নাল আবদীন পাটোয়ারী চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার চান্দিশকরা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি স্থানীয় একটি মাদ্রাসার শিক্ষক এবং জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক। ২০১৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি বাড়ি থেকে সাহাব উদ্দিনকে তুলে নিয়ে যান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। পরদিন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্বজনেরা সাহাব উদ্দিনের মরদেহ পান। তাঁর মাথায় গুলি ও শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পেয়েছিলেন স্বজনেরা।

মামলার আসামিরা হলেন চৌদ্দগ্রাম থানার তৎকালীন ওসি উত্তম কুমার চক্রবর্তী, পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুল্লাহ আল-মাহফুজ, উপপরিদর্শক মো. নুরুজ্জামান হাওলাদার, মো. ইব্রাহীম, জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার তৎকালীন উপপরিদর্শক শাহ কামাল আকন্দ, মো. শহীদ, চৌদ্দগ্রাম থানার তৎকালীন কনস্টেবল নুর হোসেন, মহসিন মিয়া, আবু নাছের, শশাংক চাকমা, বিশেষ আনসার সদস্য মুরাদ হোসেন, জেলা পুলিশের এসএএফ শাখার মু. শরিফুল ইসলাম ও মোতাহের হোসেন। মামলায় আসামি করা না হলেও আরজিতে সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের নাম হত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি কুমিল্লা-১১ (চৌদ্দগ্রাম) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। মামলায় অজ্ঞাতনামা ৪০ থেকে ৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার আরজিতে বলা হয়, ঘটনার সময় আসামিরা ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে চৌদ্দগ্রাম থানায় গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করে বিরোধীপক্ষকে মামলা দিয়ে হয়রানি করেন। সাহাব উদ্দিন ইসলামী ছাত্রশিবিরের চৌদ্দগ্রাম উপজেলা সভাপতি থাকায় রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে কর্মরত বিবাদীদের মাধ্যমে সাহাব উদ্দিনকে হত্যার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় তৎকালীন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক পুলিশ বাহিনীর মাধ্যমে চৌদ্দগ্রাম এলাকায় বিরোধী দল নির্মূলের জন্য পরিকল্পনা নেন। সেই অনুযায়ী পুলিশের মাধ্যমে সাহাব উদ্দিকে হত্যার চক আঁকেন তিনি। ঘটনার দিন ২০১৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি বিকেলে মুজিবুল হকের হুকুমে প্রশাসনের কিছু লোকসহ অজ্ঞাতনামা বিবাদীরা সাহাব উদ্দিনের বাড়ি ঘেরাও করেন। এ সময় সাহাব উদ্দিনকে জোরপূর্বক পুলিশের লোকজনসহ তুলে নিয়ে যান। চৌদ্দগ্রাম থানা-পুলিশ সাহাব উদ্দিনকে প্রথমে চৌদ্দগ্রাম থানায় নেয়। পরে পুলিশ ও অন্যান্য বিবাদীরা সাহাব উদ্দিনকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যান।

আরজিতে আরও বলা হয়, মামলার বাদী ও স্বজনেরা সাহাব উদ্দিনের খোঁজে চৌদ্দগ্রাম থানা, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানা, ডিবি, র‍্যাব ও পুলিশ সুপার কার্যালয়ে অনেক খোঁজাখুঁজি করেন। চৌদ্দগ্রাম থানা-পুলিশ প্রথমে সাহাব উদ্দিনের কথা স্বীকার করলেও পরে অস্বীকার করে। পরদিন ৬ ফেব্রুয়ারি সকালে বাদী জানতে পারেন, সাহাব উদ্দিনের লাশ কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আছে। বাদী ও স্বজনেরা সেখানে গিয়ে সাহাব উদ্দিনের মরদেহের মাথায় গুলির চিহ্ন ও শরীরের বিভিন্ন অংশে জখমের চিহ্ন দেখতে পান। বাদী পরে জানতে পারেন সাহাব উদ্দিনকে অপহরণ করে স্থানীয় সংসদ সদস্য মুজিবুল হক, তৎকালীন পৌর মেয়র মিজানুর রহমান, তৎকালীন র‍্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ ও তৎকালীন পুলিশ সুপার টুটুল চক্রবর্তীর হুকুমে সব বিবাদীর প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সহায়তায় পুলিশ সাহাব উদ্দিনকে মাথায় গুলি করে হত্যা করেছে। সাহাব উদ্দিনকে হত্যার ঘটনা ভিন্ন খাতে নিতে এসআই ইব্রাহীম বাদী হয়ে অস্ত্র আইনসহ সাজানো ঘটনায় চৌদ্দগ্রাম থানায় দুটি মিথ্যা মামলা করেন, যেখানে সাহাব উদ্দিনকেও আসামি করা হয়।

মামলার বাদী জয়নাল আবদীন পাটোয়ারী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ছেলেকে ওই সময়ের ক্ষমতাসীনদের নির্দেশে পরিকল্পিতভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। আমি খুনিদের বিচার চাই।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম জ ব ল হক র তৎক ল ন স বজন র র সদস য পর ব র প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

ফরিদপুরে শিশুকে ধর্ষণের দায়ে যুবকের যাবজ্জীবন

ফরিদপুরে ৮ বছরের শিশুকে ধর্ষণের দায়ে যুবক আমিরুল মৃধাকে (৩২) যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে ৩ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার দুপুরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) শামীমা পারভীন এ আদেশ দেন। সাজাপ্রাপ্ত আমিরুল ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার খরসূতি গ্রামের মৃত আনোয়ার মৃধার ছেলে।

এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ১৯ জুন ফরিদপুর পৌরসভার কমলাপুর পিয়ন কলোনিতে ধর্ষণের শিকার হয় শিশুটি। ওই দিন শিশুটি স্কুল থেকে বাসায় ফেরার পর তার মামার দোকানে চিপস কেনার জন্য যায়। ওই সময় আমিরুল দোকানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি শিশুটিকে কলোনির একটি হোস্টেলের পিছনের জঙ্গলে নিয়ে ধর্ষণ করে পালিয়ে যান। পরে শিশুটির মা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে এবং মামলা করেন। 

এ বিষয়ে ফরিদপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পিপি আইনজীবী গোলাম রব্বানী ভূঁইয়া রতন জানান, আমরা রাষ্ট্রপক্ষ মামলার এ রায়ে সন্তুষ্ট। এই মামলা একটি উজ্জ্বল উদাহরণ হয়ে থাকবে ধর্ষকদের জন্য। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ