জনসমর্থন নেই-এমন কাজ করলে ব্যবস্থা: নেতাকর্মীকে তারেক রহমান
Published: 22nd, April 2025 GMT
জনগণের সমর্থন নেই– এমন কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য নেতাকর্মীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, রাজনীতিতে ধীরে ধীরে অদৃশ্য শক্তি দৃশ্যমান হচ্ছে। ফ্যাসিবাদী ষড়যন্ত্রকারীরাও সক্রিয় হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। জনসমর্থন নেই এমন কাজ দলের কেউ করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মঙ্গলবার রংপুর বিভাগের তিন জেলা– লালমনিরহাট, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামে প্রশিক্ষণ কর্মশালায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন তারেক রহমান। ‘রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রূপরেখার ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি’ শীর্ষক এ কর্মশালা আয়োজন করে বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণবিষয়ক কমিটি।
তারেক রহমান বলেন, স্বৈরাচারের ভয়ে কেউ যখন কথা বলতে সাহস পায়নি, তখন আওয়ামী লীগের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছিল বিএনপি। ৩১ দফা দেশ ও জাতির জন্য বাস্তবায়ন করতে হবে। রাজনীতিবিদসহ পেশাজীবীরা এটি বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখবেন। যে কোনো মূল্যে আমাদের সুদৃঢ় ঐক্য ধরে রাখতে হবে। সব অশুভ শক্তিকে পরাজিত করে ইস্পাত-দৃঢ় ঐক্যের ভিত্তিতে এগিয়ে যেতে হবে। না হলে সব অর্জন ব্যর্থ হবে।
তিনি বলেন, তিস্তা নদী নিয়ে বহু রাজনীতি হয়েছে। কিন্তু বিএনপির রাজনীতি হচ্ছে এ দেশের মানুষের কষ্ট লাঘবের লক্ষ্যে। তিস্তা নদী ঘিরে প্রায় তিন কোটি মানুষের জীবনে প্রভাব পড়ে। কখনও অতিরিক্ত পানি, কখনও পানির তীব্র সংকট। খালখনন ও নদীশাসন আমাদের করতে হবে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ, সেচ সুবিধা এবং পানির সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে বিএনপি সরকার গঠনের সুযোগ পেলে এ কাজ যে কোনো মূল্যে শুরু করবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, কৃষক যেন শুষ্ক মৌসুমে পানি ব্যবহার করতে পারে, বন্যার ক্ষতি থেকে মানুষ যেন রক্ষা পায়, সেজন্য পরিকল্পিতভাবে তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়ন করব।
কর্মশালায় নেতাকর্মীর প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বাংলাদেশ আয়তনে বড় না হলেও জনসংখ্যার ভিত্তিতে একটি বড় দেশ। এ দেশের প্রতিটি অঞ্চলের রয়েছে আলাদা কৃষ্টি ও সংস্কৃতি, যা আমাদের জাতিগত ঐতিহ্য। বিএনপি অতীতে ক্ষমতায় থাকাকালে সংস্কৃতি বিকাশে নানা উদ্যোগ নিয়েছে এবং ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে।
তারেক রহমান আরও বলেন, সংস্কৃতি ও খেলাধুলাকে প্রাথমিক শিক্ষার সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে, যাতে শিশুরা মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থভাবে বেড়ে উঠতে পারে।
এর আগে সকালে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলুর সভাপতিত্বে কর্মশালা উদ্বোধন করেন দলের যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী। লালমনিরহাট জেলা পরিষদ মিলনায়তনে ছাত্রদল নেতা ইকবাল হোসেন শ্যামলের সঞ্চালনায় কর্মশালায় সাবেক তিন সংসদ সদস্য– রাশেদা বেগম হীরা, নেওয়াজ হালিমা আরলি, শাম্মী আক্তার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ত র ক রহম ন ত র ক রহম ন ব এনপ র র জন ত
এছাড়াও পড়ুন:
লেনিন কেন এখনও জরুরি
আজ ২২ এপ্রিল, ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিনের জন্মদিন। ১৯১৭ সালে সংঘটিত রুশ বিপ্লবের অগ্রনায়ক লেনিন ছিলেন মার্ক্সের সফল উত্তরাধিকারী। তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ইতিহাসের প্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র। একটি পশ্চাৎপদ পুঁজিবাদী দেশে বিপ্লব সংঘটনের পথ বের করেন তিনি। চিন্তা ও প্রয়োগের মেলবন্ধন ঘটানোর দক্ষতাই ছিল তাঁর সাফল্যের অন্যতম কারণ। মার্ক্স সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের কথা বলেন। কিন্তু রাশিয়ার মতো দেশে যেখানে পুঁজিবাদের বিকাশ ঘটেনি, সেখানে শ্রমিক শ্রেণির নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক বিপ্লব করে নতুন পথ দেখালেন। লেনিনের এই গণতান্ত্রিক বিপ্লবের পথ ধরেই চীনসহ পিছিয়ে পড়া পুঁজিবাদী দেশে বিপ্লব হয়েছে। ইতিহাসের কোনো পর্বকেই লাফ দিয়ে ডিঙিয়ে যাওয়া যায় না। বিপ্লবকে ইতিহাসের ভেতর দিয়েই যেতে হয়– এটি ছিল লেনিনের শিক্ষা।
লেনিন দেখিয়েছেন রাষ্ট্রযন্ত্র কোন প্রক্রিয়ায় বল প্রয়োগ করে টিকে থাকে এবং শাসক শ্রেণির স্বার্থ রক্ষা করে। তাঁর রাষ্ট্রচিন্তা পুঁজিবাদী রাষ্ট্রের ফ্যাসিস্ট রূপ বুঝতে সহায়তা করে। তিনি বল প্রয়োগের মাধ্যমে বুর্জোয়া রাষ্ট্রযন্ত্র উচ্ছেদের কথা বলেন। গ্রামসি বলেন, শুধু বল প্রয়োগ নয়; শাসক শ্রেণি সাংস্কৃতিক ও মতাদর্শিক আধিপত্য বজায় রাখার মধ্য দিয়েও টিকে থাকে। ব্যবস্থার পক্ষে সম্মতি উৎপাদন করে। ফুকোর মতে, ক্ষমতা শুধু রাষ্ট্রে কেন্দ্রীভূত নয়; সমাজের পরতে পরতে ছড়িয়ে থাকে। আধুনিক সমাজ শুধু বল প্রয়োগের মাধ্যমে শাসন করে না; তা মানুষের জীবন ও কর্তাসত্তার মনোজগৎ গঠনেরও নিয়ন্ত্রণ নেয়। ফুকো এর নাম দিয়েছেন বায়োপলিটিকস– জীবন ও মগজ দখল- নিয়ন্ত্রণের রাজনীতি। ফুকো ক্ষমতা কী করে কাজ করে তার বর্ণনা দিলেও ক্ষমতাকে কীভাবে প্রতিরোধ ও উচ্ছেদ করতে হয়, তা দেখাননি। সেটা দেখিয়েছেন লেনিন। তার মানে এই নয়, আমাদের বলশেভিক মডেলই অনুসরণ করতে হবে।
বাংলাদেশের রাষ্ট্র নিবর্তনমূলক ও দুর্নীতিবাজ। গণতন্ত্রের লোভ দেখানো নির্বাচন, উন্নয়ন, ধর্মরাষ্ট্র, স্বর্গ– এসব ফ্যান্টাসি তৈরি করে রেখেছে। এসব ফ্যান্টাসি ভাঙতে হবে। আমাদের মুক্তির বিকল্প বয়ান তৈরি করতে হবে। মানুষের কাছে সেটা তুলে ধরতে পারলে বর্তমান অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব। বুর্জোয়া রাষ্ট্রের খোলনলচে না বদলে শুধু কিছু সংস্কার দিয়ে বিদ্যমান সংকটের সমাধান সম্ভব হবে না।
লেনিনের শিক্ষার একটা বড় দিক হলো, অসংগঠিত স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন দিয়ে ব্যবস্থার অবসান ঘটানো যায় না। এ জন্য চাই বিপ্লবী মতাদর্শ ও সুসংগঠিত রাজনৈতিক সংগঠন। যাকে তিনি বলেছেন বিপ্লবী পার্টি। লড়াইকে তিনি স্বতঃস্ফূর্ততার ওপর ছেড়ে না দিয়ে সচেতন সংগঠিত রাজনৈতিক লড়াই চালানোর কথা বলেন। শুধু জীবনদান আর অভ্যুত্থান করলেই হবে না; সেই অভ্যুত্থানের রাজনীতি ও শ্রেণি প্রশ্নটি পরিষ্কার থাকতে হবে। অভ্যুত্থান-উত্তর পরিস্থিতির ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে অভ্যুত্থানকারী শক্তির সংগঠন থাকতে হয়। চব্বিশের অভ্যুত্থানে এর কোনোটাই নেই। নেই কোনো সুনির্দিষ্ট রাজনীতি ও শক্তিশালী সংগঠন। এ ধরনের ভয়ানক দুর্বলতার পরিণতিতে পর্বতের মূষিক প্রসব ঘটতে পারে।
স্বৈরতান্ত্রিক জারের ভয়ানক নির্যাতনে লেনিনের জীবন কখনোই স্থির ছিল না। বন্দি ও পলাতক জীবন এবং নির্বাসনের মধ্যে স্ত্রী ক্রুপস্কায়াকে নিয়ে কেটেছে তাঁর জীবন। তবুও এক অমিত শক্তি নিয়ে তিনি অব্যাহত রেখেছেন বিপ্লবী কর্মযজ্ঞ। লিখেছেন অবিরাম ৫৫ খণ্ড। বিতর্কে লিপ্ত থাকতে হয়েছে তাঁকে সারাক্ষণ দলের ভেতর ও বাইরে। অব্যাহতভাবে প্রকাশ করেছেন ইস্ক্রা পত্রিকা। এভাবে একদিন নতুন সূর্যের ভোর আসে ১৯১৭ সালে; অক্টোবর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবে।
রুশ বিপ্লবের পরে বেশি দিন বাঁচেননি লেনিন। ১৯১৮ সালে আততায়ীর গুলিতে আহত হন। এরপর কখনোই পুরোপুরি সুস্থ হননি। ১৯২৪ সালে লেনিন মস্কো থেকে দূরে তাঁর নিজ গ্রাম গোর্কিতে মারা যান।
১৯৪৮ সালে কার্ল মার্ক্স বলেছিলেন, ‘ইউরোপ ভূত দেখেছে; কমিউনিজমের ভূত।’ বিশ শতকজুড়ে ইউরোপ ও আমেরিকাকে কমিউনিজমের এ ভূত তাড়িয়ে বেড়িয়েছে। সমাজতন্ত্র ধ্বংস করতে তারা চালিয়েছে কখনও সরাসরি যুদ্ধ, কখনও স্নায়ুযুদ্ধ।
বামপন্থিদের ও সমাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে সে যুদ্ধ এখনও জারি আছে। এ যুদ্ধে সমাজতান্ত্রিক শিবিরের আপাত পরাজয় হলেও তা নতুন এক অনিরুদ্ধ শক্তি নিয়ে আবারও ইতিহাসে আবির্ভূত হবে। পুঁজির শোষণ ও শাসনমুক্ত একটি সভ্য মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন মার্ক্স ও লেনিন। সেটা এখনও আরাধ্য। তা অর্জনে লুটেরা পুঁজিতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কোনো বিকল্প নেই। এ সংগ্রামে লেনিন শুধু প্রাসঙ্গিক নন, জরুরিও বটে। লেনিনের জন্মদিনে তাঁর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
ড. আখতার সোবহান মাসরুর: লেখক ও নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম ছাত্রনেতা