রহস্যময় বস্তু কৃষ্ণগহ্বর। বিজ্ঞানীরা যত ধরনের কৃষ্ণগহ্বর শনাক্ত করেছেন, সব কটিরই সঙ্গী তারা দেখা যায়। বিজ্ঞানীরা মিল্কিওয়ে ছায়াপথে প্রথম একটি ভিন্ন ধরনের কৃষ্ণগহ্বরের খোঁজ পেয়েছেন, যেটা আসলে একা। নতুন খোঁজ পাওয়া এই কৃষ্ণগহ্বরের সঙ্গী কোনো তারা নেই। তারাহীন একা কৃষ্ণগহ্বরটি প্রায় পাঁচ হাজার আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত।

বিজ্ঞানীরা মিল্কিওয়ে ছায়াপথে সঙ্গী তারাহীন এই একা কৃষ্ণগহ্বরের অস্তিত্ব নিশ্চিত করেছেন। অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত হাবল স্পেস টেলিস্কোপের পর্যবেক্ষণের ওপর ভিত্তি করে এই কৃষ্ণগহ্বরের তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোরের স্পেস টেলিস্কোপ সায়েন্স ইনস্টিটিউটের জ্যোতির্বিদ কৈলাশ সাহু ও তাঁর সহকর্মীরা ধনু তারামণ্ডলে একটি অন্ধকার বস্তু ঘুরে বেড়াতে দেখেন। সে সময় এমন বস্তুর আবিষ্কার বেশ বিতর্ক তৈরি করেছিল। তখন অনেকেই মনে করেছিলেন, এটি আসলে একটি নিউট্রন তারা। সেই তারাকে বিশ্লেষণ করার সময় কৃষ্ণগহ্বরের তথ্য পান বিজ্ঞানীরা। ২০১১ থেকে ২০১৭ সালের তথ্য বিশ্লেষণের পরে দেখা যাচ্ছে, এটি আসলে কৃষ্ণগহ্বর। গবেষকেরা ভালো প্রমাণের জন্য হাবল ও গাইয়া স্পেস প্রোবের ২০২১ থেকে ২০২২ সালের তথ্য পর্যবেক্ষণ করেন।

এর আগে যত কৃষ্ণগহ্বর শনাক্ত করা গেছে সব ক্ষেত্রে সঙ্গী তারা দেখা যায়। কৃষ্ণগহ্বর সব আলো শুষে নেয় বলে মহাকর্ষীয় লেন্সিং প্রভাবের কারণে সঙ্গী তারার উপস্থিতি ছাড়া তাদের শনাক্ত করা সাধারণভাবে কঠিন। অন্য একটি দূরবর্তী তারার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় কৃষ্ণগহ্বরটি লক্ষ করেন বিজ্ঞানীরা। তখন দেখা যায়, দূরের তারাটি আসলে যে অন্ধকার বস্তুটিকে অনুসরণ করছিল তা সূর্যের ভরের প্রায় সাত গুণ বেশি। এই ভরের কারণে বস্তুটি নিউট্রন তারা হতে পারে না বলে মতামত দেন তাঁরা। গভীর বিশ্লেষণের মাধ্যমে কৃষ্ণগহ্বরের খোঁজ মিলল।

একলা কৃষ্ণগহ্বরটি পৃথিবী থেকে পাঁচ হাজার আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। মিল্কিওয়ে ছায়াপথের কেন্দ্রে অবস্থিত ২৭ হাজার আলোকবর্ষ দূরের অতিবৃহৎ কৃষ্ণগহ্বর স্যাজিটেরিয়াস স্টারের চেয়ে অনেক কাছে অবস্থিত কৃষ্ণগহ্বরটি। বিজ্ঞানীরা একক এই কৃষ্ণগহ্বরের আরও তথ্য সংগ্রহ করতে ২০২৭ সালে ন্যান্সি গ্রেস রোমান স্পেস টেলিস্কোপ ব্যবহার করবেন বলে জানিয়েছেন।

সূত্র: এনডিটিভি

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অবস থ ত

এছাড়াও পড়ুন:

গায়েবি মামলায় ভুগছেন জবির ১১ শিক্ষার্থী

হঠাৎ গ্রেপ্তার হন ১১ শিক্ষার্থী। তিন দিনের মধ্যে সাময়িক বহিষ্কার করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)। তিন থেকে পাঁচ মাস জেল খাটেন। শিক্ষাজীবনে পিছিয়ে পড়েন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ঘটনা সম্পর্কে তারা কিছুই জানতেন না। তিন বছর আগের গায়েবি মামলায় এখনও ভুগছেন।

অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের শিক্ষার্থী শাহিন ইসলাম জানান, ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ভর্তি হন বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১ মার্চ পুরান ঢাকার একটি মেসে ওঠেন। ২৪ দিন পর আটক করে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। তিন মাস জেল খাটেন। বর্তমানে তিনি তৃতীয় বর্ষে পড়ছেন। মামলা চালাতে পরিবারের খরচ হয় প্রায় ৪ লাখ টাকা।

মামলার তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের ২৯ মার্চ যাত্রাবাড়ী থানার এসআই জাহিদুজ্জামান বিস্ফোরক আইনে মামলা করেন। এজাহার থেকে জানা যায়, ২০২১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী হানিফ ফ্লাইওভার টোলপ্লাজা-সংলগ্ন এলাকায় লেগুনা ভাঙচুর এবং বোমাবাজির ঘটনায় মামলা হয়। এ মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামি হিসেবে ফাঁসানো হয় শাহিনকে। ঘটনার সময় তিনি ঠাকুরগাঁওয়ে ছিলেন।

এ ছাড়া ২০২২ সালের ২৫ মার্চ কোতোয়ালি থানার এসআই রুবেল খান বিস্ফোরক আইনে আরেকটি মামলা করেন। এ দুই মামলায় জবির ১১ শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ভুক্তভোগী আল মামুন রিপন জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি লক্ষ্মীবাজারে সবজির দোকান চালাতেন। মিথ্যা মামলায় তিন মাস কারাগারে ছিলেন। মানসিক এবং অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তিন বছরে মামলার পেছনে প্রায় ৪ লাখ টাকা খরচ হয়েছে।

এ ছাড়া আব্দুর রহমান অলি, শ্রাবণ ইসলাম রাহাত এবং রওশন-উল ফেরদৌসকে ফাঁসানো হয়। প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়ে ২০২২ সালে ঢাকায় আসেন তারা। তিন মাস না পেরোতেই তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। মামলায় ওলির খরচ হয় সাড়ে ৪ লাখ, রাহাতের ৪ লাখ, ফাহাদের ৪ লাখ ও রওশনের ৬ লাখ টাকা।

রাহাত বলেন, ২০২২ সালের ৭ মার্চ গেণ্ডারিয়ায় বড় ভাই মো. ফাহাদ হোসেনের মেসে ওঠেন তিনি। এর ১৭ দিনের মাথায় পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। পাঁচ মাস কারাভোগ করতে হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো সহযোগিতা পাননি। তদন্ত ছাড়া তাদের সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়। এক বছর পিছিয়ে পড়েন। তিন বছর পার হলেও নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে।

লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের মাহাদি হাসান জানান, গ্রেপ্তার হওয়ার পর এক সপ্তাহ জানতেন না কী অভিযোগ। জেল থেকে আদালতে নেওয়ার পর জানতে পারেন ঘটনাটি। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিবেটিং সোসাইটির দপ্তর সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ছাত্রলীগের আসিফ। এ নির্বাচনে ছাত্রলীগের একাধিক প্রার্থী ছিলেন, এর মধ্যে অনেকে ডিবেট করতেন না। তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয় ডিবেটিং সোসাইটির প্রার্থিতা বাতিলের উদ্দেশ্যে, যেন ছাত্রলীগের আসিফ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দপ্তর সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরে প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী হাসিব মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন এবং ছাত্রলীগের শাইদুল ইসলাম সাঈদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি হন। এর সঙ্গে সাবেক প্রক্টর মোস্তফা কামাল জড়িত বলে তিনি অভিযোগ করেন।

দুটি মামলার এজাহারে প্রায় একই ধরনের অভিযোগ আনা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির পর আট মাস পার হলেও সুরাহা হয়নি। কোতোয়ালি থানা চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে পাঠিয়েছে। এ মামলা নিষ্পত্তির জন্য আজ আদালতে উঠবে। যাত্রাবাড়ী থানার নথিপত্র পুড়ে যাওয়ায় অগ্রগতি জানাতে পারছে না পুলিশ। যাত্রাবাড়ী থানার ওসি কামরুজ্জামান বলেন, এ ধরনের গায়েবি মামলা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। খুব দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেব।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কল্যাণ পরিচালক ড. রিফাত হাসান বলেন, এর আগেও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দ্রুত এই মামলা সমাধানে প্রশাসনিকভাবে পদক্ষেপ নেব। প্রক্টর ড. তাজাম্মুল হক বলেন, ‘১১ শিক্ষার্থীর গায়েবি মামলা নিষ্পত্তির জন্য একাধিকবার থানায় যোগাযোগ করেছি। এ বিষয়ে আবার কথা বলব।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মেজর সিনহা হত্যা মামলা: ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি বুধবার
  • অনশনে অসুস্থ চবির ২ শিক্ষার্থী
  • গায়েবি মামলায় ভুগছেন জবির ১১ শিক্ষার্থী
  • ধর্ষণের দায়ে তরুণের যাবজ্জীবন, জরিমানার টাকা ভুক্তভোগীকে দেওয়ার নির্দেশ
  • চলতি সপ্তাহেই ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি, আশা ট্রাম্পের
  • ‘ইলিশের বাড়ি’ সংরক্ষণে নজর দিন আগে
  • বাংলার কণ্ঠে বিশ্ব মুগ্ধ, আমেরিকায় রয়া চৌধুরীকে সম্মাননা
  • আবারও শুরু হচ্ছে ‘ঢাকা রক ফেস্ট’