ঢাবিতে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে ‘টিকা’
Published: 22nd, April 2025 GMT
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সঙ্গে যৌথ সহযোগিতামূলক কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে চায় তুরস্কের সহযোগিতা ও সমন্বয় সংস্থা (টিকা)।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) বিকেলে টিকার নতুন পরিচালক মোহাম্মদ আলী আরমান ঢাবি পরিদর্শন করে এ আগ্রহ প্রকাশ করেন।
এ সময় তিনি ঢাবির উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা এবং কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড.
আরো পড়ুন:
কুয়েট উপাচার্যের অপসারণ দাবিতে রাত ১০টায় ‘শাহবাগ ব্লকেড’
ঢাবিতে ১ বছরে চীনা শিক্ষার্থী বেড়ে দ্বিগুণ
বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মুহা. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. মোহাম্মদ মোর্তজা মেডিকেল সেন্টারের সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডা. এএম সাজ্জাদ হোসেন এবং টিকা’র বাংলাদেশ প্রতিনিধি মঞ্জুর হোসেন।
সাক্ষাৎকালে টিকার প্রতিনিধিরা ঢাবির শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. মোহাম্মদ মোর্তজা মেডিকেল সেন্টারের প্রয়োজনীয় সংস্কার ও প্যাথলজি বিভাগের উন্নয়নে সহযোগিতা প্রদানের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেন। একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে টিকা ভূমিকা রাখতে চায় বলে জানান পরিচালক মোহাম্মদ আলী আরমান।
ঢাবি কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে তাদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতার আশ্বাস দেয়। শিগগিরই দুই পক্ষের মধ্যে এ নিয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই হবে বলে আশা করছে ঢাবি প্রশাসন।
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম হ ম মদ সহয গ ত
এছাড়াও পড়ুন:
সুন্দরবন সুরক্ষায় বিলম্ব নহে
সুন্দরবনের চতুষ্পার্শ্বের প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ইসিএর ১০ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে নূতন শিল্প কাঠামো নিষিদ্ধের যেই সিদ্ধান্ত সরকার গ্রহণ করিয়াছে, উহাকে আমরা স্বাগত জানাই। আমরা জানি, প্রাকৃতিক ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশ বিবিধ কারণে হুমকির সম্মুখীন। বস্তুত সুন্দরবন ঘিরিয়া পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫ অনুসারে ১৯৯৯ সালে দেশের প্রথম ইসিএ ঘোষণা করা হইয়াছিল। এই বন সুরক্ষায় প্রতিবেশ অঞ্চলের চতুষ্পার্শ্বে এই প্রকার পরিবেশ গঠন করা জরুরি হইলেও উহা বাস্তবায়ন না হওয়া বিস্ময়কর। বিশ্বব্যাপী তো বটেই, এমনকি প্রতিবেশী ভারতেও বন ও বণ্যপ্রাণী সংরক্ষণ কৌশল হিসাবে যথায় এই সীমারেখা ১০ হইতে ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত নির্ধারণ করা হইয়া থাকে, তথায় দেশে উহা উপেক্ষিত হইয়াছিল কেন?
২০১৭ সালে আগস্টে ঘোষিত হাইকোর্টের এক রায়েও সুন্দরবনের চতুষ্পার্শ্বে ১০ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে নূতন কোনো শিল্পকারখানা স্থাপন না করিবার নির্দেশনা দেওয়া হইয়াছিল। উক্ত রায়ে এই সীমানার মধ্যে থাকা শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থানান্তর করিতে বলা হইলেও উহা বাস্তবায়ন হয় নাই।
২০২১ সালের শেষ দিকে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় যখন সুন্দরবনের প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকার সীমা হ্রাসের ‘পর্যালোচনা’ করিয়াছিল তখনও এই সম্পাদকীয় স্তম্ভে আমরা ঐ ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করিয়াছিলাম। আমাদের বক্তব্য ছিল, ইসিএর পর্যালোচনা হইতে পারে কেবল ইতোমধ্যে স্থাপিত কলকারখানা স্থানান্তরকরণ, নূতন স্থাপনা রোধকল্পে এবং উক্ত এলাকা হ্রাসকরণের অর্থ হইবে রাষ্ট্রের স্বঘোষিত আইন ও নীতির বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয় বা অধিদপ্তরের অবস্থান।
স্বস্তির বিষয় হইল, সোমবার সচিবালয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত জাতীয় পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন কমিটির নির্বাহী সভায় সুন্দরবনের পরিবেশগত সুরক্ষায় ২০১৭ সালের জাতীয় পরিবেশ কমিটির ৩.৪.৪ নম্বর সিদ্ধান্ত এবং ২০২১ সালের নির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হইয়াছে। একই সঙ্গে নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ দ্বারা সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটার ইসিএ এলাকার মধ্যে স্থাপিত শিল্পপ্রতিষ্ঠানসমূহের পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণ করিয়া তদনুযায়ী সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ বলিয়া আমরা মনে করি।
স্বয়ং বন বিভাগের ২০১৮ সালের প্রতিবেদনেই স্পষ্ট, সুন্দরবনের ইসিএ এলাকায় অন্তত দুইশত শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়িয়া উঠিয়াছে, যথায় উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান ‘লাল’ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ এই সকল কারখানা ভয়াবহভাবে পানি, বায়ু ও মাটি দূষণ করিয়া থাকে। সেই সকল কারখানা বন্ধ হয় নাই। উপরন্তু এই প্রকার কারখানার সংখ্যা যে আরও বৃদ্ধি পাইয়াছে, বলিবার অপেক্ষা রাখে না। সুন্দরবনকে সর্বাপেক্ষা নাজুক করিয়াছে উহার ১৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাগেরহাটের রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র লইয়া পরিবেশকর্মীদের তীব্র বিরোধিতা সত্ত্বেও তৎকালীন সরকার উহা নির্মাণ করিয়াছিল। যাহার ফলে উন্মুক্তভাবে কয়লা পরিবহনে দূষিত হইতেছে সুন্দরবন এলাকার নদী ও বন। যাহার বিরূপ প্রভাব পড়িয়াছে জলজ ও বনজ জীববৈচিত্র্যের উপর।
আমরা বিশ্বাস করি, সুন্দরবন সুরক্ষায় অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগ যথাযথরূপে প্রতিপালিত হইবে। বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ এবং দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই প্রাকৃতিক সম্পদের চতুষ্পার্শ্বের প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকার মধ্যে নূতন করিয়া শিল্পকারখানা যাহাতে গড়িয়া না উঠে, উহা নিশ্চিত করিতে হইবে। সুন্দরবন যদ্রূপ ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের ন্যায় দুর্যোগে আমাদের প্রাকৃতিক বর্মরূপে ভূমিকা পালন করিয়া থাকে, তদ্রূপ ইহার বনজ সম্পদ দেশের অর্থনীতিতে বিপুল অবদান রাখে। ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্বঐতিহ্যস্থল ও রামসার সাইটের মর্যাদাপ্রাপ্ত সুন্দরবনে ইতোপূর্বে যেই ক্ষতি সাধিত হইয়াছে, নূতন করিয়া মনষ্যসৃষ্ট এইরূপ অবিমৃষ্যকারিতা রোধ করিতে হইবে। ইসিএ সীমানার মাধ্যমেই ইহার সূচনা হইতে পারে।