যত দিন চলাচলের উপযোগিতা থাকবে, তত দিন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড-সন্দ্বীপ রুটে সেবা দেবে ফেরি কপোতাক্ষ। আগামী সপ্তাহেই রুটটিতে যুক্ত হতে পারে সি-ট্রাকও। আজ মঙ্গলবার প্রথম আলোকে এমনটাই জানিয়েছেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ ইউসুফ। এর আগে আগামীকাল বুধবার থেকেই এই রুটে ফেরি চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের কর্মকর্তারা। তখন জানানো হয়েছিল, এই রুটে সি-ট্রাক যুক্ত করতে জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তত দিন এই রুটটি কার্যত অচল থাকবে।

ফেরি বন্ধের ঘোষণায় সন্দ্বীপের মানুষের ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার পর আজ দুপুরে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে উল্লেখ করেন, ফেরি বন্ধের সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। এই পরিপ্রেক্ষিতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে জানতে চাইলে এখনই ফেরি বন্ধ না হওয়ার বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন তিনি।

সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ ইউসুফ প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘ফেরি চলাচলের উপযোগিতা যত দিন থাকবে, তত দিন ফেরি চলবে সন্দ্বীপ চ্যানেলে। ফেরি চলাচলের অনুকূল পরিস্থিতি না থাকলে বন্ধ থাকবে। এ ছাড়া আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সি-ট্রাক পৌঁছাতে পারে সেখানে। তবে উপকূলীয় সি-ট্রাক নেই আমাদের হাতে। জুনের মধ্যে একটি উপকূলীয় সি-ট্রাক এই রুটে যুক্ত হবে। বর্ষাকালে বিআইডব্লিউটিসির জাহাজ ‘মালঞ্চ’ এবং সি-ট্রাক সেবা দিয়ে যাবে।’

সি-ট্রাক চলাচল শুরু হলেও ফেরি কপোতাক্ষ চলবে বলে জানান সচিব মোহাম্মদ ইউসুফ। তিনি বলেন, সি-ট্রাক আসার পরও ফেরি থাকবে। আবহাওয়া পরিস্থিতি বিবেচনায় যত দিন সম্ভব সেবা দিয়ে যাবে।

এর আগে গতকাল সোমবার বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের পরিচালক (বাণিজ্য) এস এম আশিকুজ্জামান প্রথম আলোকে জানিয়েছিলেন, এই রুটে পরিষেবা বন্ধ করে ফেরি কপোতাক্ষকে চাঁদপুরের অভ্যন্তরীণ রুটে ফিরিয়ে নেওয়া হবে। জুন মাসে সি-ট্রাক এনে রুটটি পুনরায় সচল করার কথাও বলেন তিনি।

ফেরি বন্ধের ঘোষণা আসার পর এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে সন্দ্বীপের বিভিন্ন সংগঠন। আজ তারা চট্টগ্রাম ও সন্দ্বীপে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে।

এ অবস্থায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান আজ দুপুর ১২টায় ফেসবুকে ফেরি চালু থাকার সিদ্ধান্তের কথা জানান।

গত ২৪ মার্চ চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড থেকে সন্দ্বীপে ফেরি চলাচল শুরু হয়। চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলাটির সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে ফেরি চলাচল ব্যাপক উৎসাহের সূচনা করে। পরিবর্তন নিয়ে আসে ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে। উদ্বোধনের এক মাসের মাথায় ফেরি চলাচল বন্ধের খবরে হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন সন্দ্বীপের বাসিন্দারা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রথম আল ক ন পর বহন ম হ ম মদ বন ধ র এই র ট

এছাড়াও পড়ুন:

সেতুধস ঠেকাতে এখনই ব্যবস্থা নিন

সিলেট জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ধলাই নদের তলদেশ থেকে বেপরোয়া ও অনিয়ন্ত্রিতভাবে বালু আহরণের ফলে সৃষ্ট পরিবেশগত ও অবকাঠামোগত সংকট আজ আর সম্ভাব্যতা মাত্র নয়, বরং এটি এক সুস্পষ্ট ও আসন্ন বিপর্যয়ের সতর্কসংকেত। নদীর প্রাকৃতিক প্রবাহপথ এবং পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় যে ধলাই নদ ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে, তার অস্তিত্বই আজ সংকটাপন্ন।

স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর লোভনীয় অভিযানে নদের তলদেশে চলমান অবৈধ খনন কার্যক্রম ধলাই সেতুর ভিত্তিমূল পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। এটি সরাসরি একটি রাষ্ট্রীয় অবকাঠামো ধ্বংসের সম্ভাবনা নির্দেশ করে।

পরিবেশবাদী সংগঠন ‘ধরিত্রী রক্ষায় আমরা’র (ধরা) পেশ করা স্মারকলিপিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রশাসনিক নির্লিপ্ততা ও রাজনৈতিক প্রশ্রয়ের সুযোগে একটি সংগঠিত বালুখেকো চক্র নদীগ্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত রয়েছে। নদটি এখন কেবল প্রাকৃতিক সংস্থান লুণ্ঠনের ক্ষেত্র নয়, বরং এক বৃহত্তর অর্থে রাষ্ট্রীয় উদাসীনতার প্রতিচ্ছবিতে পরিণত হয়েছে।

নদতল থেকে বালু আহরণের ফলে নদের স্বাভাবিক প্রবাহে বিঘ্ন ঘটছে। এর ফলে নদতীর ভাঙন, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর হ্রাস, প্রাণবৈচিত্র্যের বিনাশ, কৃষিজমির ক্ষয় এবং জনবসতিতে ভূপ্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধলাই সেতুর অধস্তনভূমি থেকে বালু উত্তোলনের কারণে কেবল পরিবেশগত ভারসাম্য নয়, বরং সরাসরি সেতুর স্থায়িত্বও হুমকির মুখে পড়েছে। একটি সেতু ধ্বংস হলে সেটিকে কেবল আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির বিষয় হিসেবে নয়; বরং তা মানবিক বিপর্যয়, আর্থসামাজিক বিচ্ছিন্নতা ও প্রশাসনিক ব্যর্থতার প্রকট নিদর্শন হিসেবেও দেখা উচিত।

এই সংকট নিরসনে অগ্রাধিকারভিত্তিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। প্রথম ধলাই নদসহ সংশ্লিষ্ট নদীসমূহে সব ধরনের যান্ত্রিক বা অযান্ত্রিক বালু আহরণ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে হবে। খনন কার্যক্রমে নিয়োজিত গোষ্ঠীকে দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

এ ছাড়া অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়ার আগে বাধ্যতামূলকভাবে পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন সম্পাদন এবং তার ভিত্তিতে অনুমোদন প্রদানের বিধান কার্যকর করা উচিত। তদুপরি নদ রক্ষায় স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে একটি সামাজিক প্রতিরোধ কাঠামো গড়ে তুলতে হবে, যা সচেতনতা ও স্বার্থরক্ষা—উভয় স্তরে কার্যকর হতে পারে।

ধলাই সেতু যদি ধসে পড়ে, তা কেবল একটি সেতুর পতন হবে না; তা হবে রাষ্ট্রের অবহেলা, প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা এবং নীতিনির্ধারকদের দায়হীনতার এক প্রামাণ্য দলিল। অতএব পরিবেশ ও অবকাঠামোর সুরক্ষার্থে অবিলম্বে কার্যকর, আন্তরিক ও দূরদর্শী রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ দরকার। অন্যথায় ধলাইয়ের ধারার সঙ্গে দেশের নৈতিক পতনের স্রোতও বেগবান হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সেতুধস ঠেকাতে এখনই ব্যবস্থা নিন