রাজশাহীর চারঘাটে পদ্মাপাড়ের মাটি কেটে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে ছাত্রদলের সাবেক এক নেতার বিরুদ্ধে। এতে একদিকে হারিয়ে যাচ্ছে চাষিদের ফসলের জমি, অন্যদিকে লাগাতার পাড়ের মাটি কেটে নেওয়ায় ভাঙনের হুমকিতে পড়েছে বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি, বিজিবি ক্যাম্প, স্লুইসগেট, চারঘাট থানা, ভূমি অফিস, গুচ্ছগ্রামসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।

এ ব্যাপারে ১৫ এপ্রিল পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর অভিযোগ করেছেন বড়াল রক্ষা আন্দোলন ও চলনবিল রক্ষা আন্দোলনের সদস্যসচিব এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য এস এম মিজানুর রহমান। এ ছাড়া ২৬ ফেব্রুয়ারি চারঘাটের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ হোসেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর বড়াল নদের উৎসমুখে পদ্মাপাড়ের মাটি কেটে বিক্রি করার ভয়াবহতা উল্লেখ করে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন। এই প্রতিবেদনে এলাকাটি অবৈধ দখলদারের হাত থেকে উদ্ধার করে চারঘাটের ঐতিহ্য খয়েরবাগান সৃজন এবং একটি মিনি শিশুপার্ক নির্মাণের প্রস্তাব করেন।

উপজেলা ভূমি অফিসের প্রতিবেদন ও উপদেষ্টা বরাবর দাখিল করা অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, পদ্মাপাড়ের মাটি কেটে বিক্রি চক্রের নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী মতলেবুর রহমান ওরফে মতলেব। তাঁকে সহযোগিতা করছেন উপজেলা বিএনপির একজন নেতা। প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত এক্সকাভেটর (খননযন্ত্র) দিয়ে মাটি কেটে শত শত ড্রামট্রাকে বিভিন্ন ইটভাটা ও স্থাপনায় পাঠানো হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চারঘাট বাজারের স্লুইসগেট সংলগ্ন পদ্মা ও বড়াল নদের মোহনা বালুমহাল হিসেবে সরকার প্রতিবছর ইজারা দিত। কিন্তু বালু তোলার কারণে ক্যাডেট কলেজ, পুলিশ একাডেমিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ভাঙনের মুখে পড়ায় উচ্চ আদালতে মামলা চলমান থাকায় দুই বছর ধরে বালুমহালের ইজারা বন্ধ আছে। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বালুমহাল সংলগ্ন পদ্মাপাড়ের জায়গাগুলো নিয়ন্ত্রণে নেন যুবদল নেতা মতলেবুর রহমান। সেখান থেকে নদীপাড়ের মাটি কেটে বিক্রি শুরু করেন। স্থানীয় প্রশাসন সেখানে একাধিকবার অভিযান পরিচালনা করলেও মতলেব ও তাঁর লোকজন বালু তোলা বন্ধ করেননি।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত ২০ ফেব্রুয়ারি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জান্নাতুল ফেরদৌস ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ হোসেনের নেতৃত্বে মাটি কাটার জায়গাটি পরিদর্শন করেন। তাঁরা সেখানে সরকারি খাসজমির সঠিক সীমানা নির্ধারণ করে লাল পতাকা ও সাইনবোর্ড স্থাপন করেন। এ সময় জার্মান ফেডারেল মিনিস্ট্রি ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের অর্থায়নে নেওয়া প্রকল্প ‘ইনোভেশনস ফর ক্লাইমেট-স্মার্ট আরবান ডেভেলপমেন্টের’ প্রতিনিধিদলকে সঙ্গে নিয়ে ভাঙন রোধে সেখানে চারঘাটের ঐতিহ্যবাহী খয়েরগাছ রোপণের মাধ্যমে সামাজিক বনায়ন কার্যক্রম শুরু করা হয়।

এদিকে ওই দিন দুপুরে গাছের চারা রোপণের পর রাত থেকেই আবারও মাটি কাটা শুরু হয়। মাটি পরিবহন করতে গিয়ে রোপণ করা গাছগুলোও নষ্ট করা হয়। সীমানা নির্ধারণের লাল পতাকা ও সাইনবোর্ড তুলে ফেলা হয়। এরপর স্থানীয় লোকজনের ফসল নষ্টের অভিযোগের ভিত্তিতে সর্বশেষ ১১ এপ্রিল বিকেলে সেখানে অভিযানে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জান্নাতুল ফেরদৌস, সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ হোসেন ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান। অভিযানে সহযোগিতায় ছিল মাত্র চারজন আনসার সদস্য।

আগামী মৌসুমে এই এলাকাজুড়ে তীব্র ভাঙন হওয়ার আশঙ্কা হয়েছে। যেখানে মাটি কাটা হচ্ছে তার ২০০ মিটারের মধ্যে রয়েছে পুলিশ একাডেমি, চারঘাট থানা, ভূমি অফিস, স্লুইসগেট, বিজিবি ক্যাম্পসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান।পার্থ সরকার, রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগ-২–এর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী

ঘটনাস্থলে গিয়ে উপজেলা প্রশাসনের কর্মীরা এক্সকাভেটর মেশিন অকেজো করার চেষ্টা করলে সেখানে উপস্থিত হন মতলেবুর রহমানের নেতৃত্বে ২০-২৫ জন দেশি অস্ত্রধারী। এ অবস্থায় যথেষ্ট ফোর্স না থাকায় অভিযান না চালিয়ে ফেরত আসতে বাধ্য হয় উপজেলা প্রশাসন। ওসি নিজে সেখানে উপস্থিত থাকলেও মাত্র ৩০০ মিটার দূরত্বে থেকেও ঘণ্টাখানেক সময়েও থানার পুলিশ ফোর্স সেখান উপস্থিত হননি।

প্রকাশ্যে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে ওই এলাকায় যাওয়ার কোনো উপায় নেই। প্রশাসনের লোকজনকেই মাটি খননে জড়িত লোকজন ঘিরে ধরেন। তাই চারঘাটের মুক্তারপুর থেকে নৌকা নিয়ে পদ্মা নদী দিয়ে গত রোববার সেখানে গিয়ে দেখা যায়, একটি ভুট্টাখেতের পাশ থেকে নদীপাড়ের মাটি খনন করা হচ্ছে। ৩০-৪০ ফুট গভীরে মাটি কাটায় সমতল ভূমি থেকে যন্ত্রটির মাথা দেখা যাচ্ছে না। সেখানকার ছবি তুলতে দেখেই খাদের মধ্যে ছাতা মাথায় দাঁড়িয়ে থাকা একজন এই প্রতিবেদককে সালাম দেন। ছবি নিয়ে চলে আসতে গেলে একজন পেছন পেছন দৌড়ে আসতে থাকেন। ডাকতে ডাকতে বলেন, ‘ভাই, বড় ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করে যান, ভাই, বড় ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করে যান।’

স্থানীয় গোপালপুর এলাকার এক কৃষক বলেন, পদ্মা নদীতে অসময়েও ভাঙন চলছে। একের পর এক ফসল জমি নদীতে বিলীন হচ্ছে। কিন্তু সবচেয়ে আতঙ্কের মধ্যে আছেন আগামী বর্ষা মৌসুমের কথা চিন্তা করে। যেভাবে নির্বিচার নদীর পাড়ের মাটি পুকুরসমান গর্ত করে কাটা হচ্ছে, তাতে পুরো এলাকা নদীর মধ্যে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আগে নদীর পাড়ে যেখানে ফসল ফলত, এখন সেখানে দুই মানুষ গর্ত হয়ে গেছে। যারা কাটছে তাদের বিরুদ্ধে কৃষকেরা প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেন না।

যেখানে মাটি কাটা হচ্ছে তার ২০০ মিটারের মধ্যে রয়েছে পুলিশ একাডেমি, চারঘাট থানা, ভূমি অফিস, স্লুইসগেট, বিজিবি ক্যাম্পসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প ল শ এক ড ম পদ ম প ড় র স ল ইসগ ট কর মকর ত ন উপজ ল র রহম ন মতল ব সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

আবারও উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা, ক্ষমা চাইতে আলটিমেটাম

উপাচার্যের একের পর এক বিতর্কিত সিদ্ধান্তে বারবার অশান্ত হয়ে উঠছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি)। গত ২৩ সেপ্টেম্বর অধ্যাপক ড. শুচিতা শারমিন উপাচার্য নিযুক্ত হওয়ার পর গত ৭ মাসে একাধিকবার তাঁর পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। সর্বশেষ ইংরেজি বিভাগের  অধ্যাপক ড. মুহসিন উদ্দিনকে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর আখ্যা দিয়ে সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিল থেকে অব্যাহতি দেওয়ার প্রতিবাদে তারা আবারও আন্দোলনে নেমেছেন। ড. মুহসিনকে পুনর্বহাল ও উপাচার্যকে ক্ষমা চাওয়ার দাবিতে শিক্ষার্থীরা সোমবার ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন।

ড. মুহসিন জুলাই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের পক্ষে এবং উপাচার্যের আস্থাভাজন শিক্ষকরা আন্দোলনের বিপক্ষে ছিলেন– তাঁর একটি ভার্চুয়াল সভার অডিও গত শনিবার ভাইরাল হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগের দিন ৪ আগস্ট তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া আওয়ামী লীগপন্থি শিক্ষকদের নিয়ে ওই সভাটি করেছিলেন। অডিও ভাইরাল হওয়ার পর ড. মুহসিনকে পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা।

সোমবার দুপুরে ক্যাম্পাসে মানববন্ধন ও পরে উপাচার্যের দপ্তরে গিয়ে শিক্ষার্থীরা ৪ দফা দাবিসংবলিত স্মারকলিপি দেন। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দাবি না মানলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। দাবিগুলো হলো– অধ্যাপক মুহসিন উদ্দিনের বিরুদ্ধে মিথ্যা-অপমানজনক অপবাদ প্রত্যাহার, সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য পদে পুনর্বহাল; অবসরের পর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামকে অপসারণ; ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচারের দোসর শিক্ষকদের লাভজনক কমিটি থেকে অপসারণ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃশ্যমান উন্নয়ন না করে একের পর এক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও ফ্যাসিবাদের দোসরদের পুনর্বাসন করায় উপাচার্যকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া।

আন্দোলনকারীদের অন্যতম ইংরেজি চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রাকিন খান জানান, একজন নিরপরাধ শিক্ষককে মিথ্যা অপবাদ দেওয়ায় সাধারণ শিক্ষর্থীরা ক্ষুব্ধ। সোমবার তারা উপাচার্যের দপ্তরে গিয়ে স্মারকলিপি দিয়েছেন। তারা জেনেছেন, গতকাল তিনি ক্যাম্পাসে ছিলেন না। চার দফা দাবি না মানলে বড় আন্দোলন গড়ে তুলবেন। 

উপাচার্যের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ
ড. শুচিতা যোগদানের পরই শিক্ষার্থীরা অভিযোগ তোলেন, তিনি রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহর অনুসারী। জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের ৩৫০ বিশিষ্টজন গত বছর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের সমর্থনে বিবৃতি দিয়েছিলেন। উপাচার্যও সেই বিবৃতিদাতাদের একজন। এ ছাড়া কলিমুল্লাহকে ববির একাডেমিক কাউন্সিলর, পরীক্ষা কমিটি ও পূর্বের চাকরি গণনা কমিটির সদস্য করা হলে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে প্রত্যাহার করেন তিনি। 

উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম রাব্বানীর অভিযোগ, তিনি সব একাডেমিক কাজের প্রশাসনিক তত্ত্বাবধান করবেন। কিন্তু উপাচার্য তাঁকে বাদ দিয়েই নথিভিত্তিক ও সভাভিত্তিক একাডেমিক সিদ্ধান্ত নেন। কোষাধ্যক্ষ ড. মামুন অর রশিদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিতে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত চেক কোষাধ্যক্ষ এবং তদূর্ধ্ব চেক উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ যৌথ স্বাক্ষর করবেন। কিন্তু উপাচার্য সব চেকে একাই স্বাক্ষর করেন। এসব অভিযোগ এর আগে শিক্ষার্থীরা দুইবার উপচার্যের পদত্যাগে এক দফার আন্দোলনে নেমেছিলেন। গত ২৮ নভেম্বর তাঁর কক্ষে তালাও লাগিয়েছিলেন তারা। 

শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে বক্তব্য জানতে উপাচার্য ড. শুচিতা শারমিনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল ও মেসেজ দেওয়া হলেও তিনি সাড়া দেননি। পরে সোমবার রাতে তাঁর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা সাকিব হোসেন জানান, উপাচার্য সারাদিন একাধিক বৈঠক করেছেন। এখন তিনি বিশ্রামে রয়েছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নেতৃত্বশূন্য পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ কী
  • যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীও মনে করেন, ট্রান্স নারী মানেই নারী নন
  • সিটি কলেজের স্থাপনায় হামলা পুলিশ দাঁড়িয়ে দেখেছে: ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ
  • মহানবীকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে মহাখালী-সাতরাস্তা সড়ক অবরোধ
  • শাশুড়িকে নারীর চোখে ‘দানব’ বানায় কে
  • সাগর-রুনি হত্যা মামলা তদন্তে সময় বাড়ানো হলো আরও ৬ মাস
  • ‘মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নে ট্রেনিং-রিসার্চকে গুরুত্ব দিতে হবে’
  • বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়: আবারও উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা
  • আবারও উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা, ক্ষমা চাইতে আলটিমেটাম