মেধাস্বত্ত্ব ফিরে পেতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ সিনেমার প্রযোজকরা
Published: 22nd, April 2025 GMT
মেধাস্বত্ত্বের অধিকার ফিরে পেতে আবেদন করেছেন চলচ্চিত্র প্রযোজকরা। গত ৬ এপ্রিল সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর সকল প্রযোজকের পক্ষে আবেদন করেন পাঁচজন প্রযোজক। আবেদন গ্রহণ করার পর পরই বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করেছেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়।
জানা গেছে, কপিরাইট আইন ২০২৩ এর ১৭ ধারার উপধারা ৩ ও ২১ ধারা উল্লেখ করে এই আবেদন করেন পাঁচ প্রযোজক। তাদের দাবি, নানাভাবে ভুল বুঝিয়ে চলচ্চিত্রের মালিকানা স্বত্ত্ব চলচ্চিত্রের সকল প্রযোজকদের কাছ থেকে লিখে নিয়েছেন দ্বিতীয় পক্ষ দেশের বিভিন্ন লেবেল প্রতিষ্ঠান। এসকল লেবেল প্রতিষ্ঠান তাদের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে চলচ্চিত্রগুলো সম্প্রচার করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করছে। অন্যদিকে প্রযোজকরা দিনের পর দিন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। ফলে মালিকানা স্বত্ব নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। এমতাবস্থায় কপিরাইট অফিস থেকে সুরহা পেতে চাইলেও বিগত সরকারের আমলে তা প্রযোজকদের বিপক্ষে রায় দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, প্রযোজকদের আবেদনটি হাতে পেয়ে বিষয়টি সমাধানের জন্য কপিরাইট অফিসকেও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে মেধাস্বত্ত্বের বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয় কাজ শুরু করে দিয়েছেন বলে জানা গেছে। দ্রুত এই বিষয়টি সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাসহ প্রযোজকদের সঙ্গে কথা বলা হবে।
বিষয়টি জানতে কপিরাইট রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো.
আবেদনে প্রযোজকরা লিখেছেন, কপিরাইট আইন, ২০২৩ এর ধারা ২ এর উপধারা ২৪ এ উল্লেখ রয়েছে চলচ্চিত্রের মূল মালিক উহার প্রযোজক। আমরা সাধারণত প্রচুর পরিমাণ অর্থ লগ্নি করে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করি। কিন্তু ঐসকল চলচ্চিত্র বিভিন্ন ধরনের লেবেল প্রতিষ্ঠান ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সম্প্রচারের জন্য আমাদেরকে ভুল বুঝিয়ে নামমাত্র একটি দলিল করে ৬০ বছরের জন্য মালিকানা স্বত্ব নিয়ে নেন। পরবর্তীতে আমরা ঐসকল চলচ্চিত্র আমাদের নিজস্ব ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সম্প্রচার করতে চাইলে তারা আমাদেরকে সম্প্রচারের ক্ষেত্রে বাধা প্রয়োগ করেন। লেবেল প্রতিষ্ঠান থেকে জানানো হয় যে, আপনারা আপনাদের মালিকানা আমাদের নিকট ৬০ বছরের জন্য একেবারেই হস্তান্তর করেছেন। এখানে উল্লেখ্য যে, কপিরাইট আইন,২০২৩ এর ধারা ১৭ এর উপধারা ৩ এ উল্লেখ রয়েছে যে, একটি হস্তান্তর দলিল উভয়পক্ষের সম্মতিক্রমে দলিলটি পুনঃপরীক্ষণ, বর্ধিতকরণ বা বাতিলের ব্যবস্থা করা যাবে। কিন্তু কোন লেবেল প্রতিষ্ঠানই হস্তান্তর দলিলে এ শর্তটি উল্লেখ করেননি। তারা তাদের মনগড়া দলিলে আমাদের ভুল বুঝিয়ে স্বাক্ষর করে নেন। এর ফলে আমরা প্রচুর পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি।
এখানে আরও উল্লেখ যে, কপিরাইট আইন, ২০২৩ এর ২১ ধারায় উল্লেখ রয়েছে, চলচ্চিত্রের মালিকানা হস্তান্তর হলেও উক্ত চলচ্চিত্র অন্যত্র পুনঃবিক্রয় হলে উক্ত পুনঃ বিক্রয় মূল্যের ২০ শতাংশ উক্ত চলচ্চিত্রের প্রযোজক পাবেন। কিন্তু লেবেল প্রতিষ্ঠান চলচ্চিত্রগুলো অন্যান্য ওটিটি প্ল্যাটফর্মের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে ব্যবসা করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করে অথচ তার কোন অংশই আমারা প্রযোজকগণ পাচ্ছি না। অথচ সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিকভাবে কপিরাইট আইন অনুসারে চলচ্চিত্রের মালিকানা একেবারেই হস্তান্তরযোগ্য নয়। অন্যান্য দেশে কপিরাইট মালিকানা একেবারেই হস্তান্তর সমর্থনযোগ্য নয়। আমরা যারা অনেক টাকা লগ্নি করে এসকল চলচ্চিত্র নির্মাণ করি দিনশেষে আমরা এর প্রকৃত রয়্যালিটি পাইনা। এর সকল মুনাফা ভোগ করেন বিভিন্ন ধরনের লেবেল প্রতিষ্ঠান।
আবেদনে আরও লেখেন, লেবেল প্রতিষ্ঠানের তৈরিকৃত দলিলের মাধ্যমে কপিরাইট অফিস কর্তৃক প্রদানকৃত কপিরাইট সনদগুলো দ্রুত বাতিলের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আপনার নিকট সবিনয়ে অনুরোধ করছি। পাশাপাশি উক্ত চলচ্চিত্রের প্রযোজক হিসেবে আমরা যাতে করে অন্যত্র সম্প্রচারের জন্য লাইসেন্স প্রদান করতে পারি সে ব্যবস্থা রাখার জন্য অনুরোধ করছি এবং এসকল সমস্যা নিরসন না হওয়া পর্যন্ত কপিরাইট অফিস যাতে করে কোন লেবেল প্রতিষ্ঠানের নামে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট কোন চুক্তিপত্র বা হস্তান্তর দলিল নিবন্ধন না করে ও চলচ্চিত্রের কপিরাইট সনদ ইস্যু না করে উক্ত বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সবিনয়ে অনুরোধ করেন প্রযোজকরা।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: চলচ চ ত র র ম ল প ল য টফর ম র র জন য ব যবস থ উল ল খ আম দ র ব ষয়ট
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশের ই-কমার্স: কোথায় আছি, কোথায় যেতে চাই
পর্ব–১
একসময় বাংলাদেশের ব্যবসা মানেই ছিল দোকানপাট আর মেলায় বিকিকিনি। কিন্তু ডিজিটাল যুগের হাতছানিতে আজ সেই বাণিজ্য এসেছে মোবাইলের পর্দায়, ল্যাপটপের ক্লিকে। ই-কমার্স এখন আর বিলাসিতা নয়, এটি মানুষের নিত্যব্যবহার্য। দেশের তরুণ উদ্যোক্তারা এই পরিবর্তনের প্রধান চালিকা শক্তি। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এত দূর এসেও আমরা কি যথেষ্ট প্রস্তুত? আমাদের বর্তমান অবস্থান কোথায়, আর সামনে যাওয়ার পথ কী?
বাংলাদেশে ই-কমার্সের অগ্রযাত্রা
বাংলাদেশে ই-কমার্সের সূচনা হয় মূলত ২০০৯-১০ সাল থেকে। প্রথম দিকে কিছু ওয়েবসাইট–নির্ভর ব্যবসা শুরু হলেও ফেসবুকের উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম–নির্ভর ক্ষুদ্র ব্যবসার জোয়ার আসে। বর্তমানে প্রায় ২ লাখের বেশি ই-কমার্স উদ্যোগ সক্রিয়, যার মধ্যে ৬০ শতাংশের বেশি ফেসবুকভিত্তিক। (সূত্র: ই–ক্যাব অ্যানুয়াল রিপোর্ট ২০২৩)
মোবাইল আর্থিক সেবার ভূমিকা
ই-কমার্সের প্রসারে বিকাশ, নগদ, রকেটের মতো মোবাইল আর্থিক সেবার অবদান অনস্বীকার্য। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, প্রতিদিন গড়ে ৫–৬ লাখ অনলাইন লেনদেন হয়, যার অধিকাংশই ই-কমার্স সম্পর্কিত। এই প্রবাহ গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত ই-কমার্স বিস্তারের রাস্তা তৈরি করেছে।
কোভিড-১৯ এবং ই-কমার্স বিপ্লব
কোভিড-১৯ মহামারিকালে যখন মানুষ ঘরবন্দী ছিল, তখন ই-কমার্সই হয়ে ওঠে প্রধান কেনাকাটার মাধ্যম। খাদ্যপণ্য, ওষুধ, পোশাক, এমনকি গৃহস্থালিসামগ্রীর চাহিদা অনলাইনে দ্রুত বেড়ে যায়। লাইটক্যাসল পার্টনারসের গবেষণামতে, কোভিড–পূর্ব সময়ের তুলনায় ই-কমার্স লেনদেন তখন ৩০–৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।
অর্জন এবং সম্ভাবনা
* কর্মসংস্থান: প্রায় ২০–২৫ লাখ মানুষ সরাসরি বা পরোক্ষভাবে ই-কমার্সের সঙ্গে যুক্ত। (ই–ক্যাব, ২০২৩)
* নারী ক্ষমতায়ন: ৫০ হাজারের বেশি নারী উদ্যোক্তা অনলাইন ব্যবসায় সক্রিয়।
* এসএমই অন্তর্ভুক্তি: প্রায় ৪০ শতাংশ ই-কমার্স উদ্যোগ এসএমই মালিকানাধীন।
* ফিনটেক বিস্তার: ৯৫ শতাংশ লেনদেন এখন ডিজিটাল মাধ্যমে সম্পন্ন হচ্ছে। (বাংলাদেশ ব্যাংক রিপোর্ট ২০২৩)
* লজিস্টিকস উন্নয়ন: পেপারফ্লাই, রেডএক্স, পাঠাও কুরিয়ার সেবা দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে।
মূল চ্যালেঞ্জ
* গ্রাহক আস্থা সংকট: অনিয়মিত পণ্য সরবরাহ, ভুয়া বিজ্ঞাপন ও টাকা ফেরত (রিফান্ড) জটিলতা এখনো বড় সমস্যা।
* ডিজিটাল নিরাপত্তাঝুঁকি: সাইবার নিরাপত্তার দুর্বলতার কারণে ব্যক্তিগত তথ্য চুরির ঝুঁকি রয়েছে।
* রেজিস্ট্রেশন ও করের জটিলতা: এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য ব্যবসায়িক লাইসেন্স ও ট্যাক্স রেজিম সহজ নয়।
* আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের বাধা: পেপ্যাল, স্ট্রাইপের মতো বৈশ্বিক লেনদেন অনুপস্থিতি।
* দক্ষ মানবসম্পদের ঘাটতি: ই-কমার্স পরিচালন, ডিজিটাল বিপণন ও ডেটা অ্যানালিটিকসে দক্ষতা প্রয়োজন।
মোহাম্মদ নূরুজ্জামান