সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে আরও ছয় মাস সময় পেয়েছে এ–সংক্রান্ত টাস্কফোর্স। রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার এ আদেশ দেন।

গত ৩০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট সাগর-রুনি হত্যা মামলা তদন্তে বিভিন্ন সংস্থার অভিজ্ঞদের সমন্বয়ে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্স গঠন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে তদন্ত শেষে ছয় মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। আদালতের আদেশের পর গত ২৩ অক্টোবর চার সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

এদিকে তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন দিতে হাইকোর্টের দেওয়া ছয় মাস সময় ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। এ অবস্থায় তদন্ত চলমান ও অগ্রগতি আছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপক্ষ আরও ৯ মাস সময় দিতে আরজি জানায়। শুনানি নিয়ে আদালত ছয় মাস সময় মঞ্জুর করেন। একই সঙ্গে আগামী ২২ অক্টোবর পরবর্তী দিন রেখেছেন।

এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালতের ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল দেওয়া এক আদেশে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় র‍্যাব। দীর্ঘ এই সময়ে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা পড়েনি। মামলাটি তদন্তের জন্য র‍্যাবের কাছে স্থানান্তরের ওই আদেশ সংশোধন চেয়ে স্বরাষ্ট্রসচিবের পক্ষে গত সেপ্টেম্বর মাসে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়। শুনানি নিয়ে গত ৩০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্স গঠনসহ ওই আদেশ দেন। এরই ধারাবাহিকতায় বিষয়টি আজ আদেশের জন্য কার্যতালিকায় ওঠে।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ শুনানি করেন, সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আখতার হোসেন মো.

আবদুল ওয়াহাব। বাদীপক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।

শুনানিতে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদুর রউফ বলেন, ‘তদন্ত চলছে। আরেকটু সময় লাগবে।’ আদালত বলেন, ‘কত দিন?’ তখন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘৯ মাস সময় দেন। অনেক পুরোনো মামলা। কিছু কিছু তথ্য খুঁজতে হচ্ছে, যা সময়সাপেক্ষ।’

আরশাদুর রউফ বলেন, ‘কর্মকর্তারা দিন-রাত কাজ করছেন। টাস্কফোর্সে পুলিশের পাশাপাশি র‍্যাবসহ বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তা আছেন। সবাই মিলেই চেষ্টা করছেন, অনেক দূর অগ্রগতি হয়েছে। ডিএনএ নমুনা যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়েছে। প্রতিদিন তদারক করা হচ্ছে। ৯ মাস সময় দেন। এর আগে হয়ে গেলে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা যাবে।’

একপর্যায়ে আদালত বলেন, ‘১২ বছর হয়ে গেছে।’ তখন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আগে ছিল র‍্যাবের হাতে। যদিও র‍্যাব অপারেশনাল এজেন্সি, তদন্তকারী সংস্থা নয়।’

বাদীপক্ষের আইনজীবী শিশির মনির বলেন, একটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতে মামলাটি তদন্তের জন্য র‍্যাবের কাছে যায়। র‍্যাব হচ্ছে আইন বাস্তবায়নকারী সংস্থা। অতীতে দেরি হয়েছে। বারবার পেছাচ্ছে কেন—এ নিয়ে পাবলিক পারসেপশন (একধরনের দৃষ্টিভঙ্গি) আছে। ওনারা (টাস্কফোর্স) আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছেন, অগ্রগতি হয়েছে। এত লম্বা সময় (৯ মাস) দেওয়া হলে মানুষের মনে খারাপ ধারণা তৈরি হতে পারে। তিন মাস সময় দেওয়ার পক্ষে মত দেন বাদীপক্ষের এই আইনজীবী।

একপর্যায়ে রাষ্ট্রপক্ষের উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘প্রগ্রেস (তদন্তের অগ্রগতি) হচ্ছে তো?’ তখন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদুর রউফ বলেন, ‘প্রগ্রেস হচ্ছে। বিষয়টি পুলিশের মহাপরিদর্শক, উপমহাপরিদর্শক ও অ্যাটর্নি জেনারেল নিজেও তত্ত্বাবধান করছেন।’ পরে ছয় মাস সময় মঞ্জুর করে আদালত আগামী ২২ অক্টোবর পরবর্তী দিন রাখেন।

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে ভাড়া করা বাসায় খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর ও রুনি। সাগর সে সময় মাছরাঙা টিভিতে আর রুনি এটিএন বাংলায় কর্মরত ছিলেন। সাগর-রুনি হত্যার ঘটনায় রুনির ভাই নওশের আলম বাদী হয়ে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন।

প্রথমে এ মামলা তদন্ত করছিল শেরেবাংলা নগর থানার পুলিশ। চার দিন পর মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়। তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার ৬২ দিনের মাথায় ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল হাইকোর্টে ব্যর্থতা স্বীকার করে ডিবি। এরপর আদালত র‍্যাবকে মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দেন।

আরও পড়ুনসাগর-রুনি হত্যা মামলা: আরও ছয় মাস সময় দেওয়া হলো টাস্কফোর্সকে৮ ঘণ্টা আগে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ষ ট রপক ষ ছয় ম স সময় ম স সময় দ তদন ত র করছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

কারাগার থেকে শীতের সোয়েটার হারিয়ে গেছে, বললেন পলক

কারাগার থেকে দুটি শীতের সোয়েটার হারিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করেছেন সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক। কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আইনজীবীদের কাছে এ অভিযোগ করেন তিনি। তবে তার এ অভিযোগ ভিত্তিহীন ও বানোয়াট বলেছেন কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারের জ্যেষ্ঠ কারা তত্ত্বাবধায়ক আবদুল্লাহ আল মামুন। 

আইনজীবীর উদ্দেশে পলক বলেন, ‘আগামী শীতকাল পর্যন্ত কারাগারে থাকতে হবে কি না, জানি না। কিন্তু আমার দুটি শীতের সোয়েটার হারিয়ে গেছে। যদি সে পর্যন্ত থাকতে হয়, তাহলে আবার সোয়েটার জোগাড় করে নিতে হবে।’

বিভিন্ন হত্যা মামলায় আজ সোমবার সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমু, শাজাহান খান, কামাল আহমেদ মজুমদার, জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক, তুরিন আফরোজকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। শুনানি শেষ হলে পলকের আইনজীবী ফারজানা ইয়াসমিন বলেন, তার মক্কেল কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে তাকে জানিয়েছেন, তার শীতের দুটি সোয়েটার কারাগার থেকে হারিয়ে গেছে।

কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারের জ্যেষ্ঠ কারা তত্ত্বাবধায়ক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আলোচনায় থাকার জন্য জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক উদ্ভট সব দাবি করে থাকেন। এই সোয়েটার হারিয়ে যাওয়ার তথ্য, এমন একটি উদ্ভট দাবি। কারাগার থেকে কোনো বন্দীর জিনিসপত্র হারানোর সুযোগ নেই।’

তিনি আরও বলেন, একজন বন্দীকে যদি কারাগার থেকে কোনো কাপড়চোপড় বাইরে নিয়ে যেতে হয়, সে ক্ষেত্রে কারাগারে সেই কাপড়চোপড় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। পরে কারারক্ষীরা তার স্বজনদের কাছে কাপড় হস্তান্তর করেন।

পলকের আইনজীবীর তথ্যও সঠিক নয় বলে দাবি করেন জ্যেষ্ঠ কারা তত্ত্বাবধায়ক। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হত্যার ৩২ বছর পর রায়, ১ জনের যাবজ্জীবন
  • স্ত্রীর সঙ্গে কখনো ঝগড়া হয়নি অস্কারজয়ী অভিনেতার
  • রাজশাহীতে ভাই-বোনকে কুপিয়ে হত্যার মামলায় এক জনের মৃত্যুদণ্ড
  • পলকের সোয়েটার পাওয়া গেল
  • মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে জামায়াত নেতা আজহারুল ইসলামের আপিল শুনানি আজ
  • ‘ফ্যাসিস্ট বিচারপতি’দের অপসারণ দাবিতে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সমাবেশ
  • চার আইনজীবীকে কারাগারে নেওয়ার সময় ডিম নিক্ষেপ
  • ছাত্র-জনতার ওপর গুলির মামলায় কুমিল্লায় আওয়ামী লীগপন্থী চার আইনজীবী কারাগারে
  • কারাগার থেকে শীতের সোয়েটার হারিয়ে গেছে, বললেন পলক