এবার পরিমনির বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করলেন গৃহকর্মী
Published: 22nd, April 2025 GMT
এবার চিত্রনায়িকা পরীমনির বিরুদ্ধে মারধর ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেছেন গৃহকর্মী পিংকি আক্তার। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে গত মঙ্গলবার এ মামলা হয়।
প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ওই আদালতের বেঞ্চ সহকারী পুলক চন্দ্র। তবে পরীমনির বিরুদ্ধে মামলার বিষয়টি জানাজানি হয়েছে আজ মঙ্গলবার।
আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, আদালত বাদীর জবানবন্দি রেকর্ড করেন। একই সঙ্গে মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে ৮ মের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেন আদালত।
এ ব্যাপারে পরীমনির আইনজীবী নীলাঞ্জনা রিফাত প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর মক্কেল পরীমনির বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়েছে কি না, তা তিনি জানেন না। বিষয়টি খোঁজ নেবেন।
৩ এপ্রিল পরীমনির বিরুদ্ধে ভাটারা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন গৃহকর্মী পিংকি আক্তার।
উল্লেখ্য, মারধর ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে ২০২২ সালের ১৮ জুলাই ঢাকার আদালতে নালিশি মামলা করেন ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ। মামলাটি ঢাকার আদালতে বিচারাধীন। পরিমনির বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা আরও একটি মামলার বিচার চলছে। অন্যদিকে পরীমনির করা একটি ধর্ষণচেষ্টার মামলা বিচারাধীন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
খুলনায় তুহিন চেয়ারম্যান কারাগারে, এলাকায় মিষ্টি বিতরণ
খুলনায় মুক্তিযোদ্ধা ও ছাত্র হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামি ও আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসর শেখ পরিবারের আস্থাভাজন ডুমুরিয়া উপজেলার গুটুদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ তুহিনুর ইসলাম তুহিনকে কারাগারে প্রেরণ করায় এলাকায় বৃষ্টি বিতরণ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তারা চেয়ারম্যান শেখ তুহিনুল ইসলাম তুহিনের অপসারণের দাবি জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) গুটুদিয়ায় বিক্ষোভ করে মিষ্টি বিতরণ করেন চেয়ারম্যানের কাছে নির্যাতিতরা।
এর আগে খুলনা মহানগর শাখা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনার বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাটের মামলায় ১৭ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) আদালতে আত্মসর্মপন করে জামিন চাইলে আদালত জামিন না মঞ্জুর করে চেয়ারম্যান শেখ তুহিনুল ইসলাম তুহিনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। তিনি কারাগারে থাকায় ইউনিয়ন পরিষদ পরিচালনার নির্দেশনা চেয়ে ইউপির প্রশাসনিক কর্মকর্তা এমদাদুল হক রোববার (২০ এপ্রিল) উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট চিঠি দিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, জুলাই আন্দোলনের ছাত্র-জনতার বিপরীতমুখী অবস্থানে থাকা গুটুদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ তুহিনুল ইসলাম তুহিন সরকারের পতনের পর আত্মগোপনে চলে যান।
২০২৪ সালের ১১ ডিসেম্বর বিএনপি খুলনা মহানগর শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনার বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের মামলার ৪৬ নম্বর আসামি তিনি।
তার বিরুদ্ধে ২০২৪ সালের ২১ নভেম্বর আন্তজার্তিক অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে ছাত্রদল কর্মী রকিবুল হাসানকে হত্যার অভিযোগে তার পিতা রফিকুল ইসলাম হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার ১৫৬ নম্বর আসামি তিনি। বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাদাৎ হোসেন মোল্লা হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি তুহিন।
এসব মামলায় তিনি উচ্চ আদালত থেকে অর্ন্তবর্তীকালীন জামিনে ছিলেন। জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ায় গত ১৭ এপ্রিল আদালতে আত্মসর্মপন করে জামিন চাইলে আদালত জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কারাগারে থাকায় ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. এমদাদুল হক রোববার (২০ এপ্রিল) ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর চিঠি লিখেছেন। ওই চিঠিতে ইউনিয়ন পরিষদ পরিচালনার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। এছাড়া ইতোপূর্বে নির্বাচিত তিনজন প্যানেল চেয়ারম্যানের নামও উল্লেখ করেছেন ওই পত্রে।
এলাকাবাসীর দাবি, প্যানেল চেয়ারম্যানরা চেয়ারম্যান তুহিনের আজ্ঞাবহ। তারা যদি দায়িত্ব পায় তবে অদৃশ্যভাবে তুহিনের হাতেই থেকে যাবে ক্ষমতা। তাই গুটুদিয়া ইউনিয়নে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
এ বিষয়ে ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আল আমিন বলেন, “গুটুদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান করাগারে বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদ পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে যদি প্যানেল চেয়ারম্যানদের নিয়ে কোনো আপত্তি না থাকে তবে তাদের মধ্য থেকে দায়িত্ব দেওয়া হবে। এতে জটিলতা হলে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সহ-সম্বয়ক ও খুলনা জেলার সদস্য সচিব সাজিদুল ইসলাম বাপ্পি বলেন, “শুধু গুটুদিয়ার চেয়ারম্যান নয়, খুলনায় বিভিন্ন উপজেলার প্রায় ৪০টা ইউনিয়নে এখনও পর্যন্ত ফ্যাসিবাদের দোসর ও খুনি-সন্ত্রাসীরা চেয়ারম্যান হিসাবে বসে আছেন। আমরা জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট ইউএনওদের বারবার এবিষয়ে সতর্ক করতেছি। তারা আমাদের কথা শুনছে না। তারা এলাকার মানুষের কথায় কোনোরূপ কর্নপাত করছেন না। জেলা প্রশাসক ও সংশ্লিষ্ট ইউএনওদের অভ্যুত্থানের চেতনাবিরোধী এরূপ কার্যক্রমে আমরা চরমভাবে উদ্বিগ্ন।”
কে এই তুহিন
ঢাকায় বিমান বন্দরে চুক্তিভিত্তিক নিরাপত্তা কর্মীর কাজ করতেন এই তুহিন। সেখানে নারী পাচারের সাথে যুক্ত হওয়ায় চাকরি যায় তার। খুলনা মহানগীর শেরেবাংলা রোডের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচাতো পাঁচ ভাইয়ের বাড়ি শেখ বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে ক্রমান্বয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেন তুহিন।
শেখ হেলাল, শেখ জুয়েল, শেখ সোহেল, শেখ রুবেল ও শেখ বেলালের ভাগ্নে পরিচয় দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা কাজী কামালের সাথে বন্ধুত্ব করেন গুটুদিয়াসহ খুলনার আশপাশের এলাকায়। চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জুলুমের শিকার ওই এলাকার মানুষ। ওয়ারেস কাম সার্টিফিকেটের জন্য ঘুষ, জমি-খাল দখল, চাঁদাবাজি, বালু ও জমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় আর সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন তিনি।
সাবেক ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দের ঘনিষ্ঠ সহচর ও অনুসারী এবং শেখ বাড়ির আত্মীয় পরিচয়ে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন তুহিন। ডুমুরিয়ার বাসিন্দা না হয়েও ভোটার হয়ে আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগ খুলনা জেলার সহ-সভাপতি তুহিন ২০২১ সালে বিনা ভোটে চেয়ারম্যান হন।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তিনি আওয়ামী লীগের বিভিন্ন মিটিং মিছিলে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। চেয়ারম্যান তুহিন টিআর, কাবিখা, জিআর, কাবিটা, ভিজিডি, এডিবি, এলজিএসপি, ইউপি ট্যাক্স নিজের মতো করে চালাতেন। জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন ফি নিজের খেয়ালখুশি মতো আদায় করতেন। ষড়যন্ত্র করে মানুষকে বিপদে ফেলে টাকা আদায় করতেন।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন কেউ তার এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পেতেন না। গুটুদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ১১ নং ইউপি সদস্য মো. ইজ্জত আলী মোড়ল চেয়ারম্যান তুহিনের এসব অপকর্মের সহযোগী ছিলেন।
ঢাকা/নুরুজ্জামান/এস