সিটি কলেজের স্থাপনায় হামলা পুলিশ দাঁড়িয়ে দেখেছে: ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ
Published: 22nd, April 2025 GMT
ঢাকা সিটি কলেজের স্থাপনায় যখন হামলা হয়, তখন পাশেই পুলিশের ৫০ থেকে ১০০ জন সদস্য দাঁড়িয়ে তা দেখছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এফ এম মোবারক হোসেন। তিনি হামলাকারীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান।
মোবারক হোসেন বলেন, ‘আজকে আমি দেখেছি, আমাদের কলেজে যখন হামলা হয়, থানা প্রশাসনের লোক, প্রায় ৫০ বা ১০০ জন পুলিশ পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। আমার মনে হয়, তারা যদি সময়মতো পদক্ষেপ নিত, তাহলে আমার কলেজে এ রকমভাবে ভাঙচুর হতো না।’
আজ মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা সিটি কলেজের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মোবারক হোসেন এ কথা বলেন।
সিটি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বলেন, অত্র এলাকার জানমালের নিরাপত্তার দায়িত্ব থানা-পুলিশকে নিতে হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা শিক্ষকদের দায়িত্ব না। এটা প্রশাসনের দায়িত্ব।
আজকের হামলা, ভাঙচুর এবং সংঘর্ষের ঘটনা সম্পর্কে মোবারক হোসেন বলেন, গতকাল (সোমবার) একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনায় ঢাকা কলেজের একজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। কে বা কারা তাঁকে আক্রমণ করেছে। এ নিয়ে ঢাকা কলেজ শিক্ষকদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাঁরা বলেছিলেন, তাদের (ঢাকা কলেজ) শিক্ষার্থীরা কোনো গন্ডগোল করবে না, অন্যায় করবে না। সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরাও যেন কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনায় না জড়ায়, সেদিকে শিক্ষকেরা মনোযোগ দেন। হঠাৎ বেলা ১১টার দিকে দেখা গেল, কিছু দুষ্কৃতকারী হামলা চালিয়ে ঢাকা সিটি কলেজের স্থাপনা ভাঙচুর করল, স্থাপনা খুলে নিল। রমজানের আগেও এভাবে ঢাকা সিটি কলেজের স্থাপনার ওপর হামলা করা হয়েছিল বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এটা একেবারে অনিয়ন্ত্রিত ব্যাপার
ঢাকা কলেজ ও ঢাকা সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঠেকানো যাচ্ছে না কেন জানতে চাইলে সিটি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোবারক হোসেন বলেন, ‘এখানে ঢাকা সিটি কলেজে ১২ হাজার শিক্ষার্থী। ঢাকা কলেজে ৭-৮ হাজার শিক্ষার্থী। আইডিয়াল কলেজে ৫-৭ হাজার শিক্ষার্থী। এখানে প্রায় ২৫ হাজার শিক্ষার্থীর আনাগোনার জায়গা। তারা রাস্তাঘাটে, এখানে-সেখানে দাঁড়িয়ে থাকে, গল্পগুজব করে। তা ছাড়া বিভিন্ন ধরনের ফেসবুক গ্রুপ আছে, সেখানে তারা একে অপরকে কটাক্ষ করে আচরণ করে। ওই বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে কেন্দ্র করে এক-দুইটা মারামারি হয়। শেষ পর্যন্ত এটা বড় আকার ধারণ করে। এটা একেবারে অনিয়ন্ত্রিত ব্যাপার।
ঢাকা কলেজ ও আইডিয়াল কলেজের সঙ্গে মিলে চেষ্টা করা হচ্ছে উল্লেখ করে মোবারক হোসেন বলেন, ‘সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা আন্তরিক, আমরাও আন্তরিক। এখন আমরা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামরা করছি। কিছুদিন আগে প্রশাসন এসব ঘটনায় দু-একজনের ব্যাপারে মামলাও করেছে। সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার পরও বিচ্ছিন্ন ঘটনাগুলো নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
আবারও উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা, ক্ষমা চাইতে আলটিমেটাম
উপাচার্যের একের পর এক বিতর্কিত সিদ্ধান্তে বারবার অশান্ত হয়ে উঠছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি)। গত ২৩ সেপ্টেম্বর অধ্যাপক ড. শুচিতা শারমিন উপাচার্য নিযুক্ত হওয়ার পর গত ৭ মাসে একাধিকবার তাঁর পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। সর্বশেষ ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহসিন উদ্দিনকে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর আখ্যা দিয়ে সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিল থেকে অব্যাহতি দেওয়ার প্রতিবাদে তারা আবারও আন্দোলনে নেমেছেন। ড. মুহসিনকে পুনর্বহাল ও উপাচার্যকে ক্ষমা চাওয়ার দাবিতে শিক্ষার্থীরা সোমবার ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন।
ড. মুহসিন জুলাই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের পক্ষে এবং উপাচার্যের আস্থাভাজন শিক্ষকরা আন্দোলনের বিপক্ষে ছিলেন– তাঁর একটি ভার্চুয়াল সভার অডিও গত শনিবার ভাইরাল হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগের দিন ৪ আগস্ট তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া আওয়ামী লীগপন্থি শিক্ষকদের নিয়ে ওই সভাটি করেছিলেন। অডিও ভাইরাল হওয়ার পর ড. মুহসিনকে পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা।
সোমবার দুপুরে ক্যাম্পাসে মানববন্ধন ও পরে উপাচার্যের দপ্তরে গিয়ে শিক্ষার্থীরা ৪ দফা দাবিসংবলিত স্মারকলিপি দেন। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দাবি না মানলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। দাবিগুলো হলো– অধ্যাপক মুহসিন উদ্দিনের বিরুদ্ধে মিথ্যা-অপমানজনক অপবাদ প্রত্যাহার, সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য পদে পুনর্বহাল; অবসরের পর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামকে অপসারণ; ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচারের দোসর শিক্ষকদের লাভজনক কমিটি থেকে অপসারণ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃশ্যমান উন্নয়ন না করে একের পর এক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও ফ্যাসিবাদের দোসরদের পুনর্বাসন করায় উপাচার্যকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া।
আন্দোলনকারীদের অন্যতম ইংরেজি চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রাকিন খান জানান, একজন নিরপরাধ শিক্ষককে মিথ্যা অপবাদ দেওয়ায় সাধারণ শিক্ষর্থীরা ক্ষুব্ধ। সোমবার তারা উপাচার্যের দপ্তরে গিয়ে স্মারকলিপি দিয়েছেন। তারা জেনেছেন, গতকাল তিনি ক্যাম্পাসে ছিলেন না। চার দফা দাবি না মানলে বড় আন্দোলন গড়ে তুলবেন।
উপাচার্যের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ
ড. শুচিতা যোগদানের পরই শিক্ষার্থীরা অভিযোগ তোলেন, তিনি রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহর অনুসারী। জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের ৩৫০ বিশিষ্টজন গত বছর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের সমর্থনে বিবৃতি দিয়েছিলেন। উপাচার্যও সেই বিবৃতিদাতাদের একজন। এ ছাড়া কলিমুল্লাহকে ববির একাডেমিক কাউন্সিলর, পরীক্ষা কমিটি ও পূর্বের চাকরি গণনা কমিটির সদস্য করা হলে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে প্রত্যাহার করেন তিনি।
উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম রাব্বানীর অভিযোগ, তিনি সব একাডেমিক কাজের প্রশাসনিক তত্ত্বাবধান করবেন। কিন্তু উপাচার্য তাঁকে বাদ দিয়েই নথিভিত্তিক ও সভাভিত্তিক একাডেমিক সিদ্ধান্ত নেন। কোষাধ্যক্ষ ড. মামুন অর রশিদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিতে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত চেক কোষাধ্যক্ষ এবং তদূর্ধ্ব চেক উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ যৌথ স্বাক্ষর করবেন। কিন্তু উপাচার্য সব চেকে একাই স্বাক্ষর করেন। এসব অভিযোগ এর আগে শিক্ষার্থীরা দুইবার উপচার্যের পদত্যাগে এক দফার আন্দোলনে নেমেছিলেন। গত ২৮ নভেম্বর তাঁর কক্ষে তালাও লাগিয়েছিলেন তারা।
শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে বক্তব্য জানতে উপাচার্য ড. শুচিতা শারমিনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল ও মেসেজ দেওয়া হলেও তিনি সাড়া দেননি। পরে সোমবার রাতে তাঁর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা সাকিব হোসেন জানান, উপাচার্য সারাদিন একাধিক বৈঠক করেছেন। এখন তিনি বিশ্রামে রয়েছেন।