পৃথিবীর জন্য আশার বাতিঘর হতে চায় বাংলাদেশ: প্রধান উপদেষ্টা
Published: 22nd, April 2025 GMT
বাংলাদেশকে পৃথিবীর জন্য আশার বাতিঘর হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
বিশ্ববাসীর উদ্দেশে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমরা পৃথিবীর জন্য আশার এক বাতিঘর হিসেবে দাঁড়াতে চাই এবং আমাদের বন্ধু ও অংশীদারদের আহ্বান জানাই, অন্তর্ভুক্তিমূলক সামাজিক চুক্তি পুনর্লিখনের জন্য, পাশাপাশি সামাজিক ব্যবসা, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি এবং মাইক্রোফাইন্যান্সের ভূমিকা অন্বেষণ করতে, যা প্রান্তিক জনগণের জন্য টেকসই উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টিতে সহায়ক।’
আজ মঙ্গলবার কাতারের রাজধানী দোহায় ‘আর্থনা শীর্ষ সম্মেলন ২০২৫’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ এখন এমন এক অবস্থায় দাঁড়িয়ে, যেখানে একটি নতুন সামাজিক চুক্তি করার সুযোগ এসেছে। এটি এমন এক চুক্তি, যেখানে রাষ্ট্র ও জনগণ, বিশেষ করে যুবসমাজ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবস্থা, ঐতিহ্য, ন্যায়বিচার, মর্যাদা ও সুযোগের ভিত্তিতে একটি ভবিষ্যৎ একত্রে গড়ে তুলবে। যেখানে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও প্রান্তিক জনগণের ক্ষমতায়ন মৌলিক বিষয় হিসেবে বিবেচিত হবে।
প্রধান উপদেষ্টা তাঁর বক্তব্যে একটি সহনশীল, সমৃদ্ধ ও টেকসই ভবিষ্যতের স্বপ্নের কথা উল্লেখ করেন।
উন্নয়নকে বিপথে ঠেলে দিতে পারে, এখনো এমন নানা হুমকি রয়েছে উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমরা এমন এক সময় পার করছি, যেখানে বহুপাক্ষিকতা হুমকির মুখে, জলবায়ু পরিবর্তন দ্রুততর হচ্ছে, ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ছে এবং মানবিক সংকট গভীরতর হচ্ছে। নতুন নতুন নীতিমালা, প্রযুক্তি ও শাসনপদ্ধতি আমাদের পৃথিবীকে দ্রুত রূপান্তরিত করছে, যা অতীতের অনেক অনুমানকে অচল করে দিচ্ছে।’
এমন প্রেক্ষাপটে সহযোগিতা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এখন আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সহযোগিতার পুনরুজ্জীবনের প্রয়োজন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আসুন আমরা সাহসী হই। একটি এমন পৃথিবী গড়ি, যেখানে কেউ এতটা দরিদ্র না হয় যে সে স্বপ্ন দেখতে না পারে এবং কোনো স্বপ্ন এত বড় না হয় যে তা অর্জন করা যায় না।’
আরও পড়ুনদোহায় পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা৯ ঘণ্টা আগেভবিষ্যৎ গড়ার ক্ষেত্রে সবার ভূমিকা প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘ভবিষ্যৎ এমন কিছু নয়, যা আমরা উত্তরাধিকার হিসেবে পাই। এটি এমন কিছু, যা আমরা তৈরি করি এবং আমাদের প্রত্যেকেরই এতে একটি করে ভূমিকা রয়েছে।’
অধ্যাপক ইউনূস তাঁর মূল বক্তব্যে সামাজিক ব্যবসা, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি এবং ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য টেকসই উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সুযোগ তৈরির ওপর গুরুত্ব দেন।
দোহায় আজ শুরু হয়েছে দুই দিনব্যাপী আর্থনা শীর্ষ সম্মেলন। সম্মেলনের এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘আমাদের উত্তরাধিকার গড়ে তোলা: স্থায়িত্ব, উদ্ভাবন ও ঐতিহ্যবাহী জ্ঞান’।
আরও পড়ুনপ্রধান উপদেষ্টার কাতার সফরে গুরুত্ব পাবে কী কী ২১ এপ্রিল ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউন স ব আম দ র র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
ডিসেম্বরের আগেই নির্বাচন সম্ভব, দেরি হলে সংকট বাড়বে
অনির্বাচিত সরকারের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত হলে সংকট আরও ঘনীভূত হবে বলে সতর্ক করেছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) নেতারা। আজ রোববার বিকেলে রাজধানীর বনানীর একটি হোটেলে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গে এক বৈঠক শেষে তাঁরা এই সতর্কবার্তা দেন।
বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে দলটির ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হাসান মাহমুদ (টুকু) ও বরকতউল্লা বুলু উপস্থিত ছিলেন। অপর দিকে সিপিবির সভাপতি শাহ আলম, সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন (প্রিন্স), সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ এবং বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ ও সহসাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে দ্রুত ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়ে আলোচনা হয়। প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে ডিসেম্বরের আগেই নির্বাচন সম্ভব বলে নেতারা অভিমত দেন। সংস্কার নিয়ে আলোচনায় উভয় পক্ষের নেতারা বলেছেন, যেসব বিষয়ে দলগুলোর ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেসব বিষয়ে সংস্কার করে ফেলা যায়। কারণ, সংস্কার চাপিয়ে দেওয়ার বিষয় নয়; এটা জনগণের সিদ্ধান্তের বিষয়। সরকার নির্বাচন নিয়ে অহেতুক কালক্ষেপণ করলে বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতাদের মধ্যে বৈঠক করে প্রয়োজনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করা যেতে পারে বলে মনে করছেন এই জোটের নেতারা।
বৈঠক শেষে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন বলেন, ‘আমরা ও আমাদের জোট বহু আগে থেকেই বলছি যে বাংলাদেশে জরুরিভাবে একটা নির্বাচিত সরকার দরকার। গণ-অভ্যুত্থানের পর ওই দিনই আমরা বিবৃতিতে বলেছি, পূর্ণ গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই অব্যাহত রাখতে হবে। এরপর অনেক দিন ধরে আমরা বলে আসছি যে ডিসেম্বরের আগেই সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য যা যা সংস্কার করা দরকার, তা করে নির্বাচন করা সম্ভব। সুতরাং এর জন্য নতুন করে আজকে কোনো অজুহাতের দরকার নেই।’
ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের বিএনপির দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে রুহিন হোসেন আরও বলেন, ‘আমরাও মনে করি, বাংলাদেশে ডিসেম্বরের আগে নির্বাচন দেওয়া সম্ভব। অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত হবে তারা নির্বাচন কমিশনকে বলে দিক তারা অক্টোবর, নভেম্বর বা ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে যেন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে পারে। তারা যেহেতু স্বাধীন কমিশন, তারাই ঘোষণা করবে এবং এর মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক যাত্রা শুরু করতে পারব।’
বিএনপি নেতাদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক হয়েছে জানিয়ে রুহিন হোসেন বলেন, ‘যখন আনুষ্ঠানিকভাবে বৈঠক করব, তখন আমাদের একটা জোট আছে, জোটে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়ে ওই বৈঠক করব, সেখানে জোটের অন্য নেতারাও থাকবেন। আজকে এখানে এক-দুজন নেতৃবৃন্দ, তাঁদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়, তাঁদের আমন্ত্রণে আমরা এখানে অনানুষ্ঠানিকভাবে চা খেতে এসেছি।’
বৈঠক শেষে সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম সাংবাদিকদের বলেন, যারা নির্বাচন করে সংস্কার করবে, তারাই আসল সংস্কারের পক্ষে আর যারা নির্বাচন ছাড়া সংস্কার চায় একটা ডিক্রি জারি করে, সেটা বালুতে গাঁথুনি। শক্ত ভিত্তির ওপর করতে হলে জনগণের অংশগ্রহণ লাগবে, জনগণের সমর্থন লাগবে এবং সেটা করতে হলে একটা ইলেকশন অপরিহার্য। তবে নির্বাচনের নামে প্রহসন তাঁরা মেনে নেবেন না।
এ ছাড়া দেশে উগ্রবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে বলে বৈঠকে উদ্বেগ জানান নেতারা। এই সংকট মোকাবিলার উপায় নিয়ে সেখানে আলোচনা হয়। বৈঠকে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্বশীল আচরণ, এক দলের সঙ্গে অপর দলের আলোচনা, বিভিন্ন বিষয় পরস্পরের আলোচনা এবং দেখা–সাক্ষাতের মধ্য দিয়ে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে এগিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয় বলে সংশ্লিষ্ট নেতারা জানিয়েছেন।