প্রবাসীর স্ত্রীকে গাছে বেঁধে নির্যাতন, ২ ভাশুর গ্রেপ্তার
Published: 22nd, April 2025 GMT
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পারিবারিক বিরােধের জেরে সৌদি আরব প্রবাসীর স্ত্রী শারমিন আক্তারকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করার অভিযাগ উঠছে। এ ঘটনায় পুলিশ ভুক্তভোগীর দুই ভাশুর মঙ্গল মিয়া (৪৫) ও জয়নাল আবদীনকে (৪২) গ্রেপ্তার করেছে।
সােমবার (২১ এপ্রিল) বিকেলে সদর উপজলার সুলতানপুর ইউনিয়নের মধ্যপাড়ায় নির্যাতনের ঘটনাটি ঘটে। ভুক্তভোগী গৃহবধূ ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডল থানায় মামলা করেছেন।
নির্যাতনর শিকার গৃহবধূ শারমিন আক্তার সুলতানপুর ইউনিয়নের মধ্যপাড়ার মন্তাজ মিয়ার ছেলে হায়দার আলীর স্ত্রী।
আরো পড়ুন:
সাবেক আইজিপি বেনজীরের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের ‘রেড নোটিশ’ জারি
নড়াইলে প্রতিপক্ষের হামলায় বিএনপি নেতার হাত বিচ্ছিন্ন
ভুক্তভাগীর মা নূরজাহান বেগম জানান, প্রায় ১৭ বছর আগে হায়দার আলীর সঙ্গে শারমিনের বিয়ে হয়। হায়দার ১০ বছর ধরে সৌদি আরবে আছেন। ৯ মাস আগে তিনি ছুটিতে দেশে আসেন। পরে তিনি সৌদি আরব চলে যান।
তিনি আরো জানান, পারিবারিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রায় শারমিনের সঙ্গে তার শ্বশুর বাড়ির লােকজনদের ঝগড়া হত। পারিবারিক এই বিরােধের কারণে সােমবার বিকেলে তার মেয়ে শারমিনকে দুই ভাশুরসহ শ্বশুর বাড়ির লােকজন মারধর করে। তারা বাড়ির একটি নারকেল গাছের সঙ্গে শারমিনকে বেঁধে নির্যাতন করে। এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছেন নূরজাহান বেগম।
ভুক্তভাগী শারমিন আক্তার বলেন, “শ্বশুর বাড়ির লাকজন আমার স্বামীর কাছ থেকে দুই লাখ টাকা ধার নিয়েছিল। সেই টাকা তারা ফেরত দেয়নি। আমার স্বামী বারণ করায় আমি তাদর কাছে টাকা চাই না। শ্বশুর বাড়ির লােকজন প্রতিনিয়ত আমার সঙ্গে ঝগড়া করে। আমি সােমবার বিকেলে অন্যত্র বাসা নিয়ে চলে যাওয়ার বিষয়ে স্বামীর সঙ্গে কথা বলেছিলাম। এ সময় দুই ভাশুর, জা ও ভাতিজারা এসে আমাকে ঘর থেক ধরে এনে মারধর করে। পরে গাছের সাথে বেঁধে মারধর করা হয় আমাকে। পরে স্থানীয় মেম্বার এসে আমাকে উদ্ধার করেন।”
তিনি আরো বলেন, “আমি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছি। ওই ঘটনায় আমি দুই ভাশুর, তাদের স্ত্রীসহ অন্যদের আসামি করে সােমবার রাতে সদর মডেল থানায় অভিযাগ দিয়েছি। মঙ্গলবার সকালে আমার অভিযোগ মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়। আমি এই ঘটনার বিচার চাই।”
সুলতানপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডর ইউপি সদস্য মাে.
শারমিনের শ্বশুর মন্তাজ মিয়া বলেন, “শারমিন বেপরােয়াভাবে চলাফেরা করত। বিভিন্ন সময় ঘরে তালা দিয় বাড়ির বাইরে চলে যেত। তার বেপরােয়া চলাচলে বাঁধা দেওয়ায় শারমিন আমাকে মারধর করে। এরই জেরে ঘটনার সূত্রপাত হয়।”
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ওসি মো. মাজাফ্ফর হােসেন বলেন, “পারিবারিক বিরােধকে কেন্দ্র করে ঘটনাটি ঘটে। বিষয়টি জানতে পেরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সহায়তায় ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় থানায় একটি মামলা হয়েছে। আমরা নির্যাতনের শিকার গৃহবধূর ভাসুর মঙ্গল মিয়া ও জয়নাল আবদীনক গ্রেপ্তার করেছি। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।”
ঢাকা/মাইনুদ্দীন/মাসুদ
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
শতবর্ষী রাস্তার ওপর সবজি চাষ আওয়ামী লীগ নেতার
চারঘাটের সরদহ ইউনিয়নের খোর্দগোবিন্দপুর মাঠপাড়ার গ্রামীণ রাস্তা দিয়ে শত বছর ধরে গ্রামের মানুষ চলাচল করছেন। রাস্তাটি পাকা করতে দরপত্রও করা হয়েছে। সেই রাস্তার জমি নিজের দাবি করে পটোল রোপণ করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা সমজান আলী। এতে মানুষের চলাচল ও মাঠের ফসল পরিবহনে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। স্থানীয়রা প্রশাসনের কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
এক যুগে কয়েক দফা কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) কর্মসূচির আওতায় শতবর্ষী মাটির রাস্তাটির সংস্কার করা হয়। উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ থেকে রাস্তাটি পাকাকরণের জন্য দরপত্র হয়েছে। এর মধ্যে পাশের জমির মালিক সমজান আলী শ্রমিক দিয়ে রাস্তা কেটে ফসলি জমি বানিয়েছেন। তিনি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হলেও গত পাঁচ আগস্টের পর থেকে বিএনপি-জামায়াতের লোকজনের সঙ্গে চলাফেরা করছেন।
সোমবার সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, দৈর্ঘ্যে ১২০ ফুট ও প্রস্থে ৪ ফুট অংশ কেটে নিজের জমির সঙ্গে মিলিয়ে দিয়েছেন সমজান আলী। সেখানে পটোল রোপণ করা হয়েছে। ১৩ ফুট প্রস্থের সড়ক থেকে আরও ৪ ফুট কেটে নেওয়া হবে বলে স্থানীয়দের জানিয়েছেন তিনি। এ অবস্থায় প্রকৌশল বিভাগের রাস্তা পাকাকরণ কাজ অনিশ্চয়তায় পড়েছে। স্থানীয়রা বাধা দিলেও রাস্তা কাটা বন্ধ না করে উল্টো হুমকি দেন সমজান আলী।
স্থানীয় ষাটোর্ধ্ব রেজাউল করিম বলেন, রাস্তাটি পাকাকরণের দরপত্র হয়েছে। এখন সেই রাস্তার বেশির ভাগ অংশ নিজের দাবি করে কেটে ফেলেছেন আওয়ামী লীগ নেতা সমজান আলী।
নাইমুর রহমান বলেন, বাবা-দাদা সবাই এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করেছেন। এখন শত শত মানুষের চলাচল। মাঠপাড়ার ফসল ভ্যান, ট্রলি ও মিনি ট্রাকে করে এই রাস্তা দিয়ে বাজারে নেওয়া হয়। কাউকে কিছু না জানিয়ে রাস্তাটি কেটে ফেলা হলো। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছি।
সমজান আলী বলেন, রাস্তার বেশির ভাগ অংশই আমার জমিতে। এ জন্য কিছু অংশ কেটে নিয়েছি। শুধু আমি রাস্তায় জমি দেব– তা হবে না। অন্যদেরও দিতে হবে। জমির কাগজপত্র দেখতে চাইলে তিনি বলেন, কাগজপত্র এখন কাছে নেই। তবে স্থানীয় আমিন সুবল চন্দ্র ছয় মাসে দুই দফা জমি পরিমাপ করেছে। মাপ অনুযায়ী রাস্তার বেশির ভাগ অংশ আমার জমিতে পড়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
স্থানীয় আমিন বীর মুক্তিযোদ্ধা সুবল চন্দ্র বলেন, জমিটি দেড় থেকে দুই বছর আগে পরিমাপ করেছি। কিছু অংশ রাস্তার ভেতরে ছিল। রাস্তাটি এখন সরকারি সম্পদ। তাই সমজান আলী জমি নিতে পারবে না– এ তথ্য তাঁকে জানানো হয়েছিল।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ হোসেন বলেন, কাগজপত্র যাচাই-বাছাইয়ের জন্য শুনানির নোটিশ করা হয়েছে। কাগজপত্র নিয়ে সমজান আলীকে আসতে বলা হয়েছে। তবে কোনো জমি ব্যক্তির সম্পত্তি হলেও ২০ বছর সেখানে মানুষজন হাঁটলেই তা সরকারি হয়ে যাবে।