সমকালের দেওয়া উপহার পেয়ে আনন্দে আত্মহারা মুশফিকের পরিবার
Published: 22nd, April 2025 GMT
পহেলা বৈশাখে দিনাজপুরের দারাইলদিঘি এলাকায় জন্ম নেয়া নবজাতক মুশফিক ইসলামকে কেন্দ্র করে ছড়িয়ে পড়েছে আনন্দের ছোঁয়া। সমকাল নববর্ষের দিনে জেলার প্রথম জন্ম নেয়া শিশুকে শুভেচ্ছা স্বরূপ উপহার পাঠালে খুশিতে আত্মহারা হয়ে পড়ে তার পরিবার।
টিন দিয়ে ঘেরা ছোট একটি বাড়িতে থাকে রাজমিস্ত্রি ফরিদুল ইসলাম ও মুর্শিদা বেগম দম্পতি। নবজাতক মুশফিক তাদের তৃতীয় সন্তান। বাড়ির সামনের ছোট্ট বারান্দায় দোলনায় ঘুমিয়ে থাকা শিশুটির জন্য উপহার পৌঁছে দিলে পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি ফুটে ওঠে।
শিশুটির বড় বোন ফারিয়া আক্তার ইভা, দারাইলদিঘি মাদ্রাসার ৭ম শ্রেণির ছাত্রী, জানায়—"ভাইকে ডাক্তার বানাবো, পড়াশোনা করাবো ভালো করে। গিফট পেয়ে খুবই ভালো লাগছে। ভাইয়ের জন্য এমন আয়োজন অনেক আনন্দের।"
মুশফিকের জন্মের পরদিনই ইনফেকশনে আক্রান্ত হওয়ায় তাকে দিনাজপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করতে হয়। পরে বাড়িতে ফিরলেও আবারও ইনফেকশনের কারণে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হয় পরিবারকে, যা তাদের জন্য বাড়তি আর্থিক চাপ সৃষ্টি করে। তবুও সন্তানের সুস্থতায় স্বস্তি ফিরেছে পরিবারে।
মুশফিকের মা বলেন, “আমরা গরিব মানুষ। ওর বাবার রাজমিস্ত্রির কাজ নিয়মিত হয় না। ধার-কর্জ করে বাচ্চার চিকিৎসা করিয়েছি। এখন চেষ্টা করবো পড়ালেখা শেখাইয়া মানুষ করতে। ডাক্তার বানানোর স্বপ্ন দেখি।”
শিশুটির নানি জাহানারা বেগম বলেন, “ছাওয়ালটাক বড় করিবা লাগিবে। গিফট পেয়ে খুব ভালো লাগিছে। তোমরা আসিছো, তাই খুশি লাগিছে।”
১৪ এপ্রিল সকাল ১০টায় মুশফিকের জন্ম হয় দিনাজপুর মা ও শিশু পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে। এটি ফরিদুল-মুর্শিদা দম্পতির তৃতীয় সন্তান। নববর্ষের এই শিশুর হাসিতে যেন পুরো পরিবারে ছড়িয়ে পড়েছে নতুন দিনের আশার আলো।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
হিজরতের ৫টি শিক্ষা
সাহাবিদের হিজরতের ঘটনাবলি কেবল ইতিহাসের অংশ নয়, বরং তা মুমিন জীবনের জন্য পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। তাদের হিজরতের ঘটনা ও ত্যাগের আদর্শ থেকে কয়েকটি মৌলিক শিক্ষা উঠে আসে:
১. হিজরত প্রথমত আল্লাহর আদেশ পালনহিজরত কেবল কৌশলগত পরিকল্পনা ছিল না, বরং ছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা এক ইবাদতমূলক নির্দেশ। এই কারণে সাহাবিরা সবচেয়ে প্রিয় বস্তু—ঘরবাড়ি, সম্পদ, আত্মীয়স্বজন—সহজে ত্যাগ করতে পেরেছিলেন। (মুহাম্মদ সাইদ রমাদান আল-বুতি, ফিকহুস সিরাহ, পৃষ্ঠা: ১৫৬, দারুল ফিকর, দামেস্ক, ২০০৪)
২. ইমানের জন্য সর্বোচ্চ আত্মত্যাগহিজরত শেখায় যে একটি জাতির ভিত্তি স্থাপন এবং সত্য প্রতিষ্ঠা করার জন্য চরম মূল্য দিতে হয়। সুহাইব তাঁর সব সম্পদ, আবু সালামা তাঁর পরিবার এবং বনু জাহশ (রা.) জন্মভূমি ত্যাগ করে এই মূল্য পরিশোধ করেছিলেন। এই ত্যাগ বিনা মূল্যে অর্জিত হয়নি।
আরও পড়ুনমদিনায় হিজরত: ইসলামের ৬টি মাইলফলক০২ জুলাই ২০২৫৩. ইমানের সম্পর্ক অন্য সব সম্পর্ক থেকে ঊর্ধ্বেওমর (রা.) আইয়াশকে যখন তার মায়ের দোহাইয়ের ফিতনা থেকে সতর্ক করেছিলেন, তা প্রমাণ করে যে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি আনুগত্যের বন্ধন অন্য সব জাগতিক সম্পর্ক (গোত্র, পরিবার, রক্ত) থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী।
৪. ঐকান্তিক প্রচেষ্টার সঙ্গে আল্লাহর ওপর ভরসাহিজরত মোটেই বিশৃঙ্খল ছিল না। ওমর (রা.)-এর পরিকল্পনা, কাফেলাবদ্ধ হয়ে যাত্রা এবং কৌশল অবলম্বন—সবই প্রমাণ করে যে আল্লাহর ওপর নির্ভরতার পাশাপাশি মানবীয় প্রচেষ্টা ও সুচিন্তিত পরিকল্পনা গ্রহণ করাও আবশ্যক।
আরও পড়ুনমহানবী (সা.)–র হিজরত মদিনায় হলো যে কারণে২৯ জুন ২০২৫৫. আল্লাহর দয়ার বিশালতাএই ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে ফিতনা ও দুর্বলতা মানুষের জীবনে আসতে পারে। কিন্তু যখন তারা মক্কায় বন্দী হয়ে নিজেদের পাপী মনে করছিলেন, তখন আল্লাহ তাআলা এই আয়াতটি নাজিল করে আশার দরজা খুলে দেন, ‘বলো, “হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজেদের ওপর বাড়াবাড়ি করেছ (পাপ করেছ), তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব গুনাহ মাফ করে দেন।”’ (সুরা জুমার, আয়াত: ৫৩)
এই আয়াতটি ছিল তাঁদের জন্য এক ঐশী ক্ষমা ও নতুন সুযোগের বার্তা।
হিজরত কেবল একটি ঐতিহাসিক ঘটনা নয়; এটি একটি অক্ষয়–দর্শন—যেখানে ইমান, ধৈর্য এবং আত্মত্যাগের সমন্বয়ে একটি আদর্শ সমাজ গঠনের বীজ নিহিত ছিল। এই দর্শনই মুসলমানদের নতুন এক দিগন্তে পৌঁছে দেয়।
আরও পড়ুনআবিসিনিয়ায় নারী সাহাবিদের দ্বিতীয় হিজরত১৪ নভেম্বর ২০২৫