যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসির একটি রেস্তোরাঁয় গত রোববার নৈশভোজে গিয়েছিলেন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের মন্ত্রী ক্রিস্টি নোয়েম। সেখানে খাওয়াদাওয়া করার সময় তাঁর ব্যাগটি চুরি হয়ে যায়। গতকাল সোমবার ক্রিস্টি নোয়েম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ব্যাগে তিন হাজার ডলার ও কিছু জিনিসপত্র ছিল।

গতকাল হোয়াইট হাউসে ইস্টার এগ রোল অনুষ্ঠানে নোয়েমের কাছে ওই চুরির ঘটনা নিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল। এ সময় তিনি চুরির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বলেছেন, বিষয়টির এখনো সুরাহা হয়নি।

নোয়েমের নিরাপত্তার দায়িত্বে আছে সিকিউরিটি সার্ভিস। তারা ক্যাপিটাল বার্গার নামের ওই রেস্তোরাঁর নজরদারি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখেছে। এতে দেখা গেছে, মুখে মাস্ক পরা অজ্ঞাত এক শ্বেতাঙ্গ ব্যক্তি তাঁর ব্যাগ চুরি করছেন এবং রেস্তোরাঁ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার এক সূত্রের কাছ থেকে এমন তথ্য জানতে পেরেছে সিএনএন।

ওই চুরির ঘটনায় নোয়েমের ওষুধপথ্য, বাসার চাবি, পাসপোর্ট, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের বিশেষ ব্যাজ, মেকআপ ব্যাগ, ব্ল্যাংক চেক, প্রায় তিন হাজার ডলার এবং তাঁর গাড়িচালকের লাইসেন্স খোয়া গেছে।

ওই সূত্র আরও বলেছে, নোয়েমের আর্থিক হিসাবগুলো থেকে কোনো ধরনের লেনদেনের চেষ্টা হচ্ছে কি না, তা শনাক্ত করতে তদন্ত শুরু করেছে সিক্রেট সার্ভিস।

হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের এক মুখপাত্র বলেন, নোয়েমের সন্তান, নাতি–নাতনিরাসহ পুরো পরিবারই শহরটিতে অবস্থান করছিল। পরিবারের সদস্যদের খাওয়ানো, ইস্টার সানডে উপলক্ষে তাঁদের উপহার দেওয়াসহ বিভিন্ন কাজে খরচ করার জন্য তিনি নগদ অর্থ সঙ্গে রেখেছিলেন।

মন্ত্রিপরিষদের এক কর্মকর্তার এত কাছাকাছি পৌঁছানো এবং তাঁর জিনিসপত্র চুরি করার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের ধারণা, এ ক্ষেত্রে নিরাপত্তাব্যবস্থায় কোনো ঘাটতি ছিল।

সিএনএনের আইনপ্রয়োগ–বিষয়ক বিশ্লেষক ও সিক্রেট সার্ভিসের সাবেক কর্মকর্তা জোনাথন ওয়াকরো মনে করেন, সিক্রেট সার্ভিস, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ এবং সহযোগী আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর উচিত এ নিরাপত্তা লঙ্ঘনের ঘটনাটি নিয়ে অবিলম্বে এবং আরও বেশি করে পর্যালোচনা করা। এ ধরনের ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে নিরাপত্তাব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা প্রয়োজন কি না, তা সিক্রেট সার্ভিসের খতিয়ে দেখা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে যুক্তরাষ্ট্রে

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের এক গোপন গ্রুপ চ্যাটকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি বড় ধরনের বিতর্কের জন্ম হয়েছে। একটি সিগন্যাল চ্যাটে যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন ও যুদ্ধবিমান হামলার সময় ও লক্ষ্যবস্তুর বিস্তারিত তথ্য শেয়ার করা হয়, যা নিয়ে হোয়াইট হাউস শুরুতে দাবি করেছিল, এতে কোনো শ্রেণিবদ্ধ (ক্লাসিফায়েড) তথ্য ছিল না। তবে সংবাদমাধ্যম দ্য অ্যাটলান্টিক যখন পুরো চ্যাট প্রকাশ করে, তখন নতুন করে আলোচনা শুরু হয়।

সিএনএনের বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ চ্যাটে যে হামলার পরিকল্পনার কথা বলেছিলেন, তা পরিষ্কারভাবে হুতি বিদ্রোহীদের লক্ষ্য করে ইয়েমেনে পরিচালিত অভিযানের ইঙ্গিত দেয়। এমনকি চ্যাটের নামেও ‘হুতি’ শব্দটি ছিল।

অবশ্য হোয়াইট হাউস এবং হেগসেথ বারবার বলে আসছেন এই বার্তাগুলো শ্রেণিবদ্ধ নয়, শুধু ‘সংবেদনশীল’। কিন্তু বিষয়টি এখানেই সীমাবদ্ধ নয়। সিএনএনের একাধিক বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, তথ্যপ্রযুক্তিগতভাবে শ্রেণিবদ্ধ ছিল কি না, সে বিতর্কে না গিয়ে আমাদের মনোযোগ দেওয়া উচিত এ ধরনের তথ্য আদৌ ওপেন চ্যাটে শেয়ার করা উচিত ছিল কি না।

এ নিয়ে সিএনএনে কথা বলেন অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ও যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ডের সাবেক উপপরিচালক (কৌশল ও পরিকল্পনা) মার্ক কিমিট এবং সিএনএনের জাতীয় নিরাপত্তা বিশ্লেষক বেত স্যানার। স্যানার গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণে বাইডেন ও ট্রাম্প উভয় প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন। এই দুই বিশেষজ্ঞ বুধবার সিএনএনে উপস্থিত ছিলেন। পরে স্যানারের সঙ্গে ফোনেও কথা হয় প্রতিবেদকের।

পেন্টাগনের একাধিক সূত্র সিএনএনকে জানিয়েছে, হেগসেথ যে সময়, লক্ষ্যবস্তু ও হামলার পদ্ধতি উল্লেখ করেছিলেন, তা নিঃসন্দেহে শ্রেণিবদ্ধ তথ্য। মার্ক কিমিট অবশ্য বলেন, ‘সবাই মূল প্রশ্নটা এড়িয়ে যাচ্ছেন। হেগসেথ যদি বলেন এটি শ্রেণিবদ্ধ নয়, তাহলে তার আইনি ভিত্তি থাকতে পারে। কিন্তু প্রশ্ন হওয়া উচিত এমন তথ্য কি শ্রেণিবদ্ধ হওয়া উচিত ছিল?’ তাঁর মতে, ‘উত্তর খুব সহজ—হ্যাঁ, অবশ্যই হওয়া উচিত ছিল।’

স্যানার বলেন, বিষয়টি জটিল করার কিছু নেই। কোনো তথ্য যদি সরকারি কর্মকর্তারা খোলা ই–মেইলে পাঠাতে না চান, তাহলে সেটি শ্রেণিবদ্ধ হিসেবেই বিবেচিত হবে। তিনি বলেন, ‘আপনি যদি মস্কো বা বেইজিংয়ের গোয়েন্দা হিসেবে এমন তথ্য হাতে পান এবং তাতে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশল স্পষ্ট হয়ে যায়, তবে সে তথ্য স্পষ্টতই শ্রেণিবদ্ধ।’

স্যানার স্পষ্ট করে বলেন, যুদ্ধবিমান বা ড্রোন হামলার প্রস্তুতির মতো সামরিক তথ্য কখনোই উন্মুক্তভাবে জানানো উচিত নয়। এমন তথ্য স্পষ্টতই শ্রেণিবদ্ধ। তিনি আরও যোগ করেন, হেগসেথ চাইলে যদি কোনো তথ্য জনসমক্ষে আনতে চান, তাহলে তার জন্য সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া ও ডকুমেন্টেশনের প্রয়োজন হয়।

স্যানারের মতে, সিগন্যাল অ্যাপে গ্রুপ চ্যাট হওয়াটা কোনো সমস্যা নয়। কিন্তু চ্যাটের ভেতরে যখন হেগসেথ ও সিনেটর ভ্যান্সের মধ্যে নীতিগত মতপার্থক্য প্রকাশ পায়, তখন সেই তথ্য শত্রুদের কাছে অত্যন্ত মূল্যবান হয়ে ওঠে। তিনি বলেন, ‘তারা (যুক্তরাষ্ট্রের শত্রুপক্ষ) বুঝে ফেলেছে, কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণ হয় বা আদৌ হয় কি না। প্রেসিডেন্ট যুদ্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত যে পূর্ণাঙ্গ আলোচনা ছাড়াই হয়েছে, তা স্পষ্ট হয়ে গেছে।’ ভ্যান্স চ্যাটে হামলার যৌক্তিকতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন, কিন্তু সেই মতামত প্রেসিডেন্টের কাছে পৌঁছানোর প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

হোয়াইট হাউস দাবি করছে, হেগসেথ যে তথ্য দিয়েছেন, তা ‘যুদ্ধ পরিকল্পনা’ নয়। তাৎক্ষণিক আক্রমণের পরিকল্পনা। কিমিট বলেন, ‘এটা কেবল শব্দের খেলা নয়। যুদ্ধ পরিকল্পনা অনেকটাই ভবিষ্যতের জন্য তৈরি খসড়া। আর আক্রমণের পরিকল্পনা মানে বাস্তব অভিযান, যা আরও সংবেদনশীল।’ তার ব্যাখ্যায়, ‘যুদ্ধ পরিকল্পনা অনেক সময় কম স্পর্শকাতর, কারণ সেগুলো সম্ভাব্যতা–নির্ভর। কিন্তু কোনো সামরিক অভিযান যখন বাস্তবে রূপ নিতে যাচ্ছে, তখন তা আরও ঝুঁকিপূর্ণ এবং স্পর্শকাতর হয়ে ওঠে।’

ডেমোক্র্যাট সদস্যরা বলছেন, এই চ্যাট মার্কিন সেনাদের জীবনের ঝুঁকি বাড়িয়েছে। তবে কিমিট বলেন, এই দাবি কিছুটা অতিরঞ্জিত। কারণ, সিগন্যাল একটি তুলনামূলক নিরাপদ অ্যাপ এবং সংশ্লিষ্ট সামরিক অভিযান সফলভাবেই শেষ হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের সেনাবাহিনী এমন অনেক ভুল ক্ষমাসুন্দরভাবে দেখেছে, যেগুলো অনিচ্ছাকৃত ছিল এবং যার কারণে বাস্তব ক্ষতি হয়নি।’

হোয়াইট হাউস ও হেগসেথ ক্রমাগত এ বিষয়ে আত্মপক্ষ সমর্থন করে যাচ্ছেন। কিন্তু কিমিটের মতে, এই অস্বীকারমূলক আচরণ পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলছে। তিনি বলেন, ‘ভুল স্বীকার করুন, সংশোধন করুন এবং আবার যেন এমন না হয়, সেটা নিশ্চিত করুন। অস্বীকার করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার কোনো মানে নেই।’ স্যানার বলেন, জাতীয় নিরাপত্তার মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে এমন অ্যাপ ব্যবহার করে যোগাযোগ চালানো বন্ধ করা উচিত।

মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান তুলসী গ্যাবার্ড তখন বিদেশে অবস্থান করছিলেন, তাঁদের ব্যবহৃত ফোন সরকারি ছিল কি না, তা–ও জানা যায়নি। স্যানার বলেন, ‘এই বিষয়টি রাজনৈতিক তর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে না এনে, একটি শেখার সুযোগ হিসেবে দেখা উচিত। আমাদের (যুক্তরাষ্ট্রের) যোগাযোগব্যবস্থাকে আরও সুরক্ষিত করা এখন সময়ের দাবি। যাতে আমাদের প্রতিপক্ষরা জানতে না পারে আমরা (যুক্তরাষ্ট্র) কী করছি, কীভাবে করছি।’

সূত্র: সিএনএন

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে যুক্তরাষ্ট্রে