চীনের সঙ্গে ভারতের সিনেমার তুলনা করে যা বললেন আমির খান
Published: 22nd, April 2025 GMT
আমির খান কেবল অসাধারণ অভিনয়ের জন্যই নয় বরং সিনেমা এবং এর ব্যবসায়িক দিক সম্পর্কেও বোঝাপড়ার জন্যও বিশেষভাবে জনপ্রিয়। সম্প্রতি ভারতের চলচ্চিত্র শিল্পের বিকাশে বড় বাধার কথা জানালেন বলিউডের ‘মিস্টার পারফেকশনিস্ট’। সেই সঙ্গে জানালেন সম্ভাবনার কথাও।
দ্যা হলিউড রিপোর্ট ইডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আমির খান জানান, ভারতে সিনেমা হলের স্বল্পতা দেশীয় চলচ্চিত্র শিল্পের বিকাশে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক্ষেত্রে চীনের উদাহরণ টানেন তিনি।
আমির খান বলেন, ‘চীনের জনসংখ্যা আমাদের সমান হলেও তাদের সিনেমা হল আমাদের চেয়ে দশ গুণ বেশি। সেখানকার সিনেমা যে বিশাল অঙ্কের ব্যবসা করে তার প্রধান কারণই এই ব্যাপক স্ক্রিন সংখ্যা।’
আমির খান বলেন, ‘ভারতে বর্তমানে প্রায় ১০ হাজার সিনেমা হল রয়েছে, যার অর্ধেকই দক্ষিণ ভারতে। ফলে একটি হিন্দি সিনেমা মুক্তি পেলে গড়ে ৫ হাজার স্ক্রিনেই সীমাবদ্ধ থাকে। অথচ চীনে স্ক্রিনের সংখ্যা ১ লাখ ৫ হাজার। এর সঙ্গে তুলনা চলে না। ‘দঙ্গল’ সিনেমা চীনে প্রায় ১৩০০ কোটি টাকা আয় করেছিল, তবুও সেটা চীনের সবচেয়ে বড় হিট নয়। সেখানে সিনেমা ৪ থেকে ৫ হাজার কোটি পর্যন্ত ব্যবসা করে। এটাও সম্ভব। কারণ সেখানে স্ক্রিন বেশি এবং দর্শক আরও বেশি পৌঁছাতে পারে।
আমিরের ভাষ্য, একজন চলচ্চিত্রকর্মী হিসেবে আমার ইচ্ছা, ভারতে আরও থিয়েটার গড়ে উঠুক, যেখানে সাধারণ মানুষ সহজে পৌঁছাতে পারে। আমাদের দেশে অনেক এলাকা ও জেলাতে একটি হলও নেই। তাই আমি মনে করি, কম খরচে, সহজলভ্য থিয়েটার গড়ে তোলার দিকেই আমাদের বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিত।
তবে সব কিছুর মাঝেও আশাবাদী আমির খান। সরকারের উদ্যোগ, যেমন ‘ওয়াল্ড অডিও ভিজুয়্যাল আ্যান্ড এন্টারটেইনমেন্ট সামিট’ সম্মেলন ভবিষ্যতে দেশের সিনেমা শিল্পকে এগিয়ে নিতে বড় ভূমিকা রাখবে বলে আশা করেন দঙ্গল অভিনেতা। সূত্র: দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আম র খ ন আম র খ ন আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকাবাসী ৯ বছরে মাত্র ৩১ দিন নির্মল বাতাসে নিশ্বাস নিয়েছে
বায়ুদূষণে রাজধানী ঢাকা প্রায়ই বিশ্বের শীর্ষে থাকছে। বাতাসে বুকভরে শ্বাস নেওয়াই এখন কঠিন। রাজধানীতে বসবাসকারী মানুষ গত ৯ বছরে (৩ হাজার ১১৪ দিনের হিসাব) মাত্র ৩১ দিন নির্মল বাতাসে নিশ্বাস নিতে পেরেছেন। যা গত ছয় বছরের মধ্যে মাত্র ১ শতাংশ সময়।
ঢাকার মার্কিন দূতাবাস থেকে পাওয়া ২০১৬ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ঢাকার বায়ুমানের সূচক বা একিউআইয়ের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এসব তথ্য জানিয়েছে। ক্যাপস বলছে, দেশে প্রতি বছরই বায়ুদূষণ আগের চেয়ে বেড়েছে।
মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) ‘বিশ্ব ধরিত্রী দিবস ২০২৫: বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও ক্যাপসের উদ্যোগে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।
গবেষণার তথ্য তুলে ধরে ক্যাপসের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার জানান, ঢাকায় গত ৯ বছরে মানুষ মাত্র ৩১ দিন (১%) নির্মল বা ভালো বায়ুতে নিঃশ্বাস নিতে পেরেছে। তবে এক্ষেত্রে ৬২৪ দিন (২০%) মাঝারি বায়ু, ৮৭৮ দিন (২৮%) সংবেদনশীল বায়ু, ৮৫৩ দিন (২৭%) অস্বাস্থ্যকর, ৬৩৫ দিন (২১%) খুব অস্বাস্থ্যকর এবং ৯৩ দিন (৩%) দুর্যোগপূর্ণ বায়ু গ্রহণ করেন। ২০২৪ সালের সবচেয়ে ভাল ও সবচেয়ে খারাপ বায়ুমানের দিনসংখ্যা হলো যথাক্রমে ২ ও ৩৫ দিন।
বিশ্ব ব্যাংকের ২০২২ সালের এক প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ২০২১ সালে বাংলাদেশে বায়ু দূষণের কারণে অন্তত ২ লাখ ৩৬ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ারের (সিআরইএ) গবেষণায় বলা হয়েছে, বায়ু দূষণের কারণে প্রতিবছর ৫ হাজার ২৫৮ শিশুসহ ১ লাখ ২ হাজার ৪৫৬ জন মানুষের অকালমৃত্যু হয়।
গবেষণায় বলা হয়, গত ৯ বছরের মধ্যে ঢাকায় ২০২৩ এবং ২০২১ সালে খুব অস্বাস্থ্যকর বায়ুমানের দিনের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ছিল। ২০২১ সালে খুব অস্বাস্থ্যকর দিন ছিল ৮৬ এবং ২০২৩ সালে অস্বাস্থ্যকর দিন ছিল ১৩৩। কিন্তু ২০২৩ সালে ৩৬৫ দিনের মধ্যে ১৪ দিন ছিল অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর বা দুর্যোগপূর্ণ যা অন্য বছরগুলোর তুলনায় বেশি ছিল।
আহমেদ কামরুজ্জামান বলেন, ঢাকায় ৯ বছরে সবচেয়ে বেশি দূষিত বাতাস ছিল ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে। ওই মাসে সূচকে গড় বায়ুমান ছিল ৩০০। আর সবচেয়ে ভালো অবস্থান ছিল ২০২১ সালের জুলাইয়ে। ওই মাসে গড় বায়ুমান ছিল ৯৭। ২০২৪ সালের ৩৬৬ দিনের মধ্যে অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর বা দুর্যোগপূর্ণ দিনের সংখ্যা বেড়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছিল ৩৫ দিনে।
সম্প্রতি প্রকাশিত আইকিউএয়ারের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ একাধিক বছর বিশ্বের শীর্ষ দূষিত বাতাসের দেশের তালিকায় রয়েছে। ২০২১ ও ২০২৩ সালে বাংলাদেশ শীর্ষে ছিল। ২০২৪ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল দ্বিতীয়। সেই সঙ্গে গত বছর দূষিত বাতাসের শহরগুলোর বৈশ্বিক তালিকায় রাজধানী ঢাকা ছিল তিন নম্বরে।
জেলাভিত্তিতে বাংলাদেশের সবচেয়ে দূষিত বাতাসের জেলা গাজীপুর। এ জেলার বাতাসে অতি সূক্ষ্ম বস্তুকণা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্ধারিত মানমাত্রার চেয়ে ১৮ গুণ বেশি। অন্যদিকে সবচেয়ে কম দূষিত বাতাসের জেলা সিলেট। যদিও সিলেট শহরের বাতাসে অতি সূক্ষ্ম বস্তুকণা ডব্লিউএইচওর মানমাত্রার চেয়ে ৯ দশমিক ৭ গুণ বেশি। এমনকি এটা বাংলাদেশের নির্ধারিত জাতীয় আদর্শ (বার্ষিক) মানের চেয়ে ৩ দশমিক ২৩ গুণ বেশি।
বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে বাপা ও ক্যাপসের বেশ কিছু সুপারিশ করেছে। এগুলো হলো—মেয়াদোত্তীর্ণ ও ফিটনেসবিহীন যানবাহন বন্ধ করে বৈদ্যুতিক ও হাইব্রিড যানবাহনের ব্যবহার বাড়ানো। ব্লক ইটের উৎপাদন ও ব্যবহার বৃদ্ধিতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ করে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা করা। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনা। বিদ্যমান জ্বালানি নীতিগুলোতে সংশোধন আনা। নির্মল বায়ু আইন প্রণয়ন করা। বিদ্যুৎ উৎপাদন ও শিল্প কারখানায় বিশ্বমানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নিঃসরণ মান নির্ধারণ এবং এর কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করা।