সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যা ও সাবেক মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে হত্যাচেষ্টা মামলায় সাক্ষীরা অনুপস্থিত থাকায় সাক্ষ্য গ্রহণ পেছাল। পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ৩০ এপ্রিল নির্ধারণ করেছেন আদালত।

আজ মঙ্গলবার সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে দুটি মামলার আসামিরা আদালতে হাজির হলেও সাক্ষীরা উপস্থিত ছিলেন না। এর আগে ৮ এপ্রিল আদালতে দুই মামলায় পাঁচজন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছিলেন।

আদালতের সরকারি কৌঁসুলি আবুল হোসেন বলেন, দুই মামলার সাক্ষীরা অনুপস্থিত ছিলেন। আজ দুই মামলার ১৪ জনের সাক্ষ্য দেওয়ার কথা ছিল। আসামিদের মধ্যে জামিনে থাকা সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর আদালতে উপস্থিত হননি। তিনি আদালতের কাছে সময় প্রার্থনা করেছেন। তবে কারাগারে থাকা আসামিরা এবং জামিনে থাকা সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও হবিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র জি কে গউছসহ ১২ জন আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বৈদ্যেরবাজারে জনসভা শেষে বের হওয়ার সময় গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত হন শাহ এ এম এস কিবরিয়া। ঢাকায় নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। ওই ঘটনায় তাঁর ভাতিজা শাহ মঞ্জুরুল হুদা, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আবদুর রহিম, আবুল হোসেন ও সিদ্দিক আলী নিহত হন। আহত হন অন্তত ৭০ জন।

ঘটনার পরদিন হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। পরে মামলা দুটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) হস্তান্তর করা হয়। তদন্ত শেষে ২০০৫ সালের ১৮ মার্চ শহীদ জিয়া স্মৃতি ও গবেষণা পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল কাইউমসহ ১০ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। ওই অভিযোগপত্রের বিষয়ে আদালতে নারাজি আবেদন করে বাদীপক্ষ। পরে মামলা পুনঃতদন্তের পর ২০১১ সালের ২০ জুন আসামির সংখ্যা বাড়িয়ে ২৬ জনের নামে দ্বিতীয় দফা অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। এটি নিয়েও আপত্তি জানায় নিহত কিবরিয়ার পরিবার।

সর্বশেষ ২০১৪ সালের ১৩ নভেম্বর হবিগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সম্পূরক অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। এতে নতুন করে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বিএনপির নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ ৩৫ জনকে আসামি করা হয়। পরে ২০১৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।

এ মামলায় সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক ও হবিগঞ্জের সাবেক মেয়র জি কে গউস, লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৩ জন জামিনে রয়েছেন। বাকি অভিযুক্তদের মধ্যে সাতজন পলাতক এবং মিজানুর রহমান, সৈয়দ নাঈম আহমদ, শেখ ফরিদ আহমদ, আবদুল মাজেদ, আবু জান্দালসহ অন্যরা কারাগারে রয়েছেন। আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, কিবরিয়া হত্যা মামলায় ১৭১ জন সাক্ষীর মধ্যে ৬৩ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।

অন্যদিকে, ২০০৪ সালের ২১ জুন সুনামগঞ্জের দিরাই বাজারে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এক নির্বাচনী সমাবেশে গ্রেনেড হামলা হয়। ঘটনাস্থলে যুবলীগের এক কর্মী নিহত ও ২৯ জন আহত হন। সেদিন অল্পের জন্য রক্ষা পান সুরঞ্জিত।

ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ২০২০ সালের ২২ অক্টোবর লুৎফুজ্জামান বাবর, আরিফুল হকসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। মামলায় ১২৩ জন সাক্ষীর মধ্যে এখন পর্যন্ত ৫২ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জন স ক ষ আর ফ ল ক বর য়

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাবিতে ১ বছরে চীনা শিক্ষার্থী বেড়ে দ্বিগুণ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) এক বছরে চীনা শিক্ষার্থী বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। এ শিক্ষার্থীরা আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের অধীনে বাংলা বিভাগে পড়াশোনা করছেন।

গত বছর চীন থেকে ঢাবিতে পড়তে এসেছিলেন নয়জন শিক্ষার্থী। এ বছর পড়তে এসেছেন ১৮ জন। ২০২৩ সালে এই সংখ্যা ছিল ছয়জন। 

মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

আরো পড়ুন:

ঢাবি উপাচার্যের সঙ্গে ইইউ রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ

জুলাই আন্দোলনকে ‘তথাকথিত’ বলে এবার দুঃখপ্রকাশ সাহসের

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শিক্ষা-গবেষণা ও শিক্ষক-শিক্ষার্থী বিনিময়ের ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার জন্য চীনের তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ঢাবির সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হচ্ছে- ইউনান বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনান মিনজু বিশ্ববিদ্যালয় ও বেইজিং ফরেন বিশ্ববিদ্যালয়।

এসব সমঝোতা স্মারকের আওতায় এবং চীন সরকারের বৃত্তি নিয়ে এ বছর চীনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গেছেন ঢাবির ১৮ জন শিক্ষার্থী। গত বছর এ সংখ্যা ছিল সাতজন। সম্প্রতি চিকিৎসা গবেষণা ও প্রশিক্ষণকে এগিয়ে নিতে ঢাবির প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের সঙ্গে চীনের ইউনান পিকিং ক্যান্সার হাসপাতাল এবং কুনমিং মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, ঢাবিতে চীনের শিক্ষার্থীদের আবাসিক সমস্যা দূর করার জন্য স্যার পিজে হার্টগ ইন্টারন্যাশনাল হলে ১০টি কক্ষের সমন্বয়ে একটি ব্লক তৈরি করা হয়েছে। চীন থেকে পড়তে আসা শিক্ষার্থীরা সেখানে অবস্থান করছেন। এদিকে ঢাবিতে ছাত্রীদের আবাসন সংকট নিরসনে চীন সরকারের অর্থায়নে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী নামে একটি আবাসিক হল নির্মাণের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।

আগামী আগস্টে চীনের শিক্ষার্থীরা দুই সেমিস্টারের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসার আগ্রহ দেখিয়েছেন। একইসঙ্গে প্রফেশনাল মাস্টার্স কোর্সে পড়ারও আগ্রহ দেখিয়েছেন তারা। এ লক্ষ্যে চীনের আরো কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ঢাবির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করতে চায়। সেজন্য উভয়পক্ষের মধ্যে আলোচনাও হয়েছে। খুব শিগগিরই বেশ কয়েকটি সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে বলে আশা করা যাচ্ছে। এর মাধ্যমে শিক্ষা-গবেষণা ও শিক্ষক-শিক্ষার্থী বিনিময়ের ক্ষেত্রটি আরও সম্প্রসারিত হবে।

এদিকে, সাংস্কৃতিক ও শিক্ষা বিনিময়ের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের একটি শক্তিশালী দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থী এ ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে শুধু ভাষাগত দক্ষতাই অর্জন করছে না, বরং চীনের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সঙ্গেও পরিচিত হচ্ছে।

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে চীনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যোগাযোগ বেড়েছে। গত নভেম্বরে ইউনান বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের আমন্ত্রণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান সাতদিনের সফরে চীনে যান। সফরকালে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান ইউনান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিভিন্ন উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠকে মিলিত হন এবং পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করেন। 

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ