পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ‍‍“গতবারের বর্ষার মতো এবার যাতে পানি না জমে, সেজন্য সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ভবদহ এলাকার নদী খনন কাজ শুরু হবে। জলাবদ্ধতা নিরসনে যেসব সেচপাম্প কাজ করছে, সেগুলোর বিদ্যুৎ বিল ইতোমধ্যে ৪৬ শতাংশ কমিয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ।” 

তিনি বলেন, “এ এলাকার জন্য কৃষি ব্যাংকের ঋণের সুদ মওকুফের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ভবদহ জলাবদ্ধতা সমস্যার চিরস্থায়ী সমাধান যাতে হয়, সে ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।”

মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) দুপুর ১২টায় যশোরের অভয়নগর উপজেলার ভবদহ ২১ ভেন্ট স্লুইস গেট পরিদর্শন শেষে ভবদহ মহাবিদ্যালয় মাঠে সাংবাদিকদের একথা বলেন তিনি। এসময় তার সঙ্গে স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো.

জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বীরপ্রতীক উপস্থিত ছিলেন। 

আরো পড়ুন:

আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবসে ‘নরসুন্দাকে বাঁচাতে প্রাণের আকুতি’

‘ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে ১৯ খাল সংস্কারে নেওয়া হ‌বে মহাপরিকল্পনা’

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, “কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ভবদহ জলাবদ্ধ এলাকায় এবার ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষ সম্ভব হয়েছে। চার হাজার হেক্টর জমিতে জলাবদ্ধতা থেকে গেছে।”

তিনি আরো বলেন, “২০০৫ সালে ভবদহ সমস্যার সমাধান করা সহজ ছিল। সেসময় সরকার সদিচ্ছা দেখায়নি। বর্তমান সরকার এ সমস্যার চিরস্থায়ী সমাধানের জন্য ইতোমধ্যেই ফিজিবিলিটি স্টাডি শুরু করেছে। পক্ষ-বিপক্ষ সবার কাছ থেকে এ ব্যাপারে মতামত নেওয়া হবে। এরপর বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”

উপদেষ্টা বলেন, “আমরা তিনজন উপদেষ্টা একসঙ্গে ভবদহ এলাকা পরিদর্শনে এসেছি, যাতে ভবদহ জলাবদ্ধতা সমস্যার চিরস্থায়ী সমাধানে জাতীয় নীতি নির্ধারণী মহলে ঐক্যমত্যে পৌঁছানো সহজ হয়। এই সমস্যার অন্তত চিরস্থায়ী সমাধানের কাজ আমরা যাতে শুরু করে যেতে পারি, সেই চেষ্টা আমাদের থাকবে।”

এর আগে, তিন উপদেষ্টা আজ সকাল ১০টায় ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে পৌঁছান। সেখান থেকে নওয়াপাড়া মাঠে ধান ক্ষেত পরিদর্শনে যান তারা। পরে তারা ভবদহ ২১ স্লুইস গেট পরিদর্শনে যান। 

ঢাকা/রিটন/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপদ ষ ট চ রস থ য় সমস য র উপদ ষ ট

এছাড়াও পড়ুন:

ভবদহ সমস্যার চিরস্থায়ী সমাধান নিয়ে আমরা চিন্তাভাবনা শুরু করেছি: উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান

যশোরের ভবদহ এলাকার জলাবদ্ধতার সমস্যার স্থায়ী সমাধানে সরকার চিন্তাভাবনা শুরু করেছে মন্তব্য করে পরিবেশ ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আমরা আমাদের যে ফিজিবিলিটি স্টাডি করতে হয়, ওই স্টাডি করার কাজ শুরু করে দিয়েছি।’

আজ মঙ্গলবার ভবদহ এলাকা পরিদর্শনে এসে ভবদহ মহাবিদ্যালয়ের মাঠে প্রেস বিফ্রিংয়ে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম উপস্থিত ছিলেন। তবে তাঁরা কোনো বক্তব্য দেননি।

আজ সকালে হেলিকপ্টারে করে অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়ায় আসেন তিন উপদেষ্টা। সকাল ১০টায় তাঁদের বহনকারী হেলিকপ্টারটি নওয়াপাড়া সরকারি মহাবিদ্যালয় মাঠের হেলিপ্যাডে অবতরণ করে। এরপর বেলা সাড়ে ১১টায় সড়কপথে তিন উপদেষ্টা অভয়নগরের ভবানীপুর এলাকায় শ্রী নদীর ওপর নির্মিত ভবদহ ২১-ভেন্ট স্লুইসগেট এলাকা পরিদর্শনের পর দুপুর ১২টার দিকে ভবদহ মহাবিদ্যালয়ের মাঠে ব্রিফিংয়ে বক্তব্য দেন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘ভবদহের কিছু এলাকায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো হয়। আমরা ১৭ হাজার হেক্টর জমি সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আবার ধান চাষের আওতায় আনতে পেরেছি। আমরা আজকে ধান চাষের আনন্দটুকু দেখতে এসেছি। একইভাবে ভবদহের সমস্যাটার চিরস্থায়ী কী সমাধান করা যায়, এটা নিয়ে আমরা চিন্তাভাবনা শুরু করেছি। আমরা আমাদের যে ফিজিবিলিটি স্টাডি করতে হয়, ওই স্টাডি করার কাজ শুরু করে দিয়েছি। আমাদের সরকারের কয়েকটা মন্ত্রণালয়ের সম্মিলিত প্রয়াসের কারণে আমরা এই ১৭ হাজার হেক্টর এলাকাকে আপাতত পানিমুক্ত করতে পেরেছি।’

ভবদহের জলাবদ্ধতা অনেক দিনের লম্বা সমস্যা উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘সমস্যাটা দিন দিন আরও জটিল হয়ে গেছে। আমরা যখন ২০০৫ সালে কাজ শুরু করেছিলাম, তখন যদি আমরা এটার সমাধান করতে পারতাম, সমাধান সবার জন্য সঠিক হতো, সহজ হতো। সেটা আমরা করিনি, করতে পারিনি, করার সদিচ্ছা দেখাইনি। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ভবদহ সমস্যার চিরস্থায়ী সমাধান কীভাবে করা যায়, সেটা নিয়ে সবার সঙ্গে কথা বলবে। পক্ষ-বিপক্ষ এসব কোনো কিছু দেখা হবে না। সবার সঙ্গে কথা বলা হবে। তারপর বিশেষজ্ঞেরা যে কথাগুলো বলবেন, জনগণের মতামত নিয়ে সেই বিশেষজ্ঞদের মতামতের আলোকে আমরা চেষ্টা করব চিরস্থায়ী সমাধানের পথে অন্তত কাজটা শুরু করে দিয়ে যেতে।’

রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘এ বছর বর্ষায় যেন গত বছরের বর্ষার মতো দুর্ভোগ না হয়, সে জন্য অন্তর্বর্তী কিছু কাজ আমরা হাতে নিয়েছি। যেমন আমডাঙ্গা খাল খনন। হরি, ভদ্রা ও আপার ভদ্রা—এই তিন নদীও খননের কাজ আমরা শুরু করে দেব। এটা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী করবে। আপাতত গত বর্ষার মতো যেন আর পানি না জমে, সেটার জন্য সেনাবাহিনী এই নদীগুলো খননের কাজ শুরু করে দেবে এবং আমরা আমডাঙ্গা খাল খননের কাজ শুরু করে দেব।’

পানিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, ‘খেতভরা ধান যেটা দেখতে পাচ্ছি। যে তিন হাজার হেক্টরে ধান হয়নি, সেই কৃষকদের তো নিশ্চয়ই কিছু দুঃখ রয়ে গেছে। কিন্তু ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে যে ধান হয়েছে, এটা আমাদের খাদ্যনিরাপত্তায় অনেক ভূমিকা রাখবে।’ তিনি বলেন, মনিরামপুরে একটি জায়গায় চিংড়িঘেরের বাঁধ ভেঙে ছয় শ র বেশি মানুষের জমি প্লাবিত হয়েছে। কিন্তু তাঁদের জন্য ওই শেষ মুহূর্তে কিছুই করার ছিল না। কিন্তু তাঁরা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়কে বলেছেন। সঙ্গে সঙ্গে তারা তিন মাসের জন্য খাদ্যসহায়তা দিয়েছে।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আরও বলেন, কৃষকদের যাতে বাণিজ্যিক হারে সেচের জন্য টাকা দিতে না হয়, বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় সেই ব্যবস্থা করে দিয়েছে। এর ফলে পাঁচ মাস পানির নিচে থাকা কৃষকদের অবশ্যই অনেক সুবিধা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আজকে আমরা সবাই একসঙ্গে আসার উদ্দেশ্য হচ্ছে, সবাই একসঙ্গে সরেজমিনে দেখা, যাঁদের সঙ্গে কথা বলতে পারি কথা বলে জাতীয় নীতিনির্ধারণী মহলে যখন আমরা সবাই মিলে বসব, আমরা যেন একটা জনগণের মতামত নিয়ে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটা ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারি।’

উপদেষ্টা বলেন, ‘ভবদহের জলাবদ্ধতা আসলে একটা জাতীয় দুর্যোগ। এত বড় একটা জাতীয় দুর্যোগে সবাইকে আগাতে হবে। জলাবদ্ধতা সমস্যা কিন্তু পুরোটা প্রকৃতিকেন্দ্রিক বা পুরোটা কোনো মন্ত্রণালয়ের সৃষ্টি, তা নয়। এখানে কিছু স্থানীয় সমস্যাও রয়েছে। ঠিক কোন পথে ভবদহের জলাবদ্ধ সমস্যার সমাধান হবে, এটা এই মুহূর্তে এখানে দাঁড়িয়ে আমার পক্ষে বলা ঠিক হবে না। তার কারণ হচ্ছে, এখন জনগণের সঙ্গে যাঁরা ভুক্তভোগী, তাঁদের সঙ্গে কথা বলা শুরু হয়েছে। সেখানে বিভিন্ন মতবাদ আছে। সেই মতবাদের পক্ষে-বিপক্ষে মতামত আছে। কিন্তু বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে যে বিষয়টা সমাধান দেবে, আমরা নিশ্চয়ই সেই সমাধানের পথে হাঁটব।’

ভবদহের বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতির বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্ত কিন্তু আমরা শুরু করে দিয়েছি। এটা শুধু ভবদহকেন্দ্রিক নয়। এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। কমিটিতে যে এলাকায় প্রকল্প হবে, সেই এলাকার ডিসি মহোদয়ের প্রতিনিধি, স্থানীয় ভুক্তভোগী জনগণের একজন প্রতিনিধি, একজন ছাত্রপ্রতিনিধি ও একজন বাইরের এক্সপার্ট থাকবেন।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভবদহ সমস্যার চিরস্থায়ী সমাধান নিয়ে আমরা চিন্তাভাবনা শুরু করেছি: উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান
  • ভবদহ পরিদর্শনে ৩ উপদেষ্টা, নদী খনন করবে সেনাবাহিনী
  • যশোরের দুঃখ ভবদহ পরিদর্শনে ৩ উপদেষ্টা, নদী খনন করবে সেনাবাহিনী