খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আমরণ অনশন করছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের আন্দোলনে একাত্মতা পোষণ করে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলীয় সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। 

মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে হাসনাত আবদুল্লাহ শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানান। 

সেখানে তিনি লেখেন, “শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রহসনমূলক আচরণ করার পরিণতি কী হতে পারে, তা চব্বিশের জুলাইয়ে দেখেছে বাংলাদেশ। জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়েও আমরা এমন ফ্যাসিবাদী আচরণ দেখতে চাই না।”

কুয়েটের শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির প্রতি একাত্মতা পোষণ করেন জানিয়ে তিনি বলেন, “কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি, দ্রুত শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া মেনে নেওয়ার ব্যবস্থা করুন।”

সোমবার (২১ এপ্রিল) পূর্বনির্ধারিত ঘোষণা অনুযায়ী আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকে ৩২ জন আমরণ অনশন শুরু করেন। বিকেল ৩টায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারের বারান্দার পূর্বদিকে অবস্থান নেন। এরপর সেখানে বিভিন্ন বিভাগের ৩২ জন শিক্ষার্থী আনুষ্ঠানিকভাবে অনশন শুরু করেন।  অনশনরত ৩২ শিক্ষার্থীর মধ্যে কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে ১৮ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এতে আহত হন অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী। পরদিন প্রশাসনিক ভবনসহ সব একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা।

ওই দিন দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সংঘর্ষের ঘটনা তদন্তে কমিটি করা হয়। রাতে খানজাহান আলী থানায় অজ্ঞাত পরিচয় ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করে মামলা করে প্রশাসন।

গত ২০ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশ করে সব রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনকে লাল কার্ড দেখান শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে তারা উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করেন।

২৩ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীরা খুলনা থেকে ঢাকায় এসে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেন। এতে হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচার, উপাচার্যের পদত্যাগসহ ছয় দফা দাবি জানানো হয়।

এরপর ২৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের ৯৯তম (জরুরি) সভায় সব আবাসিক হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। পরদিন সকাল ১০টার মধ্যে সব শিক্ষার্থীকে হলত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়।


১৮ ফেব্রুয়ারির সংঘর্ষের ঘটনায় প্রকৃত দোষী শিক্ষার্থীদের খুঁজে বের করাসহ পূর্ণাঙ্গ তদন্তের জন্য গঠিত কমিটি গত রোববার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।

এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার কুয়েটের ২২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে নগরের মহেশ্বরপাশা উত্তর বণিকপাড়া এলাকার হোসেন আলী নামের এক ব্যক্তি মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আমলি আদালতে মামলা করেন।

আবাসিক হলগুলো খুলে দেওয়ার দাবিতে শিক্ষার্থীরা ১৩ এপ্রিল বিকেল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিলে, আন্দোলন আবারও দানা বাঁধতে থাকে।

গত সোমবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে ৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্তের কথা জানায় কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে আগামী ২ মে থেকে সব আবাসিক হল শিক্ষার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া ও ৪ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত হয়।

এর মধ্যে গত মঙ্গলবার শিক্ষার্থীরা উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের এক দফা দাবির ঘোষণা দেন। ঘোষণার পর আন্দোলনকারীরা কুয়েটের ছেলেদের ছয়টি হলের তালা ভেঙে হলগুলোতে অবস্থান নেন।

ঢাকা/ইভা 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র পদত য গ উপ চ র য স ঘর ষ

এছাড়াও পড়ুন:

কুয়েটে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে দ্বিতীয় দিনে শিক্ষার্থীদের অনশন, কয়েকজন অসুস্থ

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের দাবিতে আমরণ অনশন অব্যাহত রেখেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। গতকাল সোমবার বেলা সাড়ে তিনটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারে শুরু হওয়া অনশনের ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে। অনশনরত শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ অসুস্থ হয়েছেন। দাবি পূরণে অন্তর্বর্তী সরকারের দিকে তাকিয়ে আছেন তাঁরা।

অনশনরত শিক্ষার্থীদের একজন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের এক দফা এক দাবি, ভিসির পদত্যাগ। দাবি না মানা পর্যন্ত আমাদের অনশন চলবে। আমাদের চারজন এরই মধ্যে অসুস্থ হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন।’

এদিকে শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙাতে তৎপর আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ দপ্তর। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছে তারা। আজ মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ১৫ থেকে ২০ জনের একটি শিক্ষক প্রতিনিধিদল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করতে আসে। তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা করে এবং অসুস্থ শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর নেয়।

আলোচনার বিষয়ে অনশনরত শিক্ষার্থীদের একজন বলেন, ‘আলোচনার সময় এখন আর নেই। আমরা অনেক দিন ধরে আমাদের পরিস্থিতির কথা বলেছি। আমরা স্যারদের সঙ্গে বসার অনেক চেষ্টা করেছি। আমরা বলেছি সমঝোতার সুযোগ আছে, হলগুলো খুলে দেন। আমাদের কথা শোনা হয়নি।’

এ বিষয়ে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক এম এম এ হাসেম বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিতে এসেছি। একই সঙ্গে তাদের বোঝানোর চেষ্টা করছি, এভাবে অসুস্থ হয়ে নয়, তোমরা এসো আমরা বসে বিষয়টির সুরাহা করি।’

ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক আবদুল্লাহ ইলিয়াস আক্তার বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের বোঝানোর চেষ্টা করেছি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার একটি সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য। আমরা তাদের বলেছি, আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।’

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় শতাধিক লোক আহত হন। পরদিন প্রশাসনিক ভবনসহ সব একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। ওই দিন দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়। ২৫ ফেব্রুয়ারি সব আবাসিক হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

আবাসিক হল খুলে দেওয়ার দাবিতে ১৩ এপ্রিল বিকেল থেকে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিলে আন্দোলন আবার দানা বাঁধতে থাকে। গত সোমবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে ৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্তের কথা জানায় কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি আগামী ২ মে থেকে সব আবাসিক হল শিক্ষার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া ও ৪ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার শিক্ষার্থীরা উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের এক দফা দাবির ঘোষণা দেন। ঘোষণার পর আন্দোলনকারীরা কুয়েটের ছেলেদের ছয়টি হলের তালা ভেঙে হলগুলোতে অবস্থান নেন। বুধবার দুপুরে উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। রোববার উপাচার্যের পদত্যাগের ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেওয়া হয়। বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে পদত্যাগ না করলে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা আমরণ অনশনে বসার ঘোষণা দেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কুয়েটে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে দ্বিতীয় দিনে শিক্ষার্থীদের অনশন, কয়েকজন অসুস্থ
  • চবিতে ২৪ ঘণ্টায়ও অনশন ভাঙেননি চারুকলার শিক্ষার্থীরা
  • কুয়েট ভিসির পদত্যাগের দাবিতে আমরণ অনশন, অসুস্থ হয়ে পড়ছেন শিক্ষার্থীরা
  • আমরণ অনশন অব্যাহত রেখেছেন কুয়েটের ৩২ ছাত্র
  • মূল ক্যাম্পাসে চারুকলা আনার দাবিতে অনশনে চবির ৯ শিক্ষার্থী
  • আমরণ অনশনে কুয়েট শিক্ষার্থীরা
  • কুয়েটে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশন শুরু, চলছে আলোচনা
  • কুয়েট উপাচার্য অপসারণের দাবিতে কাল থেকে আমরণ অনশন
  • কুয়েট উপাচার্যের পদত্যাগের ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিলেন শিক্ষার্থীরা, অন্যথায় আমরণ অনশন