Prothomalo:
2025-04-22@12:34:08 GMT

পড়ে আছে ৫ কোটির ছাত্রাবাস

Published: 22nd, April 2025 GMT

সাজানো–গোছানো গাইবান্ধা সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে শোভা পাচ্ছে সুদৃশ্য ছাত্রাবাস। পাঁচতলা ছাত্রাবাসটির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে প্রায় আট বছর আগে। কিন্তু এখনো চালু হয়নি। ফলে ৪ কোটি ৭১ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ভবন থাকতেও শিক্ষার্থীদের বেশি ভাড়া দিয়ে মেসে থাকতে হচ্ছে।

জেলা শহরের থানাপাড়ায় গাইবান্ধা-গোবিন্দগঞ্জ সড়ক ঘেঁষে ১৯৪৭ সালে ১৩ একর জমিতে গড়ে ওঠা গাইবান্ধা সরকারি কলেজে বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৪ হাজার ৭৩৫ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৯ হাজার ৮৭৫ জন এবং ছাত্রী ৪ হাজার ৮৬০ জন। ১৯৮০ সালে সরকারিকরণ হওয়া কলেজে ১৯৯৬-৯৭ সালে ১৪টি বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) শাখা চালু হয়। স্নাতকোত্তর শ্রেণি চালু হয় ১৯৯৯ সালে।

কলেজ সূত্রে জানা গেছে, কলেজে ছাত্রীর চেয়ে ছাত্রের সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি। ১০০ আসনের ছাত্রীনিবাস থাকলেও কোনো ছাত্রাবাস ছিল না। ছাত্রদের দাবির মুখে ২০১৫ সালের মাঝামাঝি ১০০ আসনের পাঁচতলাবিশিষ্ট ছাত্রাবাস নির্মাণে দরপত্র আহ্বান করা হয়। নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৪ কোটি ৭১ লাখ টাকা। পঞ্চগড়ের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স শেখ ট্রেডার্স এ কাজের দায়িত্ব পায়। ওই বছরের ৪ নভেম্বর কার্যাদেশ দেওয়া হয়। দেড় বছরের মধ্যে অর্থাৎ ২০১৭ সালের ২৬ এপ্রিল কাজ শেষের সময় নির্ধারণ করা হয়। নির্দিষ্ট সময়ে নির্মাণের মূল কাজও শেষ করা হয়। কিন্তু প্রায় আট বছর পেরিয়ে গেলেও ভবনটি চালু করা হয়নি।

ছাত্রাবাস চালু না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কলেজের অধ্যক্ষ মো.

খলিলুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পরও নানা অজুহাতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভবনটি কলেজকে বুঝিয়ে দেয়নি। দীর্ঘদিন পর গত বছরের প্রথম দিকে ভবনটি প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু রান্নার জন্য বাবুর্চিসহ লোকবলের অভাব রয়েছে। ফলে নতুন ছাত্রাবাস চালু করা যাচ্ছে না। তবে অচিরেই ছাত্রাবাসটি চালু করা হবে।

আজ সোমবার দুপুরে কলেজে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান ফটকের নির্মাণকাজ চলছে। বিকল্প পথে ক্যাম্পাসে ঢুকতেই হাতের বামে শহীদ মিনার। শহীদ মিনার ও বিএনসিসি ভবনের সামনে শিক্ষার্থীদের আড্ডা। পূর্বদিকে অধ্যক্ষের কার্যালয় ও প্রশাসনিক ভবন। দক্ষিণ–পূর্ব দিকে দাঁড়িয়ে আছে সুদৃশ্য নতুন ছাত্রাবাস। ভবনের উত্তর পাশে পুকুর এবং সামনে সবুজ মাঠ। মনোরম পরিবেশ।

ভবনের কাছে গিয়ে দেখা যায়, ছাত্রাবাসের নিচে চারদিকে আগাছায় ছেয়ে যাচ্ছে। ছাত্রাবাসের কলাপসিবল ফটকে তালা ঝুলছে। লোহার ওপর মরিচা পড়ার উপক্রম হয়েছে। ভেতরের শিক্ষার্থীদের জন্য বেড, টেবিল, চেয়ারসহ অন্যান্য আসবাবপত্র ধুলাবালিতে ঢেকে গেছে। মাকড়সা জাল বুনেছে বৈদ্যুতিক বাতি ও পাখায়। ওপরে ওঠার সিঁড়িতেও একই অবস্থা। দীর্ঘদিন ব্যবহার না করায় বৈদ্যুতিক জিনিসপত্র অকেজো হয়ে যাচ্ছে। পরিষ্কারের অভাবে ভেতরের প্রতিটি কক্ষে অনেকটা ময়লা–আবর্জনায় ভরে গেছে।

ছবি তোলার সময় কলেজের স্নাতকোত্তর শ্রেণির ছাত্র জাহিদ রায়হান জানালেন, তিনি রংপুর থেকে এখানে পড়াশোনা করতে এসেছেন। কলেজে ছাত্রাবাস নেই। থাকতে হয় আশপাশের মেসে। মেসের ভাড়া অনেক বেশি। পরিবেশও ভালো না। নতুন ছাত্রাবাস নির্মিত হয়েছে। সেটি চালু করা হয়নি। বিষয়টি শিক্ষকদের জানিয়েও কাজ হচ্ছে না।

জাহিদ রায়হান হিসাব কষে বললেন, বর্তমানে একজন ছাত্রের মাসিক মেস ভাড়া ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে দেড় হাজার টাকা দিতে হচ্ছে। খাওয়াসহ অন্যান্য খরচ তো আছেই। কলেজে ছাত্রীনিবাসে মাসিক ৩০০ টাকা দিয়েই থাকা যায়। ছাত্রাবাস চালু হলে তাঁরাও মাসে ৩০০ টাকা দিয়ে থাকতে পারতেন।

রসায়ন বিভাগের স্নাতক (সম্মান) তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আবদুর রহীমের বাড়ি কলেজ থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে সুন্দরগঞ্জ উপজেলায়। তিনি বলেন, ‘এক সময় মেসে থাকতাম। মেসে থাকলে খরচ বেশি হয়। মেস ভাড়া এখন বেশি করা হয়েছে। কয়েক মাস পরপর মেস ভাড়া বাড়ানো হয়। তাই বাড়ি থেকে বাসে যাতায়াত করছি। যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ছাত্রবাস চালু থাকলে কম টাকায় এখানে থাকতে পারতাম। কিন্তু এটি চালু করা হচ্ছে না। ভবনটি পড়ে থাকায় ভেতরের আসবাবপত্র ব্যবহারে অনুপযোগী হয়ে পড়ছে।’

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

পড়ে আছে ৫ কোটির ছাত্রাবাস

সাজানো–গোছানো গাইবান্ধা সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে শোভা পাচ্ছে সুদৃশ্য ছাত্রাবাস। পাঁচতলা ছাত্রাবাসটির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে প্রায় আট বছর আগে। কিন্তু এখনো চালু হয়নি। ফলে ৪ কোটি ৭১ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ভবন থাকতেও শিক্ষার্থীদের বেশি ভাড়া দিয়ে মেসে থাকতে হচ্ছে।

জেলা শহরের থানাপাড়ায় গাইবান্ধা-গোবিন্দগঞ্জ সড়ক ঘেঁষে ১৯৪৭ সালে ১৩ একর জমিতে গড়ে ওঠা গাইবান্ধা সরকারি কলেজে বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৪ হাজার ৭৩৫ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৯ হাজার ৮৭৫ জন এবং ছাত্রী ৪ হাজার ৮৬০ জন। ১৯৮০ সালে সরকারিকরণ হওয়া কলেজে ১৯৯৬-৯৭ সালে ১৪টি বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) শাখা চালু হয়। স্নাতকোত্তর শ্রেণি চালু হয় ১৯৯৯ সালে।

কলেজ সূত্রে জানা গেছে, কলেজে ছাত্রীর চেয়ে ছাত্রের সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি। ১০০ আসনের ছাত্রীনিবাস থাকলেও কোনো ছাত্রাবাস ছিল না। ছাত্রদের দাবির মুখে ২০১৫ সালের মাঝামাঝি ১০০ আসনের পাঁচতলাবিশিষ্ট ছাত্রাবাস নির্মাণে দরপত্র আহ্বান করা হয়। নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৪ কোটি ৭১ লাখ টাকা। পঞ্চগড়ের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স শেখ ট্রেডার্স এ কাজের দায়িত্ব পায়। ওই বছরের ৪ নভেম্বর কার্যাদেশ দেওয়া হয়। দেড় বছরের মধ্যে অর্থাৎ ২০১৭ সালের ২৬ এপ্রিল কাজ শেষের সময় নির্ধারণ করা হয়। নির্দিষ্ট সময়ে নির্মাণের মূল কাজও শেষ করা হয়। কিন্তু প্রায় আট বছর পেরিয়ে গেলেও ভবনটি চালু করা হয়নি।

ছাত্রাবাস চালু না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কলেজের অধ্যক্ষ মো. খলিলুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পরও নানা অজুহাতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভবনটি কলেজকে বুঝিয়ে দেয়নি। দীর্ঘদিন পর গত বছরের প্রথম দিকে ভবনটি প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু রান্নার জন্য বাবুর্চিসহ লোকবলের অভাব রয়েছে। ফলে নতুন ছাত্রাবাস চালু করা যাচ্ছে না। তবে অচিরেই ছাত্রাবাসটি চালু করা হবে।

আজ সোমবার দুপুরে কলেজে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান ফটকের নির্মাণকাজ চলছে। বিকল্প পথে ক্যাম্পাসে ঢুকতেই হাতের বামে শহীদ মিনার। শহীদ মিনার ও বিএনসিসি ভবনের সামনে শিক্ষার্থীদের আড্ডা। পূর্বদিকে অধ্যক্ষের কার্যালয় ও প্রশাসনিক ভবন। দক্ষিণ–পূর্ব দিকে দাঁড়িয়ে আছে সুদৃশ্য নতুন ছাত্রাবাস। ভবনের উত্তর পাশে পুকুর এবং সামনে সবুজ মাঠ। মনোরম পরিবেশ।

ভবনের কাছে গিয়ে দেখা যায়, ছাত্রাবাসের নিচে চারদিকে আগাছায় ছেয়ে যাচ্ছে। ছাত্রাবাসের কলাপসিবল ফটকে তালা ঝুলছে। লোহার ওপর মরিচা পড়ার উপক্রম হয়েছে। ভেতরের শিক্ষার্থীদের জন্য বেড, টেবিল, চেয়ারসহ অন্যান্য আসবাবপত্র ধুলাবালিতে ঢেকে গেছে। মাকড়সা জাল বুনেছে বৈদ্যুতিক বাতি ও পাখায়। ওপরে ওঠার সিঁড়িতেও একই অবস্থা। দীর্ঘদিন ব্যবহার না করায় বৈদ্যুতিক জিনিসপত্র অকেজো হয়ে যাচ্ছে। পরিষ্কারের অভাবে ভেতরের প্রতিটি কক্ষে অনেকটা ময়লা–আবর্জনায় ভরে গেছে।

ছবি তোলার সময় কলেজের স্নাতকোত্তর শ্রেণির ছাত্র জাহিদ রায়হান জানালেন, তিনি রংপুর থেকে এখানে পড়াশোনা করতে এসেছেন। কলেজে ছাত্রাবাস নেই। থাকতে হয় আশপাশের মেসে। মেসের ভাড়া অনেক বেশি। পরিবেশও ভালো না। নতুন ছাত্রাবাস নির্মিত হয়েছে। সেটি চালু করা হয়নি। বিষয়টি শিক্ষকদের জানিয়েও কাজ হচ্ছে না।

জাহিদ রায়হান হিসাব কষে বললেন, বর্তমানে একজন ছাত্রের মাসিক মেস ভাড়া ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে দেড় হাজার টাকা দিতে হচ্ছে। খাওয়াসহ অন্যান্য খরচ তো আছেই। কলেজে ছাত্রীনিবাসে মাসিক ৩০০ টাকা দিয়েই থাকা যায়। ছাত্রাবাস চালু হলে তাঁরাও মাসে ৩০০ টাকা দিয়ে থাকতে পারতেন।

রসায়ন বিভাগের স্নাতক (সম্মান) তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আবদুর রহীমের বাড়ি কলেজ থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে সুন্দরগঞ্জ উপজেলায়। তিনি বলেন, ‘এক সময় মেসে থাকতাম। মেসে থাকলে খরচ বেশি হয়। মেস ভাড়া এখন বেশি করা হয়েছে। কয়েক মাস পরপর মেস ভাড়া বাড়ানো হয়। তাই বাড়ি থেকে বাসে যাতায়াত করছি। যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ছাত্রবাস চালু থাকলে কম টাকায় এখানে থাকতে পারতাম। কিন্তু এটি চালু করা হচ্ছে না। ভবনটি পড়ে থাকায় ভেতরের আসবাবপত্র ব্যবহারে অনুপযোগী হয়ে পড়ছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ