কারওয়ান বাজার সবজিপট্টির পেছনে যে জায়গাটা একেবারে শেষ হয়ে গেছে, সেখান থেকেই শুরু হয়েছে রেললাইন। লাইনের ওপর বিকেল থেকেই কিছু ছায়ামানুষের আনাগোনা দেখা যায়। লোকজন দেখলেই তারা তৃষ্ণার্ত নয়নে তাকিয়ে থাকে, কখনো কখনো মুখ উঁচিয়ে বলে, ‘লাগব নাকি, লাগব?’
যাদের লাগার, তাদের অবশ্য প্রশ্ন করা লাগে না। এসেই ২০ টাকা বাড়িয়ে দেয়। কাগজে মোড়ানো পুঁটলি হস্তান্তরিত হয় দ্রুত। ক্রেতা বড়জোর জিজ্ঞেস করে, ‘ঠিক আছে তো?’
ছায়ামানুষেরা বলে, ‘একের মাল একের!’
একের হোক কি দুয়ের, মন্তাজকে এখানে আসতে হয় প্রত্যেক সন্ধ্যায়ই। ট্রাকস্ট্যান্ডের ভেতর দিয়ে, ভাঙাচোরা রিকশাটা অনিচ্ছায় টানতে টানতে মন্তাজের পা দুটো গুঙিয়ে উঠতে চায়। ভোর পাঁচটা থেকে সে রিকশা টানতে শুরু করে। শরীরের ভেতরের সমস্ত রক্ত পায়ের গোড়ালিতে এনে, প্যাডেল ঘোরাতে থাকে সে। ৩০ টাকা, ৫০ টাকা, ৬০ টাকা পকেটে ঢুকতে থাকে যেমন, তেমনই সারা দিনের সমস্ত শক্তি, ইচ্ছা, স্বপ্ন প্যাডেল দিয়ে বেরোতে থাকে হাওয়ায়—মানুষ যে একটা হাওয়ার গাড়ি, এইটা তো কবি আগেই বলে গেছে!
দুপুরে মন্তাজ ভাত খায় অনামিকা পেট্রলপাম্পের পাশের ছাপরা হোটেলে। আলুভর্তা, পাতলা ডাইল আর ভাত—তিরিশ টাকা। নূরজা বেগমের মতিগতি ভালো থাকলে একটু লালশাকও দেয় এই টাকায়। লালশাক ডাইলের ভেতর মাখতে মাখতে মন্তাজের শৈশবের কথা মনে পড়ে। এভাবে মেখে মেখে ভাত খাওয়াত তার মা আকিমুন বিবি। তিনটা বচ্ছর খাইয়েছিল মাত্র, তারপরই তো মরল বিমারে, কিন্তু কী যে সেই তিন বছরের কারবার—তেত্রিশ বছর পরও ওই তিন বচ্ছর রুপার পাতের মতন জ্বলজ্বল করে মাথার ভেতর। আহারে সেই দিনগুলো!
হতাশ মন্তাজ ওই দুপুরেই হয়, খাওয়ার সময়ই। তখনই যেহেতু একটু অবকাশ পাওয়া যায়। নূরজা বেগমের সঙ্গে দু-চারটা কথাও হয় তখন। হিন্দি সিনেমা চলে টিভিতে। আলিয়া নামের একটা মেয়ে খুব নাচে কথায় কথায়। দেখে মন্তাজের হাসি আসে, ‘শালার নাইকা রে! তামাম শরীলে পাখির সমান গোশত নাই! খালি হাড্ডি আর হাড্ডি!’
নূরজা বেগম বলে, ‘এইটাই এখন হিট নাইকা! সব নাইকাই এখন এই রকম। মাংস নাই কুনো!’
মন্তাজ গালের ভেতর ভাত ঠুসতে ঠুসতে নূরজা বেগমের দিকে তাকায় আড়চোখে। পুষ্ট শরীর। এতটাই যে গোল ফুটবলের মতোই লাগে। ঘামে ভেজা গলা। নাকে ঝিলিক দেওয়া নাকফুল। কানে সত্যি সোনার দুল। বুকের ওপর আঁচলটা পড়ে আছে। কী নেই…কোমরটা ধরতে দুই হাত লাগে! আহারে থলথলে কোমর!
‘ভাত দিমু?’
মন্তাজের চমক ভাঙে, কিন্তু ঘোর ভাঙে না। বেকুবের মতোই হাসে। বলে, ‘আলিয়া না কী, ওইটার চাইতে তুমি বেশি নাইকা বাল!’
নূরজা বেগমের কোথায় কোন ধাক্কা লাগে কে জানে, গামলা থেকে ভাত কেবল তুলছিল সে, হাতাসমেত সেটা ছুড়ে দেয় মন্তাজের দিকে, রিকশা চালানো জীর্ণ শরীরের রিফ্লেক্স কমে গেছে বহু আগেই, ঝট করে মাথা নামাতে পারে না সে, ভাতসহ হাতাটা তার কপালে লাগে। হাতা ফিরে আসে মেঝেতে, মন্তাজ উফফফ বলে কপাল ধরে নেয় ডাল-ভাত মাখানো হাতেই। নূরজা বেগম ছুটেও আসে এরপর। মন্তাজকে জড়িয়ে ধরে কি ধরে না। নূরজা বেগমের ঘামের গন্ধে ওই সন্ধ্যায় কারওয়ান বাজারের রেললাইনে আসা লাগে না মন্তাজের।
কিন্তু অন্য দিন লাগে।
সারা দিনের রিকশা চালানোর পর তার পা শুধু না, পুরো শরীরই টাটায়, বিষ করে, ব্যথা করে। সেই বিষ, সেই ব্যথা দূর হয় তামাকের টানে। দুই টাকা দামের সিগারেটের কাঁচা তামাক ফেলে যখন তাতে গাঁজার শুকনা পাতা ঢুকে পড়ে, তাতে আগুন জ্বলে, ধোঁয়া রক্তে মেশে, মন্তাজের মনে হয় বেঁচে আছে, সে জ্যান্ত আছে। চারদিক তাকিয়ে ঘোরলাগা চোখে ভাবতে ভালো লাগে তার, নূরজা বেগম তাকে ভাতের চামচ ছুড়ে মেরেছিল, মেরে জাপটে ধরেছিল, ধরে কেঁদেওছিল। আর তার বুকের ভেতর মুখ গুঁজে নেশালাগানো গন্ধে মাতাল হয়েছিল মন্তাজ।
কিন্তু ওই দিনের পর থেকে শুরু হয়েছে অন্য ফেঁকড়া। আলিফার দিকে আর ঠিকমতো তাকাতে পারে না মন্তাজ। আলিফার বয়স কাঁচা, পনেরো কি ষোলো, শরীরটা বাঁশপাতার মতো চিকন, ঠিকঠাক ঝড় হলে উড়ে ময়মনসিংহের ঝুপড়িতে গিয়ে পড়বে। ভাগ্য ভালো যে তাদের বস্তি দশতলা বিল্ডিংয়ের আড়ালে। ফলে ঝড়টড় ওই বিল্ডিংয়ে গোত্তা খেয়েই ফিরে যায়। মন্তাজের মনও ঘরের দিক থেকে গোত্তাই মারে। সাত মাস আগে যখন সে বিয়েটা করতে কবুল বলে, তখন গ্রামের ভাবি বলছিল, ‘চিন্তা কইরো না মন্তাজ মিয়া, মাইয়ার নাক সুন্দর, চোখ সুন্দর…শরীরে গোশত নাই…সেই গোশত আসতে দুই মাসের বেশি লাগব না। বিয়ার পানি পড়লে মাইয়াদের শরীলে গোশত আসতে টাইম লাগে না!’
সেই দুই মাস কবেই শেষ হয়েছে। আলিফার শরীরে গোশত আসে তো নাই-ই, মুখটা আরও শুকিয়ে কেমন এক চিমসামারা হয়ে গেছে। তার দিকে তাকালে মন্তাজের মনে হয় এই চামচিকাকে বিয়া করার কী কাম ছিল? এর চাইতে নূরজা বেগমের ভাত খাওয়া কম ভাগ্যের না!
নূরজা বেগম যে ভাতই শুধু খাওয়ায় মন্তাজকে, তা না। নানা রকম বুদ্ধি–পরামর্শও দেয়। নূরজা বেগম এই শহরে এসেছে আগে, মন্তাজের থেকে বয়সে দুই–তিনেক বেশিও হয়তো হবে, মাথায় শক্ত শক্ত চিন্তা তার আসে, আবার সেই চিন্তাগুলোকে সমানভাবে বলতেও পারে। মন্তাজের থালায় লালশাক তুলতে তুলতে নূরজা বেগম বলে, ‘শরীলে তো তুমার এই ধকল সইতাছে না! একটু ভালামন্দ খাও!’
মন্তাজ হাসে। হাসলে তার হলুদ দাঁতগুলো ফকাশ করে বেরিয়ে যায়। খুব কিম্ভূত দেখায় তাতে। সেই কিম্ভূত ভাব নিয়ে মন্তাজ বলে, ‘ভালো আর কই পামু…মন্দ আছে, মন্দই খাইতাছি!’
‘ভাবের কথা রাখো মিয়া। নিজেরে কদ্দিন দ্যাখো নাই আয়নায়! দেইখাই তো হিরোঞ্চি লাগে!’
‘তওবা তওবা। ওই জিনিসের পাশ দিয়াও আমি নাই!’
‘গাঞ্জা তো খাও। ওইটাও কোন দিন ধইরা নিবা। তখন মাটির সাথে মিইশা যাইতে আর সময় লাগব না!’
কথাটা মন্তাজের লাগে। মাটির সঙ্গে সে তার মাকে মিশে যেতে দেখেছে। তারপর বাপকে, চাচাকে। দেখে বুঝেছে, ব্যাপারটা এত সহজ কিছু না। সে মাটির সঙ্গে মিশতে চায় না। ফলে মুখের ভাবনার রেখা একীভূত হয়। বলে, ‘কী করতাম কও? বালের রিকশা টানতে যত কষ্ট! একেকটা মানুষের শরীরে এত গোশত এত গোশত…টানতে গিয়া কলিজা বাইর হইয়া যায়!’
‘টানো ক্যান?’
নূরজা বেগম ফ্যানের নিচে গিয়ে দাঁড়ায়। তার গলা–বুক ঘামে জবজব করছে। দূর থেকেও সেই ঘামের গন্ধ পাচ্ছে মন্তাজ। নাকে সেটা টেনে নেয় ভালো করে। বলে, ‘অন্য আর কী করতাম এই শহরে? তুমার হোটেলে চাকরি দাও, চাকরি করি!’
‘চাকরি না, বুদ্ধি দিতাছি, সেইটা করো!’
‘কী বুদ্ধি?’
‘এই টানা রিকশার গ্যারেজ ছাড়ো। অটো চালাও। শুধু গাড়ির ওপর পাছা পাইতা বইসা থাকবা, গাড়ি চলব ইঞ্জিনে!’
মন্তাজ কথাটা শোনে। ফকাশ করে আবার হেসে দেয়। বলে, ‘অটো চালানি ম্যালা ভেজাল। সব জায়গায় যাওন যায় না, গেলে আবার টিকেট লাগে। সেই টিকেটের ম্যালা দাম। মাসে মাসে চান্দাও দিতে হয়! এত ভেজাল কে করে?’
নূরজা বেগম ভাতের গামলা নিয়ে মন্তাজের মুখের ওপর এসে পড়ে। ভাত দেয়। ঘাম দেয়। ঘ্রাণ দেয়। মন্তাজ গেলে কখনো চোখ খোলে, কখনো বন্ধ করে। নূরজা বেগম বলে, ‘এই সব না, তুমি অটোতে যাইতে চাইতেছ না অন্য কারণে…’
‘কী কারণ ফের?’
‘নতুনে তুমার ভয়।’
মন্তাজ তাকিয়ে থাকে চোখ মেলে। আসলেই কি! নূরজা বেগম হাসে। হাসিটা যেন কেমনই। মন্তাজ দশতলা বিল্ডিংয়ের দিকে বস্তিঘরের ফাঁক দিয়ে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ভাবে, আসলেই কি তার নতুনে ভয়? এই জন্যই কি সেই দিন নূরজা বেগম জাপটে ধরার পরও সে তাকে ধরতে পারেনি! এই জন্যই কি গাঞ্জাখোর থেকে তার আর হিরোঞ্চি হওয়া হইল না?
আলিফা ঘুমের ঘোরে তাকে জাপটে ধরে। হাড্ডিতে যেন হাড্ডি ঠেকে। ঠং করে আওয়াজও হয় কি? মন্তাজের মেজাজটা খারাপ হয়। পুরোনো জিনিস লবঘণ্টা হইলে নতুনে আপত্তি কিসের? আলিফাকে শরীর থেকে নামিয়ে দেয় মন্তাজ। বিড়বিড় করে গালিও দিয়ে উঠে একটা বিড়ি ধরায়। পা টাটাচ্ছে। শরীর থেকে ছিঁড়ে যাচ্ছে গোশত! বিছানায় শুয়ে আছে একটা কঙ্কাল। মন্তাজ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলতে পারে।
রইসু মিয়া যে নূরজা বেগমের পরিচিত, তা জানত মন্তাজ। কিন্তু পরিচিতি যে এই পর্যায়ের, তা জানা ছিল না। গ্যারেজে এসে দাঁড়াতেই মন্তাজের কী খাতির, ‘আরে মন্তাজ মিয়া যে, আসছ তাইলে! বসো, চা খাইবা? নাকি লেবুর শরবত? ওই মিলইন্যা, যা রং চা নিয়া আয় তো…’
মন্তাজ বলে, ‘আসলে নূরজা বেগম বলছিল…’
রইসু হইহই করে ওঠে, ‘আরে বাল! নূরজা পাখি সবই বলছে, তুমার রিকশা যে মতলবের গ্যারেজে ফেরত দিয়া দিছ, কামের কাম করছ! তুমি এই অটোটা নিয়া যাইও…’
একটা রিকশার দিকে আঙুল তাক করে রইসু মিয়া। মন্তাজের বুকটা ধক করে ওঠে। কই ছিল তার হাড্ডিসার পুরানা জখা রিকশা, আর কই এই নতুন তকতকা অটোরিকশা!
রইসু জিজ্ঞেস করে, ‘অটো চালাইতে পারো?’
মন্তাজ উত্তর করে না। রইসু হাসে। বলে, ‘চিন্তা নাই। সাঁতার, রিকশা আর রাইতের কাম…যে একবার শিখ্যা নিতে পারে, আর কুনো দিন ভুলতে পারে না। সেইটা বাংলা হোক কি অটো…নাকি?’
রইসু টেনে টেনে হাসে। মন্তাজ রিকশার চাবি নিয়ে চড়ে বসে। রইসু বলে, ‘এইটাতে কষ্ট কম, তাই কাম করতে বেশি পারবা, দুই শ টাকা পার ডে দিলে কিন্তু হইব না…’
‘তাইলে?’
‘সাড়ে তিন শ নিই…কিন্তু তুমি নূরজা পাখির মানুষ…এই জন্য শুধু তিন শ দিবা, ঠিক আছে?’
মন্তাজ রিকশা চালিয়ে বেরিয়ে আসে গ্যারেজ থেকে। আসতে আসতে মনে হয় তার চা খাওয়া হয়নি। কেউ এর মধ্যে চা নিয়েও আসেনি। রইসু একটু আলটপকা মানুষই তাইলে। নিজে যা বোঝে, অন্যরে তা বুঝতে না দিয়ে আরও কিছু বুঝ দিয়ে রাখে। তা রাখুক। মন্তাজের এই সবে কীই–বা আর যাবে–আসবে!
ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই অটোরিকশা লাইনে চলে আসে মন্তাজের। তিনটা ভাড়া মারার পর মজা পেয়ে যায় মন্তাজ মিয়া। এতক্ষণেও পায়ের টনটনানি নেই, শরীরের হাড্ডিতে ব্যথা নেই, মুখে বেজার ভাব নেই। একটা গানও চলে আসে তার মনের ভেতরে, ‘তোমাকে চাই শুধু আমি তোমাকে চাই…আর কিছু জীবনে পাই বা না পাই…!’
সন্ধ্যার কারওয়ান বাজারে মন্তাজ আসে অভ্যাসেই। গাঁজায় টান মারে। অটো নিয়ে আবার ফিরেও যায়। প্যাসেঞ্জারের গোশত বেশি না কম, এটা নিয়ে মন্তাজের আর কোনো অভিযোগও নেই। তিন সপ্তাহ পর নূরজা বেগম বলে, ‘তুমার খোরাক যে কইমা গেছে খেয়াল করছ?’
‘কইমা গেছে?’
‘আগে তিন থাল ভাত খাইতা, এখন দুই থাল খাও!’
‘শরীল্যে আর পেশার নাই রে। পায়ে ব্যথাও নাই…’
নূরজা বেগম হাসে। তার থলথলে শরীরটা সে হাসিতে কেঁপে ওঠে। মন্তাজের কেমন যেন লাগে এই প্রথম! উফফ! এত গোশত! এত! নূরজা বেগমের ঘামের গন্ধে নাকটা কুঁচকে যায় তার। কেমন এক ওয়াক শব্দ করে ভাতেই বমি করে ফেলে। নূরজা বেগম ছুটে আসে ঠিকই, কিন্তু তাকে কাছে ভিড়তে দেয় না মন্তাজ!
রাতে আলিফাকে বুকের মধ্যে টেনে নেয় মন্তাজ। তাকে লাগে টিভির ভেতরের আলিয়া ভাটের মতো!
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: মন ত জ র ম মন ত জ র ক য় মন ত জ ব গম র র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
মদিনা শহরকে কটাক্ষ করে কিশোরের পোস্ট, তারাগঞ্জে মহাসড়ক অবরোধ
মুসলিমদের পবিত্র ভূমি মদিনা শহরকে কটাক্ষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক কিশোরের পোস্টকে কেন্দ্র করে রংপুরের তারাগঞ্জে প্রায় দেড় ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন উত্তেজিত জনতা।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে তিনটায় রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের বামনদীঘি এলাকায় অবরোধ করে তাঁরা ওই কিশোরের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানান।
পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সম্প্রতি উপজেলার হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়নের সনাতন ধর্মাবলম্বী এক কিশোর ফেসবুকে মদিনাকে কটাক্ষ করে একটি ভিডিও পোস্ট করে। পরে ভিডিওটির স্ক্রিনশট ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে আজ দুপুরে হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়ন পরিষদে বিক্ষোভ করেন বিক্ষুব্ধ জনতা। এরপর বেলা সাড়ে তিনটার দিকে রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের বামনদীঘি এলাকায় অবরোধ করে তাঁরা ওই কিশোরের গ্রেপ্তারের দাবি জানান। এতে মহাসড়কের দুই পাশে যানজট দেখা দেয়। পরে বিকেল পাঁচটার দিকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ঘটনাস্থলে গিয়ে বিক্ষোভকারীদের বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
বিক্ষোভকারীদের দাবি, সকাল থেকে প্রশাসনকে বললেও ওই কিশোরকে গ্রেপ্তারে কোনো ভূমিকা রাখছে না। তাকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
স্থানীয় ইকরচালী ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের পবিত্র মদিনাকে নিয়ে এক হিন্দু ছেলে কটাক্ষ করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছে। তার শাস্তির দাবিতে বামনদীঘি এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করে আন্দোলন হয়। খবর পেয়ে ইউপি সদস্যদের নিয়ে সেখানে গিয়ে উপস্থিত জনতাকে বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে নিই। এখন গাড়ি চলাচল করছে।’
তারাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবেল রানা বলেন, ‘ঘটনাটি শোনার পর আমি ডিসি স্যারের সঙ্গে কথা বলেছি। ওই কিশোরকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশকে বলেছি।’
তারাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম বলেন, সকালে হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে বিক্ষুব্ধ জনতাকে বুঝিয়েছেন। ওই কিশোর বাড়িতে নেই। তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।