ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরপরই সিলেটের শীর্ষ পর্যায়ের অধিকাংশ নেতা আত্মগোপনে চলে যান। এসব নেতা বর্তমানে ভারত, যুক্তরাজ্য, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন। বিদেশে অবস্থানকারী নেতাদের অনেকে নিয়মিত কর্মী–সমর্থকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।

দেশ-বিদেশে আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগের আটজন নেতা ও ছয়জন কর্মীর সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে এ প্রতিবেদকের কথা হয়। তাঁরা বলেন, সিলেটের শীর্ষ নেতাদের অল্প কয়েকজন দেশে আছেন। বাকিরা বিদেশে। তবে মধ্যম ও তৃণমূল পর্যায়ের প্রায় সব নেতা এখনো দেশেই আত্মগোপনে আছেন।

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মো.

আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী লন্ডনে চলে যান। রোববার দিবাগত রাতে তাঁর সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে কথা হয়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কিছুসংখ্যক নেতা-কর্মী দেশের বাইরে আছেন। এ ছাড়া বেশির ভাগ নেতা-কর্মী দেশেই আছেন। দেশে থেকেই তাঁরা নীরবে দলকে সুসংগঠিত করতে কাজ করছেন। তবে দলীয় প্রধানের নির্দেশনা পাওয়ামাত্রই তাঁরা একযোগে দেশে ফিরবেন।

কোন নেতা কোথায়

আওয়ামী লীগের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, সিলেট-১ (নগর ও সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দেশেই আত্মগোপনে ছিলেন। সম্প্রতি তিনি দেশ ছেড়েছেন। তিনি ঢাকা থেকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় পৌঁছান।

৫ আগস্টের পর দেশ ছেড়ে সিলেট মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা ভারতে অবস্থান করছেন। তাঁরা কলকাতা, শিলংসহ বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করছেন। কলকাতায় আছেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য শফিউল আলম চৌধুরী (নাদেল) এবং সিলেট জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান।

দলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে ভারতে আছেন সিলেট জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আফসর আজিজ ও সহসভাপতি পিযুষ কান্তি দে, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আফতাব হোসেন খান ও সাধারণ সম্পাদক দেবাংশু দাস (মিঠু), সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজ, মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নাঈম আহমদ, সিলেট সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর রুহেল আহমদ, ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম, সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সজল দাস (অনিক) প্রমুখ।

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সিলেটের অনেক নেতা যুক্তরাজ্যে চলে যান। তাঁদের মধ্যে সিলেট-২ (ওসমানীনগর ও বিশ্বনাথ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং সাবেক প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী আছেন। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিও। এ ছাড়া সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী এবং সিলেট-৩ (দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমানও যুক্তরাজ্যে আছেন। এই তিন নেতা ‘যুক্তরাজ্যের নাগরিক’ বলে একটি সূত্র প্রথম আলোকে জানিয়েছে।

যুক্তরাজ্যে অন্যান্য আওয়ামী লীগ নেতার মধ্যে আশ্রয় নিয়েছেন সুনামগঞ্জ-১ (তাহিরপুর, ধর্মপাশা, জামালগঞ্জ ও মধ্যনগর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রনজিত চন্দ্র সরকার এবং মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিধান কুমার সাহা।

এ ছাড়া মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ২০ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আজাদুর রহমান, মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছালেহ আহমদ ও আরমান আহমদ, সিলেট মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মুশফিক জায়গীরদার, সিলেট জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হেলেন আহমদ, যুবলীগ নেতা রুহুল আমিন এবং সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনের সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) শফিউল আলম যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন।

কর্মী–সমর্থকদের সঙ্গে যোগাযোগ

আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বলছেন, যাঁরা দেশের বাইরে আছেন, তাঁরা দেশে একাধিক মামলার আসামি হয়েছেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় বিভিন্ন হত্যাকাণ্ড, নাশকতার অভিযোগসহ হামলা, ভাঙচুর ও বিস্ফোরক মামলায় আসামি করা হয়েছে তাঁদের।

তাঁদের দাবি, দেশে থাকা সিলেটের আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ ও মহিলা লীগের অন্তত ১০০ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। এ ছাড়া গ্রেপ্তার এড়াতে সবাই আত্মগোপনে আছেন। এর বাইরে হঠাৎ দেশে থাকা নেতা-কর্মীরা বিচ্ছিন্নভাবে অন্তর্বর্তী সরকারবিরোধী বিক্ষোভ মিছিল করেন। বিদেশে আশ্রয় নেওয়া নেতাদের বেশির ভাগই ফেসবুকে দলের পক্ষে এবং দেশে সংঘটিত বিভিন্ন অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে সরব আছেন।

দেশে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা বলেন, দেশে থাকা ছাত্রলীগের কর্মীরা হঠাৎ বিক্ষোভ মিছিল করছেন। তবে এ কর্মসূচি পালন করে পরে অনেকে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারও হয়েছেন। ২ এপ্রিল সকালে নগরে ছাত্রলীগ মিছিল বের করায় বিপরীত প্রতিক্রিয়া হিসেবে বিকেলেই সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরীসহ পাঁচজন নেতার বাসায় হামলা হয়। ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা এ হামলা চালিয়েছেন বলে ওই নেতা অভিযোগ করেন।

আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র বলেছে, বিদেশে অবস্থান নিলেও অনেক নেতা দেশে থাকা নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ রাখছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাঁরা দলীয় নির্দেশনাও দিচ্ছেন। বিশেষ করে সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী দেশে-বিদেশে থাকা নেতা-কর্মীদের মধ্যে যোগাযোগের যোগসূত্র হিসেবে কাজ করছেন। তিনি গত ঈদে কারাবন্দী নেতাদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি দেশে থেকে সংকটে পড়া নেতা-কর্মীদেরও নানাভাবে সহায়তা করছেন। এ ছাড়া সাবেক সংসদ সদস্য শফিউল আলম চৌধুরী, হাবিবুর রহমান ও রনজিত চন্দ্র সরকারও তাঁদের নির্বাচনী এলাকায় সহায়তা করছেন বলে সূত্রটি নিশ্চিত করেছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অবস থ ন করছ ন র রহম ন র আওয় ম কর ম র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

মোবাইল অপারেটরদের ইন্টারনেটের দাম কমানোর আহ্বান

মোবাইল অপারেটরদের ইন্টারনেটের দাম কমানোর আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি-বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি বলছেন, তিন স্তরে ইন্টারনেটের দাম কমতে যাচ্ছে। ফাইবার অ্যাট হোম কর্তৃপক্ষ তাদের ৩ পর্যায়ের সংযোগের দাম কমানোর ঘোষণা দিয়েছে।

আজ সোমবার সকালে ফয়েজ আহমদ নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এসব তথ্য জানান। তিনি লিখেছেন, ফাইবার অ্যাট হোম আইটিসি পর্যায়ে ১০ শতাংশ, আইআইজি পর্যায়ে ১০ শতাংশ ও এনটিটিএন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ দাম কমাবে।

এ নিয়ে ইন্টারনেট লাইসেন্সীপর্যায়ে মোট তিন থেকে চারটি স্তরে ইন্টারনেটের মূল্য কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন ফয়েজ আহমদ।

আন্তর্জাতিক গেটওয়ে পর্যায়ে বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি তাদের সব ধরনের সেবায় ১০ শতাংশ দাম ইতিমধ্যে কমিয়েছে। এ ছাড়া ইন্টারনেট সেবাদাতাদের সংগঠন আইএসপিএবি গ্রাহক পর্যায়ে ৫০০ টাকায় এখন থেকে ১০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট দেবে বলে সম্প্রতি জানিয়েছে। অন্যদিকে ঈদুল ফিতরের দিন থেকে সরকারি মোবাইল অপারেটর টেলিটক ১০ শতাংশ মূল্যছাড়ের ঘোষণা দেয়।

ফয়েজ আহমদ এবার দেশের তিনটি বেসরকারি মোবাইল অপারেটরদের দাম কমানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ইতোমধ্যেই সরকার মোবাইল কোম্পানিগুলোকে ডিডব্লিউডিএম (নেটওয়ার্ক পর্যবেক্ষণের যন্ত্র-ডেন্স ওয়েভলেংথ ডিভিশন মাল্টিপ্লেক্সিং) ও ডার্ক ফাইবার সুবিধা প্রদান করেছে। এ অবস্থায় বেসরকারি মোবাইল কোম্পানিগুলোর ইন্টারনেটের দাম না কমানোর কোনো ধরনের যৌক্তিক কারণ কিংবা অজুহাত অবশিষ্ট থাকে না। সরকার মোবাইল অপারেটরগুলোকে পলিসি সাপোর্ট দিয়েছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় স্তরগুলোতে পাইকারি পর্যায়ে ইন্টারনেটের দামও কমিয়েছে। এখন তাদের জাতীয় উদ্যোগে শরিক হওয়ার পালা।

মোবাইল ইন্টারনেটের দাম কমানোর পদক্ষেপে চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতিও কিছুটা কমে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন ফয়েজ আহমদ। পাশাপাশি দ্রুতই তিনটি বেসরকারি মোবাইল অপারেটর যৌক্তিকভাবে মোবাইল ইন্টারনেটের দাম কমানোর ঘোষণা দেবে বলে তিনি আশা করেন।

ফয়েজ আহমদ জানান, সরকার এখানে দুই ধরনের মূল্য ছাড় আশা করে—সরকারের দিক থেকে শুল্ক বৃদ্ধির উদ্যোগে অপারেটররা অ্যাডজাস্টমেন্ট বাবদ যে মূল্য বাড়িয়েছিল সেটা কমাবে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক গেটওয়ে/আইটিসি, আইআইজি ও ন্যাশনাল ট্রান্সমিশন পর্যায়ে যতটুকু পাইকারি দাম কমানো হয়েছে তার সমানুপাতিক হারে গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেটের দাম কমাবে।

প্রধান উপদেষ্টার এই বিশেষ সহকারী বলেন, বাংলাদেশের মোবাইল ইন্টারনেটের মানে ব্যাপক প্রশ্ন রয়েছে। মানের তুলনায় দাম অনেক বেশি। এ অবস্থায় গ্রাহকস্বার্থে যৌক্তিক পদক্ষেপ নিতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঢাবি উপাচার্যের সঙ্গে ইইউ রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ
  • কক্সবাজারে কাজে গিয়ে ৬ শ্রমিক নিখোঁজ
  • কক্সবাজারে গিয়ে নিখোঁজ জকিগঞ্জের ৬ তরুণ 
  • মোবাইল অপারেটরদেরকে ইন্টারনেটের দাম কমানোর আহ্বান
  • মোবাইল অপারেটরদের ইন্টারনেটের দাম কমানোর আহ্বান
  • নারী সংস্কার কমিশন বাতিলসহ ৫ দাবি, হেফাজ‌তের মহাসমাবে‌শ ৩ মে
  • চীনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ২ হাজার বছরের পুরনো: ঢাবি উপাচার্য
  • টানা দুইবারের বেশি না পারলেও বিরতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ থাকার দাবি বিএনপির
  • সিলেটে ট্রাক চাপায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত