শিল্পের সমৃদ্ধির ওপরই দেশের অর্থনীতির বিকাশ নির্ভর করে। জনসংখ্যা ও চাহিদা বাড়ার বিপরীতে শিল্পকারখানা না বাড়লে অর্থনীতি মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়ে। গত ১৫ মাসে শিল্প খাতে যে সংযোজন ও বিয়োজন ঘটছে, তা আমাদের মোটেই আশ্বস্ত করছে না।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ১৫ মাসে বিজিএমইএর নতুন সদস্য হয়েছে ১২৮টি কারখানা। অন্যদিকে এই সময়ে বন্ধ হয়েছে ১১৩টি কারখানা। বিজিএমইএর বাইরে এই খাতে এবং অন্যান্য খাতে আরও অনেক কারখানা বন্ধের ঘটনা ঘটেছে। সংস্থাটির ভাষ্য অনুযায়ী, নতুন কারখানাগুলো পুরোদমে চালু হলে ৭৪ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে। অন্যদিকে কারখানা বন্ধ হওয়ার কারণে ৯৬ হাজার ১০৪ জন চাকরি হারিয়েছেন।

আশার কথা, কারখানা বন্ধের মধ্যেও তৈরি পোশাকের রপ্তানি বেড়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাস জুলাই-মার্চে মোট ৩ হাজার ২৫ কোটি মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি এর আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ দশমিক ৮৪ শতাংশ বেশি।

নতুন কারখানা চালু ও পুরোনো কারখানা বন্ধের বিষয়টি চলমান প্রক্রিয়া বলা হলেও এই সময়ে কারখানা বন্ধের কারণ মূলত রাজনৈতিক। বেশির ভাগ কারখানা বন্ধ হয়েছে গত বছর আগস্টে রাজনৈতিক পালাবদলের পর। কয়েকটি শিল্প গ্রুপের মালিক কারাগারে ও আত্মগোপনে থাকায় শ্রমিকদের বেতন–ভাতা বকেয়া পড়ে। সরকার কোনো কারখানায় রিসিভার নিয়োগ করে চালু রাখতে চাইলেও শেষ পর্যন্ত সেটি সফল হয়নি। আবার মালিকদের কাছেই পরিচালনার ভার ন্যস্ত করা হয়েছে। সরকারের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কারণেও শিল্পাঞ্চলে একধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকসহ সার্বিক শিল্প খাতে নতুন যে বিনিয়োগ আসছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় কম। একই সময়ে শ্রমিক অসন্তোষের কারণেও বহু কারখানা সাময়িক বন্ধ হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল সোমবারও শ্রমিক বিক্ষোভের জেরে গাজীপুর নগরের কোনাবাড়ী এলাকার তুসুকা গ্রুপের ছয়টি প্রতিষ্ঠানে তিন দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। কারখানার ভেতরে কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকার কারণ দেখিয়ে কর্তৃপক্ষ শনিবার ওই ছুটির নোটিশ দিয়েছে। মূলত শ্রমিক ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে সেখানে শ্রমিকেরা আন্দোলন করে আসছেন।

কর্তৃপক্ষ বলছে, শ্রম আইন অনুযায়ী পাওনা মেটানোর পরও শ্রমিকেরা আন্দোলন করছেন। এর পেছনে বহিরাগত ব্যক্তিদের ইন্ধন আছে বলেও তারা দাবি করছে। বহিরাগত ব্যক্তিদের ইন্ধন থাকুক আর না–ই থাকুক, কোনো অজুহাতেই শ্রমিক ছাঁটাই মেনে নেওয়া যায় না। শ্রমিকদের বঞ্চিত রেখে কিংবা বিক্ষুব্ধ করে যে সুষ্ঠুভাবে কারখানা চালু রাখা সম্ভব নয়, সেটাও তাদের অনুধাবন করতে হবে।

সার্বিকভাবে অর্থনীতির পরিস্থিতি ভালো নয়। একদিকে প্রয়োজনমাফিক নতুন বিনিয়োগ আসছে না, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক–খড়্গ ঝুলছে। তিন মাসের রেয়াত দেওয়া হলেও ১০ শতাংশ বর্ধিত শুল্ক বহাল আছে। তিন মাস পর নাটকীয় পরিবর্তন হবে, তা–ও আশা করা যায় না।

কারখানা বন্ধ থাকায় কেবল মালিকেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হননি, হাজার হাজার শ্রমিকও বেকার হয়ে পড়েছেন। সে ক্ষেত্রে বন্ধ হওয়া কারখানা খোলার প্রয়াস অব্যাহত রাখার পাশাপাশি নজর রাখতে হবে নতুন করে যাতে কোনো কারখানা বন্ধ হয়ে না যায়। কোথাও সমস্যা হলে ত্রিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ উপায় বের করতে হবে। যেকোনো মূল্যে শিল্পাঞ্চলে শান্তিপূর্ণ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার বিকল্প নেই।  

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বন ধ র

এছাড়াও পড়ুন:

১৯ দিনে এলো ২১ হাজার কোটি টাকার প্রবাসী আয়

বিগত বেশ কয়েক মাস ধরে ইতিবাচক ধারায় রয়েছে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স। এমনকি সবশেষ মাস মার্চে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা। মার্চে ৩২৯ কোটি ডলার বা ৩ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স আসে দেশে।

রেমিট্যান্সের এ গতিধারা অব্যাহত রয়েছে। চলতি মাস এপ্রিলের প্রথম ১৯ দিনেই এসেছে ১৭১ কোটি ৮৭ লাখ ২০ হাজার ডলারের রেমিট্যান্স। বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২২ টাকা হিসাবে) যার পরিমাণ ২০ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। চলতি মাসে প্রতিদিন গড়ে আসছে ৯ কোটি ডলার বা ১১০৪ কোটি টাকার বেশি।

রবিবার (২০ এপ্রিল) বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা যায়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, হুন্ডির দৌরাত্ম্য কমেছে, বন্ধ হয়েছে অর্থপাচার। এছাড়া খোলা বাজার এবং ব্যাংকে রেমিট্যান্সের ডলারের একই দাম পাচ্ছেন প্রবাসীরা। এসব কারণে বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত হচ্ছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন বলছে, চলতি মাস এপ্রিলের প্রথম ১৯ দিনে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৬৩ কোটি ৯৭ লাখ ডলার। এসময় বিশেষায়িত কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৯ কোটি ডলারের বেশি। এছাড়া বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে প্রায় ৯৯ কোটি ডলার। পাশাপাশি বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৩৩ লাখ ২০ হাজার ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে দেশে।

আলোচ্য সময়ে ৮ ব্যাংকের মাধ্যমে কোনো রেমিট্যান্স আসেনি। এসব ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে- রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বা বিডিবিএল, বিশেষায়িত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক বা রাকাব। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে সিটিজেনস ব্যাংক, আইসিবি ইসলামি ব্যাংক এবং পদ্মা ব্যাংক। এছাড়া বিদেশি ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে হাবিব ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া এবং উরি ব্যাংক।

এর আগে সদ্য বিদায়ী মাস মার্চের পুরো সময়ে রেমিট্যান্স এসেছে ৩ দশমিক ২৯ বিলিয়ন (৩২৯ কোটি ডলার) ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২২ টাকা হিসাবে) যার পরিমাণ ৪০ হাজার ১৩৮ কোটি টাকা।

তথ্য বলছে, গত বছরের মার্চের পুরো সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল এক দশমিক ৭১ বিলিয়ন বা ১৭১ কোটি ডলার। সে হিসাবে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে সদ্য বিদায়ী মার্চে ১৫৮ কোটি ডলার বেশি এসেছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) রেমিট্যান্স এসেছে ২ হাজার ১৭৮ কোটি ডলার। গত অর্থবছরে একই সময়ে এসেছিল এক হাজার ৭০৮ কোটি ডলার। সে হিসাবে গত অর্থবছরে একই সময়ের তুলনায় ৯ মাসে ৪৭০ কোটি ডলার বেশি এসেছে।

গত ডিসেম্বরে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ২ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স আসে দেশে। সে রেকর্ড ভেঙে নতুন ইতিহাস গড়লো মার্চ মাস। এ নিয়ে অর্থবছরের দ্বিতীয় মাস আগস্ট থেকে টানা ৮ মাস দুই বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করলো প্রবাসী আয়। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স আসে। এরপর আগস্টে এসেছে ২২২ কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার, সেপ্টেম্বরে এসেছে ২৪০ কোটি ৪১ লাখ, অক্টোবরে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স আসে। নভেম্বর মাসে এসেছে ২২০ কোটি ডলার, ডিসেম্বরে এসেছে ২৬৪ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স। এরপর জানুয়া‌রি‌তে ২১৯ কোটি ডলার এবং ফেব্রুয়ারিতে ২৫৩ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স পা‌ঠি‌য়েছেন প্রবাসীরা।

ঢাকা/এনএফ/এনএইচ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৫৫ লাখ পরিবারকে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হবে ৬ মাস
  • প্রবাসী আয়ে এখনো ঈদ ঈদ ভাব, ১৯ দিনে এসেছে ১৭২ কোটি ডলার
  • স্বাস্থ্যে গবেষণা কাজে আসছে না, আছে অনিয়মের অভিযোগ
  • গ্যাসের দাম পুনর্নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীরা
  • ৯ মাসে মতিন স্পিনিংয়ের ৬৫০ কোটি টাকা ব্যবসা
  • ১৯ দিনে এলো ২১ হাজার কোটি টাকার প্রবাসী আয়
  • সুতা আমদানি বন্ধের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি বিকেএমইএর
  • পনেরো মাসে ১২৮ নতুন তৈরি পোশাক কারখানা
  • যুক্তরাষ্ট্রে মাসে বাড়তি শুল্ক দাঁড়াবে ২৫ কোটি ডলার