আবারও জুলাই বিপ্লবের সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবি জানালেন হাসনাত আবদুল্লাহ
Published: 22nd, April 2025 GMT
জুলাই বিপ্লবের মাস কয়েক পার হলেও এখনো আসেনি কোনো রাষ্ট্রীয় ঘোষণা, নেই কোনো সাংবিধানিক স্বীকৃতি- এমন প্রেক্ষাপটে ঢাবি ছাত্রদল সভাপতি গণেশ জুলাই আন্দোলনকে ‘তথাকথিত’ আন্দোলন বলায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলীয় সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ।
তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছাত্রদল সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস জুলাই-আগস্টের আন্দোলনকে ‘তথাকথিত’ বলায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন। আবার বিনা দ্বিধায় তার এই দুঃখ প্রকাশ বিষয়টিকে ৫ আগস্ট পরবর্তীতে রাজনৈতিক পরিসরে নীতি-নৈতিকতার চর্চা হিসেবে দেখছেন হাসনাত আবদুল্লাহ।
সোমবার (২১ এপ্রিল) রাতে নিজের ভেরিফাইড ফেসবুকে একটি পোস্ট করে এই তথ্য জানান হাসনাত আবদুল্লাহ।
হাসনাত আব্দুল্লাহ ফেসবুক পোস্ট বলেন, “৫ আগস্ট পরবর্তীতে রাজনৈতিক পরিসরে আমরা নীতি-নৈতিকতার চর্চা দেখতে চেয়েছি, সত্যকে সত্য ও মিথ্যাকে মিথ্যা বলে নিজের ইচ্ছা বা অনিচ্ছাকৃত ভুল অকপটে স্বীকার করার পরিসর দেখতে চেয়েছি। জুলাই বিপ্লবকে ‘তথাকথিত’ বলে আখ্যায়িত করার পর ঢাবি ছাত্রদল সভাপতি দুঃখপ্রকাশ করেছেন, কোনো ধরনের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ দিয়ে নিজের ভুলকে প্রতিষ্ঠিত করার বদলে তা বিনা দ্বিধায় স্বীকার করে নিয়েছেন।”
“ঢাবি ছাত্রদল সভাপতির এই মন-মানসিকতাকে আমরা শ্রদ্ধা করি এবং স্বাগত জানাই। আমরা আশা করি, আগামীতেও বাংলাদেশের রাজনীতিতে এমন সততা ও স্বচ্ছতার চর্চা বজায় থাকবে।”
তিনি বলেন, “কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য বাংলাদেশে জুলাই আগস্ট বিপ্লব হয়ে যাওয়ার এত মাস পরেও বিপ্লব নিয়ে না আছে কোনো ঘোষণা, না আছে কোনো সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা। যে যখন পারে যেভাবে ইচ্ছা এই দ্বিতীয় রিপাবলিক এর উত্থানের পেছনের লক্ষ কোটি সাধারণ জনতার সংগ্রাম কে অপমান করে যাচ্ছে কিংবা তাচ্ছিল্য করে যাচ্ছে।”
উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, “২০১০-১১ তে জেসমিন বিপ্লবের পরে তিউনিসিয়ার স্বৈরশাসক বেন আলীর দীর্ঘ স্বৈরাচারী রেজিমের পতন ঘটে এবং একটি নতুন গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় তিউনিসিয়ার যাত্রা শুরু হয়। সেই বিপ্লবকে সামনে রেখে ২০১৪ সালে যখন তিউনিসিয়া সংবিধান রচনা করলো সেখানে প্রিয়েম্বল এ সরাসরি বিপ্লবকে সংযুক্ত করে লেখা হলো - " In memory of our people’s martyrs, of the men and women who gave their lives to ensure the success of the revolution.
এছাড়া, বলিভিয়া ও নেপালের উদাহরণও তিনি দেন।
জুলাই বিপ্লবের সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবি করে তিনি বলেন, “যত দ্রুত সম্ভব জুলাই বিপ্লবকে সাংবিধানিকভাবে বাধ্যবাধকতার মধ্যে নিয়ে না আসলে এরকম হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হওয়ার মতো বক্তব্য হয়ত সামনে আরো শুনতে হবে। আশা করি, অতিসত্তর জুলাই বিপ্লবের ঘোষণা আসবে এবং সেই সঙ্গে আসবে সাংবিধানিক সংযুক্তি। বেহাত বিপ্লবের মূল্য অনেক চড়া। জীবন দিয়ে সে মূল্য যেনো বাংলাদেশকে না দিতে হয় সেই ব্যবস্থা করা জরুরি।”
এদিকে সোমবার (২১ এপ্রিল) রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে জুলাই-আগস্টের আন্দোলনকে ‘তথাকথিত’ বলায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখা ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায়।
ফেসবুকে পোস্টে তিনি বলেন, “ছাত্রদল নেতা পারভেজ হত্যার প্রতিবাদে আয়োজিত মানববন্ধনে আমার দেয়া বক্তৃতার দুইটি অংশ নিয়ে আজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা লক্ষ্য করছি।”
“প্রথমত, আমি বলতে চেয়েছিলাম যে সাধারণ শিক্ষার্থীরা অনেক সময় রাজনীতির অনেক বিষয় নিয়ে মাথা ঘামায়নি কেননা ফ্যাসিবাদের আমলে সে পরিবেশ ছিলোনা। কিন্তু অসাবধানতাবশত বলে ফেলেছি সাধারণ শিক্ষার্থীরা অনেক সময় রাজনীতির "র" নিয়েও মাথা ঘামায় না। আমি আমার বক্তব্যে অসাবধানতাবশত এ বাক্যটি বলেছি। আমি এ বাক্য দ্বারা কখনোই সাধারণ শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক সচেতনতা বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক সচেতনতা নিয়ে কখনোই প্রশ্ন তুলিনি এবং আমি আমার পুরো রাজনৈতিক জীবনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে এরকম মনোভাব কখনো কোথাও পোষণ করিনি। বরং আমি সাধারণ শিক্ষার্থীদের সেন্টিমেন্ট ধারণ করি এবং আজীবন তা ধারণ করার জন্য বদ্ধপরিকর। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমার এই কথায় কেউ মনোক্ষুণ্ণ হয়ে থাকলে৷ তাদের প্রতি আমি আন্তরিকভাবে দুঃখপ্রকাশ করছি।”
দ্বিতীয়ত, বক্তব্যের একটি পর্যায়ে তথাকথিত শব্দটি অনেকটা অসাবধানতাবশত "জুলাই-আগস্টের আন্দোলন" কথাটির আগে আমি উচ্চারণ করেছি। এই বিষয়ে আমি অত্যন্ত দুঃখিত। কারণ এ বিষয়ে বক্তব্য রাখার সময় আমার আরও বেশি সচেতন হতে হবে। আমার অনাকাঙ্ক্ষিত এই কথাটি সেই আবেগের জায়গায় যদি আঘাত দিয়ে থাকে আমি সকলের কাছে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।
এর আগে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে একটি ঘোষণাপত্র প্রকাশের ঘোষণা দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। গত ২৯ ডিসেম্বর ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রকাশের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে সামনে আনে তারা। বছরের শেষ দিন ৩১ ডিসেম্বর ওই ঘোষণাপত্র প্রকাশের কর্মসূচিও দেয় তারা।
এ বিষয়ে ২৯ ডিসেম্বর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “এই ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে নাৎসি বাহিনীর মত অপ্রাসঙ্গিক এবং ১৯৭২ সালের সংবিধানের ‘কবর’ রচনা করা হবে।”
প্রথমে সরকার এর সঙ্গে যুক্ত না হলেও পরে এ প্রক্রিয়া শুরুর কথা জানায়। তখন ৩১ ডিসেম্বর ঘোষণাপত্র প্রকাশের কর্মসূচি বদল করে সরকার পতনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। পরে সরকার ঘোষণাপত্র তৈরির কাজ শুরু করে।
ঢাকা/রায়হান/ইভা
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ ল ই আগস ট র জন ত ক ড স ম বর ফ সব ক র র জন সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ত্রাণ পৌঁছায় না ৫০ দিন, ক্রমেই খারাপ হচ্ছে পরিস্থিতি
গাজায় ইসরায়েলের অবরোধের মুখে ৫০ দিনের বেশি সময় ধরে ত্রাণবাহী কোনো গাড়ি পৌঁছতে পারছে না। এতে উপত্যকায় খাবার, বিশুদ্ধ পানি, ওষুধ ও জ্বালানির সংকট ক্রমেই তীব্রতর হচ্ছে। এ অবস্থায় ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম (ডব্লিউএফপি) জরুরি ভিত্তিতে খাদ্য সরবরাহ চালুর আহ্বান জানিয়েছে। এ সংকটের মধ্যেও বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এতে উপত্যকায় এক দিনে প্রাণ গেছে আরও ৩৯ জনের।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক সংস্থা ওসিএইচএর বরাত দিয়ে গতকাল সোমবার আলজাজিরা জানায়, ইসরায়েলের বিমান হামলায় কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত গাজার পরিস্থিতি ক্রমে আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। পানি সংকট তীব্র হচ্ছে। সেই সঙ্গে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। ওসিএইচএ বলছে, ইসরায়েলের হামলায় বিধ্বস্ত ভবনে উদ্ধারকাজ চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন কর্মীরা। তাদের পর্যাপ্ত উদ্ধার উপকরণ নেই। সেই সঙ্গে শত শত ত্রাণ-উদ্ধারকর্মীরা হত্যার শিকার হওয়ায় লোকবলও কমে গেছে।
গাজা থেকে আলজাজিরার প্রতিনিধি জানান, উপত্যকায় ওষুধের সরবরাহ না থাকায় চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। হাসপাতালগুলো ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। গত ২ মার্চ নতুন করে অবরোধ করার পর গাজায় কোনো ওষুধ প্রবেশ করতে পারেনি। হাজারো ফিলিস্তিনির মৃত্যু হচ্ছে বিনা চিকিৎসায়। এ অবস্থায় ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিএ আবারও যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে। তারা বলছেন, গাজার বেসামরিক মানুষ ‘অকল্পনীয় ভোগান্তি’র মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ইউএনআরডব্লিএ বলছে, উপত্যকার বাসিন্দাদের অধিকাংশই নারী, শিশু ও সাধারণ মানুষ। ফিলিস্তিনের মানুষকে এভাবে সমন্বিত শাস্তি দেওয়া কোনো যুক্তিতেই সঠিক নয়।
আনাদোলু অনলাইন জানায়, ইসরায়েলের হামলায় গাজায় সোমবার এক দিনে আরও ৩৯ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ৬২ জন। এতে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর শুরু হওয়া গণহত্যায় নিহতের সংখ্যা ৫১ হাজার ২৪০ জনে পৌঁছাল। মোট আহতের সংখ্যা ১ লাখ ১৬ হাজার ৯৩১ জন। হাজার হাজার ফিলিস্তিনি এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছেন।
ভুল বোঝাবুঝিতে সেবাকর্মী হত্যা, বলছে ইসরায়েল
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী (আইডিএফ) এক তদন্ত প্রতিবেদনে বলেছে, সেনাসদস্যদের ভুল বোঝাবুঝি ও আদেশ অমান্য করার কারণে ওই দিন গাজায় ১৫ জন জরুরি সেবাকর্মী নিহত হন। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে তদন্তে বাধ্য হওয়া ইসরায়েল আরও জানায়, জরুরি কর্মীদের শত্রুপক্ষের লোক মনে করে গুলি ছুড়েছিল ইসরায়েলের সেনারা। সরাসরি হত্যার অভিযোগ তারা অস্বীকার করেছে। ফিলিস্তিনের রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির (পিআরসিএস) বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, এ ধরনের প্রতিবেদনের কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। আইডিএফ দায় এড়াতে এটা ব্যক্তিগত ভুল হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করছে।
ফিলিস্তিনিরা ভয়াবহ অবিচারের মুখোমুখি: মিসরের পোপ
গাজায় ইসরায়েলের চলমান হামলার নিন্দা জানিয়ে মিসরের কপটিক অর্থডক্স খ্রিষ্টান চার্চের প্রধান পোপ টাওয়াড্রোস দ্বিতীয় এটাকে ‘ফিলিস্তিনিদের ওপর সবচেয়ে ভয়াবহ অন্যায়ের উদাহরণ’ বলে উল্লেখ করেছেন। আনাদোলু অনলাইন জানায়, তিনি বলেছেন, ‘প্রতিদিন ফিলিস্তিনিরা নিজেদের মাতৃভূমির ধ্বংসের মধ্য দিয়ে চরম অবিচারের শিকার হচ্ছেন।’
সিরীয় ভূখণ্ড পরিদর্শনে ইসরাইলের সেনাপ্রধান
অধিকৃত সিরীয় ভূখণ্ড পরিদর্শন করেছেন ইসরায়েলের সেনাপ্রধান ইয়াল জামির। গত রোববার তিনি এ পরিদর্শন করেন। এক প্রতিবেদনে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী বলেছে, সেনাপ্রধান সেখানে কর্মরত কমান্ডার ও সেনাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং অভিযান পরিকল্পনা অনুমোদন করেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, সিরিয়ার অধিকৃত এলাকায় অবস্থান দীর্ঘস্থায়ী করার ইঙ্গিত এটি।
অধিকৃত সিরিয়ার বাফার জোন সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে জামির এ অঞ্চলটিকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ বলে বর্ণনা করেন। তাঁর দাবি, ‘সিরিয়া ভেঙে পড়েছে’ বলেই ইসরায়েল এটি দখল করেছে। জামির বলেন, ‘এ জন্যই আমরা গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে আছি এবং সম্ভাব্য সর্বোত্তম উপায়ে নিজেদের রক্ষা করার জন্য সামনের সারিতে আছি।’