পটিয়ার যে সাংস্কৃতিক সংগঠনের নাম রাখেন রবীন্দ্রনাথ
Published: 22nd, April 2025 GMT
মাস্টারদা সূর্য সেনের ফাঁসি কার্যকরের মধ্য দিয়ে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে চট্টগ্রামের সশস্ত্র প্রতিরোধ স্তিমিত হয়ে এসেছে। ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা বিপ্লবীরা তখন চেষ্টা করছেন জনগণের মনোবল ও ঐক্য ধরে রাখার। সেই লক্ষ্যে চট্টগ্রামের পটিয়ার কেলিশহরের জমিদার সুরেন্দ্র লাল রায়ের বাড়ি রায় ভবনে বসল বৈঠক। সিদ্ধান্ত হলো সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মাধ্যমে সুসংগঠিত হবেন বিপ্লবীরা। দ্রোহের চেতনা পৌঁছে দিতে গড়ে তোলা হবে সাংস্কৃতিক সংগঠন।
তবে সংগঠনের নাম নিয়ে একমত হতে পারছিলেন না কেউ। সিদ্ধান্ত হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে পরামর্শ করে সংগঠনটির নামকরণ করা হবে। কিছুদিন পর সুরেন্দ্র লাল রায়ের বড় ছেলে সুবোধ রঞ্জন রায় শান্তিনিকেতনে গেলে এ বিষয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে আলোচনা করেন। বোলপুরের শান্তিনিকেতনের সঙ্গে মিলিয়ে কবিগুরু পটিয়ায় প্রস্তাবিত সংগঠনের নামকরণ করেন ‘রূপ নিকেতন’। ১৯৩৭ সালে এভাবেই শুরু হয় পটিয়ার সাংস্কৃতিক আন্দোলনের বাতিঘর রূপ নিকেতনের যাত্রা।
উত্তর কেলিশহর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উত্তর পাশে রায় ভবনের অবস্থান। বর্তমানে ভগ্নদশা এই বাড়িতেই সেদিন বৈঠকে বসেছিলেন সুরেন্দ্র লাল রায়ের বড় ছেলে প্রভাস রঞ্জন রায়, মেজ ছেলে সরোজ রঞ্জন রায়, ছোট ছেলে কবি ও সাহিত্যিক সুবোধ রঞ্জন রায়; ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, কৃষক ও তেভাগা আন্দোলনের বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা পূর্ণেন্দু কানুনগো, তাঁর কাকা নরেশ কানুনগো, সুপ্রীতি ভূষণ চৌধুরী, বিনোদ বিহারী চক্রবর্তী, নীরেন্দ্র লাল পাঠক, বিনোদ বিহারী চৌধুরী, হরিসাধন মুখার্জি, কেশব চন্দ্র পাঠক, সূর্য কানুনগো প্রমুখ নামকরা ব্যক্তি। প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্য থেকে সূর্য কানুনগো প্রতিষ্ঠানটির তবলা ও বিনোদ বিহারী সেতার শিক্ষক ছিলেন।
১৯৬৫ সালে রায় ভবন থেকে রূপ নিকেতনের কার্যক্রম স্থানান্তর করে পূর্ণেন্দু কানুনগোদের বাড়ি কানুনগো ভবনের বৈঠকখানায় নিয়ে যাওয়া হয়। কানুনগো ভবনের নানা গাছের ছায়াঘেরা দেউড়ি–ঘরে রূপ নিকেতনের নিয়মিত ক্লাস হতো। পাকিস্তানি শাসকদের চোখরাঙানি উপেক্ষা করে তখন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) মাঠ প্রাঙ্গণে রবীন্দ্র-নজরুল জন্মজয়ন্তী পালনের সাহসী উদ্যোগ নিয়েছিলেন সংগঠকেরা। গ্রামের স্কুল–কলেজে অধ্যয়নরত ছাত্রছাত্রীরা সারা বছর এ সংগঠনের এসে সংগীত ও নৃত্য শিক্ষা গ্রহণ করতেন।
কেলিশহরে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের বিপ্লবী শহীদ প্রমোদ রঞ্জন চৌধুরী ও কিশোর শহীদ কৃষ্ণ চৌধুরীর আবক্ষ মূর্তির সামনে ১৯৭৪ সালে বিপ্লবী প্রমোদ-কৃষ্ণ স্মৃতি তোরণ নির্মাণ করা হয়। সে সময় চট্টগ্রামের জেএম সেন হলের সামনে মাস্টারদা সূর্য সেনের আবক্ষমূর্তি উন্মোচন অনুষ্ঠানে ভারত থেকে আসেন বিপ্লবী কল্পনা দত্ত, গণেশ ঘোষসহ অনেকে। এ সময় তাঁরা কেলিশহরে এসে প্রমোদ-কৃষ্ণ স্মৃতি তোরণ উদ্বোধন করেন। তখন অতিথিদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে রূপ নিকেতন।
১৯৮৯ সালে দক্ষিণ চট্টগ্রামে প্রথম পয়লা বৈশাখের শোভাযাত্রার আয়োজন করে রূপ নিকেতন। তখন পটিয়া সদর কিংবা থানা পর্যায়ে পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠানের কোনো আয়োজন হতো না। রূপ নিকেতন সূর্যোদয়ের মুহূর্তে সংগীতের মাধ্যমে ‘এসো হে বৈশাখ’ গানে নতুন বছরকে আহ্বান করে পুরো চট্টগ্রামের মধ্যে সাড়া ফেলে দিয়েছিল। বর্তমান কার্যকরী সভাপতি দিবাকর চৌধুরী এভাবেই জানালেন বিপ্লবীদের হাতে গড়া সংগঠন রূপ নিকেতনের ইতিহাস।
৮৮ বছর ধরে সংস্কৃতি চর্চায় ভূমিকার রাখছে এই সংগঠন.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: রব ন দ র ক ল শহর স গঠন র
এছাড়াও পড়ুন:
নেতার নামের খেলার মাঠ গ্রাম বদলে দিল স্থানীয়রা
আওয়ামী লীগ নেতা ইব্রাহিমের নামে নামকরণ করা খেলার মাঠ ও তাঁর পূর্বপুরুষের গ্রামের নামে নামকরণ করা ভাতকুড়া চালা গ্রামের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। সম্প্রতি এলাকাবাসী ওই দুটি নাম পরিবর্তন করে আগের নাম বহাল রেখে নামফলক সেঁটে দেন। ইব্রাহিম সখীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য।
জানা গেছে, গ্রামটির প্রকৃত নাম বহুরিয়া চতলবাইদ। গ্রামটির আয়তন বড় হওয়ায় ওই অংশটির নাম চতলবাইদ মধ্যপাড়া হিসেবে পরিচিত। আওয়ামী লীগ নেতা ইব্রাহিম তাঁর পূর্বপুরুষের গ্রামের নামে ওই অংশটির নামকরণ করেন ‘ভাতকুড়া চালা’। এ নিয়ে গ্রামবাসী সংক্ষুব্ধ হলেও ওই সময় ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়নি। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হওয়ায় চতলবাইদ গ্রামবাসী ভাতকুড়া চালা নামটি বাতিল করে চতলবাইদ মধ্যপাড়া নাম বহাল করেছেন।
আওয়ামী লীগ নেতা ইব্রাহিমের নামে নামকরণ করা খেলার মাঠটির আগের নাম ছিল মঙ্গল খাঁর মাঠ। স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সুবাদে একক প্রভাব খাটিয়ে ইব্রাহিম ওই খেলার মাঠটি তাঁর নিজ নামে ‘ইব্রাহিমের মাঠ’ হিসেবে নামকরণ করেন। সম্প্রতি এলাকাবাসী ইব্রাহিমের মাঠের নাম পরিবর্তন করে মঙ্গল খাঁর মাঠ পুনর্বহাল করেছেন। সপ্তাহ খানেক আগে ওই দুটি নাম খোদাই করা ইট-পাথরের ফলকে লিখে মাঠঘেঁষা পাকা সড়কের পাশে সেঁটে দিয়েছেন এলাকাবাসী।
টাঙ্গাইল বন বিভাগের হতেয়া রেঞ্জের বহুরিয়া চতলবাইদ মৌজার সংরক্ষিত বনের ২৮৩১ নম্বর দাগের একই জমিতে ওয়াক্ত নামাজের জন্য নির্মিত পাকা ভবনটিতে ইব্রাহিম তাঁর বাবা হাজি হাতেম আলীর নামে সাইনবোর্ড সেঁটে দিয়ে সামাজিক মসজিদে রূপান্তর করেন। এলাকাবাসী সভা করে ওই মসজিদের দেয়ালে সেঁটে দেওয়া হাজি হাতেম আলী নামটি পরিবর্তন করে চতলবাইদ মধ্যপাড়া নামকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ ছাড়া বনের একই দাগের জমিতে ইব্রাহিম তাঁর বাবা হাজি হাতেম আলী নামে ঈদগাহ মাঠ ও সামাজিক কবরস্থান নির্মাণের পরিকল্পনা করেছিলেন। এলাকাবাসী ইব্রাহিমের সেই পরিকল্পনা বাতিল করে চতলবাইদ মধ্যপাড়া গ্রামটির নামেই ঈদগাহ মাঠ ও কবরস্থান নির্মাণকাজ শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা রেজাউল করিম।
চতলবাইদ গ্রামের বাসিন্দা সোমেস উদ্দিন সমকালকে বলেন, আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ইব্রাহিমের খুবই দাপট ছিল। ইব্রাহিম শালগজারির সব বন উজাড় করে ফেলেছে। বন বিভাগও তাঁর বিরুদ্ধে এক পা এগোয়নি। শালগজারির সব টাকা ইব্রাহিমের পকেটে। কেউই তাঁর অপকর্মের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পায়নি। সমকালে সংবাদটি প্রকাশের পর থেকে গ্রামবাসী ঐক্যবদ্ধ হয়ে সম্প্রতি গ্রামের নামটি ফিরিয়ে এনেছে। মাঠের নামটিতেও পরিবর্তন আনা হয়েছে।
পলাতক আওয়ামী লীগ নেতা ইব্রাহিম মোবাইল ফোনে সমকালকে বলেন, ‘আমি রাজনৈতিক রোষানলের শিকার। আমার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মামলা থাকার সুযোগে গ্রামের কতিপয় ব্যক্তি যা-ইচ্ছে তাই করছে।’
হতেয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা এস এম আবদুর রশীদের ভাষ্য, বনের জমি উদ্ধারে উচ্ছেদ মামলা দেওয়া হয়েছে। আইন অনুযায়ী বনের জমি থেকে সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে।