বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চার দিনের অফিস ও তিন দিন ছুটি শুরু করেছে। এ কাজে ভালো ফলও পাচ্ছে দেশগুলো। তাদের ভাষ্য এতে কর্মীদের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেক দেশে স্থায়ীভাবে এ পদ্ধতিতে যেতে চায়। এর পরও কর্মঘণ্টার দৈর্ঘ্য নিয়েও নানা আলোচনা শোনা যায়। ‘ওয়ার্ক কালচার’ নিয়ে দিনে দিনে সচেতনতা বাড়ছে মানুষের মধ্যে। অল্প বেতনে অনেক কাজ করিয়ে নেওয়া বা ঘণ্টার পর ঘণ্টা অফিসে থাকার চেয়ে অনেক দেশ ৪ দিনের সপ্তাহের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্য সপ্তাহে মাত্র এক দিন কাজ হয় এমন দেশও আছে। সিএনবিসির এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে এমন তথ্য।

অলীক কল্পনা কিন্তু নয়। ৬ দিন ছুটি আছে এমন দেশও আছে। এমন নিয়ম আছে প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্রে। দেশটির নাম ভানুয়াতু। কাজের পরিবেশের দিক দিয়ে অনন্য নজির গড়ে তুলেছে ছোট্ট দ্বীপদেশটি। দেশটি বিশ্বের সবচেয়ে কম গড় কর্মঘণ্টায় এগিয়ে অন্য সবার চেয়ে। দেশটির মানুষ প্রতি সপ্তাহে গড়ে মাত্র ২৪ দশমিক ৭ ঘণ্টা কাজ করেন।

এখন মনে হতে পারে এভাবে কি সম্ভব। দেশটি এটিই সম্ভব করে দেখিয়েছে। ভানুয়াতুর এই স্বল্প কর্মঘণ্টার সংস্কৃতি তাদের সমাজ ও সংস্কৃতির মধ্য প্রোথিত। দেশটির মানুষ ব্যক্তিগত সুখ, পরিবার সঙ্গে সময় কাটানোকে গুরুত্ব দেয়। বন্ধুবান্ধব এবং আপনজনের সঙ্গে সময় কাটানোকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া দেশটি এ মনোভাব কর্মজীবনের সঙ্গে ব্যক্তিগত জীবনের সুষম সমন্বয় সাধন করেছে।

আরও পড়ুন৪৬তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষা, মানতে হবে যে ৪ গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা২১ এপ্রিল ২০২৫

ভানুয়াতুর উদাহরণ দেখিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কম কর্মঘণ্টার অর্থ কম উৎপাদনশীলতা নয়। বরং, এটি কর্মীদের মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখতে সহায়তা করে। আর এর ফলে দীর্ঘ মেয়াদে কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পায় কর্মীর।

এদিকে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) এক প্রতিবেদন অনুসারে ভুটানে ৬১ শতাংশ কর্মজীবী প্রতি সপ্তাহে ৪৯ ঘণ্টার বেশি কাজ করেন। ভারতে এ হার ৫১ শতাংশ, বাংলাদেশে ৪৭ শতাংশ এবং পাকিস্তানে ৪০ শতাংশ। এই অতিরিক্ত চাপ কর্মীদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এখন কর্মঘণ্টা কমানোর দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। আইসল্যান্ডে চার দিনের কর্মসপ্তাহ পরীক্ষামূলকভাবে চালু করেছে অনেক আগেই। যুক্তরাজ্যও সাপ্তাহিক ৫ দিন থেকে ৪ দিন কাজের সপ্তাহের করা চিন্তাভাবনা করছে। স্পেন ও নিউজিল্যান্ডও এ উদ্যোগের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এমনকি সৌদি আরবের একটি কোম্পানি পরীক্ষামূলকভাবে চার দিনের অফিস শুর করেছে।

আরও পড়ুন৬০০ বৃত্তির সুযোগ গ্র্যাজুয়েট রিসার্চ স্কলারশিপে, জেনে নিন বিস্তারিত২১ এপ্রিল ২০২৫আরও পড়ুনচার দিনের অফিস শুরুর ফল যেমন হচ্ছে২৩ মার্চ ২০২৩.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

মহেশখালী নৌপথে সি-ট্রাকের উদ্বোধন বৃহস্পতিবার, চূড়ান্ত হলো ভাড়া-সময়সূচি, উচ্ছ্বসিত বাসিন্দারা

কক্সবাজার-মহেশখালী নৌপথে নিয়মিতভাবে সি-ট্রাক চলাচল শুরু হবে আগামী বৃহস্পতিবার থেকে। নৌপথটিতে প্রতিদিন তিনবার করে যাওয়া-আসা করবে ২৫০ জন যাত্রী ধারণক্ষমতার সি-ট্রাকটি। কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর ৬ নম্বর জেটিঘাট থেকে মহেশখালী যাতায়াতের ক্ষেত্রে একজন যাত্রীকে ভাড়া দিতে হবে ৫০ টাকা। অন্যদিকে কক্সবাজারের নুনিয়ারছড়া ঘাট থেকে মহেশখালী যেতে ৪০ টাকা ভাড়া দিতে হবে যাত্রীদের। এরই মধ্যে এসব সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।

নিয়মিত সি-ট্রাক চলাচল শুরুর ঘোষণায় দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর বাসিন্দারা উচ্ছ্বসিত। এই সেবা চালু হওয়ায় পাহাড়ি দ্বীপটিতে যাতায়াতের ক্ষেত্রে যাত্রীদের দীর্ঘদিনের ভোগান্তি কমবে বলে জানিয়েছেন বাসিন্দারা। একই সঙ্গে বর্ষা মৌসুমে উত্তাল সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে দুর্ঘটনায় প্রাণহানির মতো ঘটনাও কমবে বলে আশাবাদী তাঁরা। তবে সি-ট্রাকের ভাড়া আরও অন্তত ১০ টাকা করে কমানোর দাবি তুলেছেন বাসিন্দারা।

কক্সবাজারের পাহাড়ি দ্বীপ মহেশখালীর আয়তন ৩৮৮ দশমিক ৫০ বর্গকিলোমিটার। উপজেলায় রয়েছে একটি পৌরসভা ও আটটি ইউনিয়ন। বাংলাদেশের জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ অনুযায়ী এই দ্বীপের জনসংখ্যা ৩ লাখ ৮৫ হাজারের বেশি। মৈনাক পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত আদিনাথ মন্দিরসহ উপজেলার নানা পর্যটন স্পটের কারণে সারা বছরই উপজেলাটিতে পর্যটকদের আনাগোনা থাকে।

বিআইডব্লিউটিএ জানায়, গত শুক্রবার নৌরুটটিতে পরীক্ষামূলকভাবে সি-ট্রাক চালু করা হয়। এরপর নিয়মিতভাবে সি-ট্রাক চলাচলের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সকারের নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন সি-ট্রাকের উদ্বোধন করবেন। সি-ট্রাক চলাচলের সময়ও এর মধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে। কক্সবাজার থেকে প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৮টা, দুপুর ১২টা এবং সন্ধ্যা ৬টায় মহেশখালীর উদ্দেশে সি-ট্রাক ছেড়ে যাবে। মহেশখালী থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশে ছাড়বে প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৭টা, বেলা ১১টা এবং বিকেল ৫টায়।

কক্সবাজার-মহেশখালী নৌপথে এত দিন ধরে স্পিডবোট, কাঠের নৌকা ও লোহার ‘গামবোট’–এ করে যাত্রীরা যাতায়াত করে আসছেন। এসব নৌযানে যাতায়াতে নানা ধরনের ভোগান্তিতে পড়তে হয় যাত্রীদের। নৌপথে যাতায়াতের ক্ষেত্রে মানুষের এসব ভোগান্তি নিরসনের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় বাসিন্দা, ছাত্রদের সঙ্গে আন্দোলন করে আসছে মহেশখালী নাগরিক আন্দোলন। এ সংগঠনের নেতৃত্বে থাকা এস এম রুবেল প্রথম আলোকে বলেন, এত দিন নৌপথের নিয়ন্ত্রণ প্রভাবশালী কিছু সিন্ডিকেটের হাতে ছিল। মানুষ বাধ্য হয়ে বেশি ভাড়া দিয়ে স্পিডবোটে যাতায়াত করে আসছেন। সি-ট্রাক চালু হলে এসব সিন্ডিকেটের আধিপত্য কমবে। দ্বীপের বাসিন্দারা স্বস্তিতে যাতায়াত করতে পারবেন। নিরাপদে মহেশখালী ভ্রমণ করতে পারায় পর্যটক সমাগমও বাড়বে।

স্থানীয় সংবাদকর্মী মো. এনামুল হক বলেন, সরকারি গেজেট অনুযায়ী নৌপথে যাত্রীপ্রতি কিলোমিটারে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ২ টাকা ৮৫ পয়সা। মহেশখালী থেকে কক্সবাজার নৌপথের দূরত্ব সাড়ে আট কিলোমিটার। এতে ২৫ টাকা ভাড়া এলেও গেজেট অনুযায়ী সর্বনিম্ন ভাড়া হিসাবে ৩০ টাকা নেওয়ার কথা। কিন্তু এই নৌপথে ৪০ থেকে ৫০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে, যা কমানো উচিত। একই দাবি করেন মহেশখালী উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সর্বনিম্ন ভাড়া হিসাবে ৩০ টাকা আদায়ের জন্য তাঁরা বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন।

জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিএ কক্সবাজার (কস্তুরাঘাট) নদীবন্দরের সহকারী পরিচালক মো. খায়রুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, আগামী বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর ৬ নম্বর জেটিঘাটে সি-ট্রাক চলাচলের উদ্বোধন করবেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা। এরপর ওই সি-ট্রাকে করে মহেশখালীতে গিয়ে এক সুধী সমাবেশে অতিথি হিসেবে অংশ নেবেন তিনি। এরপর বেলা দেড়টায় সি-ট্রাকে করে কক্সবাজারে ফিরবেন।

মো. খায়রুজ্জামান আরও বলেন, আপাতত তিনবার করে সি-ট্রাকটি যাওয়া-আসা করবে। সময়সূচিও এরই মধ্যে নির্ধারণ করা হয়েছে। যাত্রীদের চাহিদা অনুযায়ী পরে সময়সূচি পরিবর্তন করা যাবে। ভাড়া কমানোর বিষয়ে যাত্রীদের দাবির বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।

মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. হেদায়েত উল্যাহ প্রথম আলোকে বলেন, সি-ট্রাক চলাচল নিয়ে দ্বীপের বাসিন্দা খুবই উচ্ছ্বসিত। যাত্রীদের সুবিধার্থে মহেশখালী জেটিঘাটে স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে সিসি ক্যামেরা বসানোর কাজ চলছে। এরই মধ্যে জেটিঘাটের যাত্রীছাউনিতে বৈদ্যুতিক পাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ