ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে ভারত ও চীনা শিক্ষার্থীদের মামলা
Published: 22nd, April 2025 GMT
ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন তিন ভারতীয় এবং দুই চীনা শিক্ষার্থী। হাজারো শিক্ষার্থীর এফ-১ ভিসা বাতিলের ঘটনায় এ মামলা করেছেন তারা। একই অভিযোগে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ এবং অন্যান্য অভিবাসন কর্মকর্তাকেও আসামি করা হয়েছে।
এনডিটিভি জানায়, আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন (এসিএলইউ) শিক্ষার্থীদের পক্ষে নিউ হ্যাম্পশায়ারের মার্কিন ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে এ মামলা দায়ের করেছে। মামলায় ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে একতরফাভাবে হাজার হাজার বিদেশি শিক্ষার্থীর এফ-১ শিক্ষার্থীর মর্যাদা বাতিল করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের এক প্রতিবেদন অনুসারে, মার্চের শেষ দিক থেকে ১৭০টির বেশি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ হাজার ১০০ শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল হয়েছে অথবা তাদের আইনি মর্যাদা বাতিল করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবৃতি এবং স্কুল কর্মকর্তাদের সঙ্গে আদান-প্রদান করা চিঠিপত্রের পর্যালোচনা অনুসারে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসনের এ সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীরা শুধু প্রত্যাবাসন বা ভিসা বাতিলের হুমকিই নয়, বরং ‘গুরুতর আর্থিক ও শিক্ষাগত সমস্যার’ সম্মুখীন হচ্ছেন। বিদেশি শিক্ষার্থীদের আইনি মর্যাদা বাতিল করার আগে সরকার প্রয়োজনীয় নোটিশ দেয়নি বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।
আবেদনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছেন চীনা নাগরিক হাংরুই ঝাং ও হাওয়াং আন এবং ভারতীয় নাগরিক লিংকিত বাবু গোরেলা, থানুজ কুমার গুম্মাডাভেলি ও মণিকান্ত পাসুলা। হাংরুইয়ের এফ-১ ভিসা মর্যাদা বাতিলের কারণে তাঁর গবেষণা সহকারীর পদ বাতিল হয়ে গেছে। হাওয়াং এরই মধ্যে প্রায় সোয়া তিন লাখ ডলার পড়াশোনার পেছনে খরচ করার পরও তাঁর ডিগ্রি ত্যাগ করতে হতে পারে।
২০ মে গোরেলার ডিগ্রি শেষ করার কথা। কিন্তু বৈধ এফ-১ ভিসা ছাড়া তিনি তা করতে পারবেন না বা অতিরিক্ত প্রশিক্ষণের কর্মসূচিতেও অংশ নিতে পারবেন না। ডিগ্রি পেতে গুম্মাডাভেলি এবং পাসুলার আরও এক সেমিস্টার বাকি।
ট্রাম্প প্রশাসন শিক্ষার্থীদের ভিসা নীতি কঠোর করার ফলে আন্তর্জাতিক ছাত্র, বিশ্ববিদ্যালয় এবং অ্যাডভোকেসি গ্রুপগুলোর মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ চীনা ও ভারতীয়।
বিবিসি জানায়, কয়েক সপ্তাহ ধরে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত বহু বিদেশি শিক্ষার্থীর সামাজিক মাধ্যমের টাইমলাইনে বারবার চোখে পড়ছে এক দৃশ্য— সাদা পোশাকে এজেন্টরা হঠাৎ এসে শিক্ষার্থীদের গাড়িতে তুলে নিয়ে যাচ্ছেন ডিটেনশন সেন্টারে। তাদের বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ নেই। বরং ধারণা করা হচ্ছে, এসব শিক্ষার্থীকে টার্গেট করা হচ্ছে কলেজ ক্যাম্পাসে ফিলিস্তিনপন্থি আন্দোলনে জড়িত থাকার অভিযোগে।
ট্রাম্প প্রশাসন একাধিকবার জানিয়েছে, শিক্ষার্থীদের দেওয়া ভিসা ‘বিশেষ অধিকার’, যেটি যে কোনো সময় বাতিল করা যেতে পারে। তবে সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, এই দমন অভিযান শুধু কয়েকজন নন, যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে এক হাজারের বেশি বিদেশি শিক্ষার্থী বা সদ্য গ্র্যাজুয়েটদের ভিসা বাতিল বা আইনি অবস্থান পরিবর্তন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইনসাইড হায়ার এডের একটি ট্র্যাকার।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র ব ত ল কর
এছাড়াও পড়ুন:
তপ্ত দুপুরে হাওরের পথে
মাঝ আকাশে সূর্য। প্রখর তীব্রতা নিয়ে যেন ঝরছে রোদ। চামড়াপোড়া এমন থমথমে গরমেও মাঝেমধ্যে শীতল বাতাস শরীর ধুয়ে দিচ্ছে! সুদূরে ডাকছে পাখি। পানি কমে চিকন হয়ে আসা খালে চুপটি মেরে শিকারের আশায় দাঁড়িয়ে আছে একঝাঁক সাদা বক। রাস্তার ধারে ফুটে আছে পিউম ফুল। ডানে-বাঁয়ে দিগন্তবিস্তৃত সবুজ ধানখেত। খেতে দাঁড়িয়ে থাকা হিজল-করচে গজিয়েছে কচি পাতা।
সম্প্রতি হবিগঞ্জের বানিয়াচং ও আজমিরীগঞ্জ উপজেলার হাওর ঘুরে এমন দৃশ্যের দেখা মেলে। বর্ষায় হাওরের যে রূপ, শুকনা মৌসুমে তা একেবারেই বিপরীত। যে হাওর বর্ষায় অনেকটা সমুদ্রের মতো, শুকনা মৌসুমে সেখানেই মাটি ফেটে চৌচির। কিছু খাল-নদীতে পানি থাকলেও তা যৎসামান্য। আবার কোনো কোনো জলাশয় তো শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে! কোথাও একাকী, আবার কোথাও দলবেঁধে দাঁড়িয়ে আছে হিজল-করচগাছ।
সদ্য শেষ হওয়া চৈত্র মাসের এক দুপুরে হাওরের আঁকাবাঁকা পাকা-কাঁচা রাস্তা ধরে এই প্রতিবেদক যান। বানিয়াচং উপজেলা সদর থেকে রওনা হয়ে লক্ষ্মীবাঁওড় জলাবন (খরতির জঙ্গল) পেরিয়ে জেলার আজমিরীগঞ্জের পাহাড়পুর বাজার পর্যন্ত যাওয়ার পথে দেখা মেলে শতাধিক গ্রাম, গোটা দশেক হাওর-নদী-বিল-খালের। পথে পথে সৌন্দর্য। মাঠ, হাওরের উন্মুক্ত প্রান্তর যেন এখন সবুজ ঘাসের গালিচা। সেখানে চরে বেড়াচ্ছে গরু-ছাগল। বক, শামুকখোল পাখিরা জলাশয়ে একসঙ্গে খুঁজছে খাবার।
বানিয়াচং উপজেলা সদর পেরিয়ে হাওরের মূল ভূখণ্ড ঢুকতেই স্বাগত জানায় পাকা একটি সড়ক। সড়ক ধরে কেউ-বা হেঁটে যাচ্ছেন, কেউ-বা যাচ্ছেন ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকে চেপে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, বর্ষায় এই সড়ক পানির নিচে ডুবে থাকে আর হেমন্তে ভেসে ওঠে। সড়কের বিভিন্ন অংশ ভাঙাচোরা, কোথাও আবার পিচহীন। গবাদিপশুর জন্য ঘাস কেটে কেউ-বা সড়ক ধরে বাড়ি ফিরছেন, কেউ-বা সড়ক-লাগোয়া খাল-নালায় ব্যস্ত মাছ শিকারে। মাথার ওপরে চক্কর খাচ্ছে চিল, সারস, কাক, ফেসকুন্দাসহ নানা জাতের পাখি।
বানিয়াচং উপজেলার খরতির জঙ্গলে হিজল-করচবাগ