রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরমান হোসেন পাপ্পু (২২) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। তিনি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দারাজে চাকরি করতেন। সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তেজগাঁও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের পাশে এ ঘটনা ঘটে। মুমূর্ষু অবস্থায় তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক রাত সাড়ে ৯টার দিকে মৃত ঘোষণা করেন।

তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে আসা প্রতিবেশী মো.

রাজু জানান, তেজগাঁও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের পাশে পাপ্পুসহ কয়েকজন মিলে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছিলেন। তখন পাপ্পু প্রস্রাব করার কথা বলে রাস্তার পাশে যান। সেখানে কিছুটা অন্ধকার ছিল। এর কয়েক মিনিট পরই অন্ধকার থেকে পাপ্পু ‘ছিনতাইকারী, ছিনতাইকারী’ বলে চিৎকার করতে থাকেন। তখন অন্যরা দৌড়ে এগিয়ে গেলে তিন-চার ছিনতাইকারী সেখান থেকে দৌড়ে চলে যায়। রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকেন পাপ্পু।

তিনি বলেন, রাস্তার পাশে সেই অন্ধকার জায়গায় অন্য কয়েকজনকে আক্রমণ করেছিল ছিনতাইকারীরা। সেটি দেখেই তাদের বাঁচানোর জন্য চিৎকার করেছিলেন পাপ্পু। তখনই ছিনতাইকারীরা তাঁর পায়ে ও মুখে ছুরিকাঘাত করে। তবে তাঁর কাছ থেকে কিছু ছিনিয়ে নিতে পারেনি।

নিহত পাপ্পুর বাবা একরাম হোসেন বলেন, দারাজে রাত্রিকালীন ডিউটি ছিল পাপ্পুর। রাত ৯টার দিকে তার অফিসে যাবার কথা ছিল। এ জন্য সারাদিন বাসায় থেকে সন্ধ্যায় আমার কাছ থেকে ১০ টাকা নিয়ে বের হয়। ১০ মিনিট পরই খবর আসে, ছিনতাইকারীরা পাপ্পুকে কুপিয়ে আহত করেছে। সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে শমরিতা হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখান থেকে চিকিৎসকরা তাকে ঢামেক হাসপাতালে পাঠান। 

একরাম হোসেন জানান, বাড়ি মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার আন্ধারমানিক গ্রামে। পরিবার নিয়ে তেজগাঁওয়ের বেগুনবাড়ী এলাকায় থাকেন। তিন ভাইবোনের মধ্যে পাপ্পু দ্বিতীয়। 

ঢাকার তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ওসি গাজী শামীমুর রহমান বলেন, ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে নিহত যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে ঢামেক মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
 

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

গ্রিসের পর্যটন দ্বীপ সান্তোরিনির নিচে ঘুমিয়ে আছে ভয়ংকর আগ্নেয়গিরি

গ্রিসের জনপ্রিয় পর্যটন দ্বীপ সান্তোরিনি। যেখানে সাদা-নীল বাড়ি, সূর্যাস্ত আর নীল সমুদ্রের অসাধারণ প্রাকৃতিক দৃশ্যের টানে প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটক ভিড় করেন। কিন্তু অনেকের স্বপ্নের এই দ্বীপের নিচেই লুকিয়ে আছে এক ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি, যা আবারও ভয়াবহ বিস্ফোরণে ফেটে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা।

প্রায় ৩ হাজার ৬০০ বছর আগে আগ্নেয়গিরির বিশাল এক বিস্ফোরণে সান্তোরিনি দ্বীপের বর্তমান আকৃতি তৈরি হয়। সেই বিস্ফোরণে দ্বীপের মাঝখান দেবে গিয়ে একটি বিশাল গর্ত বা কালডেরা সৃষ্টি হয়। এর পর এই অঞ্চলটিতে বড় আকারের ভূমিকম্প আর দেখা যায়নি।

গত বছরের শুরুর দিক থেকে কয়েকবার ভূমিকম্পে দ্বীপটি কেঁপে ওঠায় নতুন করে সামনে এসেছে দ্বীপটির নিচে ঘুমিয়ে থাকা আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাতের সম্ভাবনা ও তার ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এ ধরনের ভূমিকম্প ভূগর্ভের ম্যাগমা চেম্বারে চাপ বাড়ার লক্ষণ হতে পারে।

ব্রিটেনের গবেষণা জাহাজ ‘আরআরএস ডিসকভারি’ থেকে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীদের একটি দল সান্তোরিনির সমুদ্রতলের আগ্নেয়গিরি ও হাইড্রো-থার্মাল ভেন্ট নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন এখন। চলমান এ গবেষণার নেতৃত্ব দিচ্ছেন ব্রিটেনের ন্যাশনাল ওসিওগ্রাফি সেন্টারের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ইসাবেল ইয়ো। তিনি জানান, এই গবেষণার মূল উদ্দেশ্য হলো আগ্নেয়গিরির আচরণ বিশ্লেষণ করে কখন বড় বিস্ফোরণের আশঙ্কা তৈরি হতে পারে তা বুঝতে পারা। সান্তোরিনি দ্বীপের ৭ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে সাগরের নিচে থাকা আরেকটি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি কলোম্বো নিয়েও পর্যবেক্ষণ করছেন তারা।

চলমান এই গবেষণায় রোবটের মাধ্যমে সাগরের ৩০০ মিটার নিচ থেকে গরম পানি, গ্যাস ও আগ্নেয় পাথরের নমুনা সংগ্রহ করছেন তারা। এ ছাড়া ভূকম্পন এবং ভেতরে থাকা জ্বলন্ত লাভার গতিবিধি বোঝার জন্য ভূতাত্ত্বিক মানচিত্রও তৈরি করছেন গবেষকরা। এই গবেষণা শেষে পাওয়া তথ্য গ্রিস সরকারকে সরবরাহ করা হবে। গ্রিসের সিভিল প্রটেকশন এজেন্সি এই গবেষণার ফল বিশ্লেষণ করে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করছে। অধ্যাপক পারাস্কেভি নোমিকো– যিনি নিজে সান্তোরিনির বাসিন্দা এবং সরকারিভাবে জরুরি পরিকল্পনায় যুক্ত– বিবিসিকে বলেন, ‘এই গবেষণা আমাদের জানাবে, কোথায় কতটা ঝুঁকি এবং কোন এলাকায় আগ্নেয়গিরি জেগে উঠলে সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে হবে।’

সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের ফলে সান্তোরিনির ১১ হাজার বাসিন্দার প্রায় অর্ধেকই দ্বীপ ছেড়ে চলে গেছেন। পর্যটন খাতেও এর প্রভাব পড়েছে। অনেকেই তাদের পূর্বনির্ধারিত ভ্রমণ পরিকল্পনা বাতিল করেছেন। স্থানীয় ফটোগ্রাফার ইভা রেন্ডল বলেন, ‘আমার অনেক ক্লায়েন্ট তাদের শুটিং বাতিল করেছেন। আগে এপ্রিল থেকেই কাজ শুরু হতো; এবার মে পর্যন্ত কেউ আসেনি।’

তবে দ্বীপ ছেড়ে চলে যাওয়া অনেকেই জায়গাটির অতুলনীয় সৌন্দর্যের প্রেমে পড়ে আবার ফিরেও আসছেন। সান্তোরিনিতে বিয়ের ছবি তুলতে আসা এক নবদম্পতি বলেন, ‘আমরা ইচ্ছা করেই আগ্নেয়গিরির পাশে বিয়ে করতে চেয়েছি!’ এখন পর্যন্ত তাৎক্ষণিক বিস্ফোরণের আশঙ্কা না থাকলেও বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এটি ‘শুধু সময়ের ব্যাপার।’ বিবিসি।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ