ভারত সফররত যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স সোমবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করেছেন। নয়াদিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন লোককল্যাণ মার্গে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ভারত–যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে যে অগ্রগতি হয়েছে, তাকে স্বাগত জানিয়েছেন দুই নেতা। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

ইতালির রাজধানী রোম থেকে সোমবার পরিবারসহ নয়াদিল্লিতে পৌঁছান জেডি ভ্যান্স। দেশটিতে চার দিন অবস্থান করবেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই সফরে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট আগ্রার তাজমহল পরিদর্শন করবেন এবং জয়পুর শহরে একটি ভাষণ দেবেন। ভ্যান্সের স্ত্রী উষা ভ্যান্স ভারতীয় বংশোদ্ভূত।

ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বৈঠকে জ্বালানি, প্রতিরক্ষা ও কৌশলগত প্রযুক্তিসহ নানা খাতে সহযোগিতার সম্পর্ক জোরদারে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন মোদি ও ভ্যান্স। একই সঙ্গে তাঁরা ‘আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক’ নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং সংলাপ ও কূটনীতির মাধ্যমে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন।

দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর গত ফেব্রুয়ারিতে তাঁর সঙ্গে হোয়াইট হাউসে সাক্ষাৎ করেন মোদি। এখন জেডি ভ্যান্সের এই সফর হচ্ছে ভারতে ট্রাম্পের বর্তমান প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তার সফর।

ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, বৈঠকে ট্রাম্পের প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেন, চলতি বছরের শেষের দিকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের ভারত সফরের জন্য অপেক্ষা করছেন।

নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে জেডি ভ্যান্স.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

গ্রিসের পর্যটন দ্বীপ সান্তোরিনির নিচে ঘুমিয়ে আছে ভয়ংকর আগ্নেয়গিরি

গ্রিসের জনপ্রিয় পর্যটন দ্বীপ সান্তোরিনি। যেখানে সাদা-নীল বাড়ি, সূর্যাস্ত আর নীল সমুদ্রের অসাধারণ প্রাকৃতিক দৃশ্যের টানে প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটক ভিড় করেন। কিন্তু অনেকের স্বপ্নের এই দ্বীপের নিচেই লুকিয়ে আছে এক ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি, যা আবারও ভয়াবহ বিস্ফোরণে ফেটে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা।

প্রায় ৩ হাজার ৬০০ বছর আগে আগ্নেয়গিরির বিশাল এক বিস্ফোরণে সান্তোরিনি দ্বীপের বর্তমান আকৃতি তৈরি হয়। সেই বিস্ফোরণে দ্বীপের মাঝখান দেবে গিয়ে একটি বিশাল গর্ত বা কালডেরা সৃষ্টি হয়। এর পর এই অঞ্চলটিতে বড় আকারের ভূমিকম্প আর দেখা যায়নি।

গত বছরের শুরুর দিক থেকে কয়েকবার ভূমিকম্পে দ্বীপটি কেঁপে ওঠায় নতুন করে সামনে এসেছে দ্বীপটির নিচে ঘুমিয়ে থাকা আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাতের সম্ভাবনা ও তার ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এ ধরনের ভূমিকম্প ভূগর্ভের ম্যাগমা চেম্বারে চাপ বাড়ার লক্ষণ হতে পারে।

ব্রিটেনের গবেষণা জাহাজ ‘আরআরএস ডিসকভারি’ থেকে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীদের একটি দল সান্তোরিনির সমুদ্রতলের আগ্নেয়গিরি ও হাইড্রো-থার্মাল ভেন্ট নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন এখন। চলমান এ গবেষণার নেতৃত্ব দিচ্ছেন ব্রিটেনের ন্যাশনাল ওসিওগ্রাফি সেন্টারের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ইসাবেল ইয়ো। তিনি জানান, এই গবেষণার মূল উদ্দেশ্য হলো আগ্নেয়গিরির আচরণ বিশ্লেষণ করে কখন বড় বিস্ফোরণের আশঙ্কা তৈরি হতে পারে তা বুঝতে পারা। সান্তোরিনি দ্বীপের ৭ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে সাগরের নিচে থাকা আরেকটি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি কলোম্বো নিয়েও পর্যবেক্ষণ করছেন তারা।

চলমান এই গবেষণায় রোবটের মাধ্যমে সাগরের ৩০০ মিটার নিচ থেকে গরম পানি, গ্যাস ও আগ্নেয় পাথরের নমুনা সংগ্রহ করছেন তারা। এ ছাড়া ভূকম্পন এবং ভেতরে থাকা জ্বলন্ত লাভার গতিবিধি বোঝার জন্য ভূতাত্ত্বিক মানচিত্রও তৈরি করছেন গবেষকরা। এই গবেষণা শেষে পাওয়া তথ্য গ্রিস সরকারকে সরবরাহ করা হবে। গ্রিসের সিভিল প্রটেকশন এজেন্সি এই গবেষণার ফল বিশ্লেষণ করে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করছে। অধ্যাপক পারাস্কেভি নোমিকো– যিনি নিজে সান্তোরিনির বাসিন্দা এবং সরকারিভাবে জরুরি পরিকল্পনায় যুক্ত– বিবিসিকে বলেন, ‘এই গবেষণা আমাদের জানাবে, কোথায় কতটা ঝুঁকি এবং কোন এলাকায় আগ্নেয়গিরি জেগে উঠলে সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে হবে।’

সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের ফলে সান্তোরিনির ১১ হাজার বাসিন্দার প্রায় অর্ধেকই দ্বীপ ছেড়ে চলে গেছেন। পর্যটন খাতেও এর প্রভাব পড়েছে। অনেকেই তাদের পূর্বনির্ধারিত ভ্রমণ পরিকল্পনা বাতিল করেছেন। স্থানীয় ফটোগ্রাফার ইভা রেন্ডল বলেন, ‘আমার অনেক ক্লায়েন্ট তাদের শুটিং বাতিল করেছেন। আগে এপ্রিল থেকেই কাজ শুরু হতো; এবার মে পর্যন্ত কেউ আসেনি।’

তবে দ্বীপ ছেড়ে চলে যাওয়া অনেকেই জায়গাটির অতুলনীয় সৌন্দর্যের প্রেমে পড়ে আবার ফিরেও আসছেন। সান্তোরিনিতে বিয়ের ছবি তুলতে আসা এক নবদম্পতি বলেন, ‘আমরা ইচ্ছা করেই আগ্নেয়গিরির পাশে বিয়ে করতে চেয়েছি!’ এখন পর্যন্ত তাৎক্ষণিক বিস্ফোরণের আশঙ্কা না থাকলেও বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এটি ‘শুধু সময়ের ব্যাপার।’ বিবিসি।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ