ফ্যাটি লিভার দু’রকম। অ্যালকোহলিক ও নন-অ্যালকোহলিক। মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপান থেকে লিভারে চর্বি জমলে তা অ্যালকোহলিক ফ্যাট। দ্বিতীয় ক্ষেত্রটি মূলত খাদ্যতালিকায় অতিরিক্ত তেল, ফ্যাট জাতীয় উপাদান বেড়ে গেলে হয়। কখনও কখনও নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার বংশগত কারণেও হতে পারে। সময় মতো সতর্ক না হলে এই ফ্যাটি লিভারের হাত ধরে হানা দিতে পারে লিভার সিরোসিস। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, ফ্যাটি লিভারের কারণে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়তে পারে শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গেও। মলাশয়, কিডনি, মূত্রাশয় কিংবা জরায়ুর ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। চিকিৎসকেরা বলছেন, লিভারে অতিরিক্ত চর্বি বা ফ্যাট জমতে শুরু করলে এই অঙ্গটি তার নিজস্ব কার্যক্ষমতা হারাতে শুরু করে। শরীরে জমা দূষিত পদার্থ বা ‘টক্সিন’ থেকে লিভার নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে পারে না। রক্তের মাধ্যমে বাহিত হয়ে সেই দূষিত পদার্থ অন্ত্রে পৌঁছে যায়। প্রাথমিকভাবে সেখান থেকে প্রদাহ বা ইনফ্লেমেশন শুরু হয়। ২০২৪ সালে সুইডেনের একটি গবেষণা থেকে জানা গেছে, নন-অ্যালকোহল-রিলেটেড ফ্যাটি লিভারে আক্রান্তদের মধ্যে লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা ১২.
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
প্রতিবন্ধী নারীর অনন্য পাঠশালা
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের বন্যাবাড়ি গ্রাম। এ গ্রামে এক সাহসী নারীর হাত ধরে গড়ে উঠেছে অসাধারণ এক পাঠশালা। শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েও দারিদ্র্য, প্রতিবন্ধকতা আর সামাজিক সীমাবদ্ধতা জয় করে শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন জয়ন্তী রায়।
৪০ বছর বয়সী জয়ন্তীর জীবন কখনও সহজ ছিল না। তিনি কুঁজো, সোজা হয়ে চলতে পারেন না। ঝুঁকে চলতে হয়। এই প্রতিবন্ধকতার কাছে কখনও তিনি মাথা নিচু করেননি। এসএসসি পাস করেও অর্থাভাবে কলেজে যেতে পারেননি। কৃষক হরিচাঁন রায়কে বিয়ে করে আরও কঠিন এক সংসার জীবন শুরু হয়। একমাত্র সন্তানকে নিয়ে টানাপোড়েনের সংসারে এক দিন সিদ্ধান্ত নেন– শুধু নিজের জীবনের উন্নতি নয়, এলাকার শিশুদেরও পড়াতে হবে।
বাড়ির উঠানের এক গাছতলায় মাত্র ১০ জন শিশুকে নিয়ে শুরু হয় তাঁর পাঠশালা। শিশুপ্রতি মাসে ৩০০ টাকা করে নিলেও অনেকেই দিতে পারত ৫০ বা ১০০ টাকা। কিন্তু অর্থ নয়, জয়ন্তীর মূল লক্ষ্য ছিল শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়া। ঝড়-বৃষ্টি এলে গাছতলার পাঠশালা সরিয়ে নেওয়া হতো পাশের মন্দিরে।
২০২৪ সালের শুরুর দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মঈনুল হক বন্যাবাড়ি গ্রামে একটি রাস্তার কাজ পরিদর্শনে গিয়ে দেখে ফেলেন এই অনন্য পাঠশালা। এর পর থেকেই বদলে যেতে থাকে দৃশ্যপট। ইউএনও জয়ন্তীকে বলেন, অভিভাবকদের কাছ থেকে আর কোনো টাকা নিতে হবে না। উপজেলা অফিস থেকে তাঁর সম্মানী দেওয়া হবে।
২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর প্রতি মাসে ৩ হাজার টাকা করে পেয়েছেন জয়ন্তী। ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে তাঁর পাঠশালাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমে। এখন জয়ন্তী প্রতি মাসে পাচ্ছেন ৫ হাজার টাকা সরকারি বেতন। পাশাপাশি ইউএনওর উদ্যোগে টিআর প্রকল্পের
আওতায় ১ লাখ ১৪ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে একটি টিনশেড পাঠশালা। লাগানো হয়েছে তিনটি বৈদ্যুতিক পাখাও। জয়ন্তীর বিদ্যালয়ে এখন ৩০ জন শিশু পড়াশোনা করছে।
স্থানীয়রা জানান, এক সময় রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে শিশুদের পাঠ নিতে হতো। এখন সুন্দর ঘরে বিনামূল্যে চলছে পাঠদান।
অভিভাবক শিউলী বিশ্বাস ও সবিতা রায় বলেন, জয়ন্তীর পাঠশালায় তাদের ছেলেমেয়েরা অনেক ভালোভাবে পড়াশোনা করছে। আগে যা কল্পনাও করতে পারেননি তারা। দারিদ্র্যের কারণে তারা অনেকেই শিশুদের পড়ানোর জন্য জয়ন্তীকে টাকা দিতে পারতেন না। ইউএনওর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তারা বলেন, তিনি পাঠশালার
জন্য একটি ঘর ও জয়ন্তীর পারিশ্রমিকের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এখন বিনা বেতনে এ পাঠশালায় তাদের ছেলেমেয়েরা
পড়াশোনা করছে।
নিজেই এক সময় আলো থেকে দূরে সরে পড়া জয়ন্তী এখন অন্যদের জন্য বাতিঘর হয়ে উঠেছেন। তিনি বলেন, ‘কোনোদিন ভাবিনি আমার মতো একজন প্রতিবন্ধী নারীও এভাবে মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে। ইউএনও স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞ, যিনি আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছেন। যতদিন বাঁচি, ততদিন শিশুদের শিক্ষা দিয়ে যাব।’
টুঙ্গিপাড়ার ইউএনও মঈনুল হক বলেন, এটি একটি অনন্য পাঠশালা। জয়ন্তী যা করেছেন, তা এ সমাজের জন্য দৃষ্টান্ত। এ পাঠশালার শিশুদের জন্য একটি টিনশেড ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। গ্রীষ্মের গরমে শিশুদের কষ্টের কথা ভেবে প্রশাসন থেকে তিনটি পাখার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। জনকল্যাণে উপজেলা প্রশাসন এমন কাজ চালিয়ে যাবে বলে জানান তিনি।