Samakal:
2025-04-21@23:35:47 GMT

তেল ও চরকার গল্প

Published: 21st, April 2025 GMT

তেল ও চরকার গল্প

নয়ন আজ নতুন একটা চাকরিতে যোগ দিয়েছে। এটি তার চতুর্থ চাকরি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হওয়ার পর এর আগের তিনটি চাকরির কোনোটিতেই ছয় মাসের বেশি টেকেনি সে। মেধাবী ছাত্র ছিল সে। পরিশ্রমীও। শুধু জায়গা-অজায়গায় মাত্রাতিরিক্ত তেলবাজির জন্য তার চাকরিগুলো টেকে না। তেল মারা তার একটা নেশা। অফিস ও বাসার দারোয়ান, পিয়ন, সহকর্মী সবাইকে তেল মারে। এমনকি বেশি তেল মারতে গিয়ে তার প্রেমিকারাও ‘আঁতেল’ বলে ছেড়ে চলে যায়! এমডি স্যারের রুমের সামনে গিয়ে দরজার নব ঘুরিয়ে নয়ন বিনয়ের সঙ্গে বলল, আসতে পারি স্যার?
– আরে, নয়ন সাহেব। তা নয়ন সাহেব, নতুন অফিস কেমন লাগছে?
– চমৎকার লাগছে স্যার। এ অফিসের সবাই এত ভালো, এত ব্যক্তিত্বসম্পন্ন যে আমি মুগ্ধ। এমন অফিসে চাকরি করা আমার ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল। আজ স্বপ্নপূরণ হলো। অসাধারণ অনুভূতি!
– হুম, বুঝলাম নয়ন সাহেব। আমাদের অফিসটা আসলেই অনেক ভালো। সবাই অনেক কো-অপারেটিভ। আপনার কোনো সমস্যা হবে না। যে কোনো সমস্যা হলে আপনি আমাকে ইনফর্ম করবেন। কোনো দ্বিধা করবেন না।
– সত্যি স্যার, আপনাকে দেখে বুঝেছি বস কাকে বলে, কেমন হওয়া উচিত। এমন ব্যক্তিত্বের অধীনে চাকরি করতে পারাটা চরম ও পরম সৌভাগ্যের। আপনি আসলেই বড়মনের গুণী একজন মানুষ।
– নয়ন সাহেব, আজই তো জয়েন করলেন। একসঙ্গে এত প্রশংসা করলে কীভাবে হয়! আমাকে তো আপনি এখনও ভালো করে চিনলেনই না।
– স্যার, এই যে কথায় আছে ‘একটা ভাতে চাপ দিলে পুরো হাঁড়ির খবরই বলা যায়’, আপনার ব্যাপারটাও তাই। আপনি আসলেই আদর্শ বস।
– ঠিক আছে নয়ন সাহেব। এবার আপনি আসুন। এনজয় ইউর জব।
নতুন অফিসের চাকরিটাও আড়াই মাসের বেশি টিকল না। কিছুদিন পর নয়ন জুটিয়ে নেয় নতুন চাকরি। তার স্বভাব বদলায় না কখনোই। ফলে তার তৈলাক্ত জীবনটা শুধু চরকার মতো ঘুরতে থাকে, ঘুরতেই থাকে.

..। 
সুহৃদ মৌলভীবাজার
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স হ দ সম ব শ নয়ন স হ ব

এছাড়াও পড়ুন:

গ্রিসের পর্যটন দ্বীপ সান্তোরিনির নিচে ঘুমিয়ে আছে ভয়ংকর আগ্নেয়গিরি

গ্রিসের জনপ্রিয় পর্যটন দ্বীপ সান্তোরিনি। যেখানে সাদা-নীল বাড়ি, সূর্যাস্ত আর নীল সমুদ্রের অসাধারণ প্রাকৃতিক দৃশ্যের টানে প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটক ভিড় করেন। কিন্তু অনেকের স্বপ্নের এই দ্বীপের নিচেই লুকিয়ে আছে এক ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি, যা আবারও ভয়াবহ বিস্ফোরণে ফেটে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা।

প্রায় ৩ হাজার ৬০০ বছর আগে আগ্নেয়গিরির বিশাল এক বিস্ফোরণে সান্তোরিনি দ্বীপের বর্তমান আকৃতি তৈরি হয়। সেই বিস্ফোরণে দ্বীপের মাঝখান দেবে গিয়ে একটি বিশাল গর্ত বা কালডেরা সৃষ্টি হয়। এর পর এই অঞ্চলটিতে বড় আকারের ভূমিকম্প আর দেখা যায়নি।

গত বছরের শুরুর দিক থেকে কয়েকবার ভূমিকম্পে দ্বীপটি কেঁপে ওঠায় নতুন করে সামনে এসেছে দ্বীপটির নিচে ঘুমিয়ে থাকা আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাতের সম্ভাবনা ও তার ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এ ধরনের ভূমিকম্প ভূগর্ভের ম্যাগমা চেম্বারে চাপ বাড়ার লক্ষণ হতে পারে।

ব্রিটেনের গবেষণা জাহাজ ‘আরআরএস ডিসকভারি’ থেকে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীদের একটি দল সান্তোরিনির সমুদ্রতলের আগ্নেয়গিরি ও হাইড্রো-থার্মাল ভেন্ট নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন এখন। চলমান এ গবেষণার নেতৃত্ব দিচ্ছেন ব্রিটেনের ন্যাশনাল ওসিওগ্রাফি সেন্টারের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ইসাবেল ইয়ো। তিনি জানান, এই গবেষণার মূল উদ্দেশ্য হলো আগ্নেয়গিরির আচরণ বিশ্লেষণ করে কখন বড় বিস্ফোরণের আশঙ্কা তৈরি হতে পারে তা বুঝতে পারা। সান্তোরিনি দ্বীপের ৭ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে সাগরের নিচে থাকা আরেকটি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি কলোম্বো নিয়েও পর্যবেক্ষণ করছেন তারা।

চলমান এই গবেষণায় রোবটের মাধ্যমে সাগরের ৩০০ মিটার নিচ থেকে গরম পানি, গ্যাস ও আগ্নেয় পাথরের নমুনা সংগ্রহ করছেন তারা। এ ছাড়া ভূকম্পন এবং ভেতরে থাকা জ্বলন্ত লাভার গতিবিধি বোঝার জন্য ভূতাত্ত্বিক মানচিত্রও তৈরি করছেন গবেষকরা। এই গবেষণা শেষে পাওয়া তথ্য গ্রিস সরকারকে সরবরাহ করা হবে। গ্রিসের সিভিল প্রটেকশন এজেন্সি এই গবেষণার ফল বিশ্লেষণ করে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করছে। অধ্যাপক পারাস্কেভি নোমিকো– যিনি নিজে সান্তোরিনির বাসিন্দা এবং সরকারিভাবে জরুরি পরিকল্পনায় যুক্ত– বিবিসিকে বলেন, ‘এই গবেষণা আমাদের জানাবে, কোথায় কতটা ঝুঁকি এবং কোন এলাকায় আগ্নেয়গিরি জেগে উঠলে সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে হবে।’

সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের ফলে সান্তোরিনির ১১ হাজার বাসিন্দার প্রায় অর্ধেকই দ্বীপ ছেড়ে চলে গেছেন। পর্যটন খাতেও এর প্রভাব পড়েছে। অনেকেই তাদের পূর্বনির্ধারিত ভ্রমণ পরিকল্পনা বাতিল করেছেন। স্থানীয় ফটোগ্রাফার ইভা রেন্ডল বলেন, ‘আমার অনেক ক্লায়েন্ট তাদের শুটিং বাতিল করেছেন। আগে এপ্রিল থেকেই কাজ শুরু হতো; এবার মে পর্যন্ত কেউ আসেনি।’

তবে দ্বীপ ছেড়ে চলে যাওয়া অনেকেই জায়গাটির অতুলনীয় সৌন্দর্যের প্রেমে পড়ে আবার ফিরেও আসছেন। সান্তোরিনিতে বিয়ের ছবি তুলতে আসা এক নবদম্পতি বলেন, ‘আমরা ইচ্ছা করেই আগ্নেয়গিরির পাশে বিয়ে করতে চেয়েছি!’ এখন পর্যন্ত তাৎক্ষণিক বিস্ফোরণের আশঙ্কা না থাকলেও বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এটি ‘শুধু সময়ের ব্যাপার।’ বিবিসি।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ